৯৬টি সিএনজি ভাঙ্গাড়ি হিসাবে সাড়ে ১১ লাখ টাকায় বিক্রি
১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:১৫ এএম | আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:১৫ এএম
সিএনজি অটোরিকশা নিয়ে মালিক সমিতির দুর্নীতিবাজ নেতাদের তৎপরতা থেমে নেই। সাড়ে ১২ হাজার সিএনজি অটোরিকশা প্রতিস্থাপন ও মেয়াদ বাড়ানোর নাম করে মালিক সমিতির নেতাদের বিরুদ্ধে ১১২ কোটি ৭৫ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ দুদক তদন্ত করছে। গত বৃহস্পতিবার ৯৬টি সিএনজি অটোরিকশা প্রতিস্থাপনের জন্য ভেঙে ফেলা হয়েছে। বাকি একটি আগুনে পুড়ে যাওয়ায় তদন্ত কমিটির বিবেচনাধীন রয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী ভেঙ্গে ফেলার পর অটোরিকশার ধ্বংসবাশেষ সংশ্লিষ্ট মালিককে দেয়ার কথা। কিন্তু মালিক সমিতির নেতারা বিআরটিএ-এর দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের সাথে যোগসাজশ করে ৯৬টি অটোরিকশার ধ্বংসবাশেষ সাড়ে ১১লাখ টাকায় ভাঙ্গারি হিসেবে বিক্রি করে দিয়েছেন। ধ্বংসকৃত সিএনজির মালিকরা বলেছেন, তারা একটি টাকাও পাননি। মালিক সমিতির তিনজন নেতা সেগুলো চারটি প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে। মুন্না এন্টারপ্রাইজ নামের এক ভাঙ্গারি প্রতিষ্ঠানের মালিক মো. ইব্রাহীম হোসেন মুন্না ইনকিলাবকে বলেন, আমি ৪০টি অটোরিকশার ধ্বংবাশেষ ভাঙ্গারি হিসাবে কিনেছি। বাকিগুলো অন্যরা কিনেছে। কার কাছে থেকে কিনেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাবু নামে একজনের কাছে থেকে। কতো টাকা দরে কিনেছেন জানতে চাইলে পূর্ব পল্লবী কাজীবাড়ী মোড়ের এই ভাঙ্গারি ব্যবসায়ী বলেন, আমি ব্যবসা করি, কেনার দর প্রকাশ করা কী উচিত হবে? তবে তিনি বলেন, চারজন ব্যক্তি হয়ে তিনি বাবুর সন্ধান পেয়েছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মিরপুর বিআরটিএ-অফিস সংলগ্ন বাবুর একটি ফটোকপির দোকান আছে। সেই সুবাদে বিআরটিএ-র সহকারী পরিচালক শামসুল কবিরের সাথে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। বিআরটিএ-এর কর্মকর্তার পক্ষে তিনি মালিক সমিতির নেতাদের সাথে লেনদেন করে থাকেন।
রাজধানী ঢাকায় ২০০১ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত ১৩ হাজার সিএনজিচালিত অটোরিকশাকে নিবন্ধন দেয় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। এসব গাড়ির আয়ুষ্কাল ধরা হয় ১৫ বছর। বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ধাপে ধাপে ২০১৮ সাল থেকে এসব গাড়ি ভাঙা শুরু করে বিআরটিএ। ইতোমধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ সব সিএনজি অটোরিকশা ভেঙে ফেলা হলেও বিআরটিএ-এর কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার গাফিলতির কারণে ৯৭টি অটোরিকশা ভাঙ্গা হয়নি। গত বৃহস্পতিবার ৯৬টি অটোরিকশা মালিকদের সামনে ধ্বংস করা হয়। বাকি একটি আগেই আগুনে পুড়ে যাওয়ায় সেটির সিদ্ধান্ত তদন্তনাধীন আছে। এই ৯৬টি অটোরিকশার ৩টি প্রতিষ্ঠানের কাছে ভাঙ্গারি হিসেবে বিক্রি করে দিয়েছে মালিক সমিতির নেতারা। নিয়ম অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট অটোরিকশার মালিক ধ্বংসকৃত অটোরিকশার মালিক। কিন্তু মালিকরা একটি টাকাও পাননি বলে জানিয়েছেন। একজন মালিক জানান, ঘটনাস্থলে ঢাকা মহানগর সিএনজি অটোরিকশা ব্যবসায়ী মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান, সিটি অটোরিকশা মালিক সমিতির সভাপতি মোতালেব হোসেন ও ঢাকা মহানগর সিএনজি অটোরিকশা ওনার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এটিএম নাজমুল হাসান উপস্থিত ছিলেন। এরা বিআরটিএ-এর দালাল বাবুর সাথে সমন্বয় করে ধ্বংসকৃত অটোরিকশাগুলো ভাঙ্গারি হিসাবে বিক্রি করে দিয়েছেন। যদিও সেখানে বিআরটিএ-এর সহকারী পরিচালক শামসুল কবির উপস্থিত ছিলেন। আরেকজন মালিক বলেন, আমরা মালিক সমিতি এবং বিআরটিএ-এর কাছে জিম্মি। ভাঙ্গারি দাবি করতে গেলে আমাদের নতুন রেজিস্ট্রেশন আটকে দিয়ে হয়রানি করবে। মিরাজ নামে একজন মালিক বলেন, এই অটোরিকশাগুলো ২০২৩ সালে প্রতিস্থাপন করার কথা ছিল। বিআরটিএ-এর তৎকালীন উপ-পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং) রফিক সাহেব এজন্য মোটা অঙ্কের ঘুষ দাবি করলে আমরা সচিব মহোদয়ের কাছে আবেদন করি। সেই থেকে এগুলোর সিদ্ধান্ত ঝুলে ছিল।
আরেকজন মালিক বলেন, আমরা ভেঙে ফেলা অটোরিকশার বডি নেয়ার বিষয়ে বিআরটিএ-এর পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং) এর সাথে কথা বলেছিলাম। তিনি বলেছিলেন, যার যার গাড়ি সে নিয়ে যাবে। কিন্তু কার্যত সমিতির নেতারা সেগুলো আমাদের চোখের সামনেই সাড়ে ১১ লাখ টাকায় বিক্রি করে দিলেন।
এদিকে, এর আগে সিএনজি অটোরিকশার আয়ুষ্কাল শেষ হয়ে যাওয়ায় নতুন করে প্রায় সাড়ে ১২ হাজার সিএনজি অটোরিকশা প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। এসব সিএনজি প্রতিস্থাপন ও মেয়াদ বাড়ানোর নামে ১১২ কোটি ৭৫ লাখ টাকার ঘুষ বাণিজ্য ও চাঁদাবাজি হয়েছে বলে দুদকে অভিযোগ করা হয়েছিল। ঢাকা মহানগর সিএনজি অটোরিকশা মালিক সমিতি ঐক্য পরিষদ ও বিআরটিএর কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ করেছিলেন ঢাকা অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হানিফ খোকন। অভিযোগে বলা হয়, সিএনজি অটোরিকশা প্রতিস্থাপনে সিএনজি অটোরিকশা ঐক্য পরিষদ ও বিআরটিএর কিছু অসাধু কর্মকর্তা গাড়িপ্রতি ৩০ হাজার টাকা থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ নিয়েছেন। এছাড়া সিএনজি অটোরিকশার ভাঙা অংশ মালিকদের না দিয়ে ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক বরকত উল্লাহ ভুলু ও সচিব এটিএম নাজমুল হাসান তা বিক্রি করে দিয়েছেন। এসব ঘুষ বাণিজ্যের পেছনে বিআরটিএর মেট্রো সার্কেল-১-এর হিসাবরক্ষক খান মোহাম্মদ রুহুল আমিন রয়েছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
অভিযোগে আরও বলা হয়, সাড়ে ১২ হাজার সিএনজি অটোরিকশা ভাঙা বাবদ গড়ে ৫০ হাজার টাকা করে ৬২ কোটি ৫০ লাখ টাকা; রেজিস্ট্রেশন বাবদ ২৫ হাজার টাকা করে ৩১ কোটি ২৫ লাখ টাকা এবং গাড়ির ভাঙা অংশ বিক্রি বাবদ ১০ হাজার টাকা করে ১২ কোটি ৫০ লাখ টাকা হাতিয়েছে চক্রটি। এছাড়া সিএনজি অটোরিকশার মেয়াদ ৫ বছর বাড়ানোর জন্য ৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা ঘুষ নেওয়া হয়েছে।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে হবে : তারেক রহমান
ঋণখেলাপিরা যাতে মনোনয়ন না পায় চেষ্টা করবো : মির্জা ফখরুল
অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর না হলে রাজনৈতিক সংস্কার টেকসই হবে না : বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি
টিসিবি’র এক কোটি ফ্যামিলি কার্ডধারীর মধ্যে ৩৭ লাখই ভুয়া: বাণিজ্য উপদেষ্টা
ভোজ্যতেলের সরবরাহ নিশ্চিতে কারখানা পরিদর্শন ভোক্তা অধিকারের
গণপরিবহনে শৃঙ্খলায় কাউন্টার স্থাপনের পরিকল্পনা
রাজধানীর তিন পার্কে ভেন্ডারের চুক্তি : শর্ত ভঙ্গের তদন্তে ডিএনসিসি
বাবা-মায়ের পুরোনো বাড়িতে যাই : শফিকুল আলম
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসায় ১৫০ কোটি টাকা অনুদান
২০২৪ সালে ৩১০ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা
ভারতীয় ৭২ গণমাধ্যমে বাংলাদেশ নিয়ে অপতথ্য প্রচার
লেবানন থেকে দেশে ফিরলেন আরো ৪৭
প্লাটফর্ম বিষয়ক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত
শক্তিশালী অর্থনীতি ও গর্বিত জাতি গড়তে শহীদ জিয়ার দর্শন ধারণ করতে হবে : আমির খসরু
কী আছে তৌফিকার লকারে?
ঘটনার তিনদিন পর থানায় মামলা
অনিয়ম ঢাকতে তড়িঘড়ি করে নির্বাচনের পাঁয়তারা
শেবাচিম হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের দুরবস্থা
৩১ দফা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে রূপগঞ্জে বিএনপির সমাবেশ
রেজিস্ট্রেশন এমপ্লয়ীজ এসোসিয়েশনের সভাপতি হেলেনা-সম্পাদক বায়েজিদ