ঢাকা   মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৯ আশ্বিন ১৪৩১

চিনি ও ভোজ্যতেলের বিকল্প সম্ভাবনা কাজে লাগাতে হবে

Daily Inqilab জামালউদ্দিন বারী

০৯ মে ২০২৩, ০৯:০১ পিএম | আপডেট: ১০ মে ২০২৩, ১২:০৫ এএম

দেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা টেকসই উন্নয়নের অন্যতম সূচক। গত ৫০ বছরে আমাদের কৃষক, কৃষি গবেষক ও উদ্যোক্তারা এক অসাধ্য সাধন করেছেন। স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে সাত কোটি মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারায় দেশে দুর্ভীক্ষ-মহামারীতে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হলেও আশির দশক থেকে উচ্চফলনশীল কৃষিবীজ, উন্নত চাষাবাদ প্রযুক্তি, সেচসুবিধা বৃদ্ধি, রাসায়নিক সার, কীটনাশক ও আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহারের মধ্য দিয়ে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে পাল্লা দিয়ে খাদ্যোৎপাদন বৃদ্ধিতে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জনে সক্ষম হয়েছে। এখন সতের কোটি মানুষের বাংলাদেশ খাদ্যশস্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অজর্নের কাছাকাছি রয়েছে। তবে সরকার উদ্বৃত্ত খাদ্য উৎপাদনের দাবি করলেও এখনো প্রতি বছর ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে লাখ লাখ টন চাল আমদানি করতে হচ্ছে। আমাদের খাদ্য চাহিদা শুধু ধান-চাল বা আলুর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। দেশে প্রয়োজনীয় গমের ৯০ শতাংশই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হচ্ছে। ভোজ্য তেল এবং চিনির ক্ষেত্রেও একই চিত্র বিদ্যমান। চিনি ও ভোজ্য তেল আমদানিতে প্রতি বছর বিলিয়ন ডলার ব্যয় করতে হচ্ছে। যতই দিন যাচ্ছে, এ দুটি অত্যাবশ্যকীয় খাদ্যপণ্যে বিদেশ নির্ভরতা বেড়ে চলেছে। এক সময় দেশে উৎপাদিত সর্ষে ও তিলের তেল দেশের চাহিদার বেশিরভাগ পূরণ হতো। এখন তা খুবই নগণ্য হয়ে পড়েছে। কতিপয় কর্পোরেট আমদানিকারকের কাছে ভোক্তারা এখন জিম্মি হয়ে পড়েছে। এ ক্ষেত্রে সরকার ও সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর অমার্জনীয় ব্যর্থতার দায় রয়েছে। তেল, চিনি, আদা-রসুন, পেঁয়াজের চাহিদা, উৎপাদন, আমদানি ও বিপণন নিয়ে বাণিজ্যিক কারসাজি ও মূল্যের আকস্মিক উল্লম্ফন কখনো কখনো সাধারণ মানুষকে নিদারুণ অসহায়ত্বের দিকে ঠেলে দিতে দেখা গেছে। বাংলাদেশে এখন বিশ্বের তুলনামূলক বিচারে সর্বোচ্চ দামে গরুর গোশত বিক্রি হচ্ছে। চিনি ও ভোজ্য তেলের দামও ক্রমান্বয়ে সাধারণ মানুষের আয়ের সাথে সঙ্গতিহীন হয়ে পড়ছে। কৃষিপ্রধান দেশ হওয়া সত্ত্বেও চিনি ও ভোজ্যতেলের মত নিত্যপণ্যের শতকরা ৯৫ শতাংশ আমদানি নির্ভরতার মধ্য দিয়ে দেশের মানুষ আমদানিকারকদের যথেচ্ছ মুনাফাবাজির শিকার হচ্ছে।

বিগত শতকের তিরিশের দশক থেকে ষাটের দশক পর্যন্ত দেশে বেশ কয়েকটি বৃহদাকার চিনিকল প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে পাল্লা দিয়ে চিনির চাহিদা বাড়লেও সে অনুসারে দেশে নতুন নতুন চিনিকল স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়নি। এমনকি পুরনো চিনিকলগুলো চালু রাখার কার্যকর পদক্ষেপও নেয়া হয়নি। বিএফআইসি’র তথ্যমতে, দেশের ১৫টি সরকারি সুগার মিলের মধ্যে বৃটিশ আমলে তিনটি, পাকিস্তান আমলে ১০টি এবং বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর দুইটি সুগারমিল প্রতিষ্ঠিত হয়। এসব চিনিকলের মধ্যে লোকসানের মুখে এবং কাচামালের অভাবে প্রায় অর্ধেক বন্ধ হয়ে গেলেও বেসরকারি আমদানিকারকদের প্রতিষ্ঠিত রিফাইনারিগুলোর রমরমা ব্যবসা দিন দিন বেড়েই চলেছে। রাষ্ট্রায়ত্ব অন্তত ১০টি চিনিকলের অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল শেষ হয়ে গেলেও এদের সংস্কার, আধুনিকায়ন করা হয়নি। নতুন কোনো চিনিকল প্রতিষ্ঠারও উদ্যোগ নেয়া হয়নি। চিনিকল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চিনকল এলাকার কৃষকরা আখচাষ বন্ধ করে দিতে বাধ্য হচ্ছে। আবার আখ সরবরাহের অভাবে কয়েকটি চিনকল বছরের বেশিরভাগ সময় বন্ধ রাখতে হচ্ছে। লোকসানের কারণে গত দু’তিন বছরে অন্তত ৬টি চিনিকল বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। গত অর্থবছরে দেশীয় চিনিকলগুলোতে উৎপাদন ইতিহাসের সর্বনি¤œ অবস্থানে নেমে আসে। এক সময় দেশের বৃহদাকার চিনিকলগুলো চাহিদার একটি বড় অংশ পূরণ করতে সক্ষম ছিল। একদশক আগেও দেশের চিনিকলগুলোতে বছরে এক লাখ টনের উপরে চিনি উৎপাদিত হত। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে দেশীয় চিনিকলে ১ লাখ ২৮ হাজার মেট্রিক টন চিনি উৎপাদিত হয়েছিল বলে প্রকাশিত একটি রিপোর্টে জানা যায়। ২০২০-২১ অর্থবছরে চিনিকলগুলোতে মাত্র ৪৮ হাজার টন চিনি উৎপাদিত হয়। পরের বছর, অর্থাৎ গত অর্থবছরে তার অর্ধেকে নেমে আসে। ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশের চিনিকলে প্রায় ২৫ হাজার টন চিনি উৎপাদিত হয়, যা শত বছরের ইতিহাসে সর্বনি¤œ। দেশে চিনির চাহিদা বৃদ্ধির বিপরীতে দেশীয় চিনিকলের উৎপাদন বৃদ্ধির ব্যবস্থা না করে একের পর এক চিনিকল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। দেশে বছরে চিনির চাহিদা কমবেশি ২২ লাখ টন। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে, দেশের বেসরকারি সুগার রিফাইনারি কোম্পানিগুলোর মাধ্যমে গত ৫ বছরে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ১ কোটি ১১ লাখ টন অপরিশোধিত চিনি আমদানি করা হয়েছে। এর ৭০ ভাগের (প্রায় ৮০ লাখ টন) বেশি চিনি আমদানি হয়েছে সিটি ও মেঘনা সুগার মিলের মাধ্যমে। দু’তিনটি কোম্পানির হাতে চিনির বাজারের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় তারা যথেচ্ছভাবে বিপণন ও মূল্য নিয়ন্ত্রণ করে হাজার হাজার কোটি টাকার মুনাফা করছে। সরকারি চিনিকলগুলোর হাজার হাজার কোটি টাকার জমি ও অবকাঠামোগত সম্পদ, যন্ত্রপাতি ও জনবলকে বছরে হাজার কোটি টাকা লোকসানের মুখে ঠেলে দিয়ে বেসরকারি আমদানিকারক ও রিফাইনারি মালিকদের হাতে জনগণকে মূল্যস্ফীতির দুর্ভোগের মুখে ঠেলে দেয়া হয়েছে। বছরে ২০-২২ লাখ টন অপরিশোধিত চিনি আমদানি অব্যাহত থাকলেও সরকারি মিলের দেশীয় চিনির উৎপাদনে ধস নামার পর চিনি নিয়ে নতুন কারসাজিতে মেতে উঠেছে আমদানিকারকরা।

গত রবিবার ইনকিলাবে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল, ‘সোনার হরিণ চিনি।’ গতমাসে চিনি উৎপাদক-আমদানিকারকরা চিনির দাম কেজি প্রতি ২৬ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব পাঠিয়েছে ট্যারিফ কমিশনে। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগেই বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে মূল্যবৃদ্ধি ঘটানো হচ্ছে। বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত চিনির দাম টনপ্রতি ২০ ডলার বেড়েছে বলে দাবি করেছে মিল মালিকরা। এর মানে কেজিতে ২ টাকা আমদানি খরচ বৃদ্ধির বিপরীতে তারা ২৬ টাকা মূল্য বাড়ানোর দাবি জানিয়ে ইতিমধ্যে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে বাড়তি মূল্য আদায় করছে। এভাবে কর্পোরেট মুনাফাবাজরা দেশের মানুষের পকেট থেকে বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত মুনাফা হাতিয়ে নিচ্ছে। অন্যদিকে, দেশের মানুষকে চিনির ন্যুনতম যোগান দিতে না পারলেও সরকারি চিনিকলগুলো গত অর্থবছরে কমপক্ষে ৪ হাজার কোটি টাকা লোকসান দিয়েছে। দেশীয় চিনি না পেলেও এর লোকসান ও ধারদেনার বোঝা বহন করতে হচ্ছে দেশের সাধারণ মানুষকেই। চিনির মত দেশের ভোজ্য তেলের বাজারও গুটি কয়েক কর্পোরেট কোম্পানির আমদানি, উৎপাদন ও বিপণন ব্যবস্থার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। চিনি ও ভোজ্যতেলের চাহিদাও প্রায় সমান। গত অর্থ বছরে প্রায় ২১ লাখ টন ভোজ্যতেল আমদানি করা হয়েছিল বলে জানা যায়। এর আমদানি ব্যয় ছিল ১.৮৪ বিলিয়ন ডলার বা ১৬ হাজার কোটি টাকার বেশি। তবে চিনির মত ভোজ্যতেল খাতে সরকারী মিলের লোকসানের ধকল নেই। এর পুরোটাই বেসরকারি খাতের নিয়ন্ত্রণে। সরিষা, সূর্যমূখী বীজ, সয়াবিন, তিলসহ দেশে তৈলবীজ উৎপাদিত হয় বছরে ৩ লাখ টনের কাছাকাছি। এ থেকে উৎপাদিত তেল দিয়ে চাহিদার ১০ ভাগও পুরণ হয়না। এক সময় দেশীয় তৈলবীজ থেকে চাহিদার বড় অংশ পূরণ করা হতো। চাহিদা যত বাড়ছে দেশীয় উৎপাদন ততই কমছে এবং মূল্যও অস্বাভাবিক হারে বেড়ে চলেছে। এ ক্ষেত্রে দেশীয় উৎপাদন বৃদ্ধি ও আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে আনতে সরকারের নিস্ক্রিয়তা বিস্ময়কর। সেই সাথে ধানচালের ভরা মওসুমে ভারত থেকে চাল আমদানির অনুমোদন দিয়ে কৃষকদের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত করা, কিংবা গোপণ আমলাতান্ত্রিক আঁতাতের মাধ্যমে আমদানিকারক ও উৎপাদকদের পণ্যের মূল্য বাড়ানোসহ বাড়তি সুবিধা দিয়ে সাধারণ মানুষের উপর মূল্যস্ফীতির দুর্ভোগ বাড়িয়ে তোলার অব্যাহত তৎপরতা বন্ধে সরকারের কোনো পরিকল্পনা কিংবা পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। ভরা মওসুমে চাল আমদানির কারসাজির মাধ্যমে কৃষকদের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত করা হলেও সাধারণ ভোক্তাদের উচ্চমূল্য দিয়ে চাল কিনতে হয়। সব মুনাফা যায় মধ্যস্বত্বভোগীদের পকেটে। চাল ও গমের পর আমাদের খাদ্য তালিকায় চিনি ও ভোজ্য তেল অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পণ্য। চাহিদার শতকরা ৯০ শতাংশ তেল ও চিনি বিদেশ থেকে আমদানি নির্ভরতার কারণে বৈদেশিক মুদ্রা ও বাণিজ্য ঘাটতির ক্ষেত্রে এ দুটি পণ্যের গুরুত্ব অত্যাধিক। তেল ও চিনির বাজারকে কতিপয় কর্পোরেট আমদানিকারকদের একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার পেছনে দেশীয় শিল্পখাতে লোকসান ও অগ্নিকান্ডের ঘটনাগুলো রহস্যজনক ভূমিকা রেখেছে। স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে যেভাবে একের পর এক পাটকলে আগুণ লেগে দেশের পাটশিল্পকে লাভজনক খাত থেকে লোকসানি খাতে পরিনত করা হয়েছিল, দেশের রাষ্ট্রায়াত্ব চিনিকলের উৎপাদন অস্বাভাবিক হারে কমে যাওয়া এবং গত এক দশকে একের পর এক চিনিকলে এবং আখ খেতে আগুন লাগা, অত:পর অর্ধেক চিনিকল বন্ধ করে দেয়ার মধ্য দিয়ে এই শিল্পে কর্পোরেট মুনাফাবাজির একচেটিয়া কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে।

রিফাইন্ড সুগার বা সাদা চিনি ও রিফাইন্ড ভোজ্যতেলের ক্রমবর্ধমান চাহিদা যেমন দেশের খাদ্য নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তার উপর বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি করে চলেছে, সেই সাথে শতকরা ৯০ শতাংশের বেশি আমদানি নির্ভর এ দু’টি পণ্য দেশের জনস্বাস্থ্যের উপরও বড় ধরণের প্রভাব সৃষ্টি করছে। দেশের স্বাস্থ্য সমস্যার পেছনে পরিবেশগত দূষণ, হৃদরোগ, অবেসিটি লিভারের সমস্যা, ডায়াবেটিস ও কিডনি জটিলতার পেছনে ভোজ্যতেল ও রিফাইন্ড সুগারের ভূমিকা রয়েছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সাদা চিনিকে হোয়াইট পয়জন বলে অভিহিত করেছেন। দেশীয় চিনি খাতকে দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা থেকে বের করে চিনিকলের আধুনিকায়ন, কৃষকের উৎপাদর সক্ষমতার সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা গেলে এ ক্ষেত্রে আমদানি নির্ভরতা, অর্থনৈতিক ও স্বাস্থ্যঝুঁকি অনেকটা কমিয়ে আনা সম্ভব। চিনির ব্যবহার কমিয়ে আনা, সাদা চিনির বদলে দেশীয় চিনি, আখের গুড়, খেজুর গুড়, মধু ও স্টেভিয়া পাতার মত বিকল্প ব্যবহারের দিকে সাধারণ মানুষের সচেতনতা ও এসব কৃষি পণ্যের বাণিজ্যিক উৎপাদন বৃদ্ধির উদ্যোগ নিতে পারলে দেশ সবদিক থেকেই লাভবান হতো। বাণিজ্যিকভাবে সুগারবিট উৎপাদনের মাধ্যমে উন্নতমানের বিট চিনি উৎপাদনের সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো যেতে পারে। স্টেভিয়া পাতার মিষ্টতা চিনি থেকে ১০ গুণ বেশি। স্টেভিয়ার বাণিজ্যিক উৎপাদন বৃদ্ধির সাথে সাথে চিনির বিকল্প হিসেবে বাজারে এর প্রক্রিয়াজাত পণ্যের প্রবাহ বৃদ্ধি এবং বাড়িতে স্টেভিয়া রোপণ করে তা থেকে পাতা সংগ্রহ করে চিনির বিকল্প হিসেবে ব্যবহারের উদ্যোগ নেয়া হলে চিনি আমদানি কমিয়ে আনা অসম্ভব নয়। একইভাবে সরিষা, তিল, সয়াবিন, সূর্যমুখীর চাষবৃদ্ধির পাশাপাশি ভোজ্য নারিকেল তেল ও পরিকল্পিতভাবে পামগাছ রোপণ করে দেশের ভোজ্যতেল শিল্পখাতের আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে আনা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে ব্যাপক সম্ভাবনা থাকা সত্বেও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে রাইস ব্রান অয়েল খাত এরই মধ্যে মুখ থুবড়ে পড়তে বসেছে। দেশে ভোজ্য তেলের চাহিদার শতকরা ৫০ ভাগ শুধুমাত্র রাইস ব্রান অয়েল থেকেই পুরণ করা সম্ভব। প্রতি মওসুমে দেশের রাইসমিলগুলোতে কমপক্ষে ৫০ লাখ টন কুঁড়া উৎপাদিত হয়, এ থেকে বছরে ৮-১০ লাখ টন উন্নতমানের ভোজ্য রাইস ব্রান অয়েল উৎপাদিত হতে পারে। সয়াবিন ও পাম অয়েলের চেয়ে রাইসব্রান অয়েল অনেক বেশি নিরাপদ ও স্বাস্থ্য সম্মত। শতভাগ দেশীয় কাঁচামালের উপর ভর করে গড়ে ওঠা রাইস ব্রান অয়েল কোম্পানিগুলো একচেটিয়া আমদানিকৃত সয়াবিন-পামওয়েল কোম্পানির সাথে প্রতিযোগীতায় কুলিয়ে উঠতে পারছেনা। বিশ্বের সর্বত্র সয়াবিন-পামওয়েলের চেয়ে রাইস ব্রান অয়েল বেশিদামে বিক্রি হলেও আমাদের দেশে সাধারণ ভোক্তাদের অসচেতনতা ও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাব ও তেল আমদানিকারকদের রাজনৈতিক ও সাথে আমলাতান্ত্রিক পক্ষপাতিত্বের কারণে সম্ভাবনাময় রাইস ব্রান অয়েল খাত বন্ধ হতে বসেছে। আমদানি নির্ভরতা, খাদ্য নিরাপত্তা ও জনস্বাস্থ্য বিবেচনায় চিনি ও ভোজ্য তেলের বিকল্প উৎস ও সম্ভাবনাগুলোকে কাজে লাগানোর বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নিতে হবে। বন্ধ চিনিকলগুলো খুলে দিয়ে আধুনিকায়নের পাশাপাশি আখ উৎপাদন ও আখচাষিদের স্বার্থের দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। সেই সাথে সাধারণ মানুষের খাদ্যাভ্যাস, পরিবেশ, জীবনোপকরণ ও জীবন যাপনে দৃষ্টিভঙ্গি পরিববর্তনে শিক্ষাক্রম ও পরিকল্পিত উদ্যোগ নিতে হবে।

[email protected]


বিভাগ : আজকের পত্রিকা


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

চোটে পড়ে মৌসুম থেকে ছিটকেই গেলেন টের স্টেগেন

চোটে পড়ে মৌসুম থেকে ছিটকেই গেলেন টের স্টেগেন

ইন্টার মায়ামি ছাড়ছেন মেসি?

ইন্টার মায়ামি ছাড়ছেন মেসি?

ডেভিস কাপ দিয়ে কোর্টে ফিরছেন নাদাল

ডেভিস কাপ দিয়ে কোর্টে ফিরছেন নাদাল

দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারে অনুমতি পাচ্ছে না ইউক্রেন

দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারে অনুমতি পাচ্ছে না ইউক্রেন

গাজা-লেবাননে নিহত আরো ২২২

গাজা-লেবাননে নিহত আরো ২২২

আসাদের সঙ্গে বৈঠকের জন্য প্রস্তুত এরদোগান

আসাদের সঙ্গে বৈঠকের জন্য প্রস্তুত এরদোগান

জাবির সাবেক ছাত্রলীগ নেতাকে পিটিয়ে হত্যা মামলায় রায়হানের দোষ স্বীকার

জাবির সাবেক ছাত্রলীগ নেতাকে পিটিয়ে হত্যা মামলায় রায়হানের দোষ স্বীকার

গণহত্যাকারী কোন রাজনৈতিক দলের রাজনীতি করার অধিকার থাকে না: আসাদুজ্জামান রিপন

গণহত্যাকারী কোন রাজনৈতিক দলের রাজনীতি করার অধিকার থাকে না: আসাদুজ্জামান রিপন

ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনা জন্য আমাদের লড়াই চলছে : গয়েশ্বর চন্দ্র রায়

ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনা জন্য আমাদের লড়াই চলছে : গয়েশ্বর চন্দ্র রায়

ইনসি ইকো প্লাস সিমেন্ট নিয়ে এলো বাংলাদেশের সমূদ্র তীরবর্তী অঞ্চলের উপযোগী করে দীর্ঘস্থায়ী স্থাপনা নির্মাণের সমাধান

ইনসি ইকো প্লাস সিমেন্ট নিয়ে এলো বাংলাদেশের সমূদ্র তীরবর্তী অঞ্চলের উপযোগী করে দীর্ঘস্থায়ী স্থাপনা নির্মাণের সমাধান

হাত-পা ও চোখ বেঁধে ঝুলিয়ে পেটানো হয় --- আবু বাকের

হাত-পা ও চোখ বেঁধে ঝুলিয়ে পেটানো হয় --- আবু বাকের

দৈনিক রাজবাড়ী কন্ঠে" প্রকাশকের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে ফরিদপুর সাংবাদিক জোটের প্রতিবাদ সভা

দৈনিক রাজবাড়ী কন্ঠে" প্রকাশকের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে ফরিদপুর সাংবাদিক জোটের প্রতিবাদ সভা

ডাটা সেন্টারের সক্ষমতা বৃদ্ধির তাগিদ তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টার

ডাটা সেন্টারের সক্ষমতা বৃদ্ধির তাগিদ তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টার

শ্রীলঙ্কার চীনপন্থি প্রেসিডেন্ট দিশানায়েকে কি ভারতের জন্য চ্যালেঞ্জ?

শ্রীলঙ্কার চীনপন্থি প্রেসিডেন্ট দিশানায়েকে কি ভারতের জন্য চ্যালেঞ্জ?

ফুটবলের মাঠে চমক দেখাতে চান তাবিথ আউয়াল

ফুটবলের মাঠে চমক দেখাতে চান তাবিথ আউয়াল

এবার ফাঁস হলো রাবি শিবির সভাপতির পরিচয়

এবার ফাঁস হলো রাবি শিবির সভাপতির পরিচয়

নদী দখলকারীদের উচ্ছেদে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে - পানি সম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান

নদী দখলকারীদের উচ্ছেদে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে - পানি সম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান

সাবেক পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামিম কারাগারে

সাবেক পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামিম কারাগারে

স্বৈরাচারের পতন হলেও দোসররা এখনো রয়ে গেছে : তারেক রহমান

স্বৈরাচারের পতন হলেও দোসররা এখনো রয়ে গেছে : তারেক রহমান

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি রিক্রুটিং এজেন্সি মালিক গ্রেফতার

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি রিক্রুটিং এজেন্সি মালিক গ্রেফতার