ঢামেকে দালাল চক্রের হয়রানি বাড়ছে
০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০৩ এএম
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যাওয়া সাধারন মানুষ নানা কায়দায় দালাল চক্রের হাতে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। মিথ্যা তথ্য দিয়ে বেসরকারি হাসপাতালে রোগী ভাগিয়ে নিতে তৎপরও বেশ কয়েকটি দালাল চক্র। এই চক্রের নেপথ্যে রয়েছে প্রভাবশালী কয়েকজন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা। সম্প্রতি সরকারের উচ্চ পর্যায়ে পাঠানো একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢামেক থেকে বেসরকারি হাসপাতালে কোনো রোগী ভর্তি করাতে পারলে চক্রের সদস্যদের রোগীপ্রতি পার্সেন্টেজ দেয়া হয়। সে রোগীর কত বিল হয়, তার ওপর নির্ভর করে পার্সেন্টেজের পরিমাণ। এই পার্সেন্টেজ সর্বনি¤œ পরিমাণ ২০ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ৪০ শতাংশ পর্যন্ত হয়ে থাকে। রোগী যতদিন ভর্তি থাকবেন, সে হিসাবেও টাকা নেয়ার সুযোগ আছে। আবার চক্রের সদস্যের প্রস্তাব অনুযায়ী কোনো রোগীকে বেসরকারি হাসপাতালে নিতে না চাইলে স্বজনদের মারধরেরও শিকার হতে হয়। ঢামেক হাসপাতালে দায়িত্বরত আনসারের প্লাটুন কমান্ডার (পিসি) উজ্জ্বল বেপারী ও ঢামেক পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ বাচ্চু মিয়া চক্রগুলোকে নিরাপত্তা দেয়ার বিনিময়ে মাসোহারা পান বলে অভিযোগ রয়েছে। ঢামেক হাসপাতালের ভেতরে বিভিন্ন দেয়ালে ‘দালাল দেখলে ধরিয়ে দিন’ শীর্ষক যেসব স্টিলের প্লেট লাগানো হয়েছে, সেখানে থাকা যোগাযোগের নম্বরগুলো কালো কালি দিয়ে মুছে ফেলা হয়েছে। নির্বিঘেœ দালালি চালিয়ে যেতে চক্রের সদস্যরাই নম্বরগুলো মুছে ফেলেছেন। সূত্র জানায়, প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, সাবিত ও শুভর নেতৃত্বে থাকা চক্রটি মেডিফেয়ার জেনারেল হাসপাতাল, ইউনিহেলথ, আহমেদ স্পেশালাইজড হাসপাতাল, প্রাইম ও ঢাকা হেলথ কেয়ার হাসপাতালে রোগী পাঠায়। এ চক্রের ছয় সদস্যের নাম জানা গেছে। তারা হলেন- জুয়েল, নিপু, মেহেদী, টুটুল, আল আমিন ও এসএম খলীল। তারা মাসিক ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা বেতনে সাবিত ও শুভর হয়ে কাজ করেন। এসব হাসপাতালে যারা রোগী পাঠায় তাদের প্রত্যেকের নামে একটি কোড তৈরি হয়। যখনই কোনো একটি কোডের অধীনে সেই হাসপাতালে কোনো একজন রোগী ভর্তি হয় আর চিকিৎসা শেষে যখন সেই রোগী ওই হাসপাতাল ছাড়ে, তখন রোগীর সম্পূর্ণ বিলের ২০ থেকে ৪০ শতাংশ টাকা সংশ্লিষ্ট কোডের লোককে পরিশোধ করা হয়।
চক্রের সদস্যের ছদ্মবেশে হাসপাতালগুলোর সঙ্গে কথা বললে তারা জানায়, চক্রের নেতাদের নামে তাদের হাসপাতালে কোড আছে। এসব কোডের অধীনে তারা সেখানে রোগী পাঠান এবং রোগীভেদে তারা প্যাকেজ বা রোগী হাসপাতালে যতদিন থাকবে, এর প্রতিদিন হিসাবে টাকা পান। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চক্রের কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে যখনই কোনো রোগী আসে, চক্রের সদস্যরা তাদের অনুসরণ করেন। তারা রোগীর স্বজন, হাসপাতালের ট্রলি ম্যান বা যে অ্যাম্বুলেন্সে করে রোগীকে আনা হয়েছে, সেই অ্যাম্বুলেন্সের চালকের সঙ্গে কথা বলে রোগীর রোগের ধরন জানার চেষ্টা করেন। কথা বলে রোগীর আইসিইউ প্রয়োজন হতে পারে এ রকম কোনো ধারণা পেলে তারা রোগীর স্বজনদের সঙ্গে থেকে তাদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে তাদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলেন। এরপর তারা রোগীর সঙ্গে ডাক্তারের রুম পর্যন্ত যান। ডাক্তার যদি বলেনযে রোগীর আইসিইউ প্রয়োজন, তখন থেকেই তাদের বেসরকারি হাসপাতালে নেয়ার চেষ্টা শুরু হয়। এটিকে তাদের ভাষায় বলা হয় মার্কেটিং।
রোগীর অবস্থা গুরুতর হলে দালালরা ডাক্তারের রুম পর্যন্ত রোগীকে নিতে দিতে চান না। এর আগেই তারা রোগীর অবস্থা সম্পর্কে বিভিন্ন নেতিবাচক কথা বলে তারা তাদের কার্যক্রম শুরু করে দেন। যখনই কোন রোগী তাদের কথায় আশ্বস্ত হয়ে বেসরকারি হাসপাতালে যেতে সম্মত হন, তখনই চক্রের সদস্যরা সংশ্লিষ্ট হাসপাতালে ফোন দিয়ে রোগীর নাম এবং রোগীর বাবা বা মায়ের নাম জানিয়ে সেই রোগীকে তাদের চক্র প্রধানের নামে থাকা কোডে বুকিং দিতে বলেন। অনেক সময় এক রোগীর জন্য কয়েকটি চক্রের সদস্যরা একসঙ্গে ফোন করেন। তখন যে চক্রের সদস্যরা আগে ফোন দেন, সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের পক্ষ থেকে তাদের জানানো হয় ‘কল ক্লিয়ার’। আর যারা পরে ফোন দেন তাদের বলা হয় ‘কল বুকড’।
ভুক্তভোগী মোহাম্মদ রাসেল শান্ত বলেন, গত ২৬ ডিসেম্বর মধ্যরাতে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আমার ভাতিজার জন্ম হয়। কিছুক্ষণ পর এক লোক এসে নিজেকে হাসপাতালের লোক পরিচয় দিয়ে বলেন, আমাদের এখানে সিট নেই। আপনারা এখানে ভর্তি হতে পারবেন না। বাচ্চাকে সুস্থ রাখতে চাইলে এখান থেকে দ্রুত নিয়ে যান। পাশেই মেডিফেয়ার নামে একটা হাসপাতাল আছে। সেখানে সব সুযোগ-সুবিধা পাবেন।
আমরা জিজ্ঞেস করি, মেডিফেয়ারে নেয়ার বিষয়টা ডাক্তার বলেছেন কি না। তখন তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ’। এরপর আমরা তাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যেতে চাইলে সে ডাক্তারের কাছে যেতে গড়িমসি করছিল। তখন আমরা বুঝতে পারি, সে দালাল। সূত্র জানায়, এ চক্রের সদস্যদের কথা অনুযায়ী কাজ না করলে খড়্গ নেমে আসে ঢাকা মেডিক্যালে থাকা বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স চালকদের ওপর। তাদের মারধরের শিকার হতে হয়। এসবের প্রতিবাদে কয়েক মাস আগে ধর্মঘটও ডাকেন অ্যাম্বুলেন্স চালকরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার বলেন, তাদের কাছে আমরা অসহায়। আমরা যখন ঢাকা মেডিক্যাল থেকে কোনো রোগীকে নিয়ে রোগীর চাহিদা অনুযায়ী কোনো সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতালের উদ্দেশে রওনা হই, তখন এই সাবিত-ইমনরা এসে আমাদের বলে দেয় রোগী যেই হাসপাতালের কথা বলছে, সেই হাসপাতাল না, আমরা যেই হাসপাতালে বলব, সেই হাসপাতালে নিয়ে যাবি। অনেক সময় তারা আমাদের সাথে গাড়িতে উঠে বসে। আবার অনেক সময় তারা বাইক নিয়ে আমাদের গাড়ি ফলো করে। তাদের কথা অনুযায়ী সেই হাসপাতালে না নিয়ে গেলে আমাদের মারধর করে। তাই আমরা বাধ্য হয়ে রোগীদের ওইসব হাসপাতালে নিয়ে যেতে বাধ্য হই। অনেক সময় তারা রোগীর সঙ্গে আমাদের অ্যাম্বুলেন্সে উঠে সারা রাস্তা রোগীদের উল্টাপাল্টা বুঝিয়ে তাদের হাসপাতালে নিয়ে যেতে রাজি করানোর চেষ্টা করে। ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, এই দালাল চক্রের ব্যাপারে আমরা অবহিত। আমরা তাদের উৎখাত করার চেষ্টা করছি। ইতোমধ্যে তাদের দুই সদস্যকে আমরা গ্রেপ্তারও করেছি। আমার হাসপাতালের আনসার, পুলিশ এবং ওয়ার্ড মাস্টারদের আমরা ইতোমধ্যে নির্দেশনা দিয়েছি- বিভিন্ন ল্যাবরেটরি বা বেসরকারি হাসপাতালের কোনো লোক যদি আমাদের হাসপাতালে আসে, তাদের ধরে যেন পুলিশে সোপর্দ করা হয়।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
মিজানুর রহমান আজহারীর ব্যাখ্যা
বিতর্কিত চিন্ময় কাণ্ড: আত্মসমর্পণের পর জামিন পেলেন ৬৩ আইনজীবী
শরীয়তপুরে ১০ বছরেও নির্মাণ হয়নি আদালত ভবন
শুভেন্দুর হুঙ্কার : ‘বাংলাদেশকে জবাব দিতে পাঁচ-সাতটি ড্রোনই যথেষ্ট’
ষড়যন্ত্র ও হয়রানির বিরুদ্ধে ন্যায়বিচারের আবেদন বঞ্চিত বিধবার
মার্কিন মুদ্রার বিপরীতে ভারতীয় রুপির সর্বনিম্ন রেকর্ড
দোয়ারাবাজারে অভিযুক্ত বাঁধে বালু অপসারণ!
তালেবান শাসনকে বৈধতা না দেওয়ার আহ্বান নোবেলজয়ী মালালার
ফের সচিবালয়ের সামনে অবস্থান অব্যাহতি পাওয়া এসআইদের
ঢাকার বাইরে প্রথম নরসিংদীতে রয়েল এনফিল্ড লঞ্চ
ধর্মীয় শিক্ষার মাধ্যমেই দেশ ও জাতির কল্যাণ সাধিত করা সম্ভব
অন্তর্বর্তী সরকার নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে না : হাইকোর্ট
বিদ্যুৎ প্লান্টের পাঁচ লাখ টাকার লোহা তামা স্টিল সামগ্রী চুরির দায়ে ৫০ জনের নামে মামলা
নেত্রকোনা গত ১ বছরে ২৩২টি অস্বাভাবিক মৃত্যু
মেহেরপুর শহরে অবৈধ গাড়ির দৌরাত্ম ফুটপথ দখল, সরু সড়ক, যানজট লেগেই থাকে
অ্যাপলের ডাইভার্সিটি নীতি , বৈচিত্র্য রক্ষার লড়াইয়ে বোর্ডের বার্তা
ঢাবি,ভিকি,এনএসইউ ওয়েটিং লিস্টে থাকে,বান্নাহ খাওয়া মাল খায় না'
দ্রুত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যবস্থা না করলে আন্দোলনে নামার ঘোষণা কর্নেল অলির
আশুলিয়া থানা জমিয়তের কমিটি গঠন
বাংলাদেশের সীমান্তে ১৬০ জায়গায় কাটাতারের বেড়া দিয়েছে ভারত : রিজভী