ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪ | ৩০ কার্তিক ১৪৩১

ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণে বিলম্ব কেন?

Daily Inqilab ইনকিলাব

১২ মার্চ ২০২৩, ০৭:০২ পিএম | আপডেট: ০১ মে ২০২৩, ১২:০০ এএম

সুনামগঞ্জের হাওর এলাকায় ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণের কাজ যথাসময়ে শেষ না হওয়ায় ফসলহানির আশংকা দেখা দিয়েছে। প্রকাশিত খবর মোতাবেক, চলতি বছর জেলার ৫৪টি হাওরের ১ হাজার ৭৮টি ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণে ২০৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। ১৫ ডিসেম্বর থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বাঁধগুলো নির্মাণ করার কথা ছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময়সীমার অতিরিক্ত আরও ১০ দিন সময় বাড়ানো হলেও কোনো বাঁধের কাজই শেষ হয়নি। এ পর্যন্ত ৬০ শতাংশের মতো কাজ হয়েছে, যদিও পানি উন্নয়ন বোর্ডের দাবি, ৯০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। একাধিক পত্রিকার প্রতিনিধির সরেজমিনে রিপোর্টে পানি উন্নয়ন বোর্ডের দাবি সমর্থিত হয়নি। প্রশ্ন হলো, নির্ধারিত, এমনকি বাড়তি সময়ের মধ্যেও ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণের কাজ শেষ হলো না কেন? অতঃপর যদি আগাম বন্যায় ফসল বিনষ্ট হয়, তাহলে দায় কে নেবে? সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আমরা লক্ষ করছি, এপ্রিল-মে মাসে ভারতের মেঘালয় ও আসামে অতিবৃষ্টি হচ্ছে। এতে আমাদের হাওর এলাকায় আগাম বন্যা দেখা দিচ্ছে। বন্যায় হাওরের উঠতি বোরো ধান ব্যাপকহারে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। গত বছরও এমনটি হয়েছে। এ প্রসঙ্গে ২০১৭ সালের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা যায়। ওই বছর হাওর এলাকার বোরো ধান প্রায় সবই বিনষ্ট হয়ে যায়। কৃষকরা সর্বস্ব হারিয়ে শোচনীয় অবস্থার পতিত হয়। তখনও ফসল রক্ষা বাঁধ ঠিক সময়ে নির্মাণ না করার অভিযোগ ওঠে। বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ তোলে কৃষক ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। ঠিকাদার ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের স্থানীয় কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি ওঠে বিভিন্ন মহল থেকে।

২০১৭ সালের ফসলহানির পরিপ্রেক্ষিতে প্রচলিত ঠিকাদারি ব্যবস্থা বিলোপ করে অংশীজন, প্রশাসন ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের মাধ্যমে প্রকল্প নির্ধারণ এবং প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) মাধ্যমে বাঁধ নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণের সিদ্ধান্ত হয়। পিআইসিতে মূল অংশীজন কৃষক। অত্যন্ত দুঃখজনক, কয়েক বছর যেতে না যেতেই নতুন এই ব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে পড়েছে। পিআইসি দখল করে নিয়েছে প্রশাসনের স্থানীয় কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের সমন্বয়ে গঠিত সিন্ডিকেট। নব্য এই সিন্ডিকেটের নজর প্রকল্প নির্ধারণ ও ঠিক সময়ে তা বাস্তবায়নের চেয়ে প্রকল্পের সংখ্যা ও বাজেট বাড়ানোর দিকে। বলা বাহুল্য, লুটপাট ও অর্থ আত্মসাৎই এই সিন্ডিকেটের প্রধান লক্ষ্যে পরিণত হয়েছে। এ ধরনের সিন্ডিকেটবাজি যদি চলে তবে কীভাবে ফসলরক্ষা বাঁধ ঠিক সময়ে ও মানসম্পন্নভাবে শেষ হওয়া আশা করা যায়? এক খবরে উল্লেখ করা হয়েছে, ১৫ ডিসেম্বর কাজ শুরু করার কথা থাকলেও হয়নি। কেন ব্যতিক্রম হলো? কাজ যথাসময়ে শুরু না হলে শেষ হবে কেমন করে? হাওর এলাকার ফসলরক্ষা বাঁধ কেবল নয়, উপকূলীয় বেড়িবাঁধ, বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধসহ সব ধরনের বাঁধ নির্মাণ, মেরামত ও সংস্কারে অনিয়ম দুর্নীতি ও লুটপাট অবধারিত বাস্তবতা। বাঁধের কাজের অর্থ ছাড়ে বিলম্ব ও গড়িমসি অতি সাধারণ ব্যাপার। কাজ শুরু করতে বিলম্ব এবং কাজের মাঝে নানা উসিলায় বিরতিও নতুন নয়। সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তা ও ঠিকাদারদের লক্ষ্য থাকে, যে কোনো অজুহাতে কাজ বর্ষাকাল পর্যন্ত প্রলম্বিত করা। বর্ষা এলে, বন্যা হলে কাজের ত্রুটি, ফাঁকি সব ভেসে যায়। কাজ না করেও অর্থলাভে কোনো অসুবিধা হয় না। সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে বহুবার এজাতীয় প্রকল্পের কাজ শুষ্ক মওসুমে শেষ করার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কে শোনে কার কথা!

দেশে ধানের আবাদের মধ্যে বোরো ধানই প্রধান। আউশ-আমনের চেয়েও বোরোর আবাদ-উৎপাদন বেশি। আর হাওর এলাকায় একমাত্র আবাদই হলো বোরো। হাওর এলাকার কৃষক ও জনসাধারণ বোরোর ওপর শতভাগ নির্ভরশীল। দেশের খাদ্য নিরাপত্তাও হাওরের বোরোর ওপর অনেকাংশে নির্ভর করে। মোট বোরো উৎপাদনের একটা বড় অংশের জোগান আসে হাওর এলাকা থেকে। এ থেকেই হাওর এলাকার ফসলরক্ষা বাঁধের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব উপলব্ধি করা যায়। যথাসময়ে সব ফসলরক্ষা বাঁধ যথাযথভাবে নির্মাণ ও মেরামত হতে হবে। এ ব্যাপারে কোনোরূপ ওজর-আপত্তি প্রদর্শনের অবকাশ নেই। অনিয়ম, দুর্নীতি ও লুণ্ঠনের বিরুদ্ধে শূন্য সহিষ্ণুতাই কাম্য। কারো অজানা নেই, আমাদের খাদ্যনিরাপত্তা হুমকির মুখে। চালের দাম ঊর্ধ্বমুখী। আমনের ভরা মওসুমেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। আমন সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। খাদ্য মজুদের পরিমাণও কমছে। আশা করা হচ্ছে, বোরো মওসুমে আবাদ-উৎপাদন ভালো হলে খাদ্যনিরাপত্তার ঝুঁকি কমবে। তেল, বিদ্যুৎ, সার ইত্যাদির দাম বাড়ার কারণে উৎপাদন ব্যয় বাড়ার আশংকা থাকলেও কৃষকরা থেমে নেই, মাঠে সক্রিয় আছে, এটাই আশার কথা। অবশ্যই কৃষকদের কষ্টের সফল যে কোনো দুর্যোগ ও দুর্বিপাক থেকে রক্ষা করতে হবে। খাদ্যনিরাপত্তা ঝুঁকিতে রাখা যাবে না। হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ দ্রুত শেষ করতে হবে। বিলম্বের জন্য কারা দায়ী, তাদের বিরুদ্ধে যথোচিত ব্যবস্থা নিতে হবে।


বিভাগ : আজকের পত্রিকা


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

অতিরিক্ত মালবাহী গাড়িতে বেহাল দশা
কমলনগরে স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে কিশোর গ্রেফতার
সড়ক সংস্কারের দাবিতে বরগুনাবাসীর মানববন্ধন
২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ওসি বদল
শিশু শিহাব হত্যার বিচার দাবিতে মানববন্ধন
আরও

আরও পড়ুন

চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলামের কাছে ক্ষমা না চাইলে ভিপি নুরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা

চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলামের কাছে ক্ষমা না চাইলে ভিপি নুরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা

বগুড়ায় মেয়েকে হত্যা করে মায়ের আত্মহত্যা, চিরকুট উদ্ধার

বগুড়ায় মেয়েকে হত্যা করে মায়ের আত্মহত্যা, চিরকুট উদ্ধার

বিবাহ বিভ্রাটে তৌহিদ আফ্রিদি, স্যোশ্যাল মিডিয়ায় শালিকা নিয়েছে বউয়ের অবস্থান

বিবাহ বিভ্রাটে তৌহিদ আফ্রিদি, স্যোশ্যাল মিডিয়ায় শালিকা নিয়েছে বউয়ের অবস্থান

বিদেশি হস্তক্ষেপে বিগত সরকার ফ্যাসিস্টে পরিণত হয়েছিলো : আসিফ নজরুল

বিদেশি হস্তক্ষেপে বিগত সরকার ফ্যাসিস্টে পরিণত হয়েছিলো : আসিফ নজরুল

মাদক নির্মূলে কঠোর অবস্থানের ঘোষনা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার

মাদক নির্মূলে কঠোর অবস্থানের ঘোষনা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার

নারায়ণ চন্দ্রকে আদালত চত্বরে ডিম নিক্ষেপ

নারায়ণ চন্দ্রকে আদালত চত্বরে ডিম নিক্ষেপ

সেই কবি এবার ৬৯ বছর বয়সে এইচএসসি পাস করলেন

সেই কবি এবার ৬৯ বছর বয়সে এইচএসসি পাস করলেন

ফিলিপাইনে টাইফুন উসাগির আঘাত

ফিলিপাইনে টাইফুন উসাগির আঘাত

যশোরে ছুরিকাঘাত করে নগদ টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় মামলা

যশোরে ছুরিকাঘাত করে নগদ টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় মামলা

চুয়াডাঙ্গার চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হলেন যশোরের বিচারক শিমুল

চুয়াডাঙ্গার চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হলেন যশোরের বিচারক শিমুল

জুলাই-আগষ্ট বিপ্লবে ছাত্র-জনতার অন্যতম লক্ষ্য ছিল একটি বৈষম্যহীন সমাজ গঠন : ভূমি উপদেষ্টা

জুলাই-আগষ্ট বিপ্লবে ছাত্র-জনতার অন্যতম লক্ষ্য ছিল একটি বৈষম্যহীন সমাজ গঠন : ভূমি উপদেষ্টা

২০ হাজার ওমরাযাত্রী অনিশ্চয়তায়, ওমরাহ টিকিটে এক লাফেই ১৭ হাজার টাকা বৃদ্ধি

২০ হাজার ওমরাযাত্রী অনিশ্চয়তায়, ওমরাহ টিকিটে এক লাফেই ১৭ হাজার টাকা বৃদ্ধি

সংষ্কার কাজ দ্রুত শেষ করে নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন -মুফতী সৈয়দ ফয়জুল করীম

সংষ্কার কাজ দ্রুত শেষ করে নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন -মুফতী সৈয়দ ফয়জুল করীম

কটিয়াদীতে যুবকের লাশ উদ্ধার, স্ত্রী আটক

কটিয়াদীতে যুবকের লাশ উদ্ধার, স্ত্রী আটক

বেনাপোল বন্দরে কার্গো ভেহিকেল টার্মিনাল উদ্বোধন করলেন নৌপরিবহন উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন, কমবে ভোগান্তি, বাড়বে বাণিজ্য

বেনাপোল বন্দরে কার্গো ভেহিকেল টার্মিনাল উদ্বোধন করলেন নৌপরিবহন উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন, কমবে ভোগান্তি, বাড়বে বাণিজ্য

যশোর বোর্ডে এইচএসসিতে পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন ৬৬ হাজার, পরিবর্তন ৭১ জনের

যশোর বোর্ডে এইচএসসিতে পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন ৬৬ হাজার, পরিবর্তন ৭১ জনের

আইএইচএফ ট্রফির বাছাইপর্বে অংশ নিবে ইয়ুথ ও জুনিয়র হ্যান্ডবল দল

আইএইচএফ ট্রফির বাছাইপর্বে অংশ নিবে ইয়ুথ ও জুনিয়র হ্যান্ডবল দল

ফের কমলো সোনার দাম

ফের কমলো সোনার দাম

সাফজয়ী দলকে আর্থিক পুরস্কার দিল সাউথ ইস্ট ব্যাংক

সাফজয়ী দলকে আর্থিক পুরস্কার দিল সাউথ ইস্ট ব্যাংক

২৪২ সদস্যবিশিষ্ট ঢাবি ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রকাশ

২৪২ সদস্যবিশিষ্ট ঢাবি ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রকাশ