পিটার হাসের বক্তব্য নিয়ে বিভ্রান্তির চেষ্টায় ২০৫ নাগরিকের উদ্বেগ
০৬ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৩ এএম
ভিসানীতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসের একটি বক্তব্য ঘিরে মুক্ত গণমাধ্যম বিরোধী তৎপরতায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন দেশের ২০৫ জন নাগরিক। মূলত পিটার হাসের গণমাধ্যমের ওপর ভিসানীতি বক্তব্যের উদ্বেগ প্রকাশ করে বিব্রতি দেয়া বিশিষ্টনগাকিরদের কঠোর সমালোচনা করে এই বিবৃতি দেন। তারা মনে করেন যারা পিটার হাসের বক্তব্যে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন তারা কার্যত মুক্ত গণমাধ্যম বিরোধী তৎপরতায় যুক্ত।
গতকাল বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে তারা বলেন, গণমাধ্যমের ওপর মার্কিন ভিসানীতির প্রয়োগ নিয়ে রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসের বক্তব্যের সূত্র ধরে একটি মহল বিভ্রান্তি তৈরির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এই মহলটি ইতিপূর্বে দেশের স্বাধীন গণমাধ্যম প্রথম আলো নিষিদ্ধ করার জন্য এবং বিতর্কিত আইনে দায়েরকৃত মামলায় পত্রিকাটির সম্পাদক ও প্রতিবেদককে গ্রেপ্তারের অন্যায় দাবি জানিয়েছে। ডেইলি স্টার পত্রিকার সম্পাদকের অপসারণ দাবি করেছে। বিভিন্ন সময় ভিন্নমতাবলম্বী ও বিরোধী মতের গণমাধ্যম বন্ধ করার দাবি তুলেছে এবং গণমাধ্যম বন্ধে সরকারের পদক্ষেপে সমর্থন দিয়ে এসেছে। এই গোষ্ঠীটি গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে ক্ষমতাসীন কর্তৃত্ববাদী সরকারের নিয়ন্ত্রণ ও নিপীড়নমূলক পদক্ষেপে বরাবরই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সমর্থন যুগিয়েছে। আমরা মনে করি, রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য নিয়ে তাদের বিভ্রান্তিকর বক্তব্য-বিবৃতি প্রকারান্তরে কর্তৃত্ববাদী ব্যবস্থাকে রক্ষারই আয়োজন এবং এই তৎপরতা অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পথে অন্তরায়।
বিবৃতিতে বলা হয়, একতরফা ও প্রশ্নবিদ্ধ দু’দুটি নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতাসীন হওয়া আওয়ামী লীগ সরকার ছলে-বলে-কৌশলে গণতান্ত্রিক আন্দোলন বাধাগ্রস্ত করে চলেছে। বল প্রয়োগ করে, সভা-সমাবেশে সংগঠিত অধিকার এবং সকল উপায়ে মতপ্রকাশের অধিকার প্রতিহত করে চলেছে। গুলি, লাঠিচার্জ, আক্রমণ, আঘাত, গুম, খুন, গ্রেপ্তার, গণগ্রেপ্তার, মামলা, গায়েবি মামলার মাধ্যমে পদে পদে মানবাধিকার লংঘন করছে। সরকারের একরোখা মনোভাবের কারণে দুটি প্রতারণামূলক নির্বাচনের পর আরো একটি নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘনিয়ে এলেও অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের কোনো সম্ভাবনা এখন পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না। দেশের জন্য অনাকাঙ্খিত ও লজ্জাজনক হলেও এই পরিস্থিতিতে, আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- কমিয়ে আনতে পেরেছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তরফে ভিসানীতি প্রণয়নের পর সভা-সমাবেশ ও মতপ্রকাশের পরিসর বিস্ময়করভাবে সম্প্রসারিত হয়েছে। আমরা দেখতে পাচ্ছি, বিভিন্ন আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পরাশক্তির সমর্থনে টিকে থাকা এই সরকারের দমনমূলক নীতি প্রশমিত করার ক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক বিশ্বের নীতি ও পদক্ষেপগুলো কার্যকর ভূমিকা রাখছে। মানবাধিকার ও মতপ্রকাশ পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতেও সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য বাংলাদেশের জনগণের চলমান আন্দোলনে বিশ্বের সকল গণতন্ত্রকামী মানুষ, দেশ ও সংগঠনের সমর্থন খুবই প্রত্যাশিত ও কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে বলে আমরা মনে করি।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, দুঃখজনক হলেও সত্য, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সকল দলের জন্য প্রয়োজনীয় সমান সুযোগের পরিবেশ তৈরি হয়নি। আমরা মনে করি, বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠিত হলেই শুধু সেই পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। প্রশাসন, আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী, নির্বাচন কমিশনসহ নির্বাচন আয়োজনের সঙ্গে জড়িত সকল রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে নিরপেক্ষ ভূমিকায় আনতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ এমন একটি নিরপেক্ষ সরকারই নিতে পারে।
অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য গণমাধ্যমেও সমান সুযোগের পরিবেশ তৈরি করা দরকার। দুঃখজনক হলেও সত্যি, গণমাধ্যমে সকলের জন্য সমান সুযোগ নেই। সরকারের নিয়ন্ত্রণমূলক নীতির কারণে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা উদ্বেগজনকভাবে সংকুচিত হয়েছে। স্বাধীন গণমাধ্যমগুলোর প্রতি সরকারের বৈরী নীতির কারণে সেগুলোতে অস্বস্তি ও ভীতির পরিবেশ তৈরি হয়েছে। স্বাধীন গণমাধ্যমকে নিশানা করে বিজ্ঞাপন বন্ধের মতো পদক্ষেপ নেয়ায় সেগুলো লোকসানি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। ভিন্নমতাবলম্বী ও বিরোধী মতের সমর্থক প্রায় সব গণমাধ্যম এই সরকারের আমলে হয় বন্ধ হয়েছে, নয়তো মরণাপন্ন অবস্থায় কোনোরকমে টিকে আছে। নিবর্তনমূলক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, সাইবার নিরাপত্তা আইন সাংবাদিকদের মধ্যে জেল-জুলুমের তীব্র ভয় ঢুকিয়ে দিয়েছে। অনেক সাংবাদিক নির্যাতন, নিপীড়ন, মারধর, আক্রমণ এমনকি হত্যাকা-ের শিকার হয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে তৈরি হয়েছে একপেশে, একচেটিয়া সুবিধাভোগী সরকার-সমর্থক একটি মিডিয়া-ব্যবস্থা। ক্ষমতাসীনদের তোষণ, তাদের অন্যায় কর্মকা-ে অব্যাহত সমর্থন ও গণবিরোধী অবস্থানের কারণে অনেক সংবাদমাধ্যম জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে। এ অবস্থায়, গণমাধ্যমে অবাধ তথ্যপ্রবাহের সহায়ক পরিস্থিতি তৈরি করতে এবং স্বাধীন গণমাধ্যম-বিরোধী অবস্থান থেকে সরকারকে সরিয়ে আনতে জরুরি পদক্ষেপ দরকার।
একই সঙ্গে আমরা সাইবার নিরাপত্তা আইনের নিবর্তনমূলক ধারাগুলো বাতিল এবং বিতর্কিত তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়েরকৃত সকল মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাই। অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে বন্ধ করে দেয়া ভিন্নমতাবলম্বী ও বিরোধী মতের সকল পত্রিকা, টিভি চ্যানেল ও নিউজ পোর্টাল খুলে দেওয়ার দাবি জানাই। বিদ্যমান সকল গণমাধ্যমে সরকার ও বিরোধীদের সমান অংশগ্রহণের সুযোগ নিশ্চিত করার আহবান জানাই। বিবৃতিতে বলা হয়, আজ যে মহলটি গণমাধ্যমের ওপর মার্কিন ভিসানীতিকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করে সেটিকে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার অন্তরায় বলে প্রচার করছেন তারা দেশের গণমাধ্যমের চরম বিপর্যয়েও নিশ্চুপ ছিলেন ও আছেন। কেননা এই মহলের অনেকেই সুবিধাভোগী, সরকার-সংশ্লিষ্ট ও কর্তৃত্ববাদী ব্যবস্থার অংশীদার। অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে বাধা সৃষ্টির জন্যই তারা বিভ্রান্তিকর বক্তব্য দিয়ে চলেছেন বলে আমরা মনে করি। আমরা তাদের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানাই। বিবৃতিদাতারা হলেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও লেখক রায়হান রাইন, অধ্যাপক মানস চৌধুরী, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হেলাল মহিউদ্দীন, শিল্পী অরূপ রাহী, দক্ষিন এশিয়া বিষয়ক গবেষক সুলতান মোহাম্মদ জাকারিয়া, শিল্পী মুস্তাফা জামান প্রমূখ।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
ঝিনাইদহে কাজীর সীল সাক্ষর জালিয়াতি করে বিয়ে!
বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে শহীদ শাজাহানের নবজাতকের দায়িত্ব নিল জেলা প্রশাসক আজাদ জাহান
কে হবেন বর্ষসেরা উদীয়মান ক্রিকেটার?
বোলারদের নৈপুণ্যে অল্প টার্গেটেও স্বপ্ন দেখছে পাকিস্তান
৩১ দফা রাষ্ট্র কাঠামোর বার্তা মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে: আমিনুল হক
পিরোজপুর প্রেসক্লাব নির্বাচন শামীম সভাপতি ও তানভীর সম্পাদক
বিরক্তিকর সময়কে গুডবাই বলুন! এন্টি ডোট হিসেবে সেরা অ্যাপ (পর্ব-১)
দেশের বিরাজমান সংকট উত্তরণে জাতির আস্থা তারেক রহমান : মীর হেলাল
টোল প্লাজায় দুর্ঘটনা: বাসের ব্রেকে সমস্যা ছিল, চালক নেশা করতেন
পাবনার আমিনপুরে মুক্তিযোদ্ধার বাড়িতে আগুন, শঙ্কিত পরিবার
দেশে এলো ভিভোর নতুন ফ্ল্যাগশিপ এক্স২০০
বিএনপির দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজে লিপ্ত হলে কাউকে ছাড় নয়: শাহ সুলতান খোকন
সচিবালয়ে অস্থায়ী প্রবেশ পাসের জন্য বিশেষ সেল গঠন
যুদ্ধের দামামা, তালেবানের পাল্টা হামলায় ১৯ পাকিস্তানি সেনা নিহত
ফিরে দেখা ২০২৪: ফুটবলে ঘটনাবহুল বছর
বড় চমক অ্যাপলের, জ্বর ও হার্ট অ্যাটাকের আগেই সতর্ক করবে ইয়ারবাডস
রাস্তাটি সংস্কার করুন
থার্টি ফাস্ট নাইট এবং প্রাসঙ্গিক কথা
ইসলামী শক্তির সম্ভাবনা কতটা
কিশোরগঞ্জে দুই নারীর রহস্যজনক মৃত্যু, গ্রেফতার-১