ঢাবিতে উচ্চ আদালতের রায় অকার্যকর!
২৯ আগস্ট ২০২৩, ১০:১১ পিএম | আপডেট: ৩০ আগস্ট ২০২৩, ১২:০১ এএম
বিভাগীয় চেয়ারম্যানের দুর্নীতি ও অন্যায় কর্মকা-ের ফিরিস্তি তুলে ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট কর্তৃক তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়ে ভিসি বরাবর চিঠি প্রেরণের দায়ে বিভাগের একাডেমিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) একজন প্রফেসর। গত বছরের ৪ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের সিনিয়র প্রফেসর ড. এ কে এম রেজাউল করিমকে বিভাগের একাডেমিক কমিটি এই অব্যাহতি দেয়। যা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ডিন্যান্স পরিপন্থি। ওই অব্যাহতি পত্রে স্বাক্ষর করেন বিভাগীয় চেয়ারমান প্রফেসর ড. কামাল উদ্দিন।
এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, প্রো-ভিসি (প্রশাসন), প্রো-ভিসি (শিক্ষা), অনুষদের ডিন, সিন্ডিকেট সদস্যবৃন্দ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির নেতাদের দারস্থ হয়েও কোনো সমাধান না পেয়ে উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন দায়ের করেন ড. রেজাউল। এ প্রেক্ষিতে গত ৪ এপ্রিল উচ্চ আদালতের এক আদেশে বিভাগের একাডেমিক কমিটি কর্তৃক ড. রেজাউলকে দেয়া অব্যাহতি স্থগিত করা হয়। কিন্তু প্রায় ৫ মাস অতিবাহিত হলেও আদালতের রায় কার্যকর করছে না বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে উচ্চ আদালতের আদেশ অকার্যকর থাকছে দীর্ঘদিন।
জানা যায়, ২০২২ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে কয়েক মাস ধরেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রমে বেশ অস্থিরতা বিরাজ করছিল। বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. কামাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে বিভাগের সাতজন শিক্ষকের উত্থাপিত অভিযোগকে ঘিরে এ অস্থিরতা। ওই বছরের ২০ জুন ড. কামালের বিরুদ্ধে ১২টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে সিন্ডিকেট কর্তৃক তদন্ত ও প্রতিকার চেয়ে ভিসি প্রফেসর ড. মো. আখতারুজ্জামানের নিকট লিখিত অভিযোগ দেন বিভাগের সাতজন শিক্ষক। বিষয়টি আমলে না নিলে এর দুইমাস পর ২৪ আগস্ট আরো কিছু অভিযোগের তথ্য হালনাগাদ করে পুনরায় ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানিয়ে ভিসি বরাবর দ্বিতীয় চিঠি লিখেন ওই সাত শিক্ষক।
চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ায় ৪ সেপ্টেম্বর একাডেমিক কমিটির এক সভায় অভিযোগকারীদের মধ্যে শুধুমাত্র ড. রেজাউল করিমকে একাডেমিক কর্মকা- থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেয়া হয়। এ ঘটনার প্রতিবাদে ১১ সেপ্টেম্বর থেকে দুই সপ্তাহের জন্য কর্মবিরতিতে (পরীক্ষা কার্যক্রম ছাড়া মিটিংসহ একাডেমিক সকল কার্যক্রম বর্জন) যান অভিযোগকারী ৭ শিক্ষক। তারপর ভিসি বরাবর সর্বশেষ চিঠি দেন তারা। এতে বলা হয়, আমরা মনোবিজ্ঞান বিভাগের সাতজন শিক্ষক বর্তমান চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মো. কামাল উদ্দিনের দুর্নীতি ও অন্যান্য অন্যায় কর্মকা- বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট কতৃক তদন্তপূর্বক বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আপনাকে পরপর দুটি অনুরোধপত্র দিয়েছিলাম। কিন্তু সে অনুযায়ী দৃশ্যত কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় বিভাগের চেয়ারম্যান একের পর এক তার অন্যায় কর্মকা- চালিয়েই যাচ্ছেন। এরই অংশ হিসেবে ৪ সেপ্টেম্বর একাডেমিক কমিটির সভায় প্রফেসর রেজাউল করিমকে অব্যাহতি দেয়া হয়, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ডিন্যান্স পরিপন্থি। এমতাবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কর্তৃক এসব বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে পূর্ণাঙ্গ সমাধান না হওয়া পর্যন্ত আমরা নি¤œস্বাক্ষরকারী শিক্ষকগণ বিভাগীয় একাডেমিক কর্মকা- থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
১১ সেপ্টেম্বর থেকে টানা দুই সপ্তাহ একাডেমিক কার্যক্রম থেকে বিরত ছিলেন ওই সাত শিক্ষক। পরবর্তীতে নানারকম চাপে পড়ে ২ জন শিক্ষক ক্লাস ও পরীক্ষা সংক্রান্ত সকল কাজে অংশ নিতে বাধ্য হয়। অন্যদিকে বাকি শিক্ষকরা শুধু ক্লাসে অংশ নেয় কিন্তু পরীক্ষা, একাডেমিক ও সি অ্যান্ড ডি কমিটির মিটিংয়ে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকেন। যতক্ষণ না পর্যন্ত উচ্চ আদালত কর্তৃক ড. রেজাউলের বিরুদ্ধে গৃহীত পদক্ষেপের উপর স্থগিতাদেশ আসে।
ড. রেজাউলের দায়ের করা রিট পিটিশনের প্রেক্ষিতে উচ্চ আদালতের ওই আদেশে বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের একাডেমিক কমিটির সিদ্ধান্তের কার্যক্রম ২০২৩ সালের ৪ এপ্রিল থেকে আগামী ৬ মাসের জন্য স্থগিত করা হোক। আদালতের এমন আদেশের প্রায় ৫ মাস অতিবাহিত হলেও রায় কার্যকর করছে না বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তাই বিশ্ববিদ্যালয় কি আইনের ঊর্ধ্বে ?- এমন প্রশ্ন তুলছেন প্রফেসর রেজাউল করিম।
প্রফেসর ড. রেজাউল করিম বলেন, বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর কামাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও আর্থিক অনিয়মের সুস্পষ্ট অভিযোগ রয়েছে। বিষয়গুলো তদন্তের দাবি জানিয়ে আমি ফেঁসে গেলাম। ব্যক্তিগত ও সামষ্টিকভাবে আমরা বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ সবার নিকট গিয়েও কোনো প্রতিকার পাইনি। দীর্ঘ এক বছর ধরে আমাকে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে একাডেমিক কার্যক্রম থেকে দূরে রাখা হচ্ছে। শিক্ষার্থীদেরকে আমার সেবা পাওয়া থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। আমি বাধ্য হয়ে আদালতের দারস্থ হই। আমার পক্ষে রায়ও আসে। কিন্তু উচ্চ আদালতের রায় পর্যন্ত মানছেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, ভিসি ও বিভাগের চেয়ারম্যান! যেন মনে হচ্ছে ডিপার্টমেন্ট কিছু মানুষের ব্যক্তিগত সম্পত্তি। তারা যা ইচ্ছে তা-ই করতে পারেন। তাই আদালতের আদেশ থাকার পরও তারা আমার অধীনে আবেদনকারী পিএইচডি শিক্ষার্থীর আবেদনপত্র গ্রহণ করেননি। ড. রেজাউল আরো বলেন ভিসি, চেয়ারম্যান, ডিন এবং আরও কিছু ব্যক্তি একটি বিশেষ এলাকার বলে আমার সাথে এমন অন্যায় করা হচ্ছে, কারণ ভিসি আমাকে বলেছিলে, আপনার বাড়ি কোথায়? বিশ্ববিদ্যালয় বিধি মোতাবেক ড. রেজাউল বিভাগের পরবর্তী চেয়ারম্যান। আর তিনি যেন চেয়ারম্যান হতে না পারেন, পরবর্তীতে কামাল উদ্দিনের দুর্নীতির বিরুদ্ধে যেন কোন ব্যবস্থা নিতে না পারেন, সবাই মিলে সেই চেষ্টা করছেন বলে তিনি মনে করেন।
এসব বিষয়ে ড. রেজাউলের করা পিটিশনের ৩ নং বিবাদী বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রবীর কুমার সরকার বলেন, এসব বিষয়ে রেজিস্ট্রার শুধু সাইন করে, সিদ্ধান্ত নেয়ার কাজ রেজিস্ট্রারের না। ভিসি স্যার-ই এ ব্যাপারে ভালো বলতে পারবেন।
৪ নং বিবাদী, বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. কামাল উদ্দিন বিষয়টি নিয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি। তিনি বলেন, অতীতে এই বিষয়ে অনেক কথা বলেছি। একই বিষয়ে এত কথা বলার সময় নেই আমার।
ড. রেজাউলের করা রিট পিটিশনের ১ নং বিবাদী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (যার প্রতিনিধিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি) এবং ২ নং বিবাদী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, এমনটা তো কাম্য না। আদালতের আদেশ তো মেনে নিতে হবে। যেহেতু আদালতের আদেশ ছিল তাহলে তো তিনি সুরক্ষা পাইতে পারেন। ওনাদের বিভাগে নানা ধরনের সমস্যা রয়েছে। তাছাড়া সবকিছু আইন দিয়ে সমাধান করা যায় না। সুন্দর দৃষ্টিভঙ্গি, পেশাগত দায়িত্ব ও মূল্যবোধের প্রতিফলন করতে হয় একজন প্রফেসরকে। তাই সকলকে দায়িত্বশীল আচরণ করতে বলা হয়েছে। বিভাগের একাডেমিক সুষ্ঠু শান্তিপূর্ণ অবস্থান বজায় রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট ডিনকে দায়িত্ব দিয়েছিলাম। এ বিষয়ে জানতে জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. এ কে এম মাহাবুব হাসানকে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে একাধিকবার ফোন করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
যমুনার ভাঙনের মুখে আলোকদিয়াবাসীর বসতবাড়ি ও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা
কুষ্টিয়া চিনিকলসহ দেশের ৬ চিনিকল চালু হওয়ায় ভারতের দম্ভ খতম!
নোবিপ্রবির সঙ্গে নেদারল্যান্ডের ইউট্রিচ বিশ্ববিদ্যালয়ের চুক্তি স্বাক্ষর
৯ দফা দাবীতে নওগাঁয় পুলিশ সুপারের কার্যালরে সামনে শিক্ষার্থীদের অবস্থান
এলজিইডির এক প্রকল্পে ৪০ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক
আবাসিক হোটেলের নামে মাদকের আড্ডা
নোয়াখালীতে মসজিদের ইমাম ও খতিবকে বিদায়ী সংবর্ধনা
খুলনাকে বিদায় করে ফাইনালে মেট্রো
কালিয়াকৈরে চাঁদাবাজের হামলায় চাঁদাবাজ কালামের মৃত্যু
বিরল উপজেলা শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত
সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত- ১
কামালপুর সড়কের ব্রিজ ভেঙ্গে মরণফাঁদ চরম দুর্ভোগে পথচারীরা
মেয়েদের ক্রিকেটে যুক্ত হলো যেসব সুযোগ-সুবিধা
বাড়ছে শীতের প্রকোপ, সাধারণের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় করণীয়
জকিগঞ্জে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে হামলার অভিযোগে যুবলীগ নেতা গ্রেফতার
খালিশপুরে শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন
যুব এশিয়া কাপজয়ীরা পাচ্ছেন আর্থিক পুরস্কার
আদমদিঘীতে বিএনপি কার্যালয় উদ্বোধন
রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ নিয়ে যা জানালেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
গোপালগঞ্জে বিএনপির বহিস্কৃত ও আ. লীগ কর্মীদের নিয়ে বিএনপির ২ জেলা কার্যালয়