অনুসন্ধানী প্রতিবেদন দেখার আশা ক্রীড়া উপদেষ্টার
০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:১৬ এএম | আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:১৬ এএম
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যখন গণআন্দোলনে রূপ নেয় তখনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্বগ্রহণের পর থেকেই বিভিন্ন অঙ্গনের মতো দেশের ক্রীড়াঙ্গনেও চলছে সংস্কার কার্যক্রম। এ ধারাবাহিকতায় ইতোমধ্যে সব জেলা, বিভাগ, উপজেলা ও মহিলা ক্রীড়া সংস্থার কমিটি ভেঙে দিয়েছে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়। যোগ্যদের নিয়ে অ্যাডহক কমিটি করতে বলা হয়েছে সংশ্লিষ্টদের। ক্রীড়াঙ্গনের সার্বিক উন্নয়নে এবার ক্রীড়া সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করলেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। গতকাল দুপুরে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি) মিলনায়তনে এই মতবিনিময় সভায় ক্রীড়াঙ্গনের দুর্নীতি, অনিয়ম ও মাঠের খেলা নিয়মিতকরণ ছাড়াও নানান মতামত তুলে ধরেন ক্রীড়া সাংবাদিকরা। সবার কথা শুনে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা নিজেও তার মতামত দেন। এসময় তিনি ক্রীড়া সাংবাদিকদের কাছ থেকে বেশি বেশি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন দেখার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
সভার শুরুতে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) আর্থিক লেনদেনের অসঙ্গতি নিয়ে প্রশ্ন উঠে। অভিভাবক হয়ে এনএসসির সামনে বিসিবির আলাদা করে অডিটের বিষয়টি উত্থাপিত হয়। প্রতি বছর মহিলা ক্রীড়া সংস্থার পেছনে কয়েক কোটি টাকা ব্যয় হলেও বিপরীতে ক্রীড়াঙ্গনে তাদের কাছ থেকে সেভাবে কোনো প্রাপ্তি নেই। মহিলা ক্রীড়া সংস্থার বিলুপ্তির পরামর্শও এসেছে মতবিনিময় সভায়।
এনএসসিতে অবকাঠামো খাতে টেন্ডার প্রক্রিয়া সব সময়ই ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। সরকারি দলের প্রভাব ছাড়াও টেন্ডারবাজিতে এনএসসির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যুক্ত থাকার অভিযোগ বেশ পুরানো। ফেডারেশন সংস্কারের পাশাপাশি এনএসসির অনিয়ম তদন্তের বিষয়টিও আলোচনায় এসেছে।
এনএসসির আয়ের অন্যতম উৎস বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম কমপ্লেক্সের দোকান ভাড়া। সেই দোকান থেকে ইজারাদার অনেক অর্থ পেলেও জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ পায় খুবই সামান্য। এনএসসির ভাড়া দেওয়া দোকানের প্রকৃত মালিকের নাম ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রকাশের দাবি উঠেছে এই সভায়। পাশাপাশি স্টেডিয়ামে দোকান খাত থেকে রাজস্ব না পাওয়ার বিষয়টিও উঠে এসেছে। বেশ কয়েকটি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদকরা বছরের পর বছর চেয়ার আকড়ে ধরে বসে আছেন। কেউ ৪৩ বছর ধরে সাধারণ সম্পাদক তো কারও মেয়াদকাল ৩৩ বছর। আবার কেউ বা আছেন ১৮ বছর ধরে সাধারণ সম্পাদক। মতবিনিময় সভায় ক্রীড়া উপদেষ্টাকে এ বিষয়ে অবহিত করা হয়। ক্রীড়া ফেডারেশন ও অ্যাসোসিয়েশন মিলিয়ে দেশে মোট ৫৫টি সংস্থা রয়েছে। অথচ ফুটবল ও ক্রিকেটের বাইরে অন্য ফেডারেশনে গত এক মাসে খেলাধুলা একেবারেই নেই। ফেডারেশনগুলো সচল করে আগে খেলাধুলা মাঠে গড়ানোর আহবান জানান সাংবাদিকরা। এছাড়া আরও অনেক বিষয় নিয়ে কথা হয়েছে মতবিনিময় সভায়।
ক্রীড়া সাংবাদিকদের মতামত, পর্যবেক্ষণ ও অভিযোগ শুনে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন,‘আপনাদের গঠনমূলক মন্তব্য আমরা পর্যালোচনা করবো। ক্রীড়াঙ্গনে আপনারা দীর্ঘদিন ধরেই রয়েছেন। আপনাদের পর্যবেক্ষণকে আমরা গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করি। এজন্য সার্চ কমিটিতে দুই জন এবং জেলা পর্যায়েও ক্রীড়া সাংবাদিক প্রতিনিধি রেখেছি। সার্চ কমিটি ফেডারেশনগুলো পর্যালোচনা করে আমাদের প্রতিবেদন দেবে। এরপর আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবো।’
নিজের বক্তব্যে দুর্নীতি-অনিয়ম নিয়ে নানান ব্যাখ্যা দেন ক্রীড়া উপদেষ্টা। তার কথায়, ‘দুর্নীতি মূলত হয় সিন্ডিকেট গঠন করার কারণে। প্রতিটি জায়গায় যাদের দায়িত্ব দেওয়া হয় তারা নিজেদের মধ্যে সিন্ডিকেট তৈরি করে ফেলে। সেভাবেই নিজেদের মধ্যে ভাগ ভাটোয়ারা করে সবকিছু পরিচালনা করে দুর্নীতিবাজরা। সিন্ডিকেট যাতে না হতে পারে সেরকম একটা ব্যবস্থা করা হবে। আমরা তো প্রতিটি জায়গায়..কিংবা উপজেলায় ধরে ধরে ঠিক করতে পারবো না। সেই জায়গায় সিন্ডিকেট যেন না হতে পারে সেই ব্যবস্থা হিসেবে স্থানীয় ক্রীড়া সংগঠক, ছাত্র প্রতিনিধি রেখেছি। উপজেলাগুলোতে সাধারণত ছাত্র প্রতিনিধিরাই ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে কাজ করে। তাদের রাখা হচ্ছে। আমাদের নির্দেশনা সাবেক ক্রীড়া সাংবাদিকও যেন থাকে। প্রতিটি জায়গায় সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে।’
উপস্থিত সাংবাদিকদের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের আহŸান জানিয়ে ক্রীড়া উপদেষ্টা বলেন, ‘আপনারা ইতোপূর্বে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করেছেন। আশা করি সামনেও করবেন। শুধু খেলোয়াড় কী করলেন, কী খেলেন এর বাইরেও খেলার অনিয়ম-অসঙ্গতি অনুসন্ধান প্রতিবেদনের মাধ্যমে তুলে আনবেন। আমরা সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’ আসিফ মাহমুদ বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার দিকটি নিয়ে পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘দর্শক হিসেবে আগে দেখেছি থাম্বলাইন ও শিরোনাম এক রকম আর কন্টেন্ট অন্যরকম। অনেক প্রতিবেদন দেখেছি অনুমান নির্ভর যা খেলার আগে খেলোয়াড়দের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করে।’
উপদেষ্টা বক্তব্য শেষ করার পর বঙ্গবন্ধু ও কমলাপুর স্টেডিয়ামের পরিবেশের বিষয়টি উথাপন করেন দুই সাংবাদিক। ক্রীড়াঙ্গন উন্নয়নের আগে উন্নত পরিবেশ নিশ্চিত করার অনুরোধ জানান তারা। এর প্রেক্ষিতে উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি বাইরের কোনো মানুষ নই। এ সমাজেরই একজন। স্টেডিয়াম এলাকায় এর আগেও গিয়েছি। এখনও আসছি। আমি খবর না দিয়ে আকস্মিক পরিদর্শন পছন্দ করি। সামনেও তাই করব। এতে প্রকৃত চিত্র পাওয়া যায়।’
বিভাগ : খেলাধুলা
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
৯ দফা বাস্তবায়নে পদক্ষেপ কতদূর?
মর্গের দুই লাশের দাবিদার দুই পরিবার,
আইনজীবীকে হত্যার হত্যাচেষ্টা: শেখ হাসিনা-জয়সহ ৯৩ জনের মামলা এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ
তথ্য থাকলেও সন্দেহজনক লেনদেনে দেরিতে ব্যবস্থা নিচ্ছে বিএফআইইউ!
সাবেক এমপি হেনরীর ৫৬ কোটি টাকার সম্পত্তি জব্দের নির্দেশ,
গ্যাসের দাম বাড়ানোর উদ্যোগে উৎকণ্ঠায় নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ীরা
দেশে এইচএমপি ভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত
শাহজালাল বিমানবন্দরে বিমান বাহিনীর সদস্যদের অপসারণে আইনি নোটিশ
চকরিয়ায় পুলিশ-সন্ত্রাসীদের মধ্যে গোলাগুলি: বসতবাতিতে আগুন, ওয়ার্ড মেম্বারসহ আহত ২
স্বাধীন সামরিক বাহিনী সংস্কার কমিশন গঠনের প্রস্তাব
শেখ হাসিনার চোখ ছিল শুধু ঢাকা থেকে টুঙ্গীপাড়া পর্যন্ত : সারজিস
শেখ হাসিনা ভারতের সাথে বৈষম্যমৃলক চূক্তি করেছিলেন-মৌলভীবাজারে সারজিস আলম
ব্র্যাক ব্যাংকের টপ টেন রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড জয় ২০২৪ সালে ১.৬ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স সংগ্রহ
ওসি মুহিবুল্লাহকে বাঁচাতে স্বজনদের মানববন্ধন
পাটগ্রাম সীমান্তে বাংলাদেশিকে লক্ষ্য করে বিএসএফের গুলি, আহত ১
ওয়ান টাইম প্লাস্টিক বন্ধে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ৬ হাজার প্রতিষ্ঠান: বিপিজিএমইএ
চলমান সংস্কার গতিশীল করতে হবে, যাতে কেউ প্রশ্ন তুলতে না পারে : মান্না
ফরিদপুরে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় তিন দিনে মোট ১১ জন নিহত, আহত ৩৫
বিধ্বংসী শতকে লিটনের জবাব, ঝড়ো সেঞ্চুরি তানজিদেরও, বিপিএলে রেকর্ড
ঐক্যবদ্ধ থাকলে কোন ষড়যন্ত্রকারী বিএনপির ক্ষতি করতে পারবে না : আমিনুল হক