মাদক যুদ্ধবিগ্রহের চেয়েও ভয়ঙ্কর
৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৪ এএম
বাংলাদেশ মাদক উৎপাদনকারী দেশ নয়। তবে এর অপব্যবহার থেকেও ও মুক্ত নয়। শুধুমাত্র ভৌগোলিক অবস্থনগত কারণে আমাদের দেশে অবৈধ মাদক অনুপ্রবেশ করে। এর বড় অংশ পাচার হয়। বাকিটুকু দেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে পড়ছে। মাদক একটি লাভজনক ব্যবসা। এ কারনে আন্তর্জাতিক চক্রের হয়ে দেশীয় এজেন্টরা এ ব্যবসায়ী চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। সমাজের অনেক রাঘব বোয়াল পেছনে থেকে কলকাঠি নাড়ছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অনেক অসাধু কর্মকর্তাও অনৈতিক সুবিধা পেয়ে এ সিন্ডিকেটকে শেল্টার দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। কাজেই মাদকের আগ্রাসন রোধ শুধুই মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের একার পক্ষে নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। এটা নির্মূলে দরকার রাষ্ট্রের পাশাপাশি সমাজের সকল স্তরের সমন্বিত প্রচেষ্টা। বর্তমানে দেশব্যাপী মাদকের অপব্যবহার ও নিয়ন্ত্রণের অন্তরায় প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণদ্রব্য অধিদপ্তরের নয়া মহাপরিচালক খোন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান একথা বলেন।
দৈনিক ইনকিলাবের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, তাদের নিজস্ব জরীপ বলছে, দেশে বর্তমানে ৭০ লাখের বেশি মাদকসেবি রয়েছেন। যুবসমাজের বড় একটা অংশ মাদক নামক মরণ নেশায় আক্রান্ত। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি অংশ নারী। আশ্চর্য্যরে বিষয় হচ্ছে, মাদকসেবিদের বড় অংশটিই হচ্ছে শিক্ষিত এবং উচু তলার মানুষ। বর্তমানে আমাদের সমাজে যে সকল মাদকদ্রব্য বেশী চলছে তা হ’ল- তামাকজাত দ্রব্য, হেরোইন, ফেনসিডিল, গাঁজা, আফিম, ইয়াবা, প্যাথেড্রিন, মদ, হুইস্কি, ইত্যাদি। এছাড়া অন্যান্য মাদকদ্রব্যগুলোর মধ্যে আছে- কোকেন, ক্যাফেইন, হাশিশ, মরফিন প্রভৃতি। শিশাসহ নিত্যনতুন মাদকের নামও আসছে।
মাদকের ভয়াবহতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, একটি গুলিতে সর্বোচ্চ একজন মানুষ মৃত্যুবরণ করেন। যে মৃত্যুবরণ করে আমরা তাকে হারাই। কিন্তু মাদক পুরো সমাজকে ধ্বংস করে। একজন মাদকসেবীর কারনে তার পুরো সংসার ভেঙে পড়ে। সমাজে অশান্তি ও বিশৃংখলা সৃষ্টির জন্য একজন মাদকাসক্ত ব্যক্তিই যথেষ্ট। মাদকের আগ্রাসন জাতীয় অস্তিত্বের জন্য হুমকি। এখন আমাদের অস্তিত্বের স্বার্থেই মাদক আগ্রাসন বন্ধে সর্বাত্বক পদক্ষেপ নিতে হবে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরই নয় মাদকের আগ্রাসন বন্ধে গড়ে তুলতে হবে সামাজিক আন্দোলনও।
আমাদের দেশে সহজলভ্য মাদকগুলো মূলত প্রবেশ করে পার্শ্ববতী দেশ থেকে। বর্তমান সময়ের আলোচিত মাদক ইয়াবা যার অনুপ্রবেশ ঘটে মায়ানমার থেকে। আর ভারত থেকে আসছে গাঁজা, ফেন্সিডিল, হেরোইন ও ইনজেক্টিং ড্রাগ। সীমান্ত এলাকায় অতন্দ্র প্রহরী বিজিবিসহ দেশের সকল আইন প্রয়োগকারী সংস্থা মাদকের প্রবেশ ও অব্যবহার রোধ করার জন্য নিরন্তর কাজ করছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সীমান্তে অস্থায়ী চেকপোস্ট স্থাপনের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করছে। এত কিছুর মধ্যেও বিভিন্ন অপকৌশলের আশ্রয়ে কিছু মাদক প্রবেশ করছে।
এক প্রশ্নের জবাবে নারকোটি´ ডিজি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, মাদক কারবারীরা হুন্ডিসহ বিভিন্ন অবৈধ মাধ্যমে আর্থিক লেনদেন করে বিদেশে অর্থ পাচার করে। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে ইতিমধ্যে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ সেল নামে একটি বিশেষায়িত ইউনিট গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে। বর্তমান বিশ্বকে বলা হয় গ্লোবাল ভিলেজ।
মাদক ব্যবসায়ীদের ডার্কওয়েব, ডিপওয়েব এবং ক্রিপ্টোকারেন্সি ডিজিট্যাল মুদ্রায় লেনদেন করায় অধিদপ্তরে সাইবার ক্রাইম প্রতিরোধ সেল নামে একটি পৃথক বিশেষায়িত ইউনিট গঠনেরও প্রস্তাব করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সাধারনত সীমান্তবর্তী এলাকা এবং আন্তর্জাতিক বন্দরসমূহের আশপাশে মাদকপ্রবণতা বেশী দেখা যায়। টেকনাফকে মাদকপ্রবণ বিশেষ জোন হিসেবে স্থায়ীভাবে আলাদা অফিস স্থাপনের পর রোমারী ও চর রাজিবপুর উপজেলা দুটিকে বিশেষ মাদকপ্রবণ এলাকা ঘোষণার জন্য সুরক্ষা সেবা বিভাগে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
বর্তমান অন্তর্বতীকালীন সরকার সম্প্রতি অত্র অধিদপ্তরের জন্য অস্ত্র নীতিমালা অনুমোদন করেছেন। ইয়াবা, আইস, হেরোইনসহ বিভিন্ন মাদক পাচারকারীর শরিরের বিভিন্ন অংশ যেমন-পেট, পায়ুপথের মাধ্যমে বহন করে থাকে। যা সনাক্ত করা কষ্টসাধ্য। এ কারণে কারো শরীরে মাদক বহন করছে কিনা তা তাৎক্ষনিক সনাক্তকরার জন্য পোর্টেবল ড্রাগ ডিটেকটিং মেশিন এবং পোর্টেবল এ´রে স্ক্যানার ক্রয়ের পরিকল্পনার প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। মাদক মামলা তদন্ত, অভিযোগ প্রমাণ ও মামলা নিষ্পত্তিতে সার্বিক সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ইতোমধ্যে আধুনিক ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাব স্থাপন প্রকল্প চলমান রয়েছে। বিমানবন্দরে শুধু স্ক্যানার দিয়ে মাদক ঠেকানো যায় না। এ কারনে এ কারণে বিশ্বের অনেক উন্নত দেশের বিমানবন্দরের মতো ডগ স্কোয়ার্ড গঠনের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। খুলনা বিভাগীয় কার্যালয় কমপ্লে´ নির্মাণসহ সেখানে বিভাগীয় কার্যালয়, জেলা কার্যালয়, বিভাগীয় গোয়েন্দা কার্যালয়, রাসায়নিক পরীক্ষাগার থাকবে।
তিনি বলেন, সরকারীভাবে ঢাকায় কেন্দ্রীয় মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র রয়েছে এবং ৪টি বিভাগে মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র আছে, অন্য ৪টি বিভাগে সরকারী মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র স্থাপনের উদ্দেশ্যে প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে। এখনও দেশের ১৭টি জেলায় বেসরকারী মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র নেই। এসব জেলায় স্থানীয় উদ্যোক্তাদেরকে ব্যক্তি উদ্যোগে নিরাময়-পুনর্বাসন কেন্দ্র গড়ে তোলার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, এক্ষেত্রে লাইসেন্স প্রদানে বিধি মোতাবেক সকল প্রকার সহায়তা করা হবে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী অনৈতিক সুবিধা নিয়ে মাদক ব্যবসায়ীদের পরোক্ষভাবে উৎসাহ ও শেল্টার দেয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মাত্র তিন মাস আগে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের হাল ধরা ডিজি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রচলিত বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। সেটা অপরাধের ধরণ বুঝে ফৌজদারী বা বিভাগীয় বা উভয় ব্যবস্থাই গৃহীত হতে পারে। এ অধিদপ্তরে বিগত ৫ বছরে ১৩৯ জন কর্মকর্তা কর্মচারীকে বিভিন্ন মামলায় লঘু দন্ডের পাশাপাশি চাকুরী হতে অপসারণ ও অন্যান্য গুরুদন্ডে দন্ডিত করা হয়েছে। এরমধ্যে আমার যোগদানের পর হতে নভেম্বর পর্যন্ত ৯ জনের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে, আরো ১৯ জনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা চলমান আছে। এ অল্প সময়ের মধ্যে মাদকের গডফাদার হিসেবে চিহিৃত ১১ জনসহ প্রায় দু’শ জন বিক্রেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে বিপুল পরিমান মাদক। অনিয়মের অভিযোগে হোটেল ঈশা খা বার এক মাসের জন্য বন্ধসহ বেশ কয়েকটি বারে অভিযান চালিয়ে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর দেশে মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচাররোধে এনফোর্সমেন্ট ও আইনী কার্যক্রম জোরদার, মাদকবিরোধী গণসচেতনতা সৃষ্টি এবং মাদকাসক্তদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে দেশে মাদকের অপব্যবহার কমিয়ে আনতে নিরলস কাজ করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। তবে এতকিছুর পরেও নিশ্চিত করে বলা যায়, শুধু আইন কিংবা আইনের প্রয়োগেই মাদক নির্মূল করা সম্ভব নয়। এজন্য প্রয়োজন নিজের সদিচ্চা এবং সকলের সমন্বিত প্রচেষ্টা।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
অপরাধী যদি আমার ভাই হয় তাকেও ছাড় দিবেন না সিরাজদিখানে- কৃষি ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
আবারও সিলেটের নায়ক জাকির, খুলনার টানা দ্বিতীয় হার
মাগুরায় সড়ক দুর্ঘটনায় দুই মোটর সাইকেল চালক নিহত
কুষ্টিয়ায় র্যাবের অভিযানে ইয়াবা সহ মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার
কুষ্টিয়ার আলফা মোড়ে সিএনজি স্ট্যান্ড’ নাম দিয়ে চাঁদাবাজি
জুলাই আগস্টে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে হামলা : বহিস্কার হলেন শাবির ২৯ শিক্ষার্থী
জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের মেয়াদ বাড়লো ১৬ দিন
সাতক্ষীরা সীমান্তে ধান চাষে বিএসএফের বাধা, পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত
পিলখানা হত্যাকাণ্ডের নায়কদের শাস্তি ও ৩ দফা দাবিতে পটুয়াখালীতে মানববন্ধন
ইরানের নতুন আত্মঘাতী ড্রোনে আতঙ্কে ইসরাইল!
চাকুরিচ্যুত বিডিআরদের চাকুরিতে পুনর্বহালের দাবি ডিসিকে স্মারক লিপি
গোপালগঞ্জে জেলা বিএনপি’র সংবাদ সম্মেলন
পটুয়াখালী প্রেসক্লাবের আহবায়ক কমিটিকে “আমরা -৮৪”-বন্ধুদের পক্ষ থেকে ফুলের শুভেচ্ছা
বিএনপির প্রতিনিধি দলের সঙ্গে ইইউ রাষ্ট্রদূতের সৌজন্যে সাক্ষাৎ
কেরানীগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবকদল সভাপতির বিরুদ্ধে মার্কেট দখলের অভিযোগ
সরকারী ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়ের সুবিধা নিচ্ছে বেসরকারি ট্রেন কোম্পানি
একযুগ পর জাপান প্রবাসী দূলাল চৌধুরীকে ফুলেল শুভেচ্ছায় বরণ করলো এলাকাবাসী
কিশোরগঞ্জে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি নিহত আহত ৫
নতুন করে ভ্যাট আরোপ হবে সরকারের নির্দয় সিদ্ধান্ত : জিএম কাদের
সিকৃবির কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের নবীন বরণ সম্পন্ন