ভেজালের দৌরাত্ম্যে জনগণ দিশেহারা
২৮ মে ২০২৩, ০৯:৫৭ পিএম | আপডেট: ২৯ মে ২০২৩, ১২:০০ এএম
সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে বিশুদ্ধ খাবারের কোন বিকল্প নেই। কিন্তু শরীরকে আমরা কতটুকু বিশুদ্ধ খাবার দিতে পারছি বর্তমানে সেটা বেশ উদ্বেগের বিষয়। খাবারের বিশুদ্ধতার মানদ-ের প্রশ্ন আজ সবখানেই। মানুষের প্রতিদিনের সকালটা শুরু হচ্ছে ভেজাল আর বিষযুক্ত খাবার দিয়ে। সকালে ঘুম থেকে উঠে এক গ্লাস পানি পান করতে গেলে ভয় লাগে এই পানি বিশুদ্ধ কিনা এইটা ভেবে। পরিবেশবান্ধব, গণমুখী ও টেকসই পানি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এশিয়ার পাবলিক সেক্টরে সর্বোত্তম পানি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়া ‘ওয়াসা’র স্লোগান থাকলেও ওয়াসার পানিতে নানারকম দূষিত পদার্থের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। বিভিন্ন ল্যাবের পরীক্ষায় প্রমাণ মিলেছে ওয়াসার পানিতে ব্যাকটেরিয়া, উচ্চমাত্রার অ্যামোনিয়া ও মলের জীবাণু। এগুলো থেকে সহজেই অনুমেয়, ওয়াসার পানি পান কতটা স্বাস্থ্যঝুঁকিপূর্ণ। এই ভয়ে অধিকাংশ ঢাকাবাসী বর্তমানে ওয়াসার পানি পান বাদ দিয়েছে। তবে যাদের সামর্থ্য নেই তারা নিরূপায় হয়ে দূষিত ওয়াসার পানি পান করে যাচ্ছে।
ওয়াসার পানি পানের অযোগ্য হওয়ায় ঢাকাবাসী জারের পানির দিকে ঝুঁকছে। বাসাবাড়ি, অফিস-আদালত, হোটেল-রেস্টুরেন্ট থেকে শুরু করে চা-রুটির দোকানÑ সবখানেই জারের পানির কদর আছে। প্রতি জারে ১৯ লিটার পানির বাজারদর ৬০-৮০ টাকার ভিতরে। পানি বিশুদ্ধকরণের নির্দিষ্ট কিছু ধাপ অনুসরণ করা লাগে। সকল প্রক্রিয়া মেনে পানি বিশুদ্ধ করলে প্রতি জার পানির খরচ পড়ে ৩৫-৪০ টাকা। জার প্রতি এই উৎপাদন খরচ ব্যয়ে ভোক্তা পর্যায়ে ৬০-৮০ টাকা মূল্যে পানি বিক্রি সমীচীন বলে প্রতীয়মান হয়। নগরবাসী ওয়াসার অনিরাপদ পানি পান থেকে বিরত থেকে নিজেদের নিরাপদ রাখতে এই খরচের বিনিময়ে বিশুদ্ধ পানি পান করার নিমিত্তে জারের পানিকে বেছে নিচ্ছে। কিন্তু সেখানেও আছে নানা ধরণের অনিয়ম। কেননা অসাধু পানি বিক্রেতারা মানুষের প্রয়োজনীয়তার এই সুযোগকে অপব্যবহার করে সেই ওয়াসার অনিরাপদ পানিই জারে ভরে পৌঁছে দিচ্ছে ভোক্তাদের কাছে। আবার কোন কোন কোম্পানির কাছে পরিশোধনের সব ধরনের যন্ত্রপাতি থাকা সত্ত্বেও সেটা ব্যবহার না করে শুধু নামমাত্র ফিল্টারিং করে পানি বাজারজাত করছে। অসাধু ব্যবসায়ীদের এসকল অপকর্মের পেছনে বড় একটি কারণ হলো, অধিক মুনাফা অর্জন। কোনো মতে ফিল্টারিং করে পানি বাজারজাত করা হলে প্রতি জার পানির খরচ পড়ে মাত্র ৩-৫ টাকা। আবার কেউ যদি সরাসরি ওয়াসার পানি বাজারজাত করে তবে কোনো খরচই পড়ে না। ফলে এধরণের অনিয়ম হরহামেশাই হচ্ছে। ফলস্বরূপ ওয়াসার পানির মত জারের পানির ভিতরেও মলের জীবাণুসহ নানা ধরনের জীবাণুর অস্তিত্ব পাওয়া যাচ্ছে। জেনে অথবা না জেনে ঢাকার প্রতিটি অলি-গলির হাজার হাজার দোকান, রেস্তোরাঁ, অফিস-আদালত এমনকি বাসাবাড়ির লোকজন অনেকটা নিরূপায় হয়ে নিয়মিতভাবে জারের এই পানি পান করছে।
প্রতিটি প্রাণীর বেঁচে থাকতে খাবারের আগে বাতাস দরকার। যে বাতাস হতে হবে বিশুদ্ধ। আমরা কি শরীরকে সেই বিশুদ্ধ বাতাস আদৌ দিতে পারছি! বর্তমানে বাতাসে এত পরিমাণ ধূলিকণা ভেসে বেড়ায়, যেটা বরংবার বায়ু দূষণে ঢাকা শহরের শীর্ষ অবস্থান আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে। এই বায়ু দূষণ রোধে কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে কিনা আমার জানা নেই। তবে এর ফল যে জনস্বাস্থ্যের উপর পড়বে না, সেটা কিন্তু ভাবা বোকামি। বায়ু দূষণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন শ্রমিক পর্যায়ের মানুষ হলেও ঢাকা শহরের ধনীরাও কিন্তু এই রিস্কের আওতামুক্ত নয়। বায়ু দূষণের বিরূপ প্রভাব তাৎক্ষণিকভাবে মানব স্বাস্থ্যের উপর পরিলক্ষিত না হলেও এর সুদূরপ্রসারী ক্ষতিকর প্রভাব সকলের উপর পড়বে বলে প্রতীয়মান হয়।
দুধ আদর্শ খাদ্যের আওতায় পড়ে। যে আদর্শ খাদ্যে ভেজাল মেশাতে মেশাতে পুরোপুরি অনাদর্শ না হওয়া পর্যন্ত দুধ বিক্রেতারা হাল ছাড়েনা। তাও যদি পানি মিশায়ে দুধের পরিমাণ বাড়াতো, সেটা জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হতনা। দুধে নানান সব ক্ষতিকর কেমিক্যাল মিশিয়ে মানুষের খাওয়ার পুরোপুরি অনুপযোগী করে বাজারে বিকোচ্ছে। যেখানে দুধের বাহ্যিক চেহারা যেমন রং, ঘ্রাণ ঠিক থাকলেও দুধের কোন অস্তিত্ব নেই। খামারির হাত বদলে দুধ ভোক্তা পর্যায়ে পৌঁছাতে প্রতি পর্যায়ে এত বেশি ভেজাল মেশানো হয় যেখানে দুধের পুষ্টি গুণাগুণ একেবারে থাকেনা বরং বিষে পরিণত হয়। ছোট, বড়, সুস্থ, অসুস্থ সকলেই সেই দুধ পান করছে। এর ফলে পরিস্থিতি যা হওয়ার তাই হচ্ছে। প্যাকেটজাত দুধও একই অবস্থা। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে দুধের প্যাকেটজাত করার সময় বা প্রক্রিয়াজাতকরণের সময় যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অবলম্বন না করায় প্যাকেটজাত দুধে মিলছে নানা ধরণের জীবাণু, যেটা জনস্বাস্থ্যের জন্য কোনভাবেই নিরাপদ নয়।
মাছে মেশানো হচ্ছে ফরমালিন। যে ফরমালিন মৃতদেহ পচার হাত থেকে রক্ষা করতে ব্যবহার করা হয়, সেই ফরমালিন মেশানো হচ্ছে মানুষের খাদ্যে। দ্রুত বর্ধনশীল চাষের কই, পাঙ্গাশ, মাগুর চাষ করা হচ্ছে নোংরা পরিবেশে যেখানে সরাসরি সিটি কর্পোরেশনের পয়ঃনিষ্কাশন বর্জ্য বা সুয়ারেজ বর্জ্য ফেলা হয়। এছাড়া অধিকাংশ মৎস্যখামারের নোংরা পরিবেশে চাষকৃত মাছ স্বাস্থ্য উপযোগী নয়। দ্রুত বর্ধনশীল করতে চাষের সময় মাছের যে খাদ্য খাওয়ানো হয় সেগুলো জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি। চিংড়ির ওজন বাড়াতে জেলি, সাগু, ভাতের মাড়, ময়দার গাড় দ্রবণসহ নানা ধরণের অপদ্রব্য পুশ করা হচ্ছে। সাইজে বড় তুলনামূলক দামি মাছের ওজন বাড়াতে মাছের পেটে প্রবেশ করানো হচ্ছে পাথর, লোহার টুকরাসহ নানান কিছু। বিক্রেতা আবার ক্রেতার কাছে বিক্রির সময় ওজনে ফাঁকি দেওয়ার জন্য নানা রকমের ফন্দি-ফিকির আটছে। মাংসের বাজারেও একই সমস্যা। মুরগি, গরু, খাসি সকল ক্ষেত্রে অল্প সময়ে অধিক মাংস পাওয়ার আশায় নানা ধরণের বৃদ্ধি হরমোনের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার হচ্ছে। উচ্চ মাত্রার এন্টিবায়োটিক ব্যবহারের পাশাপাশি খাবারে ব্যবহৃত হচ্ছে ইউরিয়াসহ নানা ধরনের নিষিদ্ধ দ্রব্য, যেগুলো মানুষের গ্রহণ করার ফলে মানুষের শরীরে বিরূপ প্রভাব ফেলছে।
সবজির বাজারে গেলে চাকচিক্য দেখে মনে হয় সবজিগুলো মাত্রই ক্ষেত থেকে উঠিয়ে বাজারজাত করা হয়েছে। কিন্তু এসব সবজি ঢাকা শহরে আসে বাইরের জেলাগুলো থেকে। কোন কোন ক্ষেত্রে এগুলো ঢাকার খুচরা বাজারে আসতে ২ দিন পর্যন্ত সময় লেগে যায়। কিন্তু এসকল সবজি দেখে বোঝার উপায় নেই ২ দিন আগে এগুলো ক্ষেত থেকে ওঠানো। খবরে প্রকাশ, এসব সবজি ভোক্তা পর্যায়ে পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত কয়েকবার ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থের সংস্পর্শে আসে। সবজিকে সতেজ ও উজ্জ্বলতা ধরে রাখতে মেশানো হচ্ছে নানা রকমের ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ। এছাড়া সবজিকে দ্রুত বর্ধনশীল করতে কৃষক পর্যায়ে ব্যবহৃত হচ্ছে মাত্রারিক্ত কীটনাশক ও গ্রোথ হরমোন। যেগুলো ভোক্তা পর্যায়ে পৌঁছাতে পৌঁছাতে তার সকল পুষ্টি গুণাগুণ বিলুপ্ত হয়ে জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
ফল ছোট, বড়, সুস্থ, অসুস্থ্য সকলের পছন্দের একটি খাবার। সহজপাচ্য ও সুস্বাদু ফলে রয়েছে হরেক রকমের ভিটামিন। রোগ প্রতিরোধ ছাড়াও শরীরের বিভিন্ন ভিটামিন ও খনিজের চাহিদা মেটাতে ফলের জুড়ি মেলা ভার। অত্যাধিক হারে রাসায়নিক পদার্থ মেশানোর ফলে রোগীর পথ্য হিসেবে প্রচলিত এই ফল এখন অনেকটা বিষের সামিল। অনেক দেশে ফল একদিন বাসি হয়ে গেলে সেটা খেতে চায়না। বলা হয় বাসি ফলের পুষ্টি গুণাগুণ কমে যাওয়ার পাশাপাশি জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়ায়। আমাদের দেশের ফল বিক্রেতারা সেই ফল দিনের পর দিন রেখে বিক্রি করছে। মেশাচ্ছে ক্ষতিকর রং ও নানা ধরনের রাসায়নিক দ্রব্য। বাইরে থেকে আমদানি করা ফলের কথা বাদ, দেশি ফলেও মেশানো হচ্ছে এসব রাসায়নিক। আবার অধিক লাভের আশায় দ্রুত ফলন আনতে ব্যবহৃত হচ্ছে অনিয়ন্ত্রিত মাত্রার হরমোন। যেগুলোর কোনটাই মানুষের জন্য সহনশীল নয়।
শিশুরা তুলনামূলক বেশি পরিমাণে দোকানের খাবার খেয়ে থাকে। বিশেষ করে জুস, চকলেট, ক্যান্ডি, চিপস, চানাচুর শিশুদের খুবই প্রিয়। দোকানের সারি সারি বয়ামে সাজিয়ে রাখা এসব খাবারের বাহারি মোড়কের চাকচিক্য দেখে সহজেই শিশু থেকে তার অভিভাবকেরা আকৃষ্ট হয়। যখন দেখি ৫-১০ টাকায় বেশ বড় আকারের একটি ডেইরি মিল্ক, চকোবারসহ নানা ধরণের খাবার বিক্রি হয় তখন সন্দেহ জাগে এসকল খাবারের মান নিয়ে। বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে প্রায়ই নজরে আসে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে গিয়ে সন্ধান পাওয়া ভেজাল খাদ্য কারখানার কার্যকলাপ। যেগুলো দেখলে শরীরে কাঁটা দেয়। সম্পূর্ণ অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কোনরকম স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা না করে টেক্সটাইলে ব্যবহৃত রং, স্যাকারিন, মেয়াদোত্তীর্ণ আটা-ময়দার সাথে ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্যের সংমিশ্রণে তৈরি হচ্ছে হরেক রকমের চকোলেট পণ্য, যেগুলো শিশুদের কাছে খুবই জনপ্রিয়। সেখানে মাছি, তেলাপোকাসহ অন্যান্য পোকা মাকড়ের আধিক্য রয়েছে। ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্য ও কৃত্রিম রং মিশিয়ে তৈরি করা এসব শিশু খাবারের স্বাদ ও রং আসল খাবারের চেয়েও অধিক আকর্ষণীয়। আমরা বড়রাই যেখানে স্বাদ ও বাহ্যিক সৌন্দর্যের কাছে কোনটা ভেজাল বা কোনটা আসল ভুলে যাই সেখানে শিশুদের কথা বলা বাহুল্য। আমার কথা হল, খাবারের নামে এসব বিষ বাজারে ছেড়ে এই যে কোমলমতি শিশুদের শরীরে ছোটকাল থেকেই রোগের বাসা ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে এই দায় আসলে কার? এগুলো দেখার জন্য সরকারের নির্ধারিত দপ্তর রয়েছে, যার কড়াকড়ি তত্ত্বাবধায়নে এই ভেজালযুক্ত কারখানা চিহ্নিত করে অপরাধকারিদের শাস্তির আওতায় নিয়ে আসলে এধরণের অনিয়ম বন্ধ করা তেমন দুঃসাধ্য ব্যাপার নয়। কিন্তু এসকল দপ্তর মাঝেমধ্যে তৎপর হলেও বেশিরভাগ সময় নিরব থাকে ফলে আশানুরূপ ফল মেলে না। দেশের নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, বিএসটিআইসহ সকল দপ্তরের সমন্বিত উদ্যোগ নিয়ে খাদ্যে ভেজাল মেশানোর বিপরীতে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া উচিৎ।
নকল আর ভেজাল প্রসাধনীর দৌরাত্বে বাজারে এখন আসল ব্র্যান্ডের প্রসাধনী কোনটা, সেটা মানুষের চেনা দায়। সাবান, শ্যাম্পু, ডিটারজেন্ট, গ্লিসারিন, ফেসওয়াস, রং ফর্সাকারি ক্রিম, পাউডার, লোশন, জেল, ব্যথানাশক ক্রিমসহ নানা ধরনের নকল পণ্যে এখন বাজার সয়লাব। দেশের অসাধু ব্যবসায়ীদের একটা মহল কোনো নিয়ম-কানুনের তোয়াক্কা না করে নামিদামি বিভিন্ন বিদেশী ব্র্যান্ডের লোগো, প্যাকেট হুবুহ নকল করে নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশেই অনুমোদনহীনভাবে ভেজাল প্রসাধনী সামগ্রী তৈরি করে বাজারজাত করছে। এমনকি অনেক প্রসাধনীর মলাটে বিএসটিআই’য়ের নকল লোগো পর্যন্ত ব্যবহার করা হয়েছে। নকল এসব প্রসাধনী তৈরিতে ব্যবহৃত হচ্ছে টেক্সটাইলের ক্ষতিকর রং, নানা ধরণের অননুমোদিত রাসায়নিক পদার্থ, মেয়াদোত্তীর্ণ আটা-ময়দার সাথে অনুমোদনহীন পারদ, ক্রোমিয়ামসহ অনেক ক্ষতিকারক উপাদান, যেগুলোর একটাও মানুষের ত্বকের জন্য অনুমোদিত নয়। নকল এসব প্রসাধনী ব্যবহার করে অনেকেই নানান ধরনের চর্মরোগ এবং ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছে। এছাড়া শিশুদের কোমল শরীরে এসব নকল প্রসাধনী ব্যবহারের ফলে অনেকের অঙ্গহানির মতো ঘটনাও ঘটছে। অনেক ক্ষেত্রে অসাধু ব্যবসায়ীরা আসল ব্র্যান্ডের পরিত্যক্ত মোড়ক ও কৌটাতে নকল প্রসাধনী ঢুকিয়ে বিক্রি করে। এছাড়াও অনেকে অবৈধ পথে ভারত, চীন, মালয়েশিয়া থেকে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের প্যাকেট, বোতল, কৌটা তৈরি করে দেশে নিয়ে এসে ভেজাল প্রসাধনী ভরে মোড়কজাত করে বিক্রি করছে আসল বলে।
অধিক মুনাফা লাভের আশায় ব্যবসায়ীদের এমন কোন পন্থা নেই, যেটা তারা অবলম্বন করেনি। আগে জানতাম ব্যবসায়ী হতে গেলে সততা লাগে। সততাই নাকি ব্যবসায়ীদের মূলধন। কিন্তু বর্তমানে এই সততার কোন বালাই ব্যবসায়ীদের ভিতর আছে কিনা সেটা নিয়ে সন্দেহ জাগে। অধিক লাভের জন্য ব্যবসায়ীরা সর্বদা মরিয়া হয়ে থাকে। ওজনে কম দেওয়া, মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য বিক্রি করা, ধূর্ততা, মানুষ ঠকানো এখন ব্যবসায়ীদের নীতি হয়ে গেছে। এককথায় মানুষের মস্তিষ্কে পচন ধরেছে। এই পচনের সূত্র ধরেই সবার ভিতরে এখন অল্প সময়ে ধনী হওয়ার এক অদম্য প্রতিযোগিতা লক্ষ করা যায়। সে প্রতিযোগিতায় নেমে মানুষ তার মনুষ্যত্বকে ভুলতে বসেছে। মানুষ যে সৃষ্টির সেরা জীব, তার প্রতিফলন এখন খুব কম মানুষের কৃতকর্মে প্রকাশ পায়। তাইতো সকল নীতি-নৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে মানুষের ভিতরে এখন শোভা পায় কিভাবে অন্যের ক্ষতি করে নিজের ফায়দা লোটা যায়। ব্যবসায়ীদের নানা ধরণের নৈতিকতাবিরোধী কার্যকলাপ এখানে সুস্পষ্ট প্রমাণ বহন করে। ব্যবসায়ীদের এই ধরনের মনোভাব যতদিন থাকবে ততদিন মানুষের সুস্থতা আশা করাটা বোকামি। ভেজাল খাবারের প্রতিফলন ইতোমধ্যে মানুষের শরীরে শুরু হয়ে গেছে। যে খাবার খেয়ে মানুষের বেঁচে থাকাটাই দুস্কর, সেখানে সুস্থতা আশা করাটা অকল্পনীয়। ত্রিশোর্ধ্ব অধিকাংশ মানুষ এখন নানা ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে ভুগছে। হাতে গুণে খুব কমই মানুষ পাওয়া যাবে যে নিয়মিত ওষুধ সেবন করে না। খাবারে ভেজালের দৌরাত্ম্য বন্ধ করা না গেলে আগামী প্রজন্মের চরম হুমকির মধ্যে পড়বে।
লেখক: গবেষক ও কলামিস্ট।
[email protected]
বিভাগ : আজকের পত্রিকা
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বগুড়ায় কলেজ শিক্ষার্থী হত্যা মামলায় গ্রেফতার ৪
মতিঝিলে শিক্ষার্থীদের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ১৫
সাভারে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ২৫ লাখ টাকার তেলসহ পিকআপ ছিনতাই
ডাকসু নিয়ে ৩৭৭ সংস্কার প্রস্তাব ঢাবি ছাত্রদলের
গাজীপুরে থানায় ব্যবসায়ীকে আটক করে ২ লাখ টাকা ঘুষ নিলো ওসি
রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র অফিস অবরোধের ঘোষণা চাকরি বঞ্চিতদের
শামীম ওসমান-নানক পরিবারের বিরুদ্ধে দুই মামলা
বায়ু দূষণে আবারও শীর্ষে ঢাকা
এক মাসের মধ্যে সংস্কারের রোডম্যাপ দিবে সরকার: পরিবেশ উপদেষ্টা
দেশে ফিরেই ছিনতাইয়ের শিকার মালয়েশিয়া প্রবাসী ডালিম
বিপিএল শেষ কর্নওয়ালের
ওয়াটসাপ, টেলিগ্রাম বা বিভিন্ন সোশ্যাল মাধ্যমে মেসেজ দিয়ে দেওয়া সালামের জওয়াব দেওয়া প্রসঙ্গে?
আরচ্যারী ফেডারেশনের তারুণ্যের উৎসব কর্মসূচি শুরু
বেনাপোলে আড়াই বছর পর কবর থেকে তোলা হলো বিএনপি নেতা আলিমের লাশ
রাষ্ট্রের কল্যাণে উপসচিব পদে কাকে প্রয়োজন: নীতি ও ন্যায্যতা কী
ধূমপানকে না বলুন
জালিমের পরিণতি ভালো হয় না
অখণ্ড ভারতের নীলনকশা এবং মুখোশপরা গণশত্রুদের দাস্যবৃত্তি
মাজারে হামলা ও উগ্রপন্থা কাম্য নয়
১২ কোটি জনসংখ্যার ৭ কোটি আক্রান্ত