শেবাচিম হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের দুরবস্থা
১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:১৫ এএম | আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:১৫ এএম
বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের ৪টি ইউনিটেই চিকিৎসাধীন রোগীরা চরম মানবিক বিপর্যয়ের কবলে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ২০২২ সালের শেষ দিকে হাসপাতালের মূল ভবন থেকে মেডিসিন ইউনিটটি পাশে নবনির্মিত প্রাশাসনিক ভবন হিসেবে নির্মিত একটি ৫তলা ভবনে স্থানান্তরের পরে ইতোমধ্যে দুই দফায় অগ্নিকা-ের ঘটনাও ঘটেছে। চিকিৎসক এবং মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র-ছাত্রীসহ হাসপাতাল কর্মীদের তরফ থেকে যৌক্তিক আপত্তিকে বিবেচনায় না নিয়ে সাবেক পরিচালকের এক গুয়েমীতে হাসপাতালটির সবচেয়ে বড়, মেডিসেন ইউনিটি নতুন ভবনে স্থানান্তরের পরে চিকিৎসা ব্যবস্থাই চরম বিপর্যয়ে কবলে। এমনকি ইউনিটটি স্থানান্তরে আপত্তি জানানো মেডিসিন বিভাগের তৎকালীন বিভাগগীয় প্রধান কর্তৃপক্ষের রোষানলে পরে তদবির করে অন্যত্র বদলি হয়ে যান।
ভবনটির নকশা ও নির্মাণ পরিকল্পনাকে বাদ দিয়ে সেখানে মেডিসিন ওয়ার্ডের ৪টি ইউনিট ছাড়াও ১টি বিশেষায়িত মেডিসিন ইউনিট স্থানান্তরের ফলে গত প্রায় ৩ বছর ধরে রোগী ও স্বজনদের চরম ভোগান্তি এখন সব বর্ণনার বাইরে। এমনকি ভবনটির নিচতলা থেকে ৫ম তলা পর্যন্ত বেডের চেয়ে মেঝেতেই রোগীর পড়ে আছে বেশি। মেডিসেন ওয়ার্ডে অনুমোদিত বেড সংখ্যা মাত্র পৌনে ২শ’ হলেও সেখানে প্রতিনিয়ত রোগী থাকছেন ৭-৮শ’ পর্যন্ত।
এমনকি পুরো ভবনটিতে আলো বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা অপ্রতুল। ফলে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হলে ঐ পাঁচতলা ভবনের মেডিসিন ওয়ার্ড সমূহে অনেকটাই ভুতুড়ে পরিবেশের সৃষ্টি হয়। মূলত ১০তলা এ ভবনটির যে ৫তলা পর্যন্ত নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে, নকশা অনুযায়ী তা প্রশাসনিক কাজেই ব্যবহত হবার কথা। ৬ষ্ঠ তলা থেকে ১০ম তলা পর্যন্ত আইসিইউ এবং ওপারেশন থিয়েটার হিসেবে ব্যবহারের কথা।
কিন্তু কতিপয় বিবেকহীন কর্তার একগুয়েমীতে মূল পরিকল্পনা থেকে সরে এসে চিকিৎসাধীন রোগীদের দুর্ভোগই শুধু বৃদ্ধি করা হয়েছে। এমনকি নির্মিত ঐ ভবনটিকে মেডিসিন ওয়ার্ডে রূপ দিতে ইতোমধ্যে নকশা বহির্ভূতভাবে প্রায় ৩০টি জনালাসহ আরো বেশকিছু সংস্কার এবং পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করতে গিয়ে সরকারি কোষাগাড় থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয়েছে। নতুন করে ঐ ভবনটির শৌচাগার থেকে কমোড অপসারণ করে সেখানে ফ্যান বসানোর কাজ শুরু হতে যাচ্ছে।
এদিকে ৫শ’ শয্যার হাসপাতাল হিসেবে নির্মিত বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটি বিগত সরকার কোনো ধরনের অবকাঠামো বৃদ্ধি না করেই ১ হাজার শয্যায় উন্নীত করলেও তার জন্য কোনো জনবল মঞ্জুরি হয়নি এখনো। এমনকি ৫শ’ শয্যার অনুমোদিত জনবলেরও কর্মরত আছেন সাড়ে ৩শ’ রোগীর জনবল। অথচ শনিবারও এ হাসপাতালটিতে ১৮শ’ ওপরে রোগী চিকিৎসাধীন ছিলেন। এরমধ্যে এখন সবচেয়ে করুন অবস্থা মেডিসেন ওয়ার্ডের ৪টি ইউনিটেরই। ভবনটির নিচতলা থেকে ৫ম তলা পর্যন্ত দুর্গন্ধ আর অন্ধকারে সুস্থ মানুষেরও দমবন্ধ হবার অবস্থা। স্থানভাবে মাঘের শীতেও অনেক মুমূর্ষ রোগীরও ঠাঁই হচ্ছে মেঝেতে।
আবার মেডিসিনের পেয়িং বেড ও পেয়িং কেবিন এখনো মূল ভবনে রয়ে গেছে। ফলে এখানের চিকিৎসকদের রোগীদের দেখভাল করাসহ চিকিৎসা দিতে দুটি ভবনেই ছুটতে হচ্ছে। এমনকি এতেকরে মূল ভবনে পেয়িং কেবিন ও পেয়িং বেডে চিকিৎনাধীন মুমূর্ষ রোগীরা অনেক জরুরি সময় যথাযথ চিকিৎসা পাচ্ছেন না বলেও অভিযোগ উঠেছে। এমনকি নতুন ভবনের মেডিসিন ইউনিটের রোগীদের আসছে ৩শ’ মিটার দুরের মূল ভবনের ৫ম তলা থেকে। ফলে খেলা আকাশের নিচে রোদ-বৃষ্টি আর ধুলো-বালুর রাস্তায় ট্রলিতে ছোট-বড় হাড়ি চাপিয়ে মেডিসিন ওয়ার্ডের রোগীদের খাবার নিয়ে যাওয়া হচ্ছে প্রতিদিন তিন বেলা। পাশাপাশি মেডিসিন ওয়ার্ডে মেডিকেল কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের ক্লাস করার মতো কোনো কক্ষ না থাকায় বিপুল সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রীদের লেখাপড়া নিয়ে সংকট অব্যাহত রয়েছে। ক্ষুব্ধ ও হতাশ ছাত্র-ছাত্রীরা বিষয়টি একাধিকবার কলেজ প্রিন্সিপাল ও পরিচালককে অবহিত করলেও এখনো সংকটের তেমন কোনো সমাধান মেলেনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সাথে আইনগত জটিলতায় জড়িয়ে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকায় গণপূর্ত অধিদপ্তর এ ভবনটি নির্মাণে ১০ বছরেরও বেশি সময়ে লেগেছে। করোনা মহামারীর শুরুতে তড়িঘরি করে ভবনটির কাজ শেষ করে সেখানেই ‘কোভিড-১৯ ওয়ার্ড’ চালু করা হয়েছিল। সম্প্রতি ভবনটির ৬ষ্ঠ তলার নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। যেখান ১শ’ শয্যার আইসিইউ ওয়ার্ড চালু করার কথা রয়েছে।
মূল পরিকল্পনাকে এড়িয়ে নতুন ভবনটিতে মেডিসিন ওয়ার্ডের ৪টি ইউনিট চালু করায় সুচিকিৎসার নামে চিকিৎসাধীন রোগীদের শরীর ও মনের নিত্য নতুন সংকট সৃষ্টি হচ্ছে বলে অভিযোগ সাধারণ রোগী ও স্বজনদের।
বিষয়টি নিয়ে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মশিউল মুনিরের সাথে আলাপ করা হলে তিনি জানান, কেন কিভাবে মেডিসিন ওয়ার্ডটি প্রশাসনিক ভবনে স্থানন্তর করা হয়েছে, তা এখন বলে লাভ নেই। তবে আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করছি মেডিসিন ওয়ার্ডটিকে পরিপূর্ণ ওয়ার্ডে রূপান্তর করে চিকিৎসাধীন রোগীদের সেবার মান বৃদ্ধি করতে। অদুর ভবিষ্যতে নতুন ভবনটিতে রোগীর সুচিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে সম্ভব সবকিছু করার কথাও জানান তিনি।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে হবে : তারেক রহমান
ঋণখেলাপিরা যাতে মনোনয়ন না পায় চেষ্টা করবো : মির্জা ফখরুল
অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর না হলে রাজনৈতিক সংস্কার টেকসই হবে না : বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি
টিসিবি’র এক কোটি ফ্যামিলি কার্ডধারীর মধ্যে ৩৭ লাখই ভুয়া: বাণিজ্য উপদেষ্টা
ভোজ্যতেলের সরবরাহ নিশ্চিতে কারখানা পরিদর্শন ভোক্তা অধিকারের
গণপরিবহনে শৃঙ্খলায় কাউন্টার স্থাপনের পরিকল্পনা
রাজধানীর তিন পার্কে ভেন্ডারের চুক্তি : শর্ত ভঙ্গের তদন্তে ডিএনসিসি
বাবা-মায়ের পুরোনো বাড়িতে যাই : শফিকুল আলম
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসায় ১৫০ কোটি টাকা অনুদান
২০২৪ সালে ৩১০ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা
ভারতীয় ৭২ গণমাধ্যমে বাংলাদেশ নিয়ে অপতথ্য প্রচার
লেবানন থেকে দেশে ফিরলেন আরো ৪৭
প্লাটফর্ম বিষয়ক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত
শক্তিশালী অর্থনীতি ও গর্বিত জাতি গড়তে শহীদ জিয়ার দর্শন ধারণ করতে হবে : আমির খসরু
কী আছে তৌফিকার লকারে?
ঘটনার তিনদিন পর থানায় মামলা
অনিয়ম ঢাকতে তড়িঘড়ি করে নির্বাচনের পাঁয়তারা
৯৬টি সিএনজি ভাঙ্গাড়ি হিসাবে সাড়ে ১১ লাখ টাকায় বিক্রি
৩১ দফা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে রূপগঞ্জে বিএনপির সমাবেশ
রেজিস্ট্রেশন এমপ্লয়ীজ এসোসিয়েশনের সভাপতি হেলেনা-সম্পাদক বায়েজিদ