কোন দেশে গনতন্ত্র ও আইনের শাসন না থাকলে ব্যক্তির শাসন চলে। যার মাধ্যমে গণমাধ্যম এবং জনগনের অধিকার খর্ব করা হয়। তাই দু:শাসনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের শপথ নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে)’র ৫০ বছর পূর্তি বা সুবর্ণজয়ন্তীতে এই শপথ নিয়েছে সাংবাদিকরা। গতকাল দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে সাংবাদিকদের এই সংগঠনটি। জাতীয় প্রেসক্লাবে বণ্যাঢ্য র‌্যালি, আলোকচিত্র প্রদর্শনী, ফল উৎসব ও আলোচনা সভার মাধ্যমে অনুষ্ঠানমালার সূচনা হয়। সারাদেশের সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতাদের সম্মাননা, নিহত ও নির্যাতিত সাংবাদিকদের নিয়ে তথ্যচিত্র প্রদর্শনী ছিল অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষণ। অনুষ্ঠানে সাহসী সম্পাদক ও নির্যাতিত সাংবাদিকদের সম্মাননা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় সাগর-রুনিসহ সকল সাংবাদিক হত্যাকা-ের সুষ্ঠু বিচার এবং সাংবাদিক নির্যাতন অবিলম্বে বন্ধ করার দাবিও জানানো হয়।

বিএফইউজে’র সভাপতি এম আবদুল্লাহর সভাপতিত্বে এবং সাংবাদিক আমিরুল মোমেনিন মানিকের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাবেক বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, সরকারের অভ্যন্তরীণ দুর্বলতার কারণে সাংবাদিকদের ওপর নির্যাতন নেমে আসে। তিনি বলেন, কোন দেশে গনতন্ত্র এবং আইনের শাসন না থাকলে ব্যক্তির শাসন চলে এবং গণমাধ্যম এবং জনগনের অধিকার খর্ব করা হয়। সাবেক এই বিচারপতি প্রশ্ন রেখে বলেন, এখন বাংলাদেশে অধিকার চর্চা করা যায় কি না সে প্রশ্নের জবাব দেশবাসী দেবেন।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের সাবেক ডিন ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা প্রফেসর ড. তাজমেরি এস ইসলাম বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকার সবসময় গণমাধ্যমের ওপর আঘাত হানে। বিএফইউজের পক্ষ থেকে যে তথ্যচিত্র উপস্থাপন করা হয়েছে তাতে ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে। বিচারহীনতার কারণে সাংবাদিক নির্যাতন যেমন বাড়ছে তেমনি মানুষের গণতান্ত্রিক ও মানবিক অধিকার ভুলুন্ঠিত হচ্ছে। ফ্যাসিবাদী আঘাত প্রতিহত করতে এক হয়ে লড়ার আহবান জানান তিনি।

বিএফইউজে ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ বলেন, চলমান দু:শাসনের বিরুদ্ধে যখন গোটা জাতি ঐক্যবদ্ধ, সাংবাদিকরা যখন কলম যুদ্ধে সর্বস্ব নিয়ে নামার প্রস্তুতি নিয়েছেন, তখন দেশপ্রেমিকদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করতে নানামুখী চক্রান্ত শুরু হয়েছে। তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, জনগণের অভ্যুত্থান ঠেকানোর শক্তি এই সরকারের নেই। সম্মিলিত শক্তির প্রতিরোধে সরকারকে বিদায় নিতে হবে বলে প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি। একইসাথে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক সংস্কার কওে দেশকে যথাস্থানে টেনে তুলতে সাংবাদিকদের কাজ করার আহবান জানান তিনি। এ সময় বিএফইউজে’র ৫০ বছর পূর্তিতে শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তব্য রাখেন খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমাদ আব্দুল কাদের ও ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান প্রমূখ।

এদিকে বিএফইউজে সভাপতি এম আবদুল্লাহর সভাপতিত্বে এবং মহাসচিব নুরুল আমিন রোকনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানের পথম পর্বে অতিথি ছিলেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহবায়ক আব্দুস সালাম, নয়াদিগন্ত সম্পাদক আলমগীর মহিউদ্দিন, গ্রীন ওয়াচ সম্পাদক মোস্তফা কামাল মজুমদার, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সভাপতি ইলিয়াস হোসেন প্রমুখ। নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতি দেশের ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে কাঁপন তৈরি করেছে। একই সঙ্গে পুলিশ এখন বিরোধী দলের সমাবেশ রক্ষা করছে, তা না হলে তারা আমেরিকা যেতে পারবে না। মান্না বলেন, আওয়ামী লীগ এখন বিএনপির সঙ্গে বসতে চায়। পথ খুঁজতে চায়। আওয়ামী লীগ আগে ভাগে বোঝাতে চায়, তারা বিএনপির সঙ্গে বসে সবকিছুর নিষ্পত্তি করতে চায়। তিনি বলেন, কিন্তু এই কথা বলে পালানোর জায়গা পাবে? এ কারণে সরকারের বাকি মন্ত্রীরা বিএনপি সঙ্গে বসতে চাইছেন না। আওয়ামী লীগের উদ্দেশ্যে মান্না বলেন, আর আমরা বলছি, তোমাদের (আওয়ামী লীগ) সঙ্গে বসার প্রশ্নই আসে না। কারণ, আমরা চাই তোমরা যাও। অনুষ্ঠানে সাংবাদিক নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি কবি হাসান হাফিজ, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেল, বিএফইউজের সহ সভাপতি মোদাব্বের হোসেন, ওবায়দুর রহমান শাহীন, রাশিদুল ইসলাম, অঙ্গ ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকগণ, কাউন্সিলরবৃন্দ, কেন্দ্রীয় ও অঙ্গ ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ। সম্মাননা দেয়া হয়, নির্যাতিত সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজল, আবু সাউদ মাসুদ, ইমরান হোসেন, মুনির উদ্দিন আহমদ, আজিজ ফারুকী, ফরিদুল মোস্তফা প্রমুখকে।