ইউরো ২০২৪

১৮ বছর পর ঘরের মাঠে নিজেদের প্রমাণে মুখিয়ে জার্মানী, বড় হুমকি নিরাপত্তা

Daily Inqilab বাসস

১৩ মে ২০২৪, ০৪:১৩ পিএম | আপডেট: ১৩ মে ২০২৪, ০৪:১৩ পিএম

ছবি: ফেসবুক

২০০৬ সালে বিশ্বকাপ আয়োজনের মধ্য দিয়ে সবশেষ ঘরের মাঠে বড় কোন ফুটবল টুর্নামেন্টের স্বাগতিক হয়েছিল জার্মানি। ২০২৪ ইউরো চ্যাম্পিয়নশীপ সেই স্মৃতিকে আবারো ফিরিয়ে আনার উপলক্ষ্য করে দিয়েছে। ফুটবল পাগল জাতি হিসেবে পরিচিত জার্মানরা চায় সফল আয়োজনের পাশাপাশি নিজেদের হারানোর গৌরব আবারো ফিরে পেতে।

গ্রীষ্মকালীন রূপকথা হিসেবে এবারের ইউরোকে বিবেচনা করছে জার্মানরা। বিশ্বের কাছে নিজেদের পুরনো শক্তিমত্তা নতুনভাবে ফিরিয়ে আনাই এখন তাদের সামনে একমাত্র লক্ষ্য।

১৮ বছর আগে জার্গেন ক্লিন্সম্যানের অধীনে সেমিফাইনালে খেলেছিল জার্মানী। যদিও টুর্নামেন্টের আগে শেষ চারের লক্ষ্যের কথাই বারবার জার্মানরা বলেছিল। সেমিফাইনালে অতিরিক্ত সময়ে ইতালির কাছে পরাজিত হয়ে শেষ পর্যন্ত তৃতীয়  হয় স্বাগতিকরা। প্রায় এক দশক পর ব্রাজিলে আবারো শিরোপা জিতে কিছুটা হলেও আত্মবিশ্বাস ফিরে পায় মিরোস্লাভ ক্লোজা, সামির খেদিরা, থমাস মুলার, টনি ক্রুসের দল।

আট বছর পর চতুর্থ বিশ্বকাপ শিরোপা জয়ের পর অধিনায়ক ফিলিপ লাম বলেছিলেন, ‘২০০৬ সালে পুরো জাতি যেভাবে আমাদের সাথে ছিল আমরা সেটা উপলব্ধি করতে পেরেছিলাম। সেটাই আমাদের সাহস ও শক্তি যুগিয়েছে। সবাই মিলে আজ আমরা যেভাবে এই জয় উদযাপন করবো তা চিন্তাও করতে পারছি না। এটা পুরো জাতিকে উৎসবের আমেজ দিয়েছে।’

ঐ আসরের সময় জার্মানীর আর্থিক অবস্থা বেশ নিম্মমূখী ছিল। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনায় বিশ্বকাপের শিরোপাটি ঐ সময় জার্মানীকে পুরো বিশ্বের কাছে অন্য এক পরিচয় উপহার দিয়েছিল। প্রথম ম্যাচে কোস্টা রিকার বিপক্ষে ফিলিপ লামের গোলের পর থেকে জার্মান দল যেন অন্য এক উত্তেজনায় নিজেদের উন্নীত করে।

১৮ বছর পর জার্মানীর সাথে সাথে পুরো বিশ্বও পরিবর্তিত হয়েছে। আবারো জার্মানীর আর্থিক পরিস্থিতি খুব একটা সুবিধাজনক অবস্থানে নেই। দেশটির অবকাঠামো উন্নতিও বাঁধার সম্মুখীন হয়েছে। যার প্রভাব অতি সম্প্রতি ফুটবল মাঠেও দেখা যাচ্ছে। অনেকেই মনে করছে আবারো ফুটবলের মাধ্যমে অনেক কিছুই পরিবর্তন করা সম্ভব।

টানা দুটি বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায়ের হতাশা কাটিয়ে জার্মানরা এবার কোচ জুলিয়ান নাগলসম্যানের কাঁধে চড়ে নিজেদের ফিরিয়ে আনতে চায়। ২০২৩ সালে তারা ১১টি ম্যাচের মধ্যে মাত্র তিনটিতে জয়ী হয়েছে। কিন্তু মার্চে ফ্রান্স ও নেদারল্যান্ডসকে প্রীতি ম্যাচে হারিয়ে শক্তিশালী ভাবে ফিরে এসেছে। ইউরোতে ফলাফল যাই হোক না কেন জাতীয়ভাবে এর প্রভাব থাকবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

আসন্ন ইউরোকে সামনে রেখে সমর্থক ও খেলোয়াড়দের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জার্মানদের সামনে এখন অনেক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে ইউক্রেন ও মধ্যপ্রাচ্যে দুটি বড় সহিংসতা চলমান থাকায় পুরো বিশ্ব পরিস্থিতিই এখন হুমকির মুখে। হুলিগান থেকে শুরু করে সম্ভাব্য সন্ত্রাসী হামলার পাশাপাশি সাইবার এ্যাটাককেও গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করছে ইউরোপীয়ান চ্যাম্পিয়নশীপ আয়োজকরা। প্রায় আড়াই লাখ মিলিয়নেরও বেশী সমর্থকের সাথে ২৪টি দলের বেস ক্যাম্প, দশটি স্টেডিয়াম মিলে বিশাল একটি অংশকে সারাক্ষন নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে রাখতে হবে। আগামী ১৪ জুন থেকে ১৪ জুলাই পর্যন্ত চলবে ইউরো চ্যাম্পিয়নশীপ। এছাড়াও প্রতিযোগিতার অনুমোদিত নির্দিষ্ট কিছু ফ্যান জোনেও প্রায় ১২ মিলিয়ন প্রত্যক্ষদর্শীর উপস্থিতির কথা রয়েছে।

২০১৪ বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক ও এবারের টুর্নামেন্ট পরিচালক ফিলিফ লাম বলেছেন, ‘সব মিলিয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।

টুর্নামেন্টের নজিরবিহীন পদক্ষেপ হিসেবে জার্মানী টুর্নামেন্টে অংশ নেয়া দেশগুলোর কাছ থেকে প্রায় ৩০০ নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞকে আমন্ত্রন জানিয়েছে। তারা টুর্নামেন্ট চলাকালীন জার্মানীর পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর নেসাসে অবস্থিত ইন্টারন্যাশনাল পুলিশ কোঅপারেশন সেন্টারের (আইপিসিসি) সাথে প্রকল্প মনিটরিংয়ে কাজ করবে।

এছাড়া পুরো আয়োজনের সুষ্ঠ পরিচালনায় জার্মানী, ইউরোপোল ও ইউরোপীয়ান ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থা উয়েফার বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা তো রয়েছেনই। মাঠের প্রতিদিনের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষনে প্রায় ৫০০ বর্গফুটের কনফারেন্স রুমে ১২৯টি কম্পিউটার ও ৪০ স্কয়ার মিটার স্ক্রিনের মনিটরে তারা সার্বক্ষনিক কাজ করবে।

এ প্রসঙ্গে আইপিসিসির পরিচালক অলিভার স্ট্রুথফ বলেছেন, সমর্থকের সংখ্যার উপর নির্ভর করে প্রতিনিধি দলের সংখ্যা ঠিক  করা হবে। একইসাথে তারা কতটা বিপদজনক সেটাও আগে থেকেই পর্যবেক্ষন করা হবে। উদাহরন হিসেবে বলা যায় সুইজারল্যান্ডের তুলনায় স্বাভাবিক ভাবেই ইংল্যান্ডের প্রতিনিধি অনেক বেশী হবে।

জার্মানী তাদের নয়টি সীমান্তবর্তী এলাকায়ও নিরাপত্তা জোরদার করেছে। প্রতিটি ট্রেন স্টেশনে ফেডারেল পুলিশ তাদের উপস্থিতি নিশ্চিত করবে। একইভাবে বিমানবন্দর গুলোতেও তারা সমান দায়িত্ব পালন করবে।

ব্রিটিশ সরকার জানিয়েছে ১৬০০রও বেশী ইংলিশ ও ওয়েলস সমর্থককে ইতোমধ্যেই তাদের অতীত আচরনের জন্য জার্মানী সফরে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।

এদিকে ইউক্রেনিয়ার জাতীয় দলের জন্য পৃথক নিরাপত্তা ব্যবস্থার আয়োজন করা হচ্ছে। প্রতিদিনের ম্যাচে স্টেডিয়ামগুলোতে দলের উপর নির্ভর করে ৮০০ থেকে ১৩০০ পুলিশ বাড়তি নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবে। প্রতিটি স্টেডিয়ামে প্রবেশের আগে তিনটি নিরাপত্তা বেষ্টনি পার হতে হবে। প্রথমে তাদের গাড়ী তল্লাশি করা হবে। দ্বিতীয় বেষ্টনিতে তাদের ব্যাগ ও তৃতীয়টিতে টিকেট স্ক্যান করা হবে।

ফ্যান জোনগুলোও নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জের বাইরে নয়। বিশেষ করে বার্লিনে ব্র্যান্ডেনবার্গ গেটে প্রতিদিন হাজার হাজার সমর্থকের উপস্থিতি আশা করা হচ্ছে। 

জার্মান সেনাবাহিনী ন্যাশনাল এয়ার সিকিউরিটি সেন্টারের তত্বাবধানে প্রতি ম্যাচে আকাশে টহল দেবে।  ড্রোনের ব্যবহারও খুব নিখুঁতভাবে পর্যবেক্ষন করা হবে।


বিভাগ : খেলাধুলা


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

সাকাকে হারিয়ে চিন্তিত আর্সেনাল কোচ
টিভিতে দেখুন
ঘরের মাঠে হেরে শীর্ষস্থান খোয়ালো বার্সা
রুট থাকলেও নেই স্টোকস
রাগবিতে এসএইচএ চ্যাম্পিয়ন
আরও

আরও পড়ুন

এনার্জিপ্যাকের বার্ষিক সাধারণ সভায় ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনার ওপর গুরুত্বারোপ

এনার্জিপ্যাকের বার্ষিক সাধারণ সভায় ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনার ওপর গুরুত্বারোপ

আমার খাবার কি ফর্টিফায়েড?

আমার খাবার কি ফর্টিফায়েড?

হাসিনা পরিবারের নামে ১৩ বিশ্ববিদ্যালয়, ইউজিসি তাকিয়ে আছে সরকারের দিকে

হাসিনা পরিবারের নামে ১৩ বিশ্ববিদ্যালয়, ইউজিসি তাকিয়ে আছে সরকারের দিকে

ব্র্যাক ব্যাংকের রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড অর্জন

ব্র্যাক ব্যাংকের রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড অর্জন

দিনাজপুর জেলা শিক্ষা অফিসারের বিদায়ী সংবর্ধনা

দিনাজপুর জেলা শিক্ষা অফিসারের বিদায়ী সংবর্ধনা

নরসিংদীর শিবপুরে প্লাস্টিক কারখানা আগুনে পুড়ে ছাই

নরসিংদীর শিবপুরে প্লাস্টিক কারখানা আগুনে পুড়ে ছাই

ডিসেম্বরে রেমিট্যান্স শূন্য যে ১০ ব্যাংকে

ডিসেম্বরে রেমিট্যান্স শূন্য যে ১০ ব্যাংকে

বিএনপি নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতায় আসতে চায় না: আব্দুস সালাম

বিএনপি নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতায় আসতে চায় না: আব্দুস সালাম

সরকারের আশ্বাসে শাহবাগ থেকে সরে গেলেন বিএসএমএমইউ ট্রেইনি চিকিৎসকরা

সরকারের আশ্বাসে শাহবাগ থেকে সরে গেলেন বিএসএমএমইউ ট্রেইনি চিকিৎসকরা

সাকাকে হারিয়ে চিন্তিত আর্সেনাল কোচ

সাকাকে হারিয়ে চিন্তিত আর্সেনাল কোচ

৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের প্রস্তাব জমা হবে : বদিউল আলম মজুমদার

৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের প্রস্তাব জমা হবে : বদিউল আলম মজুমদার

সিনিয়র সচিব ড. নাসিমুল গনিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বদলী

সিনিয়র সচিব ড. নাসিমুল গনিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বদলী

মানিকগঞ্জের ঘিওরে ছাত্রদল নেতা লাভলু হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন

মানিকগঞ্জের ঘিওরে ছাত্রদল নেতা লাভলু হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন

বঙ্গবাজার পুড়ে যাওয়া মামলায় একজন গ্রেফতার

বঙ্গবাজার পুড়ে যাওয়া মামলায় একজন গ্রেফতার

জনগণের প্রত্যাশা পূরণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ধীর গতিতে চলছে: আমিনুল হক

জনগণের প্রত্যাশা পূরণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ধীর গতিতে চলছে: আমিনুল হক

জমকালো আয়োজনে পালিত হলো বান্দরবান সেনাবাহিনীর ৬৯ ব্রিগেডের ৪৮ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী

জমকালো আয়োজনে পালিত হলো বান্দরবান সেনাবাহিনীর ৬৯ ব্রিগেডের ৪৮ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী

সাবেক মন্ত্রী কায়কোবাদের সঙ্গে তুর্কী এমপির সাক্ষাৎ

সাবেক মন্ত্রী কায়কোবাদের সঙ্গে তুর্কী এমপির সাক্ষাৎ

বিহারীরা কেমন আছে

বিহারীরা কেমন আছে

ব্রাহ্মণপাড়ায় ধর্ষণের শিকার হতদরিদ্র প্রতিবন্ধী যুবতীর সন্তান প্রসব! আতংকে ভুক্তভোগী পরিবার

ব্রাহ্মণপাড়ায় ধর্ষণের শিকার হতদরিদ্র প্রতিবন্ধী যুবতীর সন্তান প্রসব! আতংকে ভুক্তভোগী পরিবার

মোরেলগঞ্জে উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতির ১৩ তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত

মোরেলগঞ্জে উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতির ১৩ তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত