বিদেশে উচ্চতর শিক্ষার চাপ কমাতে ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যুক্তরাজ্য ভিত্তিক হেইলিবেরি স্কুল। ৮৫০ একর বিশাল জায়গা নিয়ে গড়ে উঠা এই প্রতিষ্ঠানটি দেশের প্রথম এবং একমাত্র আন্তর্জাতিক বোর্ডিং স্কুল। দেশিয় ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির মিশেলে গড়ে ওঠা যুক্তরাজ্যের এই শাখা প্রতিষ্ঠানটিতে লেখাপড়া করতে বছরে একজন শিক্ষার্থীর খরচ হবে ৩৮ লাখ টাকা। সেই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটিতে মেধাবী শিক্ষার্থীদের সহায়তায় ১৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সমমানের স্কলারশিপ ফান্ডের সুযোগও রয়েছে।

জানা যায়, চলতি বছরের আগস্ট থেকে শুরু হবে এই স্কুলের শিক্ষা কার্যক্রম। দেশ হাজারো শিক্ষার্থীর জন্য সুবিশাল দৃষ্টিনন্দন ক্যাম্পাস সম্পন্ন এই স্কুলটিতে রয়েছে শীততাপ নিয়ন্ত্রিত আবাসিক ব্যবস্থা, বিশ্বমানের লাইব্রেরি, পাঁচ তারকা মানের খাবারের ব্যবস্থা, বিনোদনসহ সব ধরনের খেলাধুলার উন্নতর প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা। এতে বিনিয়োগ করা হয়েছে প্রায় ৭০০ কোটি টাকা। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শিল্পাঞ্চল খ্যাত ভালুকা উপজেলার মল্লিকবাড়ী মামারিশপুর এলাকার নির্জন প্রকৃতির মাঝে গড়ে উঠা এই বিদ্যালয়টিতে ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপাড়ার সুযোগ রয়েছে। এছাড়াও প্রথাবদ্ধ গ্রেড নির্ভর শিক্ষা কার্যক্রমের গোন্ডি পেরিয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে প্রবেশের সঠিক প্রস্তুতির পথ প্রদর্শক হিসেবেও হেইলিবেরি ভালুকা ভূমিকা রাখবে বলেও দাবি করেছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ।

এসময় তারা উদাহরন হিসেবে বলেন, গত বছর হেইলিবেরি স্কুলের ৬১ শতাংশ শিক্ষার্থী হার্ভার্ড, এমআইটি, এলএসই, অক্সফোর্ড বা ক্যামব্রিজের মতো আইভিলিগ ওরাসেল গ্রুপভূক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়ার সুযোগ পেয়েছেন। আর এ কারণেই হেইলিবেরি ভালুকা বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য স্কুল ক্যাম্পাসে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি’র (এমআইটি) সাথে যৌথ উদ্যোগে এমআইটি সামার স্কুল প্রোগ্রামে অংশ নেয়ার সুযোগ তৈরি করছে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো হার্ভার্ড সামার স্কুল ইনফরমেশন সেশনেরও আয়োজন করেছে স্কুলটি।

সূত্রটি আরো জানায়, আন্তর্জাতিক মান সম্পন্ন এই স্কুলটিতে অনন্য প্রযুক্তির স্মার্ট ক্লাস রুম, সুবিশাল খেলার মাঠ, সুইমিং পুল, গলফ ও বাস্কেট বল কোর্ট, জিমনেসিয়ামসহ শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় সকল প্রকার সুযোগ ও সুবিধায় সুসজ্জিত রয়েছে হেইলিবেরি’র ভালুকা ক্যাম্পাস। এটি কোনো গতানুগতিক বোর্ডিং স্কুল নয়, বরং অতীত ঐতিহ্য ও বর্তমান সংস্কৃতির সমন্বয়ে ভবিষ্যতের নেতৃত্ব দেওয়ার সক্ষমতা সম্পন্ন ব্যক্তিত্ব গড়ে তোলার মাধ্যম হিসাবে ভূমিকা রাখবে এই প্রতিষ্ঠান। সেই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সুপ্ত সম্ভবনাগুলোকে বিকশিত করে বিশ্ব নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলাই এই প্রতিষ্ঠানটির মূল লক্ষ্য।

রাজধানী থেকে মাত্র ৮০ কিলোমিটার দূরে গড়ে উঠা এই স্কুল কর্তৃপক্ষ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, স্কুলটির সাফল্যের অন্যতম মূলমন্ত্র হল অনন্য শিক্ষা প্রক্রিয়া, হাই পারফর্ম্যান্সলার্নিং। যা পাঠ্যপুস্তক নির্ভর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পরিবর্তে প্রতিটি শিক্ষার্থীকে ব্যক্তিক, সামাজিক ও মানসিক দক্ষতা বিকাশের ওপর প্রাধান্য দেওয়ার মাধ্যমে তাদের অন্তর্নিহিত সম্ভাবনাকে সাফল্যের উপকরণে রূপ দেওয়া। এসব নিয়েই দেশের শিক্ষা ও স্ট্র্যাটেজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে ‘ভ্যালর অব বাংলাদেশ’ এর সাথে সম্প্রতি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে হেইলিবেরি ভালুকা স্কুলটি। এছাড়া স্কুলটিতে অ্যাকাডেমিকভাবে অসাধারণ ফলাফল পেতে শিক্ষক হিসাবে রয়েছে হার্ভাডের স্বীকৃতি সনদপ্রাপ্ত বিশ্বমানের শিক্ষকবৃন্দ। ছাত্রছাত্রীদের সার্বিকভাবে বেড়ে ওঠার প্রক্রিয়াটিকে নিরাপদ ও নিবিড় ভাবে পরিচালনার অংশ হিসেবে সম্প্রতি হেইলিবেরিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সম্মিলিত উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বি-সেফ (বাংলাদেশ সেফ গার্ডিং অ্যালায়েন্স)। যা দেশে স্কুল শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও শিক্ষা পরিচালনার ক্ষেত্রে নীতির অনুসরণ নিশ্চিতে কাজ করবে। শিশুদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রতিষ্ঠান দ্য সেফ গার্ডিং অ্যালায়েন্সের ‘সেন্টার অব সেফ গার্ডিং এক্সিলেন্স’ হিসেবেও এই স্কুলটি স্বীকৃত, বলেও যোগ করেন প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ।

বিশ্বে সেরা পঞ্চম স্থান অর্জনকারী হেইলিবেরি ভালুকা স্কুলের প্রধান শিক্ষক সাইমন ওগ্রেডী বলেন, শিক্ষার্থীদের মাঝে বিশ্ব মনোভাব এবং দক্ষ ভাবে গড়ে তুলতে কাজ করবে হেইলিবেরি। এ জন্য স্কুলটিতে রয়েছে আন্তর্জাতিক মানের সব ধরনের সুযোগ সুবিধা। হেইবেরি ভালুকা স্কুলের উপদেষ্টা এস.এম.এ ফয়েজ বলেন, প্রতি বছর এই দেশ থেকে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী বিদেশে পড়তে যায়। তবে দেশে এবার হেইলিবেরি স্কুল প্রতিষ্ঠার ফলে এখন আর শিক্ষার্থীরা বিদেশে পড়তে যাবে না। কারণ তারা এখন থেকে হেইলিবেরি স্কুলেই পাবে আন্তর্জাতিক মানের সব ধরনের সুযোগ সুবিধা।