নাহিদ ঝলকের পর সাদমানের দৃঢ়তা

জ্যামাইকায় অবিশ্বাস্য জয়ের হাতছানি

Daily Inqilab স্পোর্টস রিপোর্টার

০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০২ এএম

আগের দিনও যে স্বপ্ন ভাবনাতে আনাও ছিল স্বপ্নাতীত, সেটিই এখন বাস্তবতার আলো খুঁজছে। মাত্র দুই সেশনের ঝলকে জ্যামাইকা টেস্টের নিয়ন্ত্রণ এখন বাংলাদেশের হাতেই। টেস্ট ম্যাচের তৃতীয় দিনকে বলা হয় ‘মুভিং ডে।’ ম্যাচের সম্ভাব্য পরিণতির ইঙ্গিত সাধারণত মেলে এ দিনই। কিংসটনের সাবিনা পার্কে তা ফুটে উঠল অনেকটাই। ব্যাটে-বলে চমকপ্রদ পারফরম্যান্সে দিনটি রাঙাল বাংলাদেশ। গতি আর বাউন্সের মিশেলে অগ্নিঝরা বোলিংয়ে ক্যারিবিয়ান ব্যাটিং ছারখার করলেন নাহিদ রানা। নাটকীয় লিড পাওয়ার পর আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে চমকে দিলেন ব্যাটসম্যানরা। স্বপ্নের আবির চোখে মেখে দিন শেষ করল বাংলাদেশ। জ্যামাইকায় বাংলাদেশের সামনে এখন দারুণ এক জয়ের হাতছানি। তৃতীয় দিন শেষে সফরকারীরা এগিয়ে ২১১ রানে, উইকেট আছে এখনও ৫টি।
স্যাবাইনা পার্কে ১ উইকেটে ৭০ রান নিয়ে তৃতীয় দিন শুরু করা ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রথম ইনিংস গুটিয়ে যায় ১৪৬ রানেই। এক পর্যায়ে ১ উইকেটে ৮৫ রান করা দল ভয়াবহ ব্যাটিং ধসে ৯১ রানের মধ্যে হারায় ৯ উইকেট। ১৬৪ রানের পুঁজি নিয়েও ১৮ রানের মহামূল্য লিড পায় বাংলাদেশ। একসময় পেস বোলারদের স্বর্গ ছিল যে অঞ্চল, সেই ক্যারিবিয়ায় টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম ৫ উইকেটের স্বাদ পান নাহিদ রানা। গতির ঝড়ে ক্যারিবিয়ান ব্যাটিং কাঁপিয়ে দিয়ে ৬১ রানে ৫ উইকেট নেন ২২ বছর বয়সী ফাস্ট বোলার। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে পাল্টা আক্রমণে ক্যারিবিয়ানদের চমকে দেয় বাংলাদেশ। শেষ পর্যন্ত গতপরশু দিন শেষ করে তারা ৫ উইকেটে ১৯৩ রান নিয়ে।
জিততে হলে এই মাঠে রান তাড়ার রেকর্ড নতুন করে লিখতে হবে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। অসুস্থতার কারণে এ দিন ব্যাটিং করতে পারেননি মুমিনুল হক। চতুর্থ দিনে তাকে নিয়ে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে আশার জায়গাও অনেক বেশি। লক্ষ্যটাকে তারা নিয়ে যেতে চাইবে ক্যারিবিয়ানদের নাগালের বাইরে। চতুর্থ দিনে এই রান যত বাড়বে, বাংলাদেশ ততই গিয়ে যাবে জয়ের দিকে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটিং এমনিতে একটু নড়বড়ে। ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট ছাড়া অভিজ্ঞতার ঘাটতিও চরম। তৃতীয় দিনে নেমে ১ উইকেটে ৮৫ থেকে আর ৬১ রান যোগ করতেই হুড়মুড়িয়ে ধসে যায় তারা। গতির সঙ্গে বাড়তি বাউন্স দিয়ে নাহিদ প্রথমে তুলে নেন ব্র্যথওয়েটকে। কেভাম হজকে বারবার পরাস্ত করে বানান উইকেটের পেছনে ক্যাচ। নাহিদের জোড়া উইকেট দেখে তাসকিন আহমেদ, হাসান মাহমুদরা সামিল হলে লন্ডভ- হয়ে যায় ক্যারিবিয়ানরা। লোয়ার অর্ডার আর টেল এন্ডেও আতঙ্ক ছড়িয়ে ইনিংস মুড়ে দেন নাহিদ। আরেকটা কাজও করে ফেলেছেন তিনি। তার ক্ষিপ্র এক বাউন্সার কেমার রোচের ঘাড়ে আঘাত করেছে। ক্যারিবিয়ান সেরা পেসার এতে আর বল করতেই নামতে পারেননি। বোঝাই যাচ্ছে নাহিদের প্রভাব কতখানি।
১৮ রানের লিড পেয়ে আরও ১৯৩ রান যোগ করতে সাড়ে চারের উপর রানরেট রেখেছে বাংলাদেশ। কঠিন উইকেটে এই কৌশল মন্দ নয়। প্রথম ইনিংসের পর দ্বিতীয় ইনিংসেও রান পেয়েছেন সাদমান ইসলাম। সেই রান খুব বেশি না হলেও (৪৬) ম্যাচের প্রেক্ষিতে গুরুত্বপূর্ণ। এক সাদমান ছাড়া বাকি সবাই খেলেছেন ওয়ানডে ঘরানায়। অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ ৩৯ বলে করেছেন ৪২। লিটন দাস ডানা মেলার আভাস দিয়ে ৩৪ বলে থেমেছেন ২৫ করে।
তবে বাংলাদেশের ইনিংসে এখন অবধি অস্বস্তির কাটা মুমিনুল হকের না নামা। অভিজ্ঞ বাঁহাতি ব্যাটার কেন নামেননি তা জানায়নি টিম ম্যানেজমেন্ট। মুমিনুলের কোন চোট সমস্যা থাকলে একজন ব্যাটার কমে যাবে বাংলাদেশ। আর মুমিনুল নামতে পারলে ২১১ রানের লিডটা অনেক বড় করা সম্ভব বাংলাদেশ। ম্যাচ জেতার সম্ভাবনাতেও আপাতত এগিয়ে লাল সবুজের প্রতিনিধিরা। পরিসংখ্যান বলছে, কিংস্টন টেস্টে এই মুহূর্তে জয়ের পথেই বাংলাদেশ। আর সেটা হলে দেশের বাইরে এক বছরে পাওয়া টেস্ট জয়ের হিসাবে নতুন রেকর্ড গড়বে বাংলাদেশ। কিংস্টনে চতুর্থ ইনিংসে সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড ওয়েস্ট ইন্ডিজের। ২০০৩ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২১২ রান তাড়া করে জিতেছিল তারা। অর্থাৎ, বাংলাদেশ যদি গতকাল চতুর্থ দিনে ১ রানও স্কোরবোর্ডে যোগ করতে না পারে, তাহলেও ওয়েস্ট ইন্ডিজকে সর্বোচ্চ রানতাড়ার রেকর্ড ছুঁয়ে জিততে হবে।
এই মাঠে ১৮০ রানের বেশি তাড়া করে টেস্ট জেতার ঘটনা মাত্র দুটি। এর সঙ্গে যোগ করুন উইকেটের বর্তমান পরিস্থিতি। এই উইকেটেই প্রথম ইনিংসে ১৪৬ রানে অলআউট হয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বাংলাদেশ যে দ্বিতীয় ইনিংসে ১৯৩ রান এখন পর্যন্ত তুলেছে, সেটাও এসেছে পাল্টা আক্রমণের কৌশলে। এই উইকেটে রান করা মোটেই সহজ নয়।
রেকর্ড প্রসঙ্গে আসা যাক। কিংস্টন টেস্ট জিতলে চলতি বছরে দেশের বাইরে বাংলাদেশ টেস্ট জিতবে ৩টি। এর আগে এ বছর বাংলাদেশ পাকিস্তানকে ২ টেস্টের সিরিজে ধবলধোলাই করছে। এর আগে কখনোই এক বছরের দেশের বাইরে দুটির বেশি টেস্ট জিততে পারেনি বাংলাদেশ। সর্বশেষ ২০০৯ সালে বাংলাদেশ দেশের বাইরে ২টি টেস্ট জিতেছিল। সেটি ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতেই। সব মিলিয়ে এক বছরে ৩টি টেস্টের বেশি জেতেওনি বাংলাদেশ। ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৩ সালে বাংলাদেশ ৩টি করে টেস্ট জিতেছে। কিংস্টনে জয় এলে এই তালিকায় ২০২৪ সালও যোগ হবে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ : ১৬৪ ও ২য় ইনিংস : ৪১.৪ ওভারে ১৯৩/৫ (জয় ০, সাদমান ৪৬, শাহাদাত ২৮, মিরাজ ৪২, লিটন ২৫, জাকের ২৯*, তাইজুল ৯*; সিলস ১/৪৩, আলজারি ১/৩৯, শামার ২/৭০, গ্রেভস ১/২০)। উইন্ডিজ ১ম ইনিংস : ৬৫ ওভারে ১৪৬ (আগের দিন ৭০/১) (ব্র্যাথওয়েট ৩৯, লুই ১২, কার্টি ৪০, দা সিলভা ৫, আলজারি ৭, রোচ ৮, সিলস ৮*; হাসান ২/১৯, তাসকিন ১/২০, নাহিদ ৫/৬১, তাইজুল ১/২৪, মিরাজ ১/১৫)। তৃতীয় দিন শেষে


বিভাগ : খেলাধুলা


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

লিটনের ব্যাটে ঢাকার বড় সংগ্রহ
আরও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রিয়ালের প্রেসিডেন্ট পেরেজ
ব্যাটিং ব্যর্থতায় অস্ট্রেলিয়ার কাছে বাংলাদেশের হার
উইন্ডিজের কাছে পাত্তাই পেল না বাংলাদেশ
মালানের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা নিয়ে মুখ খুললেন তামিম
আরও

আরও পড়ুন

সিআইপির খাল সমূহ পুনঃখনন কার্যক্রম অব্যাহত রাখা সহ সাত দফা দাবি

সিআইপির খাল সমূহ পুনঃখনন কার্যক্রম অব্যাহত রাখা সহ সাত দফা দাবি

চীনে গাড়ি হামলা-হত্যার দায়ে দুই অপরাধীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর

চীনে গাড়ি হামলা-হত্যার দায়ে দুই অপরাধীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর

বিজিবির জন্য সাউন্ড গ্রেনেড-টিয়ারশেল কেনা হচ্ছে

বিজিবির জন্য সাউন্ড গ্রেনেড-টিয়ারশেল কেনা হচ্ছে

শহীদ আসাদের আত্মত্যাগেই আজকের বাংলাদেশ- খোকন

শহীদ আসাদের আত্মত্যাগেই আজকের বাংলাদেশ- খোকন

লিটনের ব্যাটে ঢাকার বড় সংগ্রহ

লিটনের ব্যাটে ঢাকার বড় সংগ্রহ

পীরগঞ্জের ৯ জন শিক্ষার্থী'র চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন পূরণ

পীরগঞ্জের ৯ জন শিক্ষার্থী'র চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন পূরণ

জাতীয় প্রতিরক্ষা ইস্যুতে ইরানের দৃঢ় অবস্থান

জাতীয় প্রতিরক্ষা ইস্যুতে ইরানের দৃঢ় অবস্থান

বঙ্গোপসাগরে নিষিদ্ধ পদ্ধতিতে মাছ আহরণ, ভেস্তে যাচ্ছে উৎপাদন

বঙ্গোপসাগরে নিষিদ্ধ পদ্ধতিতে মাছ আহরণ, ভেস্তে যাচ্ছে উৎপাদন

‘জুলাই বিপ্লবের’ মাধ্যমে ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার সুযোগ এসেছে : সিইসি

‘জুলাই বিপ্লবের’ মাধ্যমে ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার সুযোগ এসেছে : সিইসি

ছাগলনাইয়া উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির কমিটি গঠন

ছাগলনাইয়া উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির কমিটি গঠন

বাগেরহাটে এ্যাথলেটিক প্রতিযোগীতা ও গ্রামীন খেলা অনুষ্ঠিত

বাগেরহাটে এ্যাথলেটিক প্রতিযোগীতা ও গ্রামীন খেলা অনুষ্ঠিত

গাজা পুনর্গঠনে কার হাতে থাকবে প্রশাসনিক দায়িত্ব ?

গাজা পুনর্গঠনে কার হাতে থাকবে প্রশাসনিক দায়িত্ব ?

রামগড়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের ৫টি ইটভাটায় জরিমানা

রামগড়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের ৫টি ইটভাটায় জরিমানা

এখনো দেশে সাড়ে ৩৩ হাজার অবৈধ বিদেশি: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

এখনো দেশে সাড়ে ৩৩ হাজার অবৈধ বিদেশি: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

কম মূল্যে জমি বিক্রি না করায় দাউদকান্দিতে ছাত্রদলের নেতার বিরুদ্ধে অপপ্রচারের প্রতিবাদ

কম মূল্যে জমি বিক্রি না করায় দাউদকান্দিতে ছাত্রদলের নেতার বিরুদ্ধে অপপ্রচারের প্রতিবাদ

মুক্ত তিন ইসরাইলি জিম্মিকে যে ‘উপহারের ব্যাগ’ দিলো হামাস

মুক্ত তিন ইসরাইলি জিম্মিকে যে ‘উপহারের ব্যাগ’ দিলো হামাস

জেরায় অবশেষে দোষ স্বীকার সাইফের হামলাকারীর

জেরায় অবশেষে দোষ স্বীকার সাইফের হামলাকারীর

ঈশ্বরগঞ্জে ব্রেস্ট ক্যান্সার প্রতিরোধ বিষয়ক কর্মশালা

ঈশ্বরগঞ্জে ব্রেস্ট ক্যান্সার প্রতিরোধ বিষয়ক কর্মশালা

বনানীতে সড়কে সিএনজি চালকদের বিক্ষোভ, রাস্তা বন্ধ

বনানীতে সড়কে সিএনজি চালকদের বিক্ষোভ, রাস্তা বন্ধ

বগুড়া সেনানিবাসে সাঁজোয়া কোরের ৪৪তম বাৎসরিক অধিনায়ক সম্মেলনে যোগ দিলেন সেনা প্রধান

বগুড়া সেনানিবাসে সাঁজোয়া কোরের ৪৪তম বাৎসরিক অধিনায়ক সম্মেলনে যোগ দিলেন সেনা প্রধান