অস্তিত্ব সঙ্কটে মাদারীপুরের নদ-নদী
১২ মার্চ ২০২৩, ০৮:৪৫ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ১১:৪১ পিএম

মাদারীপুরের ৭টি প্রধান নদ-নদী পদ্মা, আড়িয়াল খাঁ, পালরদী, কুমার, নিম্নকুমার, টরকী ও ময়নাকাটার এখন বেহাল দশা। জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া এই সাতটি নদীর কোথাও নাব্য সঙ্কট আবার কোথাও দখল আর দূষণে অস্তিত্ব ঝুঁকিতে।
কুমার ও আড়িয়াল খাঁ নদের তীরেই গড়ে উঠেছে মাদারীপুর শহর। কুমার নদে বালু ফেলে দখল করে অবৈধ বাড়িঘর, দোকানপাট, করাতকল ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বসবাস করছেন পাঁচ শতাধিক দখলদার। দখলদারের সংখ্যা বাড়ছেই, প্রশাসনের সুনজর নেই।
শিবচরের ময়নাকাটা নদী এখন অস্তিত্বহীন। ময়নাকাটার বুকজুড়ে ফসলের আবাদ। অন্যদিকে কালকিনির টরকী ও পালরদীরও একই দশা। বর্ষায় দু-তিন মাস পানি থাকলেও বাকি সময় থাকে কোথাও হাঁটু পানি কোথাও ফসলের মাঠ। আড়িয়াল খাঁ-এ জেগে উঠেছে নতুন নতুন চর।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মাদারীপুর জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া পদ্মা, আড়িয়াল খাঁ, পালরদী, কুমার, নিম্নকুমার, টরকী ও ময়নাকাটার ১৪০ কি. মি. নদ-নদী শুকিয়ে অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়েছে। এসব নদ-নদী ধীরে ধীরে মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে জেলার নদীবন্দর ও লঞ্চঘাটগুলো। ফলে ভাটা পড়েছে ব্যবসা বাণিজ্যে।
এক সময় নদ-নদী আর বিল-বাওড়ের জনপদ হিসেবে খ্যাত ছিল মাদারীপুর। পদ্মা, আড়িয়ালখাঁ, নিম্নকুমার, ময়নাকাটা ও পালরদী এ জেলার প্রধান নদ-নদী। এছাড়া বাঘিয়ার বিল, লখন্ডার বিল, পিতাম্বর বিল, শশীকর বিল, গৈদির বিল, জয়ার বিল, জুয়ারিয়ার বাওড়, পাঁচখোলার বাওড়, বিল পদ্মার মত বড় বড় বিল-বাওড় ছিল জেলার সম্পদ। এসব নদ-নদী, বিল বাওড় শুকিয়ে বর্তমানে সরু খালে পরিণত হয়েছে।
চল্লিশ থেকে ষাটের দশকের মধ্যে জেলার প্রায় ১৪০ বর্গ কিলোমিটার নদী শুকিয়ে গেছে। অস্তিত্ব সঙ্কটে কোনো মতে টিকে আছে নদ-নদী শুকিয়ে যাওয়া সরু খালগুলো। ১৯৫১ থেকে ১৯৫৩ সালের মধ্যে সম্পূর্ণ শুকিয়ে যায় মাদারীপুর-টেকেরহাট নৌপথের নিম্নকুমার নদের ১৮ কি.মি.। প্রায় ৬৬ বছর পর বর্তমান আ.লীগ সরকারের আমলে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে নিম্নকুমার নদ ড্রেজিং করে টেকেরহাটের মূল কুমার নদের সঙ্গে সংযোগ করে দেয়া হয়েছে। আবার এই নদে শুরু হয় জোয়ার-ভাটা। ছয় দশক পর বর্তমানে সেখান দিয়ে নৌকা-ট্রলার চলাচল করছে। তবে লঞ্চ বা বড় ধরনের কোন নৌযান চলাচল করতে পারে না। নদ-নদী শুকিয়ে যাওয়ার মত প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে প্রতি বছর সামান্য বন্যায় ডুবে যায় এ জনপদ। ব্যাপক ফসল হানি ঘটে। ধ্বংস হয়ে যায় কোটি-কোটি টাকার সম্পদ। সৃষ্টি হয় স্থায়ী পানিবদ্ধতা।
সরেজমিনে দেখা যায়, মাদারীপুর শহরের রাস্তিগ্রামের কুমার নদের জমি দখল করে বাদল মোল্লা নামের এক দখলদার পাকা স্থাপনা নির্মাণ করেছেন। বাদল মোল্লার দাবি- তিনি এই জমি কিনে স্থাপনা নির্মাণ করেছেন। তবে সে জমি কেনার কোনো দলিল বা কাগজপত্র দেখাতে পারেনি।
দু’জন প্রভাবশালীর থেকে তিনি দখল নিয়েছেন বলে স্থানীয় এক ব্যবসায়ী জানান। যেহেতু যারা বিক্রি করেছে তাদের কোন কাগজ বা দলিল নেই তাই তারা মৌখিকভাবে পজিশন জমি বিক্রি করেছেন বলে জানান বাদল মোল্লা। সরকারি জমিতে পাকা স্থাপনা নির্মাণের ব্যাপারে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কারো অনুমতি নিয়েছেন কি না? এমন প্রশ্নের কোন জবাব দেননি নির্মাতা।
তবে এ ব্যাপারে দখলদার বাদল মোল্লা বলেন, আমাদের কেনা সম্পত্তি এখানে আছে। তারপরও যদি সরকারি জমিতে ঘর করে থাকি, তাহলে সরকার চাইলে ভেঙে দেব।
অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, বাদল মোল্লা ছাড়াও বাদশা বেপারী, রুপাই, সুফিয়া বেগম, বাচ্চু বেপারী, আনোয়ারসহ অনেকে দখলকৃত জমিতে স্থাপনা নির্মাণ করে বসবাস ও বাণিজ্য করছে। পূর্ব রাস্তি মৌজার ২৯৪ নম্বর খতিয়ানের এসএ ৯৯০ নম্বর দাগের ৩ একর জমির মধ্যে ২ একর ২০ শতাংশ জমি বিভিন্ন মালিকের নামে রেকর্ড রয়েছে এবং তারা ভোগ দখলে রয়েছেন। ওই ৩ একরের মধ্যে ৮০ শতাংশ ও অন্যান্য দাগের প্রায় ৪ একরসহ প্রায় ৫ একর জমি নদী সিকস্তী হিসাবে ১/১ খতিয়ানে সরকারের নামে বিআরএস এর মাঠ জরিপে রেকর্ডভুক্ত করা হয়।
অভিযোগ রযেছে, স্থানীয় প্রভাবশালী ১৬ জনের একটি গ্রুপ নদী সিকস্তী জমি ভরাট করে বিভিন্ন লোকের কাছে দলিলবিহীন দখল দিয়ে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
মাদারীপুর বিসিক শিল্প নগরীর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিল্প মালিক ও ব্যবসায়ীরা জানান, রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় কুমার পাঁচ শতাধিক দখলদার কুমার নদের ভরাটকৃত অংশে প্রায় পাঁচ একর জমি দখল করে বাড়িঘর, দোকানপাট, করাতকল ও বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বসবাস করছে। ক্রমাগত দখলদারের সংখ্যা বাড়লেও প্রশাসন এ ব্যাপারে নজর দিচ্ছে না।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন বলেন, শুধু বিসিকের পাশে নয় কুমার নদের দুই পাড়েই কিছু দখলদার বিভিন্ন সময় ধরেই এ স্থাপনাগুলো নির্মাণ করে আসছে। দখলকৃত জমিতে বেশ কিছু স’মিল, বাড়িঘর, আড়তঘরসহ বিভিন্ন স্থাপনা রয়েছে। জেলার যেসব নদীর পাড় দখলের মাধ্যমে অবৈধ স্থাপনা করে নদীর স্বাভাবিক গতিপথ বাধাগ্রস্ত করছে। আমরা অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদে যা করার সবই করবো।
বিভাগ : আজকের পত্রিকা
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

ঐক্যবদ্ধ জিহাদের মাধ্যমে ফিলিস্তিনকে রক্ষা করতে হবে বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিবাদ অব্যাহত

১৩ বছর পর জমি দখলে নেয় ভুক্তভোগী, ভিন্নখাতে নিতে অপ-প্রচার

দেশের ১৩৫ কলেজে নতুন অধ্যক্ষ নিয়োগ

দেশে বড় বিনিয়োগ আসতে পারে: বিডা চেয়ারম্যান

প্রতিবাদ মিছিল থেকে যারা লুটপাট করেছে তারা মানবতার কলঙ্ক : দুদু

নেত্রকোনায় চাঞ্চল্যকর আনোয়ার হত্যাকান্ডের রায়ে একজনের ফাঁসি

ড. ইউনূসের সঙ্গে পিটার হাসের সাক্ষাৎ

কিশোরগঞ্জে দুই গ্রামবাসীর সংঘর্ষে বাড়ি-দোকান ভাংচুর, লুটপাট অর্ধশত আহত

জিম্বাবয়ের বিপক্ষে যে কারণে শক্তিশালী দল দিল বিসিবি

দ্বিতীয় প্রস্তুতি ম্যাচেও মেয়েদের বড় জয়

মহেশপুর সড়ক দুর্ঘটনায় দুইজন নিহত আহত ৪

লালমোহনে প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে সার-বীজ বিতরণ

ফিলিস্তিনে গণহত্যার প্রতিবাদে ঈশ্বরগঞ্জে ছাত্রদলের বিক্ষোভ

দেশে বিনিয়োগের এত অনুকূল পরিবেশ আগে ছিল না: ড. ইউনূস

বিশ্বের শক্তিশালী ৫০ দেশের তালিকায় বাংলাদেশ

বর্ণিল আয়োজনে হাবিপ্রবিতে ২৪ তম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপন

এনডিবি আরও ১০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করবে

ফিলিস্তিনে গনহত্যার প্রতিবাদে সিলেটে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করলো শিবির

সৈয়দপুরে গাজায় মুসলিম জনতাকে গনহত্যার প্রতিবাদে ছাত্রদলের বিক্ষোভ ও মানববন্ধন

মির্জাগঞ্জে খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির ১০ বস্তা চাল জব্দ