ঢাকা   শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৫ আশ্বিন ১৪৩১

ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণে বিলম্ব কেন?

Daily Inqilab ইনকিলাব

১২ মার্চ ২০২৩, ০৭:০২ পিএম | আপডেট: ০১ মে ২০২৩, ১২:০০ এএম

সুনামগঞ্জের হাওর এলাকায় ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণের কাজ যথাসময়ে শেষ না হওয়ায় ফসলহানির আশংকা দেখা দিয়েছে। প্রকাশিত খবর মোতাবেক, চলতি বছর জেলার ৫৪টি হাওরের ১ হাজার ৭৮টি ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণে ২০৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। ১৫ ডিসেম্বর থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বাঁধগুলো নির্মাণ করার কথা ছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময়সীমার অতিরিক্ত আরও ১০ দিন সময় বাড়ানো হলেও কোনো বাঁধের কাজই শেষ হয়নি। এ পর্যন্ত ৬০ শতাংশের মতো কাজ হয়েছে, যদিও পানি উন্নয়ন বোর্ডের দাবি, ৯০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। একাধিক পত্রিকার প্রতিনিধির সরেজমিনে রিপোর্টে পানি উন্নয়ন বোর্ডের দাবি সমর্থিত হয়নি। প্রশ্ন হলো, নির্ধারিত, এমনকি বাড়তি সময়ের মধ্যেও ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণের কাজ শেষ হলো না কেন? অতঃপর যদি আগাম বন্যায় ফসল বিনষ্ট হয়, তাহলে দায় কে নেবে? সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আমরা লক্ষ করছি, এপ্রিল-মে মাসে ভারতের মেঘালয় ও আসামে অতিবৃষ্টি হচ্ছে। এতে আমাদের হাওর এলাকায় আগাম বন্যা দেখা দিচ্ছে। বন্যায় হাওরের উঠতি বোরো ধান ব্যাপকহারে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। গত বছরও এমনটি হয়েছে। এ প্রসঙ্গে ২০১৭ সালের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা যায়। ওই বছর হাওর এলাকার বোরো ধান প্রায় সবই বিনষ্ট হয়ে যায়। কৃষকরা সর্বস্ব হারিয়ে শোচনীয় অবস্থার পতিত হয়। তখনও ফসল রক্ষা বাঁধ ঠিক সময়ে নির্মাণ না করার অভিযোগ ওঠে। বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ তোলে কৃষক ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। ঠিকাদার ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের স্থানীয় কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি ওঠে বিভিন্ন মহল থেকে।

২০১৭ সালের ফসলহানির পরিপ্রেক্ষিতে প্রচলিত ঠিকাদারি ব্যবস্থা বিলোপ করে অংশীজন, প্রশাসন ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের মাধ্যমে প্রকল্প নির্ধারণ এবং প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) মাধ্যমে বাঁধ নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণের সিদ্ধান্ত হয়। পিআইসিতে মূল অংশীজন কৃষক। অত্যন্ত দুঃখজনক, কয়েক বছর যেতে না যেতেই নতুন এই ব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে পড়েছে। পিআইসি দখল করে নিয়েছে প্রশাসনের স্থানীয় কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের সমন্বয়ে গঠিত সিন্ডিকেট। নব্য এই সিন্ডিকেটের নজর প্রকল্প নির্ধারণ ও ঠিক সময়ে তা বাস্তবায়নের চেয়ে প্রকল্পের সংখ্যা ও বাজেট বাড়ানোর দিকে। বলা বাহুল্য, লুটপাট ও অর্থ আত্মসাৎই এই সিন্ডিকেটের প্রধান লক্ষ্যে পরিণত হয়েছে। এ ধরনের সিন্ডিকেটবাজি যদি চলে তবে কীভাবে ফসলরক্ষা বাঁধ ঠিক সময়ে ও মানসম্পন্নভাবে শেষ হওয়া আশা করা যায়? এক খবরে উল্লেখ করা হয়েছে, ১৫ ডিসেম্বর কাজ শুরু করার কথা থাকলেও হয়নি। কেন ব্যতিক্রম হলো? কাজ যথাসময়ে শুরু না হলে শেষ হবে কেমন করে? হাওর এলাকার ফসলরক্ষা বাঁধ কেবল নয়, উপকূলীয় বেড়িবাঁধ, বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধসহ সব ধরনের বাঁধ নির্মাণ, মেরামত ও সংস্কারে অনিয়ম দুর্নীতি ও লুটপাট অবধারিত বাস্তবতা। বাঁধের কাজের অর্থ ছাড়ে বিলম্ব ও গড়িমসি অতি সাধারণ ব্যাপার। কাজ শুরু করতে বিলম্ব এবং কাজের মাঝে নানা উসিলায় বিরতিও নতুন নয়। সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তা ও ঠিকাদারদের লক্ষ্য থাকে, যে কোনো অজুহাতে কাজ বর্ষাকাল পর্যন্ত প্রলম্বিত করা। বর্ষা এলে, বন্যা হলে কাজের ত্রুটি, ফাঁকি সব ভেসে যায়। কাজ না করেও অর্থলাভে কোনো অসুবিধা হয় না। সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে বহুবার এজাতীয় প্রকল্পের কাজ শুষ্ক মওসুমে শেষ করার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কে শোনে কার কথা!

দেশে ধানের আবাদের মধ্যে বোরো ধানই প্রধান। আউশ-আমনের চেয়েও বোরোর আবাদ-উৎপাদন বেশি। আর হাওর এলাকায় একমাত্র আবাদই হলো বোরো। হাওর এলাকার কৃষক ও জনসাধারণ বোরোর ওপর শতভাগ নির্ভরশীল। দেশের খাদ্য নিরাপত্তাও হাওরের বোরোর ওপর অনেকাংশে নির্ভর করে। মোট বোরো উৎপাদনের একটা বড় অংশের জোগান আসে হাওর এলাকা থেকে। এ থেকেই হাওর এলাকার ফসলরক্ষা বাঁধের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব উপলব্ধি করা যায়। যথাসময়ে সব ফসলরক্ষা বাঁধ যথাযথভাবে নির্মাণ ও মেরামত হতে হবে। এ ব্যাপারে কোনোরূপ ওজর-আপত্তি প্রদর্শনের অবকাশ নেই। অনিয়ম, দুর্নীতি ও লুণ্ঠনের বিরুদ্ধে শূন্য সহিষ্ণুতাই কাম্য। কারো অজানা নেই, আমাদের খাদ্যনিরাপত্তা হুমকির মুখে। চালের দাম ঊর্ধ্বমুখী। আমনের ভরা মওসুমেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। আমন সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। খাদ্য মজুদের পরিমাণও কমছে। আশা করা হচ্ছে, বোরো মওসুমে আবাদ-উৎপাদন ভালো হলে খাদ্যনিরাপত্তার ঝুঁকি কমবে। তেল, বিদ্যুৎ, সার ইত্যাদির দাম বাড়ার কারণে উৎপাদন ব্যয় বাড়ার আশংকা থাকলেও কৃষকরা থেমে নেই, মাঠে সক্রিয় আছে, এটাই আশার কথা। অবশ্যই কৃষকদের কষ্টের সফল যে কোনো দুর্যোগ ও দুর্বিপাক থেকে রক্ষা করতে হবে। খাদ্যনিরাপত্তা ঝুঁকিতে রাখা যাবে না। হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ দ্রুত শেষ করতে হবে। বিলম্বের জন্য কারা দায়ী, তাদের বিরুদ্ধে যথোচিত ব্যবস্থা নিতে হবে।


বিভাগ : আজকের পত্রিকা


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনায় প্রশ্ন তুললেন জয়

ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনায় প্রশ্ন তুললেন জয়

মেট্রোরেলের কাজীপাড়া স্টেশন খুলছে আজ

মেট্রোরেলের কাজীপাড়া স্টেশন খুলছে আজ

বিচিত্রার সম্পাদক দেওয়ান হাবিব আর নেই

বিচিত্রার সম্পাদক দেওয়ান হাবিব আর নেই

জাবিতে ছাত্রলীগ নেতা শামীম হত্যা : ৮ শিক্ষার্থীসহ অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ

জাবিতে ছাত্রলীগ নেতা শামীম হত্যা : ৮ শিক্ষার্থীসহ অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ

তোফাজ্জলকে হত্যার আগে ২ লাখ ৩৫ হাজার টাকা চাওয়া হয় পরিবারের কাছে

তোফাজ্জলকে হত্যার আগে ২ লাখ ৩৫ হাজার টাকা চাওয়া হয় পরিবারের কাছে

বিশ্বের কাছে ১২টি পরমাণু গবেষণার ও স্থাপনা উন্মুক্ত করবে চীন

বিশ্বের কাছে ১২টি পরমাণু গবেষণার ও স্থাপনা উন্মুক্ত করবে চীন

এবার রাবির শেরে-বাংলা হল থেকে লাঠিসোঁটা-হকিস্টিক উদ্ধার

এবার রাবির শেরে-বাংলা হল থেকে লাঠিসোঁটা-হকিস্টিক উদ্ধার

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসবেন ড. ইউনূস

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসবেন ড. ইউনূস

লেবাননে এক বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বিমান হামলা ইসরায়েলের

লেবাননে এক বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বিমান হামলা ইসরায়েলের

সাংবাদিকদের কাছে সহযোগিতা চাইলেন পঞ্চগড়ের নতুন জেলা প্রশাসক

সাংবাদিকদের কাছে সহযোগিতা চাইলেন পঞ্চগড়ের নতুন জেলা প্রশাসক

ইনস্টাগ্রামের মতো ফিচার এবার আসছে হোয়াটসঅ্যাপেও!

ইনস্টাগ্রামের মতো ফিচার এবার আসছে হোয়াটসঅ্যাপেও!

যুক্তরাষ্ট্রে কোর্টহাউসে বিচারককে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা

যুক্তরাষ্ট্রে কোর্টহাউসে বিচারককে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা

তাপপ্রবাহ নিয়ে যা জানা গেল

তাপপ্রবাহ নিয়ে যা জানা গেল

৫০০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভির বিরুদ্ধে মানহানির মামলা

৫০০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভির বিরুদ্ধে মানহানির মামলা

‘ভারতীয় খাবার জঘন্য’, অস্ট্রেলিয়ান ইউটিউবারের পোস্ট ঘিরে বিতর্ক তুঙ্গে

‘ভারতীয় খাবার জঘন্য’, অস্ট্রেলিয়ান ইউটিউবারের পোস্ট ঘিরে বিতর্ক তুঙ্গে

ট্রাম্পের তথ্য চুরি করে বাইডেন শিবিরে পাঠিয়েছিল ইরান! দাবি গোয়েন্দা সংস্থার

ট্রাম্পের তথ্য চুরি করে বাইডেন শিবিরে পাঠিয়েছিল ইরান! দাবি গোয়েন্দা সংস্থার

সুনামগঞ্জে সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম.এ মান্নান গ্রেফতার

সুনামগঞ্জে সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম.এ মান্নান গ্রেফতার

ইয়ামালের মাইলফলকের রাতে হারের তেতো স্বাদ বার্সার

ইয়ামালের মাইলফলকের রাতে হারের তেতো স্বাদ বার্সার

আর্সেনালের স্বস্তির ড্র,অ্যাটলেটিকোর দারুণ জয়

আর্সেনালের স্বস্তির ড্র,অ্যাটলেটিকোর দারুণ জয়

হেডের বিধংসী শতকে লন্ডভন্ড  ইংল্যান্ড

হেডের বিধংসী শতকে লন্ডভন্ড  ইংল্যান্ড