ঢাকা   শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৫ আশ্বিন ১৪৩১

পাঁচ বছর পর সৈয়দপুর রেলসেতু কারখানা চালু

Daily Inqilab নজির হোসেন নজু, সৈয়দপুর (নীলফামারী) থেকে

২২ মে ২০২৩, ০৯:০২ পিএম | আপডেট: ২৩ মে ২০২৩, ১২:০২ এএম

দীর্ঘ পাঁচ বছর বন্ধ থাকার পর আবারও উৎপাদন শুরু হয়েছে দেশের একমাত্র নীলফামারীর সৈয়দপুর রেলওয়ে সেতু কারখানা। পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করে নতুন করে সাজানো হচ্ছে কারখানাটিকে। ইতোমধ্যে খালাসী পদে নতুন ১১ জনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এছাড়া অবসরে যাওয়া ৪ জনসহ মোট ১৫ জন জনবল দিয়েই শুরু হয়েছে উৎপাদন। অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী ও স্থানীয়দের দাবি, শুন্য পদগুলোতে দ্রুত নিয়োগ দিলে একদিকে যেমন পুরোদমে কর্মচাঞ্চল্য ফিরে আসবে অন্যদিকে যেসব যন্ত্রপাতি আমদানি করা হয় সেগুলো এখানে উৎপাদন করলে প্রায় অর্ধেক খরচ কমমে। এতে রাষ্ট্রের অর্থের সাশ্রয় হবে। আর রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বলছে শুন্য পদগুলোতে শিগগির নিয়োগ দিয়ে কারখানাটি পুরোদমে চালু করা হবে।

রেল সূত্রে জানা যায়, আসাম-বেঙ্গল রেলওয়েকে ঘিরে ১৮৭০ সালে ১১০ একর জমিতে স্থাপন করা হয় সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানা। রেলব্যবস্থাকে স্বনির্ভর করতে ও রেল সেবা নির্বিঘœ করতে কারখানাটির অভ্যন্তরে অর্থাৎ উত্তর-পশ্চিমাংশে প্রায় ১৮ একর জমির ওপর গড়ে তোলা হয় ব্রিজ ওয়ার্কশপ তথা সেতু কারখানাটি। মূলত ব্রডগেজ, মিটারগেজ, রেলপথের ব্রিজ এবং রেলপথের পয়েন্টস অ্যান্ড ক্রসিং ও গার্ডার ইয়ার্ড তৈরির জন্যই এ সেতু কারখানাটি গড়ে তোলা হয়েছিল।

শুরুতে এ কারখানার কর্মকা- পরিচালনায় মেশিন শপ, পয়েন্টস অ্যান্ড ক্রসিং শপ ও গাডার ইয়ার্ড শপ নামে তিনটি উপ-কারখানায় প্রায় এক হাজার শ্রমিক কাজ করত। রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের সব স্টেশনের প্লাটফর্ম শেডের মালামাল, রেললাইনের পয়েন্ট অ্যান্ড ক্রসিং, ব্রিজ গার্ডার, ট্রলি ও মোটরট্রলি মেরামত এবং তৈরি, মোর গার্ডার, পানির ট্যাঙ্ক, ফুটওভার ব্রিজের মালামাল, ট্যাং স্টেজিংসহ ১০০ ধরনের মালামাল তৈরি হতো এ কারখানায়। কারখানাটির মেশিনগুলো ইংল্যান্ড, জার্মানি, আমেরিকা, জাপান আর ফ্রান্স থেকে সংগ্রহ করা হয়েছিল। প্রতিটি মেশিনের দাম কয়েক কোটি টাকা করে। কোনো কোনো ভারি মেশিনের দাম আছে কয়েকশ’ কোটি টাকা পর্যন্ত। আশি-নব্বইয়ের দশকে এই কারখানা রেলের নিজস্ব চাহিদা পূরণ করে উৎপাদিত মালামাল বাইরেও বিক্রি করত। এতে রেল প্রতিবছর আর্থিকভাবে লাভবানও হতো বেশ। কিন্তু ১৯৯১ সালে রেলওয়ের ব্যয় সংকোচন নীতি গ্রহণ করে তৎকালীন বিএনপি সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৯২ সালে ‹গোল্ডেন হ্যান্ডশেক’ ঘোষণা দিলে ওই সুবিধা নিয়ে এখানকার অনেক শ্রমিক-কর্মচারী চাকরি ছেড়ে অবসরে যান। পরবর্তীতে মঞ্জুরিকৃত ১২৭টি পদের মধ্যে নিয়মিত অবসরে যেতে যেতে মাত্র ছয়জন শ্রমিক-কর্মচারীতে নেমে আসে। ফলে ২০১৮ সালে কারখানাটিকে বন্ধ ঘোষণা করা হয়। সূত্রটি আরও জানায়, এরপর থেকে একজন স্টোরকিপার, একজন অফিস সহকারী এবং একজন পরিচ্ছন্নতা কর্মী। এ তিনজন মিলে কারখানাটি দেখভালের দায়িয়ত্ব পালন করেন। দায়িত্বে থাকা সহকারী সেতু প্রকৌশলী নিয়মিত কর্মস্থলে আসেন না। এছাড়া কাগজ-কলমে সেতু কারখানাটির নির্বাহী প্রধান হিসেবে প্রকৌশলী মো. আবদুর রহিমের নাম থাকলেও তিনি রেলওয়ের পাকশী বিভাগে কর্মরত রয়েছেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, কারখানার ভেতরে জন্মানো বড় বড় আগাছা পরিস্কার করছেন কয়েকজন শ্রমিক। দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকা মেশিনগুলো পরিস্কার করছেন কেউ কেউ। নতুন-পুরাতন শ্রমিকরা মিলে তৈরি করছেন সিসিক্রাফট। যা দুর্যোগকালীন সময়ে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে বিকল্প সেতু নির্মাণে ব্যবহার করা হয়। খালাসী পদে সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত আসলাম হোসেন বলেন, এই কারখানাটি দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল।

এটি সচল করতে আমাদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে। চলতি মাসের ২ তারিখে আমি যোগদান করেছি। দক্ষ কারিগর হিসেবে গড়ে উঠতে এখানকার অভিজ্ঞ স্যারদের কাছ থেকে হাতে কলমে প্রশিক্ষণ নিচ্ছি।

সৈয়দপুর উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এবং বাংলাদেশ রেলওয়ে শ্রমিক লীগ কারখনা শাখার সাধারণ সম্পাদক মোখছেদুল মোমিন বলেন, কারখানাটির কর্মচাঞ্চল্য ফেরাতে সব শুন্যপদে জনবল নিয়োগ দেওয়া দরকার। এতে কারখানাটি স্থানীয় অর্থনীতিতে গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। কারখানাটি আবারও চালু করায় সরকারকে সাধুবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, কারখানাটি চালু করতে যাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তারা তো আর রাতারাতি দক্ষ হয়ে ওঠবেন না। তাই তাঁদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে অবসরে যাওয়া শ্রমিকদের অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়ার দাবি জানান তিনি।

এ নিয়ে কথা হয় রেলওয়ে মহাব্যবস্থাপক (পশ্চিম) অসীম কুমার তালুকদারের সাথে। তিনি বলেন, শুন্যপদগুলোতে নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছে। বর্তমানে মুল কারখানা থেকে কিছু দক্ষ জনবল পেশনে এনে কারখানাটি পুরোদমে চালু করা হবে বলে জানান তিনি।


বিভাগ : আজকের পত্রিকা


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

গর্ভে থাকা সন্তান মারা গেলে মা-বাবা প্রতিদান প্রসঙ্গে?

গর্ভে থাকা সন্তান মারা গেলে মা-বাবা প্রতিদান প্রসঙ্গে?

হাজীগঞ্জে বিএনপির ২ গ্রুপের সংঘর্ষে কিশোরসহ ৪ জনের অবস্থা গুরুত্বর : আহত ৫০

হাজীগঞ্জে বিএনপির ২ গ্রুপের সংঘর্ষে কিশোরসহ ৪ জনের অবস্থা গুরুত্বর : আহত ৫০

উত্তরপ্রদেশে নেকড়ের পর এবার রাজস্থানে চিতাবাঘের হামলা, দুদিনে নিহত ৩

উত্তরপ্রদেশে নেকড়ের পর এবার রাজস্থানে চিতাবাঘের হামলা, দুদিনে নিহত ৩

কলকাতায় ৪১ দিনের মাথায় কর্মবিরতি প্রত্যাহার জুনিয়র ডাক্তারদের

কলকাতায় ৪১ দিনের মাথায় কর্মবিরতি প্রত্যাহার জুনিয়র ডাক্তারদের

দুই রাজ্যে সংঘাত, ২৪ ঘণ্টা বন্ধ থাকল পশ্চিমবঙ্গ-ঝাড়খণ্ড সীমানা

দুই রাজ্যে সংঘাত, ২৪ ঘণ্টা বন্ধ থাকল পশ্চিমবঙ্গ-ঝাড়খণ্ড সীমানা

ডায়নার সঙ্গে দুমড়ে মুচড়ে গিয়েছিল দেহ, এবার ধর্ষণে অভিযুক্ত সেই ডোডির বাবা

ডায়নার সঙ্গে দুমড়ে মুচড়ে গিয়েছিল দেহ, এবার ধর্ষণে অভিযুক্ত সেই ডোডির বাবা

ভারতে 'এক দেশ এক ভোট’ আয়োজন কতটা সম্ভব হবে?

ভারতে 'এক দেশ এক ভোট’ আয়োজন কতটা সম্ভব হবে?

বৈরুতে ইসরাইলি বিমান হামলায় নিহত ৯

বৈরুতে ইসরাইলি বিমান হামলায় নিহত ৯

কুমিল্লায় অনুষ্ঠানে দাওয়াত না দেওয়ায় প্রবাসীর ওপর হামলা

কুমিল্লায় অনুষ্ঠানে দাওয়াত না দেওয়ায় প্রবাসীর ওপর হামলা

এবার হলিউডের সিনেমায় জ্যাকুলিন

এবার হলিউডের সিনেমায় জ্যাকুলিন

৯ বছর পর ভারতীয় প্রেক্ষাগৃহে পাকিস্তানি সিনেমা!

৯ বছর পর ভারতীয় প্রেক্ষাগৃহে পাকিস্তানি সিনেমা!

জামায়াত ক্ষমতায় গেলে নারীদের অধিকার খর্ব হবে না: সেলিম উদ্দিন

জামায়াত ক্ষমতায় গেলে নারীদের অধিকার খর্ব হবে না: সেলিম উদ্দিন

স্বর্ণের দাম বেড়ে রেকর্ড ২,৬০৯ ডলার ছাড়িয়েছে

স্বর্ণের দাম বেড়ে রেকর্ড ২,৬০৯ ডলার ছাড়িয়েছে

‘মব জাস্টিস’ বন্ধের আহ্বান বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরামের

‘মব জাস্টিস’ বন্ধের আহ্বান বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরামের

শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কাল

শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কাল

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জেলা প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত দেশকে অস্থিতিশীল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পরাজিত শক্তি

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জেলা প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত দেশকে অস্থিতিশীল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পরাজিত শক্তি

মালয়েশিয়া আন্তর্জাতিক হালাল শোকেসের ২০তম আসরে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ

মালয়েশিয়া আন্তর্জাতিক হালাল শোকেসের ২০তম আসরে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ

দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের

দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের

‘হাসিনা ও তার দোসরদের বিচারের আওতায় আনতে হবে’: বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব এ্যানি

‘হাসিনা ও তার দোসরদের বিচারের আওতায় আনতে হবে’: বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব এ্যানি

ঢাকাস্থ গণচীনের দূতাবাসের প্রতিনিধিদলের ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত

ঢাকাস্থ গণচীনের দূতাবাসের প্রতিনিধিদলের ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত