ঢাকা   মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১০ পৌষ ১৪৩১

ফুলদি নদীতে একটি সেতুর জন্য দীর্ঘ অপেক্ষা গজারিয়াবাসীর

Daily Inqilab মোহাম্মদ সাহাব উদ্দিন, গজারিয়া (মুন্সিগঞ্জ) থেকে

১৩ মার্চ ২০২৩, ০৮:১৭ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ০৯:৩৬ এএম

‘দেশ স্বাধীন হওনের পর থেইকা নৌকায় কইরা নদী পার হইতাছি। প্রতিবার নির্বাচনের সময় জনপ্রতিনিধিরা গলা ফাডায়া কয় আমাগো কষ্টের দিন শেষ হইবো। নদীর ওপরে ব্রিজ কইরা দিবো। কই ব্রিজতো আর অয়না। আমরাকি সরকারকে ভ্যাট, ট্যাক্স দেই না, আমরা কি দেশের জনগন না, কেন এখানে একটা ব্রিজ বানায় না সরকার? কথাগুলো বলছিলেন, মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার গোসাইরচর এলাকার বাসিন্দা হাবিবুর রহমান (৭০)। সরেজমিনে গজারিয়া ও ইমামপুর ইউনিয়নের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ফুলদি নদীর রসুলপুর ঘাটে গেলে কথা হয় হাবিবুর রহমানের সঙ্গে।
বৃদ্ধ হাবিবুর রহমান জানান, নির্বাচনের আগে সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেয় বিভিন্ন দলের নেতারা। তবে ভোটে নির্বাচিত হওয়ার পর কেউ খোঁজ রাখে না। এলাকাবাসী জনপ্রতিনিধিদের কাছে ধর্ণা দিলে শুধু আশ্বাস ছাড়া কিছুই পান না। পাঁচ দশক ধরে হয় হচ্ছে করে এ সেতু আর হচ্ছে না। আমরা আর কত কষ্ট কইরাই নদী পার হমু! আমাগো কষ্ট কি আর শেষ হইবো না?
রসুলপুর খেয়াঘাটে ট্রলারে পার হয়ে বিদ্যালয়ে যাচ্ছিলো গজারিয়া পাইলট মডেল হাই স্কুলের দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী মোহাম্মদ নাফিস ও অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থী উম্মে হাবিবা। তাদের বাড়ি রসুলপুর মোল্লাবাড়ি।
নাফিস বলেন, গত পাঁচ বছর ধরে কখনো নৌকায়, কখনো ট্রলারে করে ফুলদি নদী পারাপার হয়ে বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করছি। কুয়াশা ও ঝড়-বৃষ্টির দিনে প্রায় ৪০০ মিটার চওড়া এ নদী পারাপারে জীবনের ঝুঁকি নিতে হয়। বর্ষায় কচুরিপানার জন্য ট্রলার ঠিকমতো চলেনা, ঝড়-বৃষ্টিতেও বন্ধ থাকে ট্রলার। এভাবে ঠিক সময় বিদ্যালয়ে পৌছানো যায় না। আমাদের মতো এমন হাজারো স্কুল, কলেজের শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন এমন দুর্ভোগ নিয়ে নদী পার হচ্ছে। একটি সেতু হলে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যেত।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ফুলদি নদীর ওপর সেতু না থাকায় দুটি ইঞ্জিত চালিত কাঠের নৌকা ও সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তরের দেয়া একটি ফেরির মাধ্যমে যাত্রী, অটোরিকশা এবং সিএনজি রিকশা পারাপার হচ্ছে। এ দুই ধরনের বাহনে করে স্কুল, কলেজ, বিভিন্ন সরকারি অফিস-আদালতের চাকরিজীবীরা নদীর একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যাতায়াত করছে। ট্রলারগুলো যাত্রী নামানোর কয়েক মিনিটের মধ্যেই যাত্রীরা পরিপূর্ণ হয়ে যাচ্ছে।
এ সময় স্থানীয় ও এ নৌপথে যাতায়াতকারী কমপক্ষে ১৫ জনের সঙ্গে কথা হয়। তারা জানান, গজারিয়া উপজেলার থানা, হাসপাতাল, ফায়ারসার্ভিসসহ সব সরকারি অফিস ফুলদি নদীর পূর্ব পাশে। আবার, নদীর পশ্চিম পাশের গজারিয়া ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি উচ্চ বিদ্যালয়, মাদরাসা রয়েছে। এছাড়াও পূর্ব পাশের ইউনিয়নগুলোর বাসিন্দাদের মুন্সিগঞ্জ শহরে আসতে হলে ফুলদি নদী পারি দিতে হয়। প্রতিদিন মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলা ও গজারিয়া উপজেলার অন্তত ২৫-৩০ হাজার মানুষ এ নৌপথে যাতায়াত করে। এছাড়াও কুমিল্লার দাউদকান্দি ও সোনারগাঁও উপজেলার ৮-১০টি গ্রামের মানুষ সহজে কুমিল্লা-চট্টগ্রাম যেতে ফুলদি নদী পারাপার হন।
গুরুত্বের কথা বিবেচনা করে ২০০২ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন চারদলীয় জোট সরকারের যোগাযোগমন্ত্রী নাজমুল হুদা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। ২৩ বছর পার হলেও সেতু নির্মাণ কাজ শুরু হয়নি।
গজারিয়ার সোনারকান্দি এলাকার সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা মাহবুবুর রশিদ (৬৫) বলেন, গজারিয়া উপজেলাকে দুই ভাগে ভাগ করে রেখেছে ফুলদি নদী। এখানকার কৃষিভিত্তিক অর্থনীতিসহ এলাকার ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার মারাত্মভাবে বিঘিœত হচ্ছে। সেতুর অভাবে জনদুর্ভোগ এখন চরমে। যুবক বয়স থেকে এ নদীর ওপর সেতু নির্মানের কথা শুনছি। সেতু আর হচ্ছে না। মরার আগে দেখে যেতে পারবো কিনা তাও জানিনা। মানুষ যানবাহনের জন্য দ্রুত সেতু করা দরকার।
এ বিষয়ে গজারিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আমিরুল ইসলামের জনগণের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে একাধিকবার আমরা চিঠি চালাচালি করছি। আশা করছি খুব দ্রুত এই ব্রিজ নির্মাণ করা হবে।
নারায়ণগঞ্জ সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহানা ফেরদৌস বলেন, এ নদীর ওপর ৪শ’ মিটার সেতু ও দুইপাশে ২শ’ মিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হবে। এ জন্য বিআইডব্লিউটিএ থেকে একটি ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করা হয়েছে। ছাড়পত্র পেলে সেতুর জন্য নকশা করা হবে। সেই সঙ্গে সেতু নির্মাণের প্রাথমিক কাজগুলোও চলতি অর্থ বছরের মধ্যে করা হবে। বরাদ্দ চেয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। সেখান থেকে বরাদ্দ পেলে ২০২৩ সালের মধ্যে সেতুর কাজ শুরু করা যেতে পারে।


বিভাগ : আজকের পত্রিকা


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

অতিরিক্ত মালবাহী গাড়িতে বেহাল দশা
কমলনগরে স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে কিশোর গ্রেফতার
সড়ক সংস্কারের দাবিতে বরগুনাবাসীর মানববন্ধন
২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ওসি বদল
শিশু শিহাব হত্যার বিচার দাবিতে মানববন্ধন
আরও

আরও পড়ুন

১৩ বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফ

১৩ বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফ

সাতক্ষীরা কালিগঞ্জে পটল চাষে বাম্পার ফলন

সাতক্ষীরা কালিগঞ্জে পটল চাষে বাম্পার ফলন

গফরগাঁওয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় ছাত্রের মর্মান্তিক মৃত্যু

গফরগাঁওয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় ছাত্রের মর্মান্তিক মৃত্যু

শাহরাস্তিতে বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হয়ে শিক্ষার্থীর মৃত্যু

শাহরাস্তিতে বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হয়ে শিক্ষার্থীর মৃত্যু

পাকিস্তানে অবশেষে সরকার ও বিরোধী দলের আলোচনা শুরু

পাকিস্তানে অবশেষে সরকার ও বিরোধী দলের আলোচনা শুরু

ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার ফোন

ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার ফোন

রানার অটোমোবাইলস পিএলসির এজিএম সম্পন্ন

রানার অটোমোবাইলস পিএলসির এজিএম সম্পন্ন

আগামী নির্বাচনে ধানের শীষের বিজয়ে ঐক্যবদ্ধ  কাজের আহ্বান: এমরান আহমদ চৌধুরী

আগামী নির্বাচনে ধানের শীষের বিজয়ে ঐক্যবদ্ধ  কাজের আহ্বান: এমরান আহমদ চৌধুরী

নকল পণ্য প্রতিরোধে আমদানির উপর শুল্ক কমানোর দাবি  বাজারের ২০ শতাংশ খাদ্য মানহীন

নকল পণ্য প্রতিরোধে আমদানির উপর শুল্ক কমানোর দাবি বাজারের ২০ শতাংশ খাদ্য মানহীন

লক্ষ্মীপুরে চুরির অপবাদে জনসম্মুখে যুবককে খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতন, নাকে খত

লক্ষ্মীপুরে চুরির অপবাদে জনসম্মুখে যুবককে খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতন, নাকে খত

বাঘায় মেয়াদ উত্তীর্ণ ৪ ইউপিতে প্রশাসক নিয়োগ

বাঘায় মেয়াদ উত্তীর্ণ ৪ ইউপিতে প্রশাসক নিয়োগ

বিশ্বে বছরজুড়ে আলোচনায় যুদ্ধ, নির্বাচন ও মূল্যস্ফীতি

বিশ্বে বছরজুড়ে আলোচনায় যুদ্ধ, নির্বাচন ও মূল্যস্ফীতি

যুক্তরাষ্ট্র আগুন নিয়ে খেলছে : চীন

যুক্তরাষ্ট্র আগুন নিয়ে খেলছে : চীন

আওয়ামী দুঃশাসনের বিচার না হলে জুলাই  আগষ্টের শহীদদের রক্তের সাথে বেঈমানী হবে: ডা. জাহিদ হোসেন

আওয়ামী দুঃশাসনের বিচার না হলে জুলাই  আগষ্টের শহীদদের রক্তের সাথে বেঈমানী হবে: ডা. জাহিদ হোসেন

মেক্সিকোতে প্লেন বিধ্বস্ত হয়ে নিহত ৭

মেক্সিকোতে প্লেন বিধ্বস্ত হয়ে নিহত ৭

মাথাপিছু ১৪০০ ডলারের চেক পাচ্ছেন ১০ লাখ মার্কিনি

মাথাপিছু ১৪০০ ডলারের চেক পাচ্ছেন ১০ লাখ মার্কিনি

৯১ শিশু খেলোয়াড়সহ ৬৪৪ ক্রীড়াবিদকে হত্যা করেছে ইসরাইল

৯১ শিশু খেলোয়াড়সহ ৬৪৪ ক্রীড়াবিদকে হত্যা করেছে ইসরাইল

মোজাম্বিকে ঘূর্ণিঝড় চিডোরে নিহত ৯৪

মোজাম্বিকে ঘূর্ণিঝড় চিডোরে নিহত ৯৪

মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা পড়িয়ে সম্মানহানী

মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা পড়িয়ে সম্মানহানী

রাফালের আগমনে ভারত সীমান্তে উত্তেজনা বৃদ্ধি

রাফালের আগমনে ভারত সীমান্তে উত্তেজনা বৃদ্ধি