ঢাকা   শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪ | ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

বাঙালি সেনারা পাকিস্তানের নির্দেশ কর্ণপাত করেননি

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

১২ মার্চ ২০২৩, ১১:২৫ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ০৭:৪৭ এএম

পূর্ব পাকিস্তানের সামরিক প্রধান লে. জেনারেল টিক্কা খান একাত্তরের ১৩ মার্চ এক সামরিক ফরমান জারি করেন। এই সামরিক ফরমানে তিনি বলেন, ‘প্রতিরক্ষা বাজেট থেকে যারা বেতন উত্তোলন করেন, তারা ১৫ মার্চের মধ্যে কর্মস্থলে যোগ না দিলে সবাইকে চাকরিচ্যুত করা হবে। শুধু তাই নয়, সামরিক আইনের বিচারে এসব আইন অমান্যকারীকে ১০ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড দেওয়া হবে।’ টিক্কা খানের এ আদেশের পরও কর্মস্থলে যোগ দেননি কোনো বাঙালি সেনা কর্মকর্তা। স্বাধীনতার স্বপ্নে বিভোর অকুতোভয় বাঙালি পাকিস্তান সামরিক সরকারের কোনো আদেশ-নির্দেশের প্রতিই কর্ণপাত করেননি।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জেনারেল টিক্কা খানের সামরিক ফরমানকে উস্কানিমূলক আখ্যায়িত করে বলেন, কোনো শক্তিই বাংলার জনগণের ঐক্যে ফাটল ধরাতে পারবে না। পাকিস্তানের সামরিক সরকারের হুমকি-ধমকি বাংলার স্বাধিকার আন্দোলনকেও ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। জেনারেল টিক্কার এ ঘোষণাকে কেন্দ্র করে বিক্ষুব্ধ সমগ্র জাতি প্রতিবাদ ও ক্ষোভে আরও ফুঁসে ওঠে। সর্বত্র অহিংস অসহযোগ আন্দোলন আরও বেগবান হতে থাকে। ধীরে ধীরে অহিংস অসহযোগ আন্দোলন রূপ নিতে থাকে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের দিকে।

স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ যেসব জেলা ও থানায় তখনও গঠন হয়নি, অতি অল্প সময়ের মধ্যে সেসব স্থানে কমিটি গঠনের জন্য তাগিদ পাঠানো হয়। অসহযোগ আন্দোলন তখন এতটাই স্বতঃস্ফূর্ত যে, কেউ আর পাকিস্তান সরকারের আদেশ-নির্দেশের পরোয়া করছে না। পূর্ব পাকিস্তান তথা গোটা বাংলাদেশে তখন নেতা একজনই। তিনিই দেশ, তিনিই সরকার।

এদিকে বঙ্গবন্ধু তার ৩২ নাম্বারের বাসভবনে শীর্ষস্থানীয় চার ছাত্রনেতা শেখ ফজলুল হক মনি, সিরাজুল আলম খান, আবদুর রাজ্জাক ও তোফায়েল আহমেদকে ডেকে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের দিকনির্দেশনা দেন। এ সময় বঙ্গবন্ধু কলকাতার ভবানীপুরের নর্দার্ন পার্কের ২১ রাজেন্দ্র রোডের একটি বাসার ঠিকানা দিয়ে বলেন যে, প্রবাস থেকে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য এটিই হবে মূল কেন্দ্র। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমদ দলের সর্বস্তরের নেতা এবং ১৭ জেলার নেতাদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করে প্রয়োজনীয় আদেশ-নির্দেশ দিতে থাকেন।

চট্টগ্রাম, রাজেন্দ্রপুর, কুমিল্লাসহ দেশের অন্যান্য সেনানিবাসে কৌশলে বাঙালি অফিসার ও সৈনিকদের নিরস্ত্র করার প্রক্রিয়া শুরু হয়। অবস্থা টের পেয়ে বাঙালি সেনা কর্মকর্তারা নিজেদের মধ্যে গোপনে ও কৌশলে আলোচনা করে প্রতিআক্রমণের প্রস্তুতিও গ্রহণ করেন। বাঙালি সেনা কর্মকর্তা ও সৈনিকরা গোপনে আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে সময় ও সুযোগের অপেক্ষা করতে থাকেন।

চট্টগ্রামে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের পরই বাঙালি সেনা কর্মকর্তারা ভেতরে ভেতরে প্রস্তুতি শুরু করেন। আজকের দিনে তদানীন্তন ক্যাপ্টেন রফিকুল ইসলাম (সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বীরউত্তম) ষোলশহর এলাকা থেকে তার সৈন্য বাহিনীসহ বের হয়ে এসে বহু পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তা ও সৈনিককে আটক করে প্রতিরোধ আক্রমণের প্রস্তুতি গ্রহণ করেন।


বিভাগ : আজকের পত্রিকা


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

অতিরিক্ত মালবাহী গাড়িতে বেহাল দশা
কমলনগরে স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে কিশোর গ্রেফতার
সড়ক সংস্কারের দাবিতে বরগুনাবাসীর মানববন্ধন
২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ওসি বদল
শিশু শিহাব হত্যার বিচার দাবিতে মানববন্ধন
আরও

আরও পড়ুন

কিশোরগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার কামালসহ তিনজন গ্রেফতার

কিশোরগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার কামালসহ তিনজন গ্রেফতার

প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ

প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ

বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত

বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত

উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ

উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ

গাজায় যুদ্ধবিরতি ছাড়া বন্দী বিনিময় হবে না : হামাস

গাজায় যুদ্ধবিরতি ছাড়া বন্দী বিনিময় হবে না : হামাস

শান্তিরক্ষা মিশন মোতায়েন করতে চায় জাতিসংঘ হাইতিতে

শান্তিরক্ষা মিশন মোতায়েন করতে চায় জাতিসংঘ হাইতিতে

চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক

চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক

পুতিন পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে দ্বিধা করবেন না : সার্বিয়া

পুতিন পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে দ্বিধা করবেন না : সার্বিয়া

ক্লাইমেট অর্থায়ন ইস্যুতে দেশগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব

ক্লাইমেট অর্থায়ন ইস্যুতে দেশগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব

লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু

লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু

ট্রাম্পের অ্যাটর্নির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন আটকে গেল

ট্রাম্পের অ্যাটর্নির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন আটকে গেল

‘ফিলিস্তিনের পর ইরান, সউদী ও তুরস্ক হবে পরবর্তী টার্গেট’

‘ফিলিস্তিনের পর ইরান, সউদী ও তুরস্ক হবে পরবর্তী টার্গেট’

প্রতি বছর ৩ লাখ নথিবিহীন অভিবাসীকে বৈধতা দানের ঘোষণা স্পেনের

প্রতি বছর ৩ লাখ নথিবিহীন অভিবাসীকে বৈধতা দানের ঘোষণা স্পেনের

প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে সবচেয়ে অসুখী দেশ জাপান-কোরিয়া

প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে সবচেয়ে অসুখী দেশ জাপান-কোরিয়া

মুসলিম চিকিৎসক

মুসলিম চিকিৎসক

শীর্ষে দিল্লি

শীর্ষে দিল্লি

সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা

সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা

ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা

ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা

বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান

বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান

মানসিক সুস্থতায় কর্মবিরতি

মানসিক সুস্থতায় কর্মবিরতি