বক্সিংই যার ধ্যানজ্ঞান
১২ এপ্রিল ২০২৩, ১১:৫০ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ১১:৩৭ পিএম
ফুটবল, ক্রিকেট এবং হকির পরই বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা রয়েছে বক্সিংয়ের। দেশে খেলাটির প্রসার ঘটাতে বাংলাদেশ অ্যামেচার বক্সিং ফেডারেশনের পাশাপাশি ব্যাক্তিগত পর্যায়ে বেশ কিছু সংগঠন নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। যার অন্যতম হচ্ছে বাংলাদেশ বক্সিং ফাউন্ডেশন (বিবিএফ)। সাবেক বক্সার আদনান হারুনের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় গত প্রায় দেড় বছর আগে আত্মপ্রকাশ ঘটে বিবিএফের। সংগঠনটির চেয়ারম্যান আদনান হারুন নিজেই। তিনি বাংলাদেশ অ্যামেচার বক্সিং ফেডারেশনের নতুন নির্বাচিত নির্বাহী কমিটির সদস্যও। বক্সিংই যার ধ্যানজ্ঞান। পেশাগত জীবনে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী হলেও বক্সিংকে ভালোবাসেন বলেই খেলাটির উন্নয়নে নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছেন। নিজ অর্থায়নে বিবিএফের সকল কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। বাংলাদেশ বক্সিং ফেডারেশন ও পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা নিয়ে গত এক বছরের মধ্যে তিনটি আন্তর্জাতিক পেশাদার বক্সিং প্রতিযোগিতা ও দু’টি ঘরোয়া টুর্নামেন্টের আয়োজন করে ক্রীড়াপ্রেমীদের বাহবা কুড়িয়েছেন আদনান হারুন।
ওয়ার্ল্ড বক্সিং কাউন্সিলের (ডাব্লিউবিসি) অনুমোদনে এবং এক্সেল স্পোর্টস ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড প্রমোশনের ব্যবস্থাপনায় গত বছরের মে মাসে মিরপুরের শহীদ সোহরাওয়ার্দী ইনডোর স্টেডিয়ামে দ্য আল্টিমেট গ্লোরি নামের প্রথম পেশাদার আন্তর্জাতিক বক্সিং প্রতিযোগিতার আয়োজন করে বিবিএফ। এ আসরে ভারত, নেপাল ও বাংলাদেশের পেশাদার বক্সাররা অংশ নেন। দেশে প্রথম আন্তর্জাতিক এই পেশাদার বক্সিং প্রতিযোগিতায় আলো ছড়িয়েছিলেন বাংলাদেশের দুই তারকা বক্সার সুরকৃষ্ণ চাকমা ও আল-আমিন। মে মাসের এই আয়োজনের পর আর থেমে থাকেনি বিবিএফে। একে একে আরও দু’টি করে আন্তর্জাতিক ও ঘরোয়া টুর্নামেন্টের আয়োজন করে তারা। জুলাই মাসে মোহাম্মদ আলী বক্সিং স্টেডিয়ামে রাম্বল ইন গুলিস্তান-১ ও অক্টোবরে একই ভেন্যুতে রাম্বল ইন গুলিস্তান-২ নামের ঘরোয়া প্রো-বক্সিং টুর্নামেন্ট আয়োজন করে সবার নজর কাড়ে বিবিএফ। গত বছরের নভেম্বরে এই সংগঠনটি বনানীর সোয়াট মাঠে আয়োজন করে ‘ব্যাড ব্লাড বনানী’ নামের আন্তর্জাতিক প্রতীকী বক্সিং প্রতিযোগিতা। এ আসরে সর্বোচ্চ সংখ্যক ১২ জন নারী বক্সার অংশ নেন।
বাংলাদেশ বক্সিং ফাউন্ডেশনের (বিবিএফ) সর্বশেষ আয়োজনটি ছিল চলতি বছরের ২১ মার্চ। এক্সেল স্পোর্টস ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড প্রমোশনের ব্যবস্থাপনায় ও বেক্সিমকো গ্রুপের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশে দ্বিতীয়বারের মতো আয়োজন করা হয় আন্তর্জাতিক পেশাদার বক্সিং ফাইট নাইট। যার নামকরণ ছিল বেক্সিমকো এক্সবিসি ফাইট নাইট। রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে অনুষ্ঠিত এ প্রতিযোগিতায় অংশ নেন স্বাগতিক বাংলাদেশ, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, ভারত এবং থাইল্যান্ডের বক্সাররা। গত বছরের পেশাদার বক্সিং প্রতিযোগিতার বিজয়ীরা বাংলাদেশের বক্সার সুরকৃষ্ণ চাকমা এবং আল-আমিন ছাড়াও এ আসরে খেলেছেন বাংলাদেশি বংশদ্ভুত ব্রিটিশ কিক বক্সার রুকসানা বেগম ও বাংলাদেশ আনসারের প্রতিভাবান নারী বক্সার তানজিলা।
প্রতিযোগিতায় মোট ১৪ জন বক্সার বিভিন্ন ওজনের ৭টি শ্রেণিতে লড়াই করেন। ওজন শ্রেণিগুলো হচ্ছে- ফেদারওয়েট, লাইট হেভিওয়েট, ব্যান্টামওয়েট, ক্রুজারওয়েট, ফ্লাই ওয়েট, লাইটওয়েট এবং ওয়েল্টারওয়েট। ফেদারওয়েটে ছয় রাউন্ডের বাউটে দুই বাংলাদেশি বক্সার উৎসব আহমেদ এবং আমিনুল ইসলামের মধ্যকার লড়াই দিয়ে টুর্নামেন্টটি শুরু হয়। প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ছয় রাউন্ডের বাউটে আমিনুলের বিপক্ষে জয় পান উৎসব। লাইট হেভিওয়েটে টিকেও (টেকনিক্যাল নকআউট) এ ৩ রাউন্ডের খেলায় শাহরিয়ার শান্তকে হারিয়ে দেন জাহিদুল ইসলাম। স্থানীয় নায়ক আবু তালহা হৃদয় ব্যান্টামওয়েটে চার রাউন্ডের লড়াইয়ের পর ভারতীয় বক্সার আশিস কুমারকে হারিয়ে বাংলাদেশকে গর্বিত করেন। অপরদিকে, ফরাসি বক্সার এলিয়ট মিশেল ক্রুজারওয়েটে বাংলাদেশি বক্সার মো. কাওসার আলীকে হারান। পঞ্চম লড়াইয়ে ডব্লিউবিইউ ইন্টারকন্টিনেন্টাল খেতাবের জন্য ব্রিটিশ-বাংলাদেশি সুপারস্টার রুকসানা বেগম ফ্লাইওয়েট বিভাগে বাংলাদেশের প্রতিভাবান বক্সার তানজিলা মুখোমুখি হন। দুই নারী বক্সারের মধ্যেকার ম্যাচটিই সবচেয়ে বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়ে ওঠে যেখানে ১০ রাউন্ডে দুর্দান্ত লড়াইয়ের পর তানজিলার বিপরীতে রুকসানা বেগম ডব্লিউবিইউ ইন্টারকন্টিনেন্টাল শিরোপা জিতে নেন। লাইটওয়েট বিভাগে ষষ্ঠ বাউটে থাইল্যান্ডের আনান পংখেতের প্রতিপক্ষ হয়ে লড়াই করেন বাংলাদেশের সুপারস্টার সুরকৃষ্ণ চাকমা। দ্রুততম হাতের অধিকারী হিসেবে পরিচিত রাঙ্গামাটির ছেলে সুরকৃষ্ণ ফাইট করতে নেমে আনান পংখেতকে দুই রাউন্ডে নক আউট করে দেন। সপ্তম এবং শেষ লড়াইয়ে বাংলাদেশের আল-আমিন ওয়েল্টারওয়েট বিভাগে তার ভারতীয় প্রতিপক্ষ দুষ্যন্ত শ্রীবাস্তবের কাছে হেরে যান।
এক বছরের মধ্যে পাঁচটি প্রতিযোগিতা আয়োজন করা সত্যিই কষ্টদায়ক। তবে সব কষ্টকে হাসিমুখে বরণ করে নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছেন আদনান হারুন। একটাই কারণ, আর তা হচ্ছে বক্সিংয়ের প্রতি ভালোবাসা। গতকাল তিনি বলেন, ‘নিজে বক্সার ছিলাম। খেলাটি খুব বেশি ভালোবাসি। মূলত এই ভালোবাসার কারণেই বক্সিং উন্নয়নে কাজ করছি। আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি ভবিষ্যতে বক্সিংয়ের মাধ্যমে লাল-সবুজের পতাকা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পৌঁছে যাবে।’ বিবিএফের চেয়ারম্যান জানান, অ্যামেচার ও পেশাদার বক্সিংয়ে অনেক পার্থক্য রয়েছে। তিনি মনে করেন, যদি অ্যামেচার বক্সিং হাই স্কুল হয়, তবে পেশাদার বক্সিং বিশ্ববিদ্যালয়।
আদনান হারুন আরও বলেন, ‘আমার লক্ষ্য শুধু প্রতিযোগিতা আয়োজন করাই নয়, এর মাধ্যমে নিজ দেশের বক্সারদের আর্থিকভাবে ও প্রশিক্ষণে সহযোগিতা করা। বিবিএফের আয়োজনে সর্বশেষ ৫টি প্রতিযোগিতায় স্থানীয় বক্সাররা নিয়মিত অনুশীলনের পাশাপাশি খেলায় অংশ নিয়ে অর্থ সহায়তাও পেয়েছেন।’ তিনি যোগ করেন, ‘১৮ কোটি মানুষের আমাদের এই দেশে এমন অনেকেই আছেন যারা দেশের খেলাধুলার উন্নয়নে নিয়মিত সহযোগিতা করতে পারেন। যদি তাদের সদিচ্ছা থাকে। আমি আমার সীমিত সামর্থের মধ্যে সব সময় চেষ্টা করি দেশের বক্সিং উন্নয়নে কাজ করতে। একজন সাবেক বক্সার হিসেবে বলতে পারি আমৃত্যু আমি বাক্সিংয়ের সাথেই থাকব।’ শুধু প্রতিযোগিতার আয়োজন করেই নিজের দায়িত্ব শেষ করতে চান না আদনান। তার ভবিষ্যত পরিকল্পনা হচ্ছে দেশে একটি বক্সিং একাডেমি করার। যেখানে প্রাথমিকভাবে অ্যামেচার বক্সাররা তৈরি হবে এবং পরবর্তীতে তাদের পেশাদার হিসেবে গড়ে তুলব। একাডেমিতে অবহেলিত বা সুবিধাবঞ্চিত কোচদের প্রাধান্য দেয়া হবে। যাতে তারা নিজেদের বক্সারদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ দিতে পারেন।’
আদনান হারুনের ইচ্ছা প্রতিবছর দুইজন করে আন্তর্জাতিক বক্সিং কোচকে দেশে নিয়ে এসে কোচেস কোর্স করানো। এতে বাংলাদেশের কোচরা আন্তর্জাতিক কোচদের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখতে পারবেন। এটা করতে পারলে বাংলাদেশ বক্সিং ফেডারেশনকে সহযোগিতা করা হবে। এ ধারাবাহিকতায় আগামী আগস্ট মাসের মাঝামাঝিতে ব্রিটিশ কোচ মি. জনি এমস এবং ভিয়েতনামি ব্রিটিশ মি. স্ট্রিভ দুই সপ্তাহের জন্য ঢাকায় আসবেন। এ দুই আন্তর্জাতিক কোচের যাবতীয় খরচ আমরা বহন করব। তাদের অধীনে জাতীয় দলের বক্সারদের প্রশিক্ষণ দিতে বাংলাদেশ বক্সিং ফেডারেশনকে সহযোগিতা করব আমরা।’
তিনি জানান, বিবিএফ আগামী জুনে স্থানীয় বক্সারদের নিয়ে একটি টুর্নামেন্ট করার পাশাপাশি সেপ্টেম্বরে দেশে আয়োজন করবে সবচেয়ে বড় আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার। যেখানে খেলবেন ভারত, নেপাল, বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, ইংল্যান্ড, আজারবাইজান, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড ও তুরস্কের বক্সাররা।
বিভাগ : খেলাধুলা
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
চ্যাম্পিয়ন্স লিগে সিটির খেলা নিয়ে শঙ্কিত গুয়ার্দিওলা
সুশীলগিরি ছেড়ে দোসরদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতিতে আসতে হাসনাতের আহ্বান
গোয়ালন্দে চুরির সন্দেহে ব্যবসায়ীর ১০টি গরু থানায়!
সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের সুষ্ঠু ও বিস্তারিত তদন্ত হতে হবে: রিজওয়ানা হাসান
দৌলতপুরে পেঁয়াজের ন্যায্যমূল্যের দাবিতে কৃষকদের সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ
বিজয় দিবস রাগবি শনিবার
প্রসিকিউটর মাহমুদকে হত্যার হুমকির অভিযোগ
বিএনপি কর্মীকে হত্যা মামলায় কুষ্টিয়ার সাবেক এসপি গ্রেপ্তার
মধ্যরাতে সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ড নিয়ে যেসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন মানুষ
‘সচিবালয়ের ন্যায় দেশটাও কি অরক্ষিত?’
কসবায় ৪ হাজার টাকার মোবাইল ফোনসেটের জন্য অটোচালক খুন
পরশুরামে মুহুরী নদীতে পানির পাম্প বসাতে দিচ্ছে না বিএসএফ
বগুড়া কারাগারে হার্ট এ্যাটাকে আওয়ামী লীগ নেতাদের সিরিয়াল মৃত্যু নানামুখি প্রশ্ন
যতবার বাংলাদেশে সুষ্ঠু ভোট হয়েছে, ততবার বিএনপি সরকার গঠন করেছে: এবিএম মোশাররফ
সচিবালয়ে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় ষড়যন্ত্র আছে: সারজিস আলম
শীর্ষ ফুটবলে নিজেকে আরও কয়েক বছর দেখেন ফন ডাইক
কালীগঞ্জে পানিতে ডুবে এক শিশুর মৃত্যু আরেক শিশু নিখোঁজ
কুমিল্লায় আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের কর্মসূচি অনুষ্ঠিত
মির্জাপুরে বনের ভেতর গড়ে উঠা ৯টি ঘর উচ্ছেদ
সচিবালয়ে আগুন ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি সরকার ও গোয়েন্দা সংস্থা দায় এড়াতে পারেনা - এবি পার্টি