‘ফাইট নাইট’ মাতাতে এখন ঢাকায়

রোকসানার প্রতিবাদের ভাষা কিক বক্সিং

Daily Inqilab স্পোর্টস রিপোর্টার

১৯ মার্চ ২০২৩, ১০:৫৬ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ০৩:০৮ পিএম

কিক বক্সিংয়ের লড়াই সাধারণ বক্সিংয়ের চেয়ে বেশ ভিন্ন। সাধারণ বক্সিং প্রতিযোগিতায় বক্সাররা শুধু হাতে ব্যবহার করতে পারে। কিন্তু কিক বক্সিংয়ে রিংয়ে থাকা দুই বক্সার হাতের পাশাপাশি পা,কনুই ও হাঁটুর যথাযথ ব্যবহার করে লড়াই করতে পারেন। সাধারণ বক্সিংয়ের তুলনায় কিক বক্সিংয়ের একজন বক্সারকে আধুনিক কৌশল জানার পাশাপাশি অনেক বেশি শারীরিক শক্তির অধিকারী হতে হয়। যে কারণে কিক বক্সিং প্রতিযোগিতায় সব বক্সাররা অংশ নিতে সাহস করেন না। আর নারীদের বেলায় তো সংখ্যাটা একেবারেই কম।
তবে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ কিক বক্সার রোকসানা বেগমের গল্পটা একটু অন্যরকম। তিনি শুধু কিক বক্সিংয়ে নামই লেখান নি, খুব অল্প সময়ে রিংয়ে নিজের যোগ্যতা ও দক্ষতা প্রমাণ করে বক্সিং দুনিয়ায় নিজে চিনিয়েছেন অন্যরূপে। অসাধারণ এই অর্জনের রাস্তাটা তার মোটেও মসৃণ ছিলনা। কিক বক্সিংয়ে সেরা হওয়ার জন্য শারীরিকভাবে নিজেকে প্রস্তুত করার পাশাপাশি তাকে লড়াই করতে হয়েছে বাস্তবিক জীবনে আসা নানা প্রতিকূলতার সঙ্গেও।
রোকসানা একে তো নারী তার ওপর রক্ষণশীল মুসলমান পরিবারে তার জন্ম। পেশাদার বক্সিংকে ক্যারিয়ার হিসেবে নেওয়ার চিন্তা করাটাও যে বাস্তব জীবনে অনেক বেশি কঠিন। তবে অদম্য ইচ্ছা শক্তি আর কঠোর পরিশ্রমী এই নারী হার মানেন নি। বিশ্বসেরা বক্সার হওয়ার স্বপ্ন সফল করার জন্য চেষ্টা করে গেছেন ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই। পরিবার তাকে অনুমতি দেবেনা, এ কারণে শুরুতে নিজ বাড়ি থেকে অল্প দূরত্বে থাকা একটি জিমে গোপনে অনুশীলন পর্ব সারতেন রোকসানা। অনুশীলনের সময় অসংখ্যবার হাতে-পায়ে চোট পাওয়ার পরেও দমে যাননি তিনি।
তার প্রথম কোচ বিল জুড বক্সিংয়ের কঠিন নিয়ম-কানুনের ব্যাপারে শুরুতে রোকসানাকে সতর্ক করলেও পরে তার হার না মানা মনোবল দেখে সহযোগিতা করেন। কোচের সহযোগিতা নিয়ে ধীরে ধীরে নিজেকে প্রস্তুত করে ১৮ বছর বয়সেই রোকসানা মুয়ো থাই বক্সিং দিয়ে নিজের ক্যারিয়ার শুরু করেন। তবে বছর পাঁচেক পরে ঘটে আরেক বিপত্তি। পড়াশোনা শেষে পারিবারিক সম্মতিতে বিয়ে করায় মুখ থুবড়ে পড়ে রোকসানার বক্সিং ক্যারিয়ার। নিজের স্বপ্নের জগৎ ছেড়ে ঘরের চার দেয়ালে বন্দি জীবনযাপন মোটেও পছন্দ নয় রোকসানার। অন্যদিকে শ্বশুরবাড়ির লোকজনের রূঢ় ব্যবহারে কয়েক মাস যেতে না যেতে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। চিকিৎসকের পরামর্শে ফেরেন নিজের বাড়িতে। সেখানে কিছুটা স্বস্তিতে থাকলেও রোকসানা বেগমের মন পড়েছিল বক্সিংয়ের জগতে। দীর্ঘদিন পর পরিবারকে অনেক কষ্ঠে রাজি করিয়ে ফের বক্সিং রিংয়ে ফেরেন তিনি। অনুশীলনের জন্য জিমে ফিরে অন্যান্য শ্বেতাঙ্গ নারী বক্সারদের নিয়মিত টিটকারি, অশোভন স্লেজিংয়ের শিকার হন রোকসানা। তবে সবকিছু পাশ কাটিয়ে চালিয়ে যান নিয়মিত অনুশীলন।
২০১১ সালে রোকসানা কোনো পেশাদার কোিচ ছাড়াই ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপ জিতে সবাইকে চমকে দেন। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। ২০১৬ সালে বক্সিংয়ে বিশ্বসেরার টাইটেল জেতেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এই ব্রিটিশ। ২০১৮ সাল থেকে শুরু করেন পেশাদার বক্সিংয়ে অংশ নেয়া। এখানেও পেেেছন অসামান্য সাফল্য।
তারকা এই কিক বক্সার এখন বাংলাদেশে অবস্থান করছেন। আগামীকাল ঢাকার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে অনুষ্ঠেয় ‘বেক্সিমকো এক্সবিসি ফাইট নাইট’ নামের একটি কিক বক্সিং ইভেন্টে অংশ নিতে যাচ্ছেন তিনি। ফিমেল বাউটে তার বিপরীতে রিংয়ে থাকবেন বাংলাদেশ আনসারের একজন নারী সদস্য। প্রতিযোগিতাকে সামনে রেখে এবং রোকসানার ঢাকা আগমন উপলক্ষে আজ সকাল ১১টায় গুলশান ক্লাবে একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছে বাংলাদেশ বক্সিং ফাউন্ডেশন (বিবিএফ)।


বিভাগ : খেলাধুলা


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

মর্মস্পর্শী ভিডিওর মাধ্যমে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের দল দিল ফিলিস্তিন
মেসির দুর্দান্ত গোল, মায়ামির হ্যাটট্রিক
দুই গোলে পিছিয়ে থেকেও শেষের নাটকীয় প্রত্যাবর্তনে জিতল বার্সা
ব্রুনো-হয়লুন্দের গোলে ইউনাইটেডের সহজ জয়
লিভারপুলকে হারিয়ে ৭০ বছর পর  শিরোপার স্বাদ নিউক্যাসলের
আরও
X

আরও পড়ুন

সাটুরিয়া প্রেসক্লাবের ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত

সাটুরিয়া প্রেসক্লাবের ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত

বরিশাল মহানগরীতে জাতীয় মহাসড়কের ওপর সিটি কর্পোরেশনের মরনফাঁদ অপসারন করবে কে?

বরিশাল মহানগরীতে জাতীয় মহাসড়কের ওপর সিটি কর্পোরেশনের মরনফাঁদ অপসারন করবে কে?

সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি যুবদলের আহ্বান

সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি যুবদলের আহ্বান

র‌্যাব পরিচয়ে চাঁদাবাজি মির্জাপুরে অবসরপ্রাপ্ত আনসার সদস্য গ্রেপ্তার

র‌্যাব পরিচয়ে চাঁদাবাজি মির্জাপুরে অবসরপ্রাপ্ত আনসার সদস্য গ্রেপ্তার

মর্মস্পর্শী ভিডিওর মাধ্যমে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের দল দিল ফিলিস্তিন

মর্মস্পর্শী ভিডিওর মাধ্যমে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের দল দিল ফিলিস্তিন

পাংশায় যৌথবাহিনীর অভিযানে অস্ত্র-গুলিসহ একজন গ্রেপ্তার

পাংশায় যৌথবাহিনীর অভিযানে অস্ত্র-গুলিসহ একজন গ্রেপ্তার

পুলিশকে অবহেলা করে দেশ গড়া যাবে না : প্রধান উপদেষ্টা

পুলিশকে অবহেলা করে দেশ গড়া যাবে না : প্রধান উপদেষ্টা

সিআইডির প্রধানের দায়িত্ব নিলেন ডিআইজি গাজী জসীম উদ্দিন

সিআইডির প্রধানের দায়িত্ব নিলেন ডিআইজি গাজী জসীম উদ্দিন

সালথায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ : বাড়িঘর ভাংচুর

সালথায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ : বাড়িঘর ভাংচুর

এসবিএসি ব্যাংকের এমডি হাবিবুর রহমানের পদত্যাগ

এসবিএসি ব্যাংকের এমডি হাবিবুর রহমানের পদত্যাগ

জেলেনস্কি-কার্নির বৈঠক, রাশিয়ার বিরুদ্ধে চাপ ও সামরিক সহায়তা

জেলেনস্কি-কার্নির বৈঠক, রাশিয়ার বিরুদ্ধে চাপ ও সামরিক সহায়তা

ডিএমটিসিএল কর্মীদের মারধরের ঘটনায় ২ পুলিশ সদস্য বরখাস্ত

ডিএমটিসিএল কর্মীদের মারধরের ঘটনায় ২ পুলিশ সদস্য বরখাস্ত

নিয়মিত অফিস করেন না উপজেলা স্বাস্থ্য পরিদর্শক ইনচার্জ সহিদ উল্লাহ

নিয়মিত অফিস করেন না উপজেলা স্বাস্থ্য পরিদর্শক ইনচার্জ সহিদ উল্লাহ

মতলবে সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় পার্টির শতাধিক নেতাকর্মীর পদত্যাগ

মতলবে সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় পার্টির শতাধিক নেতাকর্মীর পদত্যাগ

ঈদে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়ায় চলাচল করবে ১৭টি ফেরি ও ২২টি লঞ্চ

ঈদে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়ায় চলাচল করবে ১৭টি ফেরি ও ২২টি লঞ্চ

আমাদেরকে একটু ধৈর্য ধারণ করতে হবে : মির্জা ফখরুল

আমাদেরকে একটু ধৈর্য ধারণ করতে হবে : মির্জা ফখরুল

মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসকের অফিসিয়াল ফোন ক্লোন করে অর্থ দাবি

মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসকের অফিসিয়াল ফোন ক্লোন করে অর্থ দাবি

সাতক্ষীরায় ৫০০ অতি দরিদ্রদের মাঝে রেডক্রিসেন্টের রমজান ফুড প্যাকেজ বিতরণ

সাতক্ষীরায় ৫০০ অতি দরিদ্রদের মাঝে রেডক্রিসেন্টের রমজান ফুড প্যাকেজ বিতরণ

মালয়েশিয়ার ইফতার মাহফিলে প্রবাসীদের মিলন মেলা

মালয়েশিয়ার ইফতার মাহফিলে প্রবাসীদের মিলন মেলা

আদালতে কাঁদলেন শাজাহান খান, হাসতে হাসতে গেলেন হাজতখানায়

আদালতে কাঁদলেন শাজাহান খান, হাসতে হাসতে গেলেন হাজতখানায়