পদ্মা নদীতে বাঁধ নির্মাণ, দু’পক্ষের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ
২৭ মে ২০২৩, ০৯:৩৭ পিএম | আপডেট: ২৮ মে ২০২৩, ১২:০০ এএম
কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার পদ্মা নদীর তীরবর্তী জগন্নাথপুর ইউনিয়নের জোতপাড়া কোল ঘেঁষে শতশত কৃষকের কয়েক হাজার বিঘা কৃষি জমির ফসল রক্ষা করতে সাধারণ মানুষের চলাচলের রাস্তা নির্মাণ করা অপর দিকে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে প্রায় ১শ’ একর জমিতে পদ্মা নদীর কোলে (জলাধার) প্রাকৃতিক মাছের অভয়াশ্রম রক্ষাকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের মধ্যে চলছে অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগ। দু’পক্ষই এখন মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে। ফলে সংঘর্ষের আশঙ্কা এলাকাবাসীর।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পদ্মা নদীর তীরবর্তী কোল ঘেঁষে শতশত কৃষকের প্রায় কয়েক হাজার বিঘা কৃষি জমি। সেখানে ধান, পাঠ, সরিষা, সবজিসহ হরেকরকম ফসলের চাষাবাদ করেন তারা। এ কোল দিয়েই চলাচল করেন জগন্নাথপুর, চর জগন্নাথপুর, হোগলা, চর মহেন্দ্রপুর ও পাশ্ববর্তী পাবনা জেলারও কয়েকটি গ্রামের শতশত মানুষ। এছাড়াও এ পথ দিয়েই যাওয়া-আসা করে জগন্নাথপুর মাধ্যমিক ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একাংশের শিক্ষার্থীরা। পদ্মার কোলে বর্ষা মৌসুমে নৌকা আর শুষ্ক মৌসুমে কাঁদামাটিতে পাঁয়ে হেঁটে চলাচল করেন তারা। সেজন্য চলাচলের সুবিধার্থে জগন্নাথপুর-চর জগন্নাথপুর বরাবর মাটি ভরাট করে বাঁধ নির্মাণ করছেন স্থানীয় কৃষক, জনগণ ও জনপ্রতিনিধিরা।
স্থানীয়রা বলছেন, উন্নত যোগযোগ ব্যবস্থা না থাকায় যুগ যুগ ধরে নানান ভোগান্তিতে পড়েছেন কয়েক হাজার বিঘা জমির কৃষক ও শতশত মানুষ। তারা মাঠেই ধান কেটে মাড়াই করেন। ভোগান্তি কমাতে তারা কোলে বাঁধ দিয়ে রাস্তা নির্মাণ করছেন। সরকারিভাবে সেখানে প্রায় তিন কিলোমিটার পাকা বাঁধ ও রাস্তা নির্মাণ করার দাবি জানান তারা।
কিন্তু স্থানীয় জেলেরা বলছেন, বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে প্রায় ১শ’[ একর জমিতে পদ্মা নদীর কোলে (জলাধার) প্রাকৃতিক মাছের অভয়াশ্রম রয়েছে। প্রশাসনকে প্রতিবছর নির্ধারিত রাজস্ব প্রদানের মাধ্যমে তারা ভোগ-দখল করেন। সেখানে বাঁধ নির্মাণ করা হলে মাছের অভয়াশ্রমে বিঘœ ঘটবে। বাঁধের কাজ বন্ধের জন্য তারা প্রশাসনের নিকট লিখিত অভিযোগ করেছেন।
গতকাল শনিবার সকালে সরেজমিন দেখা গেছে, সড়কের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে পদ্মা নদীর কোল। কোল ঘেঁষে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে কৃষি জমি। সেখানে ধান, পাট, সবজিসহ নানা ফসল চাষাবাদ করা হয়েছে। কৃষকরা পাকা ধান কেটে জমিতেই মাড়াই করছেন। কৃষিজমির মাঝ দিয়ে কয়েক শত মিটার বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। সেই বাঁধের উপর দিয়ে বস্তা ভরা ধান ও খর মাথায় করে বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন কৃষক। এছাড়াও নানান শ্রেণি-পেশার মানুষ পাঁয়ে হেঁটে চলাচল করছেন।
এসময় হোগলা গ্রামের কৃষক মোহাম্মদ আলী বলেন, কোলজুড়ে তার তিন বিঘা কৃষি জমি আছে। সেখানে তিনি ধানের চাষ করেছেন। চলাচলের রাস্তা না থাকায় তিনি জমিতেই ধান মাড়াই করে মাথায় করে নিয়ে যাচ্ছেন। তার ভাষ্য, জগন্নাথপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় হতে চর জগন্নাথপুর গ্রাম পর্যন্ত পাকা বাঁধ ও সড়ক নির্মাণ করলে সবাই উপকৃত হবেন।
মিজানুর রহমান হান্নান নামের আরেক কৃষক বলেন, সেখানে দুই-তিন হাজার বিঘা জমিতে ধান, পাট, সবজিসহ নানা ফসলের চাষাবাদ করেন তারা। কিন্তু ফসল ঘরে তোলার মতো রাস্তা নেই সেখানে। গাড়ি যেতে পারে না। পানির সময় নৌকা আর খরার সময় পাঁয়ে চলেন তারা।
পাবনা জেলার কৃষক লিটন হোসেন বলেন, বিলের মধ্য দিয়ে কৃষক, ব্যাপারী, সাধারণ মানুষ, ছাত্র-ছাত্রীরা চলাচল করে। রাস্তা না থাকায় সবারই খুব কষ্ট হয়। সরকারের কাছে তিনি রাস্তা নির্মাণের দাবি জানান।
তবে স্থানীয়দের দাবির বিপরীতে কোল এলাকার জেলে সমিতির সভাপতি আব্দুল বারী বলেন, প্রায় দেড় শতাধিক জেলে প্রতিবছর নির্ধারিত টাকা দিয়ে প্রশাসনের নিকট থেকে ইজারা নিয়ে মাছের চাষাবাদ করে আসছেন। কিন্তু এবছর সাবেক মেম্বার কালাম হোসেন স্থানীয়দের সাথে নিয়ে বাঁধ নির্মাণ করে জলাশয়ে বাধা সৃষ্টি করছেন। তিনি বিচার চেয়ে ইউএনওর কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
জেলেদের অভিযোগ অস্বীকার করে জগন্নাথপুর ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার কালাম হোসেন বলেন, মানুষের চলাচলের জন্য সবাই মিলে রাস্তা নির্মাণ করছেন। এতে জেলেদের মাছ চাষে কোনো বাধা হবে না। জনস্বার্থে পদ্মা নদীর কোলে প্রায় তিন কিলোমিটার বাঁধ, পাকা সড়ক ও একটি ছোট ব্রিজ নির্মাণ করার দাবি জানান তিনি।
জগন্নাথপুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল বাকী বাদশা জানান, জলমহল স্থানীয় জেলে সমিতির সদস্যরা ইজারা পেয়েছেন। জলমহালের ওইপারে (চর জগন্নাথপুর) তার একটি ওয়ার্ডের জনগণ রয়েছে। তাদের চলাচলের জন্য সবাই মিলে রাস্তা করা হচ্ছে। এতে জলমহালের কোনো সমস্যা হবে না।
জানা গেছে, পানিসম্পদের সুরক্ষা ও সংরক্ষন এবং নদী কমিশন আইনের বিধি মতে, প্রাকৃতিক জলাধার, পুকুর-খাল-বিল-দিঘি-ঝর্না বা সরকারি প্রজ্ঞাপন দ্বারা চিহ্নিত বন্যা প্রবাহ এলাকা হিসেবে গন্য এমন যে কোনো ধরনের জলাশয় ভরাট কিংবা বিঘœ সৃষ্টির অপরাধে জড়িত ও দোষীর বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি-অর্থদ-ের বিধান রয়েছে।
ইউএনও বিতান কুমার মন্ডল বলেন, জেলেদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে এসিল্যান্ড ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। বর্তমানে বাঁধ নির্মাণের কাজ বন্ধ রয়েছে। তদন্ত স্বাপেক্ষে আইনগত ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন তিনি।
বিভাগ : আজকের পত্রিকা
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
মাদারীপুরে স্কুলব্যাগে ককটেল, যুবক আটক
দারুস সালাম থানা বিএনপির ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত
নড়িয়ায় স্কুল ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে ইউপি সদস্য গ্রেফতার
‘ঢাবিতে কোরআন তেলাওয়াত করা যাবে না, কিন্তু রমজানে হোলি খেলা যাবে’
জাল দলিল তৈরী করে জমি বিক্রিকালে গ্রেফতার ৩, পৌর কাউন্সিলরসহ সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা
আমিরাতে বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিল আজমানের দোয়া ও ইফতার মাহফিল
ভিয়েনায় মুসলিম রাষ্ট্রদূতদের সম্মানে ইফতার মাহফিল
মিল্টনের দ্বিতীয় এ্যালবাম আসছে
সরকার সবসময় মানুষের পাশে আছে : ঈদ উপহার বিতরণ অনুষ্ঠানে পরিবেশমন্ত্রী
শায়খুল হাদীস আল্লামা মুহাদ্দিস ছাহেবের ঈসালে সওয়াব উপলক্ষে ইছামতি শাহী ঈদগাহ মাঠে ইফতার মাহফিল
ঢাবি ক্যাম্পাসে এক ছাদের নিচে সব রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠন
রোজার মাঝে রয়েছে আল্লাহর প্রতি সুদৃঢ় ঈমান রাখার সবিশেষ প্রশিক্ষণ —ছারছীনার পীর ছাহেব
ভারত সরকার বাংলাদেশের ২০ কোটি জনগণের সাথে সর্ম্পক ছিন্ন করে একটা রাজনৈতিক দলের সাথে পরকীয়ায় লিপ্ত : ডা. ইরান
বিখ্যাত আনসারি পরিবারের ছেলে মুখতার যেভাবে যোগীর শত্রুতে পরিণত হয়
প্রথমবার ইতালিতে মাইকে দেয়া হল আজান
তারাকান্দায় ফিসারী থেকে গৃহবধূর লাশ উদ্ধার
দক্ষিণ আফ্রিকায় সন্ত্রাসীদের ছুরিকাঘাতে বাংলাদেশী যুবক নিহত
মৌকারার আলা হযরত পীর সাহেব কেবলার ইফতার মাহফিল
দুইশ' উইকেটের খুব কাছে তাইজুল
মাইলফলক থেকে ২৫ রান দূরে মুমিনুল