দেশের জন্য লড়াই করে পাহাড়ে জীবন দিলো নোয়াখালীর সেনা সদস্য রফিকুল
২২ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৪ এএম
দেশের জন্য লড়াই করে পাহাড়ে জীবন দিলো নোয়াখালীর সেনা সদস্য রফিকুল ইসলাম (৩৭)। তিনি নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার পরকোট ইউনিয়নের পশ্চিম শোশালিয়া গ্রামের আমজাদ আলী কাইদার বাড়ির মফিজ উদ্দীন ও হায়াতুন্নেছা দম্পতির চতুর্থ সন্তান। রফিক সেনাবাহিনীতে কর্পোরাল হিসেবে কর্মরত ছিলেন। গত শনিবার রাতে নিহত সেনা সদস্য রফিকুল ইসলামের লাশ গ্রামের বাড়িতে আনার সাথেই সৃষ্টি হয় এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের।
শহীদ সেনা সদস্যের পারিবারিক সূত্র জানায়, বান্দরবানের রুমায় সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠী কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) গুলিতে নিহত হয়েছেন সেনা সদস্য রফিকুল ইসলাম। গত শুক্রবার বিকেলে রুমা উপজেলার বড়থলি পাড়া আর্মি ক্যাম্পের আওতাধীন পলি পাংশা পাড়ার মধ্যবর্তী স্থানের যাত্রী ছাউনি এলাকায় গুলিতে নিহত হন এ সেনা সদস্য। পরে তাকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) নেয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। গত শনিবার তার পরিবারের সদস্যরা চট্টগ্রাম সেনানিবাস থেকে লাশ গ্রহণ করে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসে। রাত ৮টায় জানাজা শেষে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় এ বীর সেনাকে।
শহীদ সেনা সদস্য রফিকুল ইসলামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, কাপড়ে মুখ ঢেকে কাঁদছেন তার বিধবা স্ত্রী আমেনা বেগম। পাশেই অপলক দৃষ্টিতে মায়ের দিকে তাকিয়ে চোখের পানি ফেলছে অবুঝ তিন শিশু সন্তান। মা কেন অঝোর ধারায় কান্না করছে, তা তখনও বুঝতে পারেনি শিশু তাফহীম (১২), তাহমীদ (১১) ও ফারহান (৩)। বাকরুদ্ধ হয়ে ঘরের মধ্যে বিছানায় শুয়ে কাঁদছেন নিহত সেনা সদস্যের বৃদ্ধা মা হায়াতুন্নেছা। আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীরা সান্তনা দেয়ার ভাষাই যেন হারিয়ে ফেলেছে। সবার চোখ থেকে ঝরছিল শোকা অশ্রু।
শহীদ পরিবারের সদস্যরা জানান, দেশ মাতৃকার টানে ২০০৫ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে সৈনিক পদে যোগ দেন রফিকুল ইসলাম। বাবার লাশ আসার আগে তার তিন সন্তানকে স্বাভাবিক দেখা গেলেও লাশ দেখার পর থেকে অঝোরে কান্না শুরু করে বড় দুই ছেলে। পুরো জানাজায় ইমামের পেছনে প্রথম সারিতে দাঁড়িয়ে কেঁদেছে, করপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়া তাফহীম ও চতুর্থ শ্রেণিতে পড়া তার সহোদর তাহমিদ।
শহীদ সেনা সদস্য রফিকুলের স্ত্রী আমেনা বেগম বলেন, ‘২০১১ সালে আমাদের বিয়ে হয়েছিল। রমজানের পূর্বে সবশেষ বাড়িতে এসেছিলেন তিনি। গত পরশু কথা হয়েছে। গত শুক্রবার রাতে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে ফোন করে মৃত্যুর খবর জানানো হয়। শনিবার সকালে আমার শ্বশুর গিয়ে লাশ নিয়ে এসেছেন। আমার তিন ছেলে। আমার পরিবারে আর কেউ উপার্জনক্ষম নেই। তিন ছেলেকে নিয়ে আমি এখন কীভাবে চলবো? আমাদের দেখার আর কেউ রইলো না।’ বলে কান্না শুরু করেন সদ্য বিধবা আমেনা। বিলাপ করতে করতে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন নিহত রফিকুল ইসলামের বড় বোন মফিদা আক্তার। তিনি বলেন, ‘আমার ভাই নিজের সংসারের পাশাপাশি আমাদেরও খেয়াল রাখতো। আমরা এখন কি নিয়ে বাঁচবো? আমার তিন ভাতিজাকে এখন কে দেখবে? সবকিছু শেষ হয়ে গেলো।’
রফিকুলের আরেক বোন শাহীন আক্তার বলেন, ‘আমার সোনার টুকরো ভাইকে হারিয়ে ফেলেছি। ও ভাই, কেন আমাদের ছেড়ে চলে গেলি। আমাদের এখন কে দেখবে? কে সংসার চালাবে? কে আমাদের বৃদ্ধা মায়ের ওষুধ খরচ দেবে?’
চাটখিল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দীন বলেন, ‘চট্টগ্রাম সেনানিবাস থেকে গত শুক্রবার রাতে আমাকে ফোন করে নিহত সেনা সদস্য রফিকুল ইসলাম সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য নিয়েছিলো। পরে স্বজনদের কাছ থেকে মৃত্যুর সংবাদ নিশ্চিত হয়েছি। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নিহতের পরিবারের পাশে থাকবে। আমরাও তাদের খোঁজ খবর রাখবো।’
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
ফের গোল পেলেন রোনালদো,নাসেরের রোমাঞ্চকর জয়
কাউকে ঋণ দিয়ে তার কাছ থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা বেশী নেওয়া প্রসঙ্গে।
যৌনকর্মীদেরও এবার মাতৃত্বকালীন ছুটি, দেয়া হবে পেনশন
আমেরিকান কালার কসমেটিকস হারল্যানে ২৫% ছাড়
প্রথম প্রান্তিকে এনআরবিসি ব্যাংকের আমানত বেড়েছে ১৭ শতাংশ
‘নেভার সেটেল’ শ্লোগানে দেশের প্রযুক্তিপ্রেমিদের উজ্জীবিত করতে প্রস্তুত শীর্ষ ব্র্যান্ডটি
শেয়ারট্রিপের মেগা ক্যাম্পেইন, শেয়ারট্রিপ পে’র এর মাধ্যমে জিতুন আকর্ষণীয় সব পুরস্কার
ইউএস ট্রেড শো- ২০২৪ এ ইসলামী ব্যাংকের স্টল উদ্বোধন
বগুড়ায় শাজাহানপুরে স্ট্রোকে স্ত্রীর মৃত্যু
তানোরে ২য় বার নির্বাচিত চেয়ারম্যান ময়নার অর্ধশতাধিক মাইক্রোবাস নিয়ে শোডাউন
জয়ের ধারা ধরে রাখার লক্ষ্য বাংলাদেশের
এক দশকের উন্নয়ন বাংলাদেশের জাতীয় বিজ্ঞাপনের বড় অস্ত্র; কিন্তু চ্যালেঞ্জ আছে
সার্বিয়ার জাতীয় জাদুঘরে চীনের ফার্স্ট লেডি
যুক্তরাজ্যের রিফিউজিদের মানবিক সহযোগিতা দিচ্ছে এইডমিইউকে
চীন ও হাঙ্গেরির প্রেসিডেন্টদ্বয়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত
মেট্রো স্টেশনের টয়লেট ব্যবহারে দিতে হবে টাকা, যা বলছেন নেটিজেনরা
ডিজিটাল বাংলাদেশের অগ্রগতির সঙ্গে সাইবার অপরাধ বাড়ছে : পলক
ফুলবাড়ীতে ট্রেনে কাটা পড়ে এক বৃদ্ধের মৃত্যু
৩৫তম তেহরান আন্তর্জাতিক বইমেলা শুরু
ইন্দুরকানীতে বসতঘরে আগুন