পেঁয়াজ জ্বালিয়ে দিচ্ছেন ভারতের কৃষকরা
১২ মার্চ ২০২৩, ১১:২৫ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ০৪:১৮ এএম
ভারতের মহারাষ্ট্রে পেঁয়াজের বাম্পার ফলন সত্ত্বেও বিপাকে রয়েছেন কৃষকরা। বাড়তি ফলনের কারণে এ বছর পেঁয়াজের দাম মুখ থুবড়ে পড়েছে। দাম এতটাই কমেছে যে, কৃষকরা প্রতি কেজি মাত্র দু-তিন রুপিতে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। এমন অবস্থাায় ক্ষেতেই নষ্ট হচ্ছে অনেকের ফসল। ভারতের গণমাধ্যমগুলোতে এ খবর প্রচার করা হচ্ছে। মহারাষ্ট্রের নাসিক জেলার কৃষক কৃষ্ণ ডোংরে এবার সপরিবারে তার পেঁয়াজ চাষের জমিতে হোলিকা দহন ‘অনুষ্ঠান’ করেছিলেন। তার সেই ‘অনুষ্ঠান’-এর ছবিসহ খবর বেশ কিছু জাতীয় সংবাদপত্রে ছাপানো হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরালও হয়েছিল সেই ছবি।
এ সপ্তাহের শুরুর দিকে ছিল হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের রঙের উৎসব হোলি। তার আগের দিন গত ৬ মার্চ পালিত হয় ‘হোলিকা দহন’। বাংলায় একে ন্যাড়াপোড়া বলেন অনেকে, ইংরেজিতে বনফায়ার। একজন কৃষকের পারিবারিক ‘অনুষ্ঠান’ জাতীয় সংবাদপত্রে উঠে আসার কারণ হচ্ছে, তিনি মূলত খড়কুটার বদলে ‘হোলিকা দহন’ করেছেন নিজের ক্ষেতের প্রায় ১৫ হাজার কেজি পেঁয়াজ পুড়িয়ে।
পেঁয়াজ চাষি ডোংরে গণমাধ্যমকে বলেন, ১৫ দিন আগে আমি নিজের রক্ত দিয়ে লেখা একটা আমন্ত্রণপত্র পাঠিয়েছিলাম মুখ্যমন্ত্রীকে। তিনি যেন এসে আমদের সঙ্গে যোগ দেন ওই দিন। ‘অনুষ্ঠান’-এর সময়ে তোলা ডোংরে ও তার পরিবারের সদস্যরা কান্নার ছবিও ঠাঁই পেয়েছে খবরের কাগজে। ওটা তো আসলে অনুষ্ঠান ছিল না, সেটি ছিল কয়েক মাসের হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমের ফসল নিজের হাতেই নষ্ট করতে বাধ্য হওয়ার ব্যথা। ব্যাংক থেকে ধার নেওয়া টাকায় চাষ করেও উপযুক্ত দামে পৌঁয়াজ বিক্রি করতে পারছেন না ডোংরে। সুদসহ ব্যাংকের দেনা কীভাবে শোধ দেবেন, সে চিন্তায় ঘুম হারাম তার। ডোংরে বলেন, পেঁয়াজের দামের যা অবস্থাা, তাতে হয়তো আত্মহত্যাই করতে হতো। সেটি করতে পারলাম না। তাই হাতে গড়া ফসলই শেষ করে দিলাম।
ডোংরে পরিবারের মতো দশা মহারাষ্ট্রের আরও হাজার হাজার পেঁয়াজ চাষি পরিবারের। কৃষক নামদেব ঠাকরে বলেন, ছোট ছেলেটা ১০ রুপি দামের একটা আইসক্রিম খেতে চেয়েছিল, দিতে পারিনি। ১০ রুপির আইসক্রিম মানে তো পাঁচ কেজি পেঁয়াজের দাম! এ বছর মহারাষ্ট্রে পেঁয়াজের ফলন এত বেশি হয়েছে যে, কৃষকরা প্রতি কেজি মাত্র দুই বা তিন রুপি দর পাচ্ছিলেন দু’দিন আগেও। তাতে চাষের খরচ তো উঠছেই না, উল্টো আড়তে পৌঁছে দিতে গেলে লোকসানের বোঝা আরও বাড়বে। তাই ক্ষেতেই পেঁয়াজ নষ্ট করে ফেলছেন কৃষকরা।
কৃষক ডোংরে যেমন পুড়িয়ে ফেলেছেন ক্ষেতের পেঁয়াজ, তেমনি ট্র্যাক্টর চালিয়ে ফসল নিজেই নষ্ট করে দিয়েছেন নাসিকের নাইপালা গ্রামের কৃষক রাজেন্দ্র বোঢ়গুঢ়ে। তিনি বলেন, তিন একর জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছিলাম। পেঁয়াজ ম-িতে আড়ৎদারের কাছে পৌঁছে দেওয়া পর্যন্ত ১ লাখ ১০ হাজার রুপির মতো খরচ হয় প্রতি একরের ফসলে। এক একরে ১৫০ কুইন্টাল ফসল তো হয়, ভালো ফলন হলে ১৭০ থেকে ৮০ কুইন্টালও হয়। সেই হিসাব যদি করেন, তাহলে এক একরের ফসল থেকে গড়ে আমি দাম পাচ্ছি ৫০ থেকে ৬০ হাজার রুপি, যা আমার খরচের অর্ধেক। তাহলে সেই ফসল আড়তে পৌঁছে দেওয়ার জন্য আরও বাড়তি খরচ করে লোকসানের বোঝা বাড়াবো নাকি আমি?
ভারতে একসময় মহারাষ্ট্রই ছিল পেঁয়াজ চাষের মূল কেন্দ্র। কিন্তু কয়েক বছর যাবৎ মধ্য প্রদেশ ও গুজরাটেও পেঁয়াজ চাষ শুরু হয়েছে। তার ফলে ক্ষতির মুখে পড়ছেন মহারাষ্ট্রের পেঁয়াজ চাষিরা। মহারাষ্ট্রে নাসিক হচ্ছে সবচেয়ে বড় পেঁয়াজ বিপণন কেন্দ্র। সেখানকার পেঁয়াজের আড়তদার হীরামন পরদেশি। তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, আগে শুধু মহারাষ্ট্র আর অন্ধ্র প্রদেশেই পেঁয়াজের মূল চাষ হতো। কিন্তু এখন মধ্য প্রদেশ ও গুজরাটের চাষিরাও ভালো পরিমাণে পেঁয়াজ চাষ করছেন। গুজরাটে তো পেঁয়াজ চাষিদের জন্য সেখানকার সরকার অনুদানও দিয়েছে। কয়েকদিন আগে পর্যন্ত চাষিরা কুইন্টালপ্রতি (এক কুইন্টাল ১০০ কেজির সমান) ৩০০ বা ৪০০ রুপি দাম পেয়েছেন। হোলির পরে বৃহস্পতিবার থেকে আবার বাজার খোলার পরে দাম কিছুটা বেড়ে কুইন্টালপ্রতি প্রায় ৭০০ রুপি হয়েছে। কিন্তু তাতেও চাষিদের ক্ষতির হাত থেকে বাঁচানো যাবে না বলে মনে করেন এ ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, দুবাই হয়ে পাকিস্তানে যেতো আমাদের পেঁয়াজ, শ্রীলঙ্কাতেও রপ্তানি হতো। কিন্তু ওই দুই দেশের যা অর্থনৈতিক পরিস্থিাতি, সেখানে আর পেঁয়াজ পাঠানোর ঝুঁকি নিতে চাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা। আবার বাংলাদেশেও ভারতীয় পেঁয়াজের রপ্তানি কমে গেছে। ভারতের কৃষি বিশেষজ্ঞ ও কলামিস্ট দেবেন্দ্র শর্মা বলেন, এ বছর শুধু যে মহারাষ্ট্রের পেঁয়াজ চাষিরা ফসলের দাম না পাওয়ায় তা নষ্ট করে দিচ্ছেন তা নয়। প্রায় সব রাজ্যেই কৃষকরা ফসল নষ্ট করছেন দাম না পাওয়ার কারণে। পাঞ্জাব থেকে পশ্চিমবঙ্গ এই বিরাট অঞ্চলের আলু চাষিদের অবস্থা দেখুন। তারাও দাম না পেয়ে রাস্তায় আলু ফেলে দিচ্ছেন।
কয়েকদিন আগে ছত্তিশগড় ও তেলেঙ্গানা ঘুরে এসেছেন এই কৃষি বিশেষজ্ঞ। তিনি বলেন, সেখানে দেখলাম টমেটো চাষিরা ফসল নষ্ট করে ফেলছেন। দেবেন্দ্র শর্মা বলেন, শুধু অর্থ বরাদ্দ বা ন্যাফেডকে দিয়ে আপৎকালীন ভিত্তিতে পেঁয়াজ কিনলে হবে না। প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা যার মধ্যে কৃষিপণ্যের বাজারজাতকরণ, আমদানি-রপ্তানি নীতি সবই অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
বিভাগ : আজকের পত্রিকা
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
রানার অটোমোবাইলস পিএলসির এজিএম সম্পন্ন
আগামী নির্বাচনে ধানের শীষের বিজয়ে ঐক্যবদ্ধ কাজের আহ্বান: এমরান আহমদ চৌধুরী
নকল পণ্য প্রতিরোধে আমদানির উপর শুল্ক কমানোর দাবি বাজারের ২০ শতাংশ খাদ্য মানহীন
লক্ষ্মীপুরে চুরির অপবাদে জনসম্মুখে যুবককে খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতন, নাকে খত
বাঘায় মেয়াদ উত্তীর্ণ ৪ ইউপিতে প্রশাসক নিয়োগ
বিশ্বে বছরজুড়ে আলোচনায় যুদ্ধ, নির্বাচন ও মূল্যস্ফীতি
যুক্তরাষ্ট্র আগুন নিয়ে খেলছে : চীন
আওয়ামী দুঃশাসনের বিচার না হলে জুলাই আগষ্টের শহীদদের রক্তের সাথে বেঈমানী হবে: ডা. জাহিদ হোসেন
মেক্সিকোতে প্লেন বিধ্বস্ত হয়ে নিহত ৭
মাথাপিছু ১৪০০ ডলারের চেক পাচ্ছেন ১০ লাখ মার্কিনি
৯১ শিশু খেলোয়াড়সহ ৬৪৪ ক্রীড়াবিদকে হত্যা করেছে ইসরাইল
মোজাম্বিকে ঘূর্ণিঝড় চিডোরে নিহত ৯৪
মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা পড়িয়ে সম্মানহানী
রাফালের আগমনে ভারত সীমান্তে উত্তেজনা বৃদ্ধি
উত্তর প্রদেশে নিহত ৩ খলিস্তানি নেতা
ভারতে বাল্যবিবাহবিরোধী অভিযানে আটক ৫০০০
মুজিবল্যান্ড বানিয়ে হিন্দুস্তানে থাকুক আ.লীগ : রাশেদ প্রধান
গ্রেফতার ভয়ে পোল্যান্ড সফর বাতিল করলেন নেতানিয়াহু
পানামা খাল দখলের হুমকিকে ভর্ৎসনা পানামা প্রেসিডেন্টের
স্বৈরাচারের দোসর শাহরিয়ার আলমের স্ত্রী-সন্তানসহ দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা