গবর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি স্কুলে বিতর্কিতদের পদায়ন
২১ মার্চ ২০২৫, ০১:১৫ এএম | আপডেট: ২২ মার্চ ২০২৫, ০১:৪৪ এএম

রাজধানীর গবর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুলে দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষক সঙ্কট রয়েছে। প্রায় সাত মাস ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিয়ে চলছে প্রতিষ্ঠানটি। এ সঙ্কট কাটাতে অভিভাবকরা ভালো শিক্ষকদের পদায়ন ও প্রধান শিক্ষক নিয়োগের দাবি জানিয়ে আসছেন। কিন্তু তাদের দাবিকে উপেক্ষা করে উল্টো অযোগ্য-অদক্ষ এবং অনৈতিক কাজে জড়িয়ে বিভিন্ন সময়ে শাস্তিমূলক বদলি হওয়া শিক্ষকদের আবারও স্কুলটিতে ফেরানো হচ্ছে। তাদের কেউ কেউ আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গবর্নমেন্ট ল্যাবরেটরিতে টানা দেড় থেকে দুই যুগ চাকরি করেছেন।
অথচ ভোল পাল্টে তারা এখন নিজেদের বিএনপি-জামায়াতপন্থি বলে দাবি করছেন। তুলছেন বৈষম্যের শিকার হওয়ার অভিযোগ। কেউবা তদবিরের জোরে পদায়ন নিয়ে রাজধানীর নামি এ স্কুলে ফিরছেন। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ অভিভাবকরা। সম্প্রতি ১৬ সদস্যের অভিভাবকদের প্রতিনিধিদল মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালককে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
স্কুলের শিক্ষক ও অভিভাবকরা জানান, গবর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুলে শিক্ষক পদের সংখ্যা ৫৪টি। তার মধ্যে ১২টি শিক্ষক পদ শূন্য রয়েছে। ফলে বিষয়ভিত্তিক ক্লাসগুলো চালিয়ে নিতে শিক্ষকদের বেকায়দায় পড়তে হচ্ছে। তাছাড়া রাজধানীর নামি প্রতিষ্ঠানে যেমন দক্ষ ও যোগ্য শিক্ষক প্রয়োজন, তা প্রতিষ্ঠানটিতে নেই। একই সঙ্গে সহকারী প্রধান শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক পদে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। স্থায়ী প্রধান শিক্ষক না থাকায় স্কুলে বিশৃঙ্খলা বাড়ছে।
৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর গবর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুলে বিশৃঙ্খলা বেড়েছে। স্কুলে ভালো শিক্ষক হিসেবে যারা পরিচিতি, তাদের সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তারা বদলির আবেদন না করলেও আবেদন করেছেন দেখিয়ে অন্য স্কুলে বদলি করা হচ্ছে। আর তাদের স্থলে আনা হচ্ছে এ স্কুলে অনৈতিক কাজে জড়ানোর দায়ে শাস্তিমূলক বদলি করা শিক্ষকদের। সম্প্রতি মাউশির ডিজিকে দেওয়া অভিযোগে বিষয়টি তুলে ধরেছেন অভিভাবকরা।
লিখিত অভিযোগ বলা হয়েছে, সম্প্রতি মো. সোলায়মান ও ইমারত হোসেনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে তাদের বদলি করানো হয়েছে। তারা দুজনই ইংরেজির শিক্ষক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক-স্নাতকোত্তর করায় তাদের দক্ষতা ভালো। অথচ তাদের সরিয়ে সেখানে আনা হয়েছে সিকান্দার আলী নামে এক শিক্ষককে। তিনি সাধারণ বিএ ও বিএড ডিগ্রিধারী।
অভিযোগের তথ্যমতে, সিকান্দার আলী চাকরিতে যোগদানের পরপরই তদবির করে গবর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুলে পদায়ন নেন। এরপর টানা ২২ বছর তিনি একই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেছেন। ২০২১ সালে তার বিরুদ্ধে অভিভাবকরা অভিযোগ করলে তার সত্যতা পাওয়ায় তাকে শাস্তিমূলক বদলি করা হয়। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তদবির করে ল্যাবরেটরি স্কুলে দীর্ঘ সময় চাকরি করলেও ৫ আগস্টের পর তিনি হঠাৎ নিজেকে জামায়াতপন্থি হিসেবে প্রচার শুরু করেন। সম্প্রতি তিনি আবারও স্কুলটিতে পদায়ন বাগিয়ে নিয়েছেন।
নতুন করে বদলি হয়ে ল্যাবরেটরি স্কুলে আসা আরেক শিক্ষক রাফি আহম্মেদের নৈতিক স্খলনজনিত সমস্যা রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন অভিভাবকরা। লিখিত অভিযোগে রাফির ব্যাপারে অভিভাবকরা জানিয়েছেন, রাফি আহম্মেদ টানা ১৩ বছর ল্যাবরেটরি স্কুলে ছিলেন। তিনি শিক্ষার্থীদের তার কাছে প্রাইভেট পড়তে বাধ্য করতেন। ২০১৪ সালে এক ছাত্রের মায়ের সঙ্গে পরকীয়ার সম্পর্কে জড়িয়ে তাকে নিয়ে নিরুদ্দেশ হন। এ নিয়ে ওই নারীর স্বামী থানায় জিডি করেন। এ ঘটনায় রাফি আহম্মেদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ায় প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে কলাবাগান থানায় ৩ লাখ টাকা আত্মসাতের মামলা করেন রাফি। সেই মামলার তদন্তে অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ায় রাফিকে শাস্তিমূলক ঢাকার বাইরে বদলি করে মাউশি। ৫ আগস্টের পর তিনি নিজেকে জাতীয়তাবাদী ও ইসলামি মূল্যবোধে বিশ্বাসী দাবি করে ল্যাবরেটরি স্কুলে পদায়ন বাগিয়ে নেন।
মাউশিতে অভিযোগ দেওয়া অভিভাবকদের মধ্যে একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, যাদের বদলি করে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে, তারা খুব ভালো ক্লাস নিতেন। নতুন যিনি এসেছেন, তিনি ভালো ইংরেজি পড়াতে পারেন না বলে জেনেছি। আমরা তো চাই, গবর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি স্কুলে ভালো ভালো শিক্ষক থাকুক। আমাদের সন্তানরা যেন ভালোভাবে শিখতে-পড়তে পারে।
আরেকজন অভিভাবক বলেন, শিক্ষকদের নৈতিক চরিত্র ভালো হওয়াটা জরুরি। কিন্তু যাদের ব্যাপারে কথা উঠেছে, তাদের নিয়ে কোনো ভালো কথা শুনছি না। এজন্য আমরা মাউশিতে অভিযোগ করেছি। তাদের সরিয়ে যেন ভালো চরিত্রবান ও দক্ষ শিক্ষক আনা হয়।
অভিযোগের বিষয়ে শিক্ষক রাফি আহম্মেদ বলেন, বর্তমানে আমার দুটি বউ (স্ত্রী) আছে। তাদের সঙ্গে আমি সংসার করছি। বাকি ঘটনাগুলো মিথ্যা। আমি ও সিকান্দার আলী স্যার বৈষম্যের শিকার। আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।
স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. মোস্তফা শেখ বলেন, শিক্ষক সঙ্কট তো আছেই। সমস্যাও তো নানামুখি। এখানে অনেক জটিলতা। এসব নিয়ে আসলে অল্প সময়ে বা মোবাইল ফোনে কথা বলে শেষ করা যাবে না। বোঝানোও সম্ভব হবে না।
মাউশির মাধ্যমিক বিভাগের সহকারী পরিচালক এস এম জিয়াউল হায়দার হেনরী বলেন, তিন পদ্ধতিতে বদলি করা হয়। শিক্ষকের আবেদন, জনস্বার্থে ও প্রশাসনিক কারণে। কেউ যদি আবেদন না করেন, তাহলে তাকে জনস্বার্থে ও প্রশাসনিক কারণে বদলি করা হয়ে থাকে। কিন্তু আবেদন না করলেও কাউকে বদলি করা এবং তাতে তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বদলি এমনটা লেখার প্রশ্নই আসে না। হয়তো ভুলক্রমে এমনটা হতে পারে।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও






আরও পড়ুন

দেশের সব সমস্যা সংসদেই সমাধান হতে হবে : আমীর খসরু

পলাতক আসামিদের দ্রুত গ্রেফতার ও রায় কার্যকরের দাবিতে মানববন্ধন

বৈষম্যহীন সমাজ বিনির্মাণে স্কাউট আন্দোলন ছড়িয়ে দিতে হবে

দেশ ও দশের মঙ্গলে আল্লাহর একত্ববাদ ও আমলের ওপর ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের দৃঢ় থাকতে হবে

মোরেলগঞ্জের সেই ২৮ ইঞ্চির মিলির বাড়িতে ঈদ উপহার নিয়ে হাজির উপজেলা প্রশাসন

শহীদ জিয়া শিক্ষাবৃত্তি পেলেন মেধাবীরা

কর্ণফুলীতে হাতির উৎপাত বন্ধে ফের সড়ক অবরোধ

বেনাপোলে দেড় কোটি টাকার চোরাই পণ্য জব্দ

মিথ্যাচার গুজব আর ষড়যন্ত্র আওয়ামী লীগের মূলমন্ত্র : হাসান সরকার

আ.লীগের নেতাকর্মীরা শরণার্থী মুক্তিযোদ্ধা আর বিএনপি রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা : খায়রুল কবির খোকন

সুইসাইড ড্রোন পরীক্ষায় তদারকি করলেন কিম

হামাসবিরোধী বড় বিক্ষোভ গাজায়

তুর্কি শিক্ষার্থীকে তুলে নিল মার্কিন পুলিশ

পাকিস্তানে নিহত ১৩

সৈন্য নিখোঁজ

স্বাধীনতা দিবসে ক্যালিফোর্নিয়া বিএনপির আলোচনা সভা

তারেক রহমানের অর্থনৈতিক উন্নয়ন পলিসি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের পাইলট প্রকল্প

বিশিষ্টজনদের সম্মানে 'কমলনগর প্রেসক্লাবের' ইফতার

নাঙ্গলকোটে পুকুরে ডুবে খালাতো ২ ভাই-বোনের মৃত্যু

শিক্ষক নিবন্ধনে নারী কোটা