রাজনীতি ও পুলিশমুক্ত ক্রীড়াঙ্গনের দাবী
০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০৫ এএম
মুক্তিযুদ্ধের পর দেশের ক্রীড়াঙ্গন বরাবরই রাজনৈতিক প্রভাবে তটস্থ ছিল। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হলে নতুনভাবে অনেক কিছুই গড়তে হয়েছে সংশ্লিষ্টদের। অন্যান্য ক্ষেত্রের মতো তখন দেশের ক্রীড়াঙ্গনেও এসেছিল আমুল পরিবর্তন। এই পরিবর্তন আনতে গিয়ে রাজনীতিবিদরা জেঁকে বসেন বিভিন্ন ক্রীড়া ফেডারেশনে। তখনকার ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকে দেখা যায় ক্রীড়া ফেডারেশনগুলোর কমিটির বড় পদে। এছাড়া আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনীর উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারাও যুক্ত হন ক্রীড়াঙ্গনে। এ ধারায় ১৯৭৫ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পরবর্তীতে যে রাজনৈতিক দলই দেশ পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণ করে, তারা সবাই হেঁটেছে একই পথে। দিনের পর দিন রাজনৈতিক প্রভাবে তারা ক্রীড়াঙ্গনকে করেছে কলুষিত! তবে এ কাজে সবচেয়ে বেশি সময় পেয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। ১৯৭২ ও ১৯৯৬ সালের পর এই রাজনৈতিক দলটি দেশ শাসন করেছে টানা চারবার। এর মধ্যে ২০০৯, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে ক্ষমতায় এসে দলটি মেয়াদ পূর্ণ করলেও ২০২৪ সালে মাত্র ৭ মাস দেশ পরিচালনার দায়িত্বে থাকার সুযোগ পায়। এই হিসেবে টানা ১৫ বছর ক্ষমতায় থেকে দেশের ক্রীড়াঙ্গনকে আওয়ামী লীগ করেছে দলীয়করণ। তাদের মেয়াদে ক্রীড়াঙ্গনের গতি ছিল নিন্মমুখি। রাজনৈতিক ছত্রছায়া আর প্রশাসনিক কর্তাদের চোখ রাঙানিতে এই সময়ে তটস্ত থাকতেন দেশের যোগ্য ক্রীড়া সংগঠকরা। অনেক সময় হুমকির সম্মুখিনও হতে হয়েছে অনেক ক্রীড়াবিদকে। যার ফলে স্বাভাবিক গতি হারিয়েছিল দেশের ক্রীড়াঙ্গন। রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিশেষ করে বাংলাদেশ পুলিশের কর্মকর্তারা নিজেদের ইচ্ছে মতো রাম রাজত্ব করে গেছেন ক্রীড়াঙ্গনে। অতীত ঘাটলে দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন বাহিনীর শীর্ষকর্তারা বরাবরই কোনো না কোনো ফেডারেশন বা সংস্থায় প্রধানের দায়িত্ব পালন করেছেন। তবে এক্ষেত্রে পুলিশের কথা বিশেষভাবে বলতে হয়। এই সংস্থাটি দেশের জাতীয় খেলা কাবাডিকে প্রায় ৯ বছর শাসন করেছে! পুলিশ বাহিনীর কর্মকর্তারা ২০১৬ সালে বাংলাদেশ কাবাডি ফেডারেশনের দায়িত্ব নিয়ে চলতি বছরের ‘জুলাই বিপ্লব’ পর্যন্ত ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে বসেছিলেন। এই সময়ে পুলিশের দখলে থাকা কাবাডি ফেডারেশনে কোনো যোগ্য সংগঠককেই কাজ করতে দেওয়া হয়নি। তবে আর নয়, এবার পুলিশমুক্ত কাবাডি ফেডারেশন আর রাজনীতিমুক্ত ক্রীড়াঙ্গন চান দেশের যোগ্য সংগঠকরা। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ কাবাডি ফেডারেশনের সাবেক যুগ্ম-সম্পাদক, সাবেক কোষাধ্যক্ষ ও আন্তর্জাতিক কাবাডি রেফারি এবং দেশের প্রাচীন ক্রীড়া সংগঠন আজাদ স্পোর্টিং ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এস, এম, এ মান্নান গতকাল বলেন,‘আমরা ক্রীড়া সংগঠক। সব সময়ই খেলাধুলার উন্নয়নে কাজ করতে চাই। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে, গত ১৫ বছর স্বাচ্ছন্দে কাজ করতে পারি নাই। পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ২০১৬ সালে কাবাডি ফেডারেশনের দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে অদৃশ্য কারণে খেলাটি তার অতীত ঐতিহ্য হারায়। এক সময় আমরা এশিয়ান গেমস ও সাউথ এশিয়ান (এসএ) গেমস কাবাডিতে পদক জিততাম। কিন্তু গেল প্রায় এক যুগেরও বেশি সময় ধরে আন্তর্জাতকি আসরে বাংলাদেশের কাবাডি ব্যর্থ। এই ব্যর্থতা এবার আমরা কাটাতে চাই।’ তিনি যোগ করেন,‘জুলাই বিপ্লবের পর গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশ দ্বিতীয়বার স্বাধীনতা পেয়েছে। দেশের শাসনভার এখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের হাতে। যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টার কাছে আমার অনুরোধ দেশের জাতীয় খেলা কাবাডিকে বাঁচাতে আপনি উদ্যোগী হবেন। আমরা চাইনা পুলিশ বাহিনীর মতো অন্য কোনো বাহিনী কাবাডি ফেডারেশনের দায়িত্ব নিয়ে খেলাটির অতীত ঐতিহ্য ম্লান করুক।’
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে বর্তমানে দেশজুড়ে চলছে সংস্কার কাজ। সেই সংস্কারে শামিল হয়ে ত্যাগী ও যোগ্য ক্রীড়া সংগঠকদেরই চাইছেন ক্রীড়াবিদরা। যারা দেশের খেলাধুলাকে ফিরিয়ে নিয়ে যাবেন সোনালী অতীতে।
হাসিনা সরকারের মেয়াদে গত ১৫ বছর দেশের ৫৩টি ক্রীড়া ফেডারেশন ও অ্যাসোসিয়েশনে জোকের মতো বসেছিলেন আওয়ামী পন্থি সংগঠকরা। তারা নিজেদের মতো করে চালাতেন ক্রীড়াবিদদের। তাদের অধিকাংশরাই বিদেশ সফরে নিয়ে যেতেন পছন্দের ক্রীড়াবিদ ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের। কিছু ক্রীড়া ফেডারেশনের ক্ষমতায় বসেছিলেন পুলিশ কর্তারা। তারা ক্ষমতার দাপট এতটাই দেখিয়েছিলেন যে, পুলিশের মামলা ও হামলার ভয়ে তটস্ত থাকতেন খোদ সংগঠকরাই। ফলে ক্ষমতার অপব্যবহার করা এ দুই শক্তির বিরুদ্ধে যেতে চাইতেন না ক্রীড়া সংগঠকরা। পাছে যদি নেমে আসে শারীরিক, মানসিক ও পারিবারিক শাস্তি। ফলে রাজনৈতিক ব্যক্তি ও পুলিশ কর্তাদের অন্যায় অবিচারের কাছে মাথা নত করেই থাকতে হতো সত্যিকারের সংগঠকদের। সরকার পরিবর্তনের পর দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন আওয়ামী ঘরণার ফেডারেশন কর্তারা। কেউ কেউ এখনো ক্রীড়াঙ্গনে আছেন,কাজও করছেন। অন্যদিকে বিভিন্ন ক্রীড়া ফেডারেশনে পুলিশের বড় কর্তারা যুক্ত থাকলেও এখন তারা আসছেন না। কেউ চাকরি থেকে অপসারণ হয়েছেন। আবার কেউ পালিয়েছেন। এতে হাফ ছেড়ে বেঁচেছেন সত্যিকারের ক্রীড়া সংগঠকরা। তবে পট পরিবর্তনের পর থেকেই স্থবির হয়ে রয়েছে দেশের ক্রীড়াঙ্গন। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য ইতোমধ্যে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি সার্চ কমিটি গঠন করেছে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়। তারা ইতোমধ্যে কাজও শুরু করেছে। বিভিন্ন ক্রীড়া ফেডারেশনের সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়কে একটি নিদের্শনা দেবে এই কমিটি। সুন্দর ক্রীড়াঙ্গনের পরিবেশ ফিরবে সেই প্রত্যাশা করে ফুটবল সংগঠক মো. ইয়াকুব আলী বলেন,‘আমরা আর হুকুমের দালালী করতে চাই না। রাজনীতি এবং প্রশাসনের ক্ষমতার অপব্যবহার- এ দুই অপশক্তির যাতাকলে আর প্রবেশ করতে চাই না। ভয়ে তটস্থ থাকতে চাই না। জাবাবদিহীমূলক এবং ত্যাগী সংগঠকদের হাতেই ফের তুলে দেওয়া হোক ক্রীড়াঙ্গনকে। আশাকরি তাতেই স্বমূর্তিতে ফিরবে বাংলাদেশের খেলাধূলা। আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে ফের উড়বে লাল-সবুজ পতাকা।
বিভাগ : খেলাধুলা
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ভারতের কাছে হারানো ২০০ একর জমি ফেরত পাচ্ছে বাংলাদেশ
সাবেক রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন গ্রেপ্তার
যৌথ বাহিনীর অভিযানে ১৩দিনে ১৫৫ অস্ত্র উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৭২
ইলিয়াস আলীকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবীতে বালাগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক দলের মিছিল
সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারীর সাথে সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সৌজন্য সাক্ষাৎ
গুলশানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক
যশোরে ৪ দিনের বৃষ্টিপাতে নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা, বিপর্যস্ত জনজীবন
যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান টেকনাফ থেকে গ্রেপ্তার
৪ ধরনের জ্বালানি তেলের দাম কমালো পাকিস্তান
তারাকান্দায় সাবেক এমপি শরীফসহ ৫৯ আ’লীগ নেতাকর্মীর নামে মামলা
শার্শায় বাবার কোদালের আঘাতে ছেলে নিহত
গোলাপগঞ্জে ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী আটক
কিশোরগঞ্জে ঈদে মিলাদুন্নবীর র্যালিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, মসজিদ-মাজার ভাঙচুর, নিহত- ১
রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য হাবিব-বিপ্লব গংদের নির্দেশে পুলিশ নেতা সেজে বিভ্রান্ত করেছিলেন কনস্টেবল জয়
ইসলামের বিধি-বিধান প্রতিষ্ঠা হলে ইসলামের প্রকৃত সৌন্দর্য জগতবাসী দেখতে পাবে -মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম
যানজটের সমাধান খুঁজতে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশ
মহানবী (সঃ) এর আদর্শ অনুসরণ করা হলে কোন রাষ্ট্র প্রধানকে পালাতে হবেনা-মিলাদুন্নবী (সঃ) এর আলোচনা সভায় বক্তারা
মসজিদ-মাদরাসা কমিটি থেকে ফ্যাসিবাদের সুবিধাভোগীদের বিতাড়িত করতে হবে: আজিজুল হক ইসলামাবাদী
প্রশাসক হতে চান শিক্ষকরা, ঠেকাতে একাট্টা ৪ সংগঠন
বাংলাদেশের এই দলকে সেরা বললেন হার্শা