ম্যারাডোনার স্মৃতি ফিরিয়ে নাপোলির শিরোপা
০৫ মে ২০২৩, ১১:০৩ পিএম | আপডেট: ০৬ মে ২০২৩, ১২:০১ এএম
‘ম্যাচটা ড্র হলো, তবে এটুকুই যথেষ্ঠ। আজ সারা পৃথিবী ঘুরতে পারে তবে নাপোলির আকাশ নিশ্চিতভাবে মাটির কাছে নেমে এসেছে। এই শহরে আগামীকাল বলে কিছুই নেই এখন। নেপলসে এখন কেবলই উৎসব। নাপোলি ও লুসিয়ানো স্পেলেত্তি অবশেষে ব্যাপারটা সাধন করলেন। ৩৩ বছরের অপেক্ষার অবশেষে অবসান। আবারও সিরি ‘আ’র চ্যাম্পিয়ন নাপোলি। বহুবার কাছাকাছি গিয়েও তাদের ফিরতে হয়েছিল খালি হাতে, যাতে লিখা আছে বহু হৃদয় ভাঙার গল্প। তবে এই কীর্তির পর নেপলসবাসীর জন্য স্পেলেত্তি ও তার ফুটবলাররা অমরত্ব পেয়ে গেল। এখন ম্যারাডোনা ও তার সতীর্থদের শ্রদ্ধাঞ্জলি দেওয়ার সময়।’ পরশুরাতে উদিনেস ও নাপোলির মধ্যকার সিরি ‘আ’র ম্যাচটি ১-১ গোলে ড্র হওয়ার পর এভাবেই পরিস্থিতির বর্ণনা করছিলেন ধারাভাষ্যকার। ১৯৯০ সালের পর আবারও যে, ইতালির সেরার মর্যাদা পেল নীল-সাদারা।
গত রোববার সালেরনিতানার সঙ্গে জিতলেই নিশ্চিত হতো নাপোলির শিরোপা। তবে ৮৪ মিনিটে গোল খেয়ে বসলে দীর্ঘায়িত হয় নাপোলির উৎসবের অপেক্ষা। মাঠে না নেমেই উৎসব করতে পারত নেপলসবাসীরা। সেই উৎসবে বাঁধ সাধে সাসসুয়োলোর বিপক্ষে লাৎসিওর জয়। পরশু রাতেও মনে হচ্ছিল নাপোলির সব উৎসব আয়োজনে বুঝি পানি ঢেলে দিতে যাচ্ছে উদিনেস। শুরুতে যে পিছিয়ে পড়েছিল নাপোলি। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে ম্যাচে সমতা ফিরিয়ে গোটা ইতালিকে যেন জাগিয়ে তুলে নেপলসের ক্লাবটি।
ক্লাব ইতিহাসের তৃতীয় লিগ শিরোপা নিশ্চিতের জন্য উদিনেসের বিপক্ষে এক পয়েন্ট প্রয়োজন ছিল নাপোলির। তবে উদিনেসের মাঠে মাত্র ১৩ মিনিটেই স্পেলেত্তির শিষ্যরা গোল হজম করে বসায় সমর্থকদের একটু নড়েচড়ে বসতে হয়। সে গোলে পিছিয়ে থেকেই বিরতিতে যায় তারা। দ্বিতীয়ার্ধের সপ্তম মিনিটেই সব শঙ্কার মেঘ দূরে ঠেলে দেন নাপোলির নাইজেরিয়ান স্ট্রাইকার ভিক্টর ওসিমেন। বক্সের প্রান্ত থেকে খাভিচা খাভারাস্কেলিয়ার নেয়া শট উদিনেস গোলকিপার কোনোমতে ঠেকিয়ে দিলেও ওসিমেনের ফিরতি শট রোখার সাধ্য ছিল না তার। স্নায়ুচাপের কারণেই কিনা কে জানে, ম্যাচের বাকি সময়ে দাপট দেখালেও জয়সূচক গোলটি আর পাওয়া হয়নি তাদের।
শিরোপা জয়ের পরই নাপোলি স্মরণ করছে এক বিশেষ ব্যক্তিকে। যার জন্ম নেপলসে হয়নি। ইতালির সবচেয়ে অবহেলিত এই শহরের সাথে ফুটবলের মাধ্যমেই তার সম্পর্ক শুরু। তিনি ১৯৯০ সালে প্রায় একক নৈপুণ্যে নাপোলিকে জিতিয়েছিলেন সবশেষ সিরি ‘আ’ স্কুদেত্তা। সেই মানুষটার সঙ্গে নেপলসের সম্পর্ক এখন এতটাই নিবড় যে শহরের অলি-গলিতে পাওয়া যাবে তার ছবি। রসিক মানুষরা বলেন এই শহরের প্রতিটা নারীর দুজন প্রেমিক! যার সাথে ঘর করছেন বা সংসার পাতার স্বপ্ন দেখেন তিনি, আরেকজন দিয়াগো ম্যারাডোনা। ওই যে উপরে যাকে বর্ণনা করা হচ্ছিল।
নাপোলিকে তিনি দুইবার ইতালির চ্যাম্পিয়ন ও একবার উয়েফা কাপের সেরা করছিলেন বলেই কি এই ভালবাসা? উত্তরটা আংশিক সত্য হলেও পুরোটুকু নয়! ম্যারাডোনা ইতালির বুর্জোয়া সমাজের চোখে চোখে রেখে, মাথা উঁচু করে বাঁচতে শিখিয়েছিলেন গোটা নেপলসকে! সব অবহেলা আর অবজ্ঞার প্রতিশোধ নিয়েছিলেন খেলার মাঠে। সেই শহরও তাকে তার ভালবাসার প্রতিদান দিতে কোন কার্পণ্য করেনি। তাইতো ৩৩ বছর পরে শিরোপা জয়ের সময়েও তার নামে সেøাগান, তার ছবিতে ছেয়ে গেছে নেপলস।
আর্জেন্টিনার হয়ে ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপ জেতার পরই, সবাইকে অবাক করে বার্সালোনা ছেড়ে নাপোলিতে নাম লিখিয়েছিলেন ম্যারাডোনা। ১৯৮৭ সালেই প্রথমবারের মত নাপোলিকে সিরি ‘আ’ শিরোপা এনে দেন। ৩৩ বছর পর যখন তৃতীয়বার স্কুদেত্তা জিতল ক্লাবটি, তখনও এক মজার সমীকরণ সামনে চলে আসে। ঠিক আগের বছরই ৩৬ বছরের শিরোপাক্ষরা কাটিয়ে বিশ্বসেরা হয়েছে আলবিসেলেস্তারা। একটা সময় এই সিরি ‘আ’ চ্যাম্পিয়নদের নেমে যেতে হয়েছিল সিরি ‘সি’তে। ২০০৪ সালে দেউলিয়াত্বের দুঃস্বপ্নও দেখতে হয়েছিল তাদের। তবে সব দুঃস্মৃতি পেছনে ঠেলে ম্যারাডোনার সুখস্মৃতি ফিরিয়েছেন খাভারাস্কেলিয়া-ওসিমেনরা।
উদিনেসের বিপক্ষে ম্যাচ শেষ হওয়ার আগেই প্রতিপক্ষের মাঠে খেলা দেখতে আসা প্রায় দশ হাজার দর্শক সেøাগান তুলছিলে, ‘আমরাই ইতালির চ্যাম্পিয়ন’ বলে। একই সময় নাপোলির ম্যারাডোনা স্টেডিয়ামে জায়ান্টস্ক্রিনে খেলা দেখছিলেন প্রায় ৫৫ হাজার দর্শক। উদিনেসের বিপক্ষে ড্র করার পর নাপোলির পয়েন্ট এখন ৩৩ ম্যাচে ৮০। লিগের বাকি ম্যাচগুলোতে নাপোলিকে পেছনে ফেলার সুযোগ নেই বাকিদের।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় লিখেছিলেন- কেউ কথা রাখেনি, তেত্রিশ বছর কাটলো, কেউ কথা রাখেনি। সত্যিই কি তাই? নাপোলি ১৯৯০ সালের সবশেষ স্কুদেত্তা জেতার পর গোটা পৃথীবি কত বদলেছে! কম্পিউটার ও ইন্টারনেটের জোয়ারে গোটা পৃথিবীর ভাষা, সংস্কৃতি, ব্যবসায় এখন আমূলে বদলে গিয়েছে। সোভিয়েত ইউনিয়েন ভেঙ্গে হয়েছে বহু টুকরা। সারা দুনিয়ার সহজ-সরল নীতি বদলে ফেলেছে ৯/১১। ফুটবল ছাপিয়ে বঞ্চিতদের ভাষা হয়ে যাওয়া ম্যারাডোনাও পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে এখন দূর আকাশের তারা। কেউ কথা রাখেনি’র লেখক সুনীলও পরলোকে। তবে কি আশ্চর্য! সমর্থকদের দেওয়া কথা নাপোলি ঠিকই রেখেছে। তারা আবারও ইতালির সেরা হয়েছে।
বিভাগ : খেলাধুলা
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ইত্তিহাদেই সিটিকে রুখে দিল ইন্টার
রোনালদোদের নতুন কোচ পিওলি
দক্ষিণ আফ্রিকাকে গুড়িয়ে আফগানদের ঐতিহাসিক জয়
যেই গৌরব কেবল শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের
রিট করে ‘খেলাপি ঋণ স্থগিত’ বন্ধ চান ব্যাংক-মালিকরা
বিদেশি ঋণ ফের ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে
টাকা উদ্ধারের নামে ‘ঘুষ’ চাওয়ার অভিযোগ জিএম শাহজাহান চৌধুরীর’র বিরুদ্ধে
জাতীয় ঐক্য বিনষ্টকারী কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে হবে
৬০ হাজার টন ইউরিয়া সার কিনবে সরকার, ব্যয় ২৩৬ কোটি টাকা
আইকনিক লিডার তারেক রহমান ও বাংলাদেশের রাজনীতি
পতিত স্বৈরাচার ও ভারতের চক্রান্ত চলছেই
তারেক রহমানের রাষ্ট্রনায়কোচিত বক্তব্য ও দিকনির্দেশনা
ইসরাইলের দখলদারিত্ব বন্ধের প্রস্তাব বিবেচনা জাতিসংঘের
উত্তপ্ত মণিপুরে অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে নতুন করে গোলাগুলি
২৭ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার নতুন ভ্যারিয়্যান্ট
২০০ হাতি নিধনের সিদ্ধান্ত জিম্বাবুয়ের
কলেরাসহ মারাত্মক রোগের ঝুঁকিতে সুদানের ৩৪ লাখ শিশু
১১ হাজার ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীর প্রাণ গেছে
বেলারুশে হামলা হলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবে : লুকাশেঙ্কো
তাইওয়ান প্রণালীতে চীনের যুদ্ধবিমান