দরপত্রে ভুল বানানেই ধরা!
১৭ এপ্রিল ২০২৩, ১১:৪৫ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ০৩:৩৫ পিএম
গত ১৪ এপ্রিল বাংলাদেশে ছিল উৎসবের দিন। বাংলা নববর্ষের সেই দিনটি বিষাদে ঢেকে গিয়েছিল একটি সংবাদে। যে সংবাদ নিমিষে নিকষ কালো অন্ধকারে ঢেকে দিয়েছিল দেশের ক্রীড়াঙ্গনকে, ষোল কোটি ক্রীড়াপাগল মনকেও। আর্থিক অনিয়ম আর জালিয়াতির দায়ে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগকে ২ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করেছে বিশ^ ফুটবলের নিয়ন্তা ফিফা। তার পর থেকে আজ পড়েছে পঞ্চম দিনে। ফুটবলের সেই কলঙ্ক গায়ে নিয়েই গতকাল জরুরি বৈঠকে বসেছিলেন বাফুফে কর্তারা। এদিনই ৩ মাসের জন্য ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন বাফুফের চিফ প্রটোকল ম্যানেজার ইমরান হোসেন তুষার। পাশাপাশি ফিফার নিষেধাজ্ঞা পাওয়া সোহাগের আর্থিক অনিয়মের তদন্ত করতে ১০ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে বাফুফে। এক মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দেবে কমিটি।
মজার ব্যাপার হচ্ছে, অপেশা দারিত্বেই বাফুফেকে কাঠগড়ায় তুলেছে ফিফা! কীভাবে? সেটি জানাচ্ছে ফিফার ৫১ পৃষ্ঠার সেই প্রতিবেদন। যেখানে বলা হয়েছে যে সোহাগ জালিয়াতি ও মিথ্যা তথ্য প্রদান করেছেন এবং বাফুফের তহবিল আত্মসাৎ ও অপব্যবহার করেছেন। এছাড়াও তিনি তার সাধারণ দায়িত্ব ও নৈতিক দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে ফিফার কোড অব এথিক্স ভঙ্গ করেছেন। যার মধ্যে ফিফার কাছ থেকে পাওয়া অর্থের খরচ দেখাতে গিয়ে একাধিক জালিয়াতির অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। আর এই আর্থিক জালিয়াতি সহজেই ফিফার তদন্ত কমিটির চোখে পড়েছে বাফুফে কয়েকটি ইংরেজি শব্দের বানান ভুল করায় ও ফিফার কাছে জমা দেয়া কাগজে ভুয়া নামে কিছু গায়েবি প্রতিষ্ঠানের উল্লেখ করায়।
ফিফার তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০ সালের জুন মাসে বাফুফে প্রায় ২৬ লাখ টাকার খেলার সরঞ্জাম কেনার জন্য দরপত্র আহ্বান করে। খেলাধুলার সরঞ্জাম বিক্রি করে- এমন তিনটি প্রতিষ্ঠান তাদের দরপত্র জমা দেয়েএবং একটি প্রতিষ্ঠানকে সরঞ্জাম সরবরাহের দায়িত্ব দেয়া হয় এবং সেই বছরের আগস্টে প্রতিষ্ঠানটিকে তাদের প্রাপ্য অর্থও দিয়ে দেয়া হয় বলে দাবি করে বাফুফে। বাফুফে যদিও দাবি করেছে যে এই পুরো প্রক্রিয়ায় তিনটি প্রতিষ্ঠান দরপত্র জমা দিয়েছে। কিন্তু ফিফার তদন্তে উঠে আসে যে তিনটি দরপত্র আসলে ভিন্ন নাম ব্যবহার করে একই ধাঁচে লেখা এবং এর পেছনে একটিই প্রতিষ্ঠান রয়েছে। আর প্রাথমিকভাবে তাদের এই সন্দেহ হয়, কারণ তিনটি দরপত্রেই ‘কোটেশন’ বানান একইভাবে ভুল করে লেখা হয়েছিল।
এরপর ২০১৯ সালে বিমানের টিকিট কেনার জন্য একটি ট্রাভেল এজেন্সিকে প্রায় ১৭ লাখ টাকা দেয় বাফুফে। সেবারও দরপত্র জমা দেয়া তিনটি ট্রাভেল এজেন্সির মধ্যে একটি এজেন্সিকে টিকিটের দায়িত্ব দেয়া হয় বলে দাবি করে বাফুফে। মজার বিষয় হলো, এক্ষেত্রেও তিনটি দরপত্রেই ‘রাউট’ শব্দের বানান ভুলভাবে লেখা হয়েছিল। আর তিনটি দরপত্র একই ধাঁচে, একই তারিখে এবং একই ফন্টে লেখা হয়েছিল। পরে ফিফার তদন্তে উঠে আসে যে এই দরপত্রগুলো আসলে জাল এবং শুধুমাত্র ফিফাকে জমা দেয়ার উদ্দেশ্যে এগুলো তৈরি করা হয়েছিল। আর্থিক লেনদেনের এরকম বেশ কয়েকটি জাল কাগজের বিষয় উঠে আসে ফিফার প্রতিবেদনে। কয়েকটি ক্ষেত্রে হাতে লেখা কাগজের ভিত্তিতে টাকা লেনদেনের প্রমাণও পেয়েছে তারা। এমনকি চালানপত্রের জায়গায় সাদা কাগজের ভিত্তিতেও আর্থিক লেনদেন দেখানো হয়েছে বলে উঠে এসেছে ফিফার তদন্তে।
এগুলো ছাড়াও ফিফার দেয়া অর্থ দিয়ে নারীদের পোশাকের দোকান থেকে ফুটবল কেনার তথ্য দেয়া, জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানকে ট্রাভেল এজেন্সি হিসেবে দেখানো, বছরের পর বছর ভুয়া নামে একের পর এক প্রতিষ্ঠান তৈরি করে আর্থিক লেনদেনের অনিয়ম ঢাকার চেষ্টা করার মত চেষ্টার মত কাজের প্রমাণ উঠে এসেছে ফিফার তদন্ত প্রতিবেদনে।
দেশের ফুটবলে এমনিতেই নেই সেই আগের উত্তাপ। গত চারবারের মেয়াদে এক সময়ের বাংলাদেশের সবচাইতে জনপ্রিয় এই খেলাটিকে অবহেলা, অযতœ আর নিজেদের স্বার্থ-সিদ্ধির জন্য খেয়াল-খুশিমতো ব্যবহারের নির্লজ্জ প্রতিযোগিতায় নেমেছিলেন কাজী সালাউদ্দিনের মতো সাবেক তারকা ফুটবলারও। তাকে বিভিন্নভাবে ব্যবহার করে ফুটবলকে কেন্দ্র করে রাতারাতি টাকার পাহাড় গড়েছেন এমন লোকোর সংখ্যাও কম নয়। তবে এবারের ফিফা কর্তৃক আর্থিক কেলেঙ্কারির দায়ে সোহাগকে নিষিদ্ধের পর বার বার সামনে আসছে বাফুফের সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদীর নাম। কেননা তিনিই হচ্ছে দেশের ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থাটির অর্থ কমিটির চেয়ারম্যান। ফিফা ৫১ পৃষ্ঠার তদন্ত রিপোর্টে বলা হচ্ছে, এ ঘটনার জন্য দায়ী সাধারণ সম্পাদক সোহাগ। তবে বাফুফে এটিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করে একটি মহলকে বাঁচাতে যেন উঠে পড়ে লেগেছে। সালাউদ্দিনের চোখে দোষি হচ্ছেন, বাফুফের সেসব কর্মকর্তার ‘আলসেমি’ ও ‘উদাসীনতা’, যারা ফিফার কাছে যথাযথভাবে নিজেদের সপক্ষে তথ্যপ্রমাণ হাজির করতে পারেননি। যাদের হাত দিয়ে বাফুফের আর্থিক লেনদেন হয়, হিসাব-নিকাশগুলো যারা দেখেন তারা। তাদের অপেশাদারির মাশুল গুনতে হচ্ছে এখন। কিন্তু ফিফার রায় বলছে, এই ঘটনা চলে আসছে সেই ২০১৬-১৭ সাল থেকে। বাফুফেকে সতর্কও করা হয়েছে একাধিকবার। নেওয়া হয়েছে ব্যবস্থাও। তবে এতদিন কেন সোহাগের ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বাফুফে? প্রশ্নটা আসছে মোটা দাগেই!
বিভাগ : খেলাধুলা
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
মমতাজ, তারানা হালিম, শমী কায়সারের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা মামলা
আখাউড়ায় মন্ডপ পরিদর্শনে এসে সন্তোষ প্রকাশ বিজিবি সেক্টর কমান্ডার
সউদী-ইরান বৈঠক লেবাননকে দ্বিতীয় গাজায় পরিণত হওয়া রোধ করবে?
সচিবরা ব্যবসায়ী, ব্যবসায়ীরা রাজনীতিবিদ হয়ে গেছেন- রাজশাহীতে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য
স্কয়ার গ্রুপের সিইও তপন চৌধুরী খুব স্বস্তিতে আছি
বিশ্বের সবচেয়ে ধনী সংগীতশিল্পী টেইলর সুইফট
প্রযোজকের বিরুদ্ধে করা শাকিব খানের মামলা খারিজ
ট্রাকে থাকতেই ডিম ৪ বার হাতবদল হয়’
দাদা সাহেব ফালকে পুরস্কার পেয়েছেন মিঠুন
অবন্তী-ক্রোনী গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতনে আদায়ে কমিটি গঠন
আসাদুজ্জামান খানের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
বগুড়ায় বাস মিনিবাস কোচ মালিক সমিতির কোটি কোটি টাকা লোপাটের চাঞ্চল্যকর তথ্য
কিশোরগঞ্জের সাবেক এমপি সোহরাব উদ্দিন গ্রেপ্তার
রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত পুলিশ বাহিনী প্রয়োজন
দুর্গা ও লক্ষী পুজায় সাতদিন আমদানি রপ্তানি বন্ধ থাকবে আখাউড়া স্থলবন্দরে
বিতর্কিত সেই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ঊর্মির বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা
অর্থ আত্মসাতের দায়ে নোয়াখালী মেডিকেলের সাবেক অধ্যক্ষসহ দুজনের নামে দুদকের মামলা
নামমাত্র জামানতে রূপালী ব্যাংকের ৩০৮ কোটি লুট
পিএসসিতে ৪ সদস্য নিয়োগ
বিএনপি নেতার নামে টিসিবি কার্ড সাবেক মেয়র-সচিবসহ তিন জনের নামে মামলা