ঢাকা   শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারি ২০২৫ | ৩ মাঘ ১৪৩১
ফরেনসিক রিপোর্ট নিয়ে অভিযুক্তদের দৌড়ঝাঁপ

বগুড়ায় নারী শিল্পপতি খুনের মামলায় ১০ মাস পর লাশ উত্তোলন

Daily Inqilab বিশেষ সংবাদদাতা, বগুড়া থেকে

০২ মার্চ ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ০২ মার্চ ২০২৪, ১২:০২ এএম

 বগুড়ার নারী শিল্পপতি দেলওয়ারা বেওয়াকে খুনের অভিযোগে অবশেষে ১০ মাস পর গত বুধবার কবর থেকে লাশ উত্তোলন করা হয়েছে। গত বছরের ৩ মে রহস্যজনকভাবে মৃত্যু হয় তার। মৃত দেলোয়ারা বেওয়া বগুড়া শহরের কাটনারপাড়ার মৃত সেখ সরিফ উদ্দিনের স্ত্রী। তার রহস্যজনক মৃত্যুর পর মেয়ে ও কিছু আত্মীয়স্বজন-প্রতিবেশীদের লাশ না দেখিয়ে তড়িঘড়ি করে দাফন করে।
এ ঘটনায় দেলওয়ারা বেওয়ার মেয়ে আকিলা সরিফা সুলতানা খানম বাদী হয়ে গত বছরের ৮ জুলাই বগুড়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১০ জনের নামে মামলা করেন। মামলায় তিনি উল্লেখ করেন, সস্পত্তি আত্মসাৎ করতে দেলওয়ারা বেওয়াকে তার এক মেয়ে নাদিরা সুলতানা তার বাসায় আটকে রাখে। এ কাজে তার অপর মেয়ে ও জামাইরা সহযোগিতা করে। সেখানে গত ৩ মে দিবাগত রাতে তাকে শ্বাসরোধ অথবা বিষক্রিয়ার মাধ্যমে হত্যার পর তড়িঘড়ি করে লাশ দাফন করা হয়। মামলায় দেলওয়ারা বেওয়ার ৪ মেয়ে, জামাই ও নাতিকে আসামি করা হয়। আদালত মামলাটি তদন্ত করার জন্য পিবিআই বগুড়াকে নির্দেশ দেন। কিন্তু মামলা দায়েরের পর থেকে দেলওয়ারা বেওয়ার মেয়ে জামাই ফেরদৌস আলম ফটু ও মোফাজ্জল হোসেন রঞ্জু ওরফে ধলা মিয়াসহ অন্যান্যরা মিলে লাশ উত্তোলন ঠেকাতে আদালতে নানা ধরনের জটিলতা তৈরি করেন। পরবর্তীতে দীর্ঘ কয়েক মাস পর আদালত লাশ উত্তোলনের অনুমতি প্রদান করেন। আদালতের নির্দেশে গত বুধবার দুপুরে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে শহরের নামাজগড় গোরস্থান থেকে তার লাশ উত্তোলন করা হয়। পরে লাশ বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগে নেওয়া হয়।
সূত্রমতে, দেলওয়ারা বেওয়ার স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে এমন রিপোর্ট নেওয়ার জন্য চিকিৎসকসহ বিভিন্ন ব্যক্তির নিকট ধরনা দিচ্ছে এই মামলার অভিযুক্তরা। অভিযুক্তদের তৎপরতায় মামলার বাদি প্রশ্ন তোলেন, যদি তারা খুনের সাথে জড়িত না থাকে তাহলে স্বাভাবিক মৃত্যুর সনদের জন্য কেন তদবিরে নেমেছে? এদিকে মামলার বাদি আকিলা সরিফা জানান, কাটনারপাড়ায় এনায়েত আলী খান লেন এলাকার ১ ও ২ নম্বর আসামির বাড়িতে গত বছরের ৩ মে বুধবার রাত আড়াইটার দিকে দেলোয়ারা বেওয়াকে বাড়িতে আটকে রেখে হত্যা করা হয়। আসামিগণ পরস্পর যোগসাজসে তার অর্থ সম্পদ আত্মসাৎ করার উদ্দেশ্যে তাকে জিম্মি করে আটক করে রেখেছিল। এমতাবস্থায় আসামিগণ পরস্পর সম্মিলিতভাবে তার নিকট হতে সকল জমিজমা ও সম্পদ লিখে নিতে চাইলে তাতে অস্বীকার করেন জানান যে, তার মেয়ে আকিলা সরিফার সাথে কথা না বলে তিনি কিছুই করবেন না। এতে আসামিগণ ক্ষিপ্ত হয়ে ঘটনার দিন সকলে শ্বাসরোধ করে অথবা বিষক্রিয়া ঘটিয়ে তাকে হত্যা করেছে। আসামিরা গোপনে কাউকে কিছু না জানিয়ে অতিদ্রুত ৪ মে বাদ যোহর তার লাশ দাফন করে। আকিলা সরিফা লোকমুখে জেনে সকাল ৯ টার দিকে ঘটনাস্থলে সাক্ষীগণসহ মা দেলোওয়ারা বেওয়াকে দেখতে গেলে আসামিরা আকিলা সরিফা ও সাক্ষীদের লাশ দেখতে দেয় না। উল্টো সাক্ষীদেরসহ তাকে মৃত্যুর হুমকি প্রদর্শন করে। এতে সুস্পষ্টভাবে প্রতিয়মান হয়, আসামিগণ দলবদ্ধভাবে তাকে হত্যা করেছে। আকিলা সরিফা আরো বলেন, আমার মায়ের সম্পদ লুন্ঠনকারীরা খুনের অভিযোগ থেকে নিজেদের রক্ষা করার জন্য নানা ধরনের অপকৌশল গ্রহণ করছে। অপরাধীরা যতই চেষ্টা করুক সত্যকে আড়াল করতে পারবে না। খুনীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। পাশাপাশি ফরেনসিক বিভাগে যারা তদবির করছে, তাদেরকে আইনের আওতায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই অনেক সত্য তথ্য বেরিয়ে আসবে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই জাকারিয়া জানান, তদন্তকালে কবর থেকে লাশ উত্তোলন করে ময়নাতদন্তের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলে আদালতে আবেদন করা হয়। আদালতের নির্দেশে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফয়সাল মাহমুদের উপস্থিতিতে লাশ উত্তোলন করা হয়। পরে ময়নাতদন্ত শেষে ফের দাফন করা হয়। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পর তা আদালতে দাখিল করা হবে। তখন সবকিছু পরিস্কার হবে।


বিভাগ : বাংলাদেশ


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

হুতি আক্রমণের বার্ষিকীতে সংহতির আহ্বান আমিরাত নেতাদের

হুতি আক্রমণের বার্ষিকীতে সংহতির আহ্বান আমিরাত নেতাদের

৯ বছর পর দেশে ফিরে স্ত্রীকে পেলেন ঝুলন্ত অবস্থায়

৯ বছর পর দেশে ফিরে স্ত্রীকে পেলেন ঝুলন্ত অবস্থায়

চীনে জন্মহার হ্রাস, অর্থনীতিতে বিপর্যয়ের শঙ্কা

চীনে জন্মহার হ্রাস, অর্থনীতিতে বিপর্যয়ের শঙ্কা

বিএনপিকে ধুয়ে দিলেন সাংবাদিক মাসুদ কামাল

বিএনপিকে ধুয়ে দিলেন সাংবাদিক মাসুদ কামাল

যুক্তরাজ্য-ইউক্রেন ১০০ বছরের ‘যুগান্তকারী’ চুক্তি

যুক্তরাজ্য-ইউক্রেন ১০০ বছরের ‘যুগান্তকারী’ চুক্তি

লস অ্যাঞ্জেলেসে দাবানল নিয়ন্ত্রণে আসছে, ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে বাংলাদেশিরাও

লস অ্যাঞ্জেলেসে দাবানল নিয়ন্ত্রণে আসছে, ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে বাংলাদেশিরাও

কেন চোখের পানি ধরে রাখতে পারেনি ফারিয়া?

কেন চোখের পানি ধরে রাখতে পারেনি ফারিয়া?

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে গাড়ির ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী ৩ বন্ধুর মৃত্যু

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে গাড়ির ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী ৩ বন্ধুর মৃত্যু

তাপমাত্রা কমে বাড়বে শীত

তাপমাত্রা কমে বাড়বে শীত

এলএন-এর বিরুদ্ধে হত্যার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ, কলম্বিয়ায় শান্তি আলোচনা বাধাগ্রস্ত

এলএন-এর বিরুদ্ধে হত্যার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ, কলম্বিয়ায় শান্তি আলোচনা বাধাগ্রস্ত

ফরিদপুর মহানগর যুবদলের সভাপতি হলেন ইউসুফ হোসেন

ফরিদপুর মহানগর যুবদলের সভাপতি হলেন ইউসুফ হোসেন

ভাঙ্গায় এক্সপ্রেসওয়েতে পড়েছিল মোটরসাইকেল আরোহীর চূর্ণ-বিচূর্ণ লাশ

ভাঙ্গায় এক্সপ্রেসওয়েতে পড়েছিল মোটরসাইকেল আরোহীর চূর্ণ-বিচূর্ণ লাশ

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদরাই আজকের বাংলাদেশ- কক্সবাজারে শিল্প উপদেষ্টা

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদরাই আজকের বাংলাদেশ- কক্সবাজারে শিল্প উপদেষ্টা

অতিরিক্ত সময়ে এন্দ্রিকের জোড়া গোলে জিতে শেষ আটে রিয়াল

অতিরিক্ত সময়ে এন্দ্রিকের জোড়া গোলে জিতে শেষ আটে রিয়াল

গ্রিক সাইপ্রিয়ট প্রশাসনকে অস্ত্র বিক্রয়ের মার্কিন সিদ্ধান্তে টিআরএনসি-এর ক্ষোভ ও উদ্বেগ

গ্রিক সাইপ্রিয়ট প্রশাসনকে অস্ত্র বিক্রয়ের মার্কিন সিদ্ধান্তে টিআরএনসি-এর ক্ষোভ ও উদ্বেগ

নরসিংদীতে বাস-ট্রাকের ত্রিমুখী সংঘর্ষ, আহত ৮

নরসিংদীতে বাস-ট্রাকের ত্রিমুখী সংঘর্ষ, আহত ৮

পাবনায় জনজীবনে ভয়াবহ হচ্ছে ভার্চুয়াল আসক্তি

পাবনায় জনজীবনে ভয়াবহ হচ্ছে ভার্চুয়াল আসক্তি

মাঝ আকাশে ভেঙে টুকরো ইলন মাস্কের ‘স্টারশিপ’

মাঝ আকাশে ভেঙে টুকরো ইলন মাস্কের ‘স্টারশিপ’

বাংলাদেশ-ভারতকে অতীত কবর দিয়ে নতুন করে শুরু করতে হবে: সুনন্দা কে দত্ত রায়

বাংলাদেশ-ভারতকে অতীত কবর দিয়ে নতুন করে শুরু করতে হবে: সুনন্দা কে দত্ত রায়

সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগ অধ্যাদেশের খসড়া অনুমোদন

সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগ অধ্যাদেশের খসড়া অনুমোদন