সময় বাড়ানোর পরও শেষ হচ্ছে না কাজ
২৪ মার্চ ২০২৩, ০৯:০২ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ০২:১৪ পিএম
জনগুরুত্বপূর্ণ নোয়াখালী-ফেনী আঞ্চলিক মহাসড়কের ফোরলেন প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েও যেনো শেষ হচ্ছেনা। প্রকল্পে একাধিবার ব্যয় এবং সময় বাড়ানোর পরও এ সড়কের কাজ শেষ না হওয়ায় জনমনে নানা প্রশ্নের উদ্রেক হচ্ছে। অসম্পন্ন সড়কটিতে যানবাহন চলাচলে এবং পথচারীদের দুর্ভোগের অন্ত নেই। সারাদিনে ধূলা-বালিতে একাকার সড়কে চলাচল করা পথচারি, যানবাহন ও আশপাশের এলাকাবাসি। কিছু কিছু অংশে কাজ শেষ না হওয়ায় উল্টো পথে যানবাহন চলাচলে প্রতিনিয়ত ছোট-খাটো দুর্ঘটনাও ঘটছে। প্রাণহানী হয়েছে বেশ কয়েকজনের।
জানা গেছে, ফেনী-নোয়াখালী সড়কের বেগমগঞ্জ থেকে সোনাপুর পর্যন্ত ফোরলেন উন্নীতকরণ প্রকল্পে ৪৯ দশমিক ৫৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে সড়কটিতে ৫২৩ কোটি ৩৭ লাখ টাকা ব্যয় বাড়ানো হয়েছিলো। ২০২১ সালের জুন মাসে উন্মুক্ত করার জন্য সময়ও নির্ধারিত ছিলো। সড়ক বিভাগের আওতায় ৭৪৭ কোটি টাকা ব্যায়ে ফেনীর মহিপাল থেকে নোয়াখালীর চৌমুহনী পূর্ববাজার পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য মহাসড়কের নোয়াখালী অংশের সেবারহাট-চৌমুহনী পূর্ববাজার পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার সড়ক দু’লেন থেকে চারলেনে উন্নীতকরণ কাজ শম্ভুক গতির কারণে জনদুর্ভোগের শেষ নেই।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সেনবাগ উপজেলার ছমিরমুন্সি বাজারের পূর্বপ্রান্ত থেকে চৌমুহনী পূর্ববাজার পর্যন্ত এ ব্যস্ততম অংশে সড়কের উত্তর পাশের দু’লেনের কাজ শেষ হলেও দক্ষিণ পাশের দু’লেন অংশে হ-য-ব-র-ল অবস্থা। কোথাও অংশ বিশেষ, কোথাও একেবারে কাজই হয়নি। মহাসড়কের এ ১৩ কিলোমিটার অংশে ব্যায় নির্ধারণ করা হয়েছিলো ২১৩ কোটি টাকা। প্রকল্পটির মেয়াদ চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত।
এদিকে, এক অংশের কাজ চলমান থাকার কারণে একপাশ দিয়ে ফেনী ও নোয়াখালীগামী গাড়িগুলো এক পাশ দিয়ে চলতে হয়। যার ফলে বেশির ভাগ সময় ফেনী থেকে আসা গাড়িগুলো উল্টো পাশ দিয়ে চলতে হয়। এতে করে প্রায়শ ঘটছে দুর্ঘটনা। গত কয়েকদিন আগে বেগমগঞ্জ থেকে কোম্পানীগঞ্জের বসুরহাটে যাওয়ার পথে ফেনী থেকে ছেড়ে আসা উল্টো পথের একটি বাসের সাথে বর যাত্রীবাহী মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে প্রাণ হারান দুইজন, আর আহত হন অন্তত ১৩ জন। ফেনীÑনোয়াখালী সড়কের ফেনী অংশে মহিপাল, জায়লস্করা বিজিবিগেট সংলগ্ন এলাকা, পাঁছগাছিয়া বাজার, মাতুভুঁঞা-বেকের বাজার, দাগনভুঁঞা এলাকা বেশকিছু অংশের কাজ এখনো অসম্পন্ন রয়েছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স ব্রাদার্স, মেসার্স হাসান টেকনো বিল্ডার্স এবং মেসার্স রানা বিল্ডার্স নামে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান প্রকল্পটির এ অংশের দায়িত্বপ্রাপ্ত।
প্রকল্প এলাকার ভূমি অধিগ্রহণ, ক্ষতিপূরণ, ধর্মীয় উপাসনালয়, পুনঃনির্মাণ, কবরস্থান, শ্মশান স্থানান্তর, ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ, বাস্তবে নির্মাণ ব্যয় বাড়ার কারণেই সময়-ব্যয় বাড়ছে বলে জানায় সড়ক বিভাগ। নিরাপদ ও যানজটমুক্ত সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে জনস্বার্থে প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়। ইতোপূর্বে প্রকল্পটির আওতায় অবকাঠামো উন্নয়ন, গাছপালা, ফসলের ক্ষতি পূরণ বাজার মূল্যের অতিরিক্ত শত ভাগ দেয়া হয়েছে ক্ষতিগ্রস্থদের। ফলে এক্ষেত্রেও অনেক ব্যয় বেড়ে গেছে। প্রকল্পের আওতায় প্রথমে ৪টি ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণের ব্যয় ধরা হয়েছিলো। পরে আরো দু’টি ওভার ব্রিজ নির্মাণের সিদ্ধান্তের ফলে এ প্রকল্পে আরো বাড়তি ব্যয় যুক্ত হয়েছে। নোয়াখালী জিলা স্কুল এবং একলাশপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে দু’টি ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণে অতিরিক্ত ব্যয় বেড়েছে ৭ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা।
পূর্বের ৪টি ওভার ব্রিজ নির্মাণে ব্যয় নির্ধারিত ছিল ৫ কোটি ৪ লক্ষ টাকা। নতুন করে পৌর এলাকায় পানি ও পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থা চলমান নির্বিঘœ রাখার জন্য বিদ্ধমান রাখার স্থলে আরসিসি ড্রেন নির্মাণ একান্ত জরুরি হওয়ায় আরসিসি ড্রেন নির্মাণ বাবদ অতিরিক্ত ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২কোটি ৫৯ লক্ষ টাকা। এ কাজে ব্যাপক দুর্নীতি হচ্ছে বলে নানা মহল থেকে অভিযোগ উঠছে। ড্রেনটি ৬ ফিট প্রস্থের স্থলে কোথাও কোথাও ২-৩ ফিটের আরসিসি ড্রেন নির্মাণের অস্তিত্ব চোখে পড়ছে। ফেনী-নোয়াখালী সড়কের পাশ ঘেঁসেই রয়েছে নোয়াখালী জেলার মূল শহর, সরকারি দপ্তর, সরকারি-বেসরকারি নানা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি অফিস সমূহ, শিল্প-কল কারখানা, এনজিও প্রতিষ্ঠানসহ নানা স্থাপনা।
অপরদিকে সোনাপুর থেকে ঢাকা, কুমিল্লা, চট্টগ্রামসহ অন্যান্য জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য এ সড়কটি ব্যবহার হওয়ায় এটা অতীব গুরুত্বপূর্ণ সড়কে পরিনত হয়ে এর গুরুত্ব আরো বেড়ে গেছে। নাম না প্রকাশ করার শর্তে সড়ক বিভাগের একজন জানায়, অনেক কথা বলার থাকলেও বলা যাচ্ছেনা। নানা পারিপার্শ্বিক কারণেই অল্প সামান্য কাজ বাকি থাকায় সড়কটি পুরো দমে ব্যবহার করতে আরো কিছু সময় লেগে যেতে পারে। ট্রাকচালক রাকিব এবং হেলপার রফিক জানান, সড়কটিতে চলাচলে আমাদের দুর্ভোগের অন্ত নেই। বিশেষ করে চৌমুহনী বাজার পার হতে এবং বেগমগঞ্জ চৌরাস্তায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা জ্যামে পড়ে থাকতে হয়। তখন এ সময়গুলো খুবই দুর্বিসহ মনে হয়। সিএনজি অটোরিকশা চালক ফারুক বলেন, এ সড়কটির কিছু কিছু অংশ এখনো কাজ শেষ না হওয়ায় যাত্রীরা এবং আমরাও দুর্ভোগ পোহাই।
এ প্রসঙ্গে নোয়াখালীর সওজ নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাকিরুল ইসলাম বলেন, অনেক চেষ্টা করেও কাজ শেষ করা যাচ্ছে না। এতে আমাদের ও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের কোন দোষ নোই। সুধারাম থানার সামনে গ্যাসের স্টেশনটি এখনো সরানো হয়নি। তদুপুরি সড়কটির নোয়াখালী অংশে তিনটি ভূমি অধিগ্রহণ বিষয়ক মামলা চলমান রয়েছে। এগুলো নিষ্পন্ন হলে কাজ শেষ হতে আর বেশি সময় লাগবে না। বর্তমানে মোট ২০ শতাংশ কাজ অসম্পন্ন আছে। ৩০ জুনের মধ্যে সকল কাজ শেষ হবে। এসময় উপস্থিত তিনটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরাও একই মন্তব্য করেন।
বিভাগ : আজকের পত্রিকা
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের
মালয়েশিয়া আন্তর্জাতিক হালাল শোকেসের ২০তম আসরে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জেলা প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত দেশকে অস্থিতিশীল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পরাজিত শক্তি
শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কাল
‘মব জাস্টিস’ বন্ধের আহ্বান বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরামের
সাত দফা দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ
গৌরনদীর দই, একবার খাইলেও আর একবার খাই
নোয়াখালীতে জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধের দাবি
স্বর্ণের দাম বেড়ে রেকর্ড ২,৬০৯ ডলার ছাড়িয়েছে
বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ ও বিচার দাবিতে খুলনায় মানববন্ধন
গাজায় অব্যাহত ইসরাইলি গণহত্যা ওআইসির নেতারা চেয়ে চেয়ে দেখছেন
চাঁদপুর শহরে সড়ক সংস্কার কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ
সেনা কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়া প্রসঙ্গে
নোয়াখালীতে ৪৪ দিন পর লাশ উত্তোলন
ভারতের দোসর ও হাসিনামিডিয়ার প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা
আশাশুনিতে হাজরাখালির নেটপাটায় পানিবন্দি ২শ’ পরিবার
জামায়াত ক্ষমতায় গেলে নারীদের অধিকার খর্ব হবে না: সেলিম উদ্দিন
গাছে গাছে আফ্রিকান জায়ান্ট শামুক
ঈশ্বরগঞ্জে মহাসড়কে কাঁচাবাজার
উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অস্ত্রসহ আরসা সন্ত্রাসী গ্রেফতার