অস্তিত্ব সংকটে মাদারীপুরের নদ-নদীগুলো
১০ মার্চ ২০২৩, ০৭:৪০ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ১০:৩৯ পিএম
মাদারীপুরের ৭টি প্রধান নদ-নদী পদ্মা, আড়িয়াল খাঁ, পালরদী, কুমার, নিম্নকুমার, টরকী ও ময়নাকাটার এখন বেহাল দশা। জেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া এই সাতটি নদীর কোথাও নাব্য সংকট আবার কোথাও দখল আর দূষণে অস্তিত্ব ঝুঁকিতে।
কুমার ও আড়িয়াল খাঁ নদের তীরেই গড়ে উঠেছে মাদারীপুর শহর। কুমার নদে বালু ফেলে দখল করে অবৈধ বাড়িঘর, দোকানপাট, করাতকল ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বসবাস করছেন পাঁচ শতাধিক দখলদার। দখলদারের সংখ্যা বাড়ছেই, প্রশাসনের নজর নেই।
শিবচরের ময়নাকাটা নদী এখন অস্তিত্বহীন। ময়নাকাটার বুকজুড়ে ফসলের আবাদ। অন্যদিকে কালকিনির টরকী ও পালরদীরও একই দশা। বর্ষায় দু-তিন মাস পানি থাকলেও বাকি সময় থাকে কোথাও হাঁটু পানি কোথাও ফসলের মাঠ। আড়িয়াল খাঁয় জেগে উঠেছে নতুন নতুন চর।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মাদারীপুর জেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া পদ্মা, আড়িয়াল খাঁ, পালরদী, কুমার, নিম্নকুমার, টরকী ও ময়নাকাটার ১৪০ কি. মি. নদ-নদী শুকিয়ে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। এসব নদ-নদী ধীরে ধীরে মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে জেলার নদীবন্দর ও লঞ্চঘাটগুলো। ফলে ভাটা পড়েছে ব্যবসা বাণিজ্যে।
এক সময় নদ-নদী আর বিল-বাওড়ের জনপদ হিসেবে খ্যাত ছিল মাদারীপুর। পদ্মা, আড়িয়ালখাঁ, নিম্নকুমার, ময়নাকাটা ও পালরদী এ জেলার প্রধান নদ-নদী। এছাড়া বাঘিয়ার বিল, লখন্ডার বিল, পিতাম্বর বিল, শশীকর বিল, গৈদির বিল, জয়ার বিল, জুয়ারিয়ার বাওড়, পাঁচখোলার বাওড়, বিল পদ্মার মত বড় বড় বিল-বাওড় ছিল জেলার সম্পদ। এসব নদ-নদী, বিল বাওড় শুকিয়ে বর্তমানে সরু খালে পরিণত হয়েছে।
চল্লিশ থেকে ষাটের দশকের মধ্যে জেলার প্রায় ১৪০ বর্গ কিলোমিটার নদী সম্পূর্ণ শুকিয়ে গেছে। অস্তিত্ব সংকটে কোনমতে টিকে আছে নদ-নদী শুকিয়ে যাওয়া সরু খালগুলো। ১৯৫১ থেকে ১৯৫৩ সালের মধ্যে সম্পূর্ণ শুকিয়ে যায় মাদারীপুর-টেকেরহাট নৌপথের নিম্নকুমার নদের ১৮ কি. মি.। প্রায় ৬৬ বছর পর বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে নিম্নকুমার নদ ড্রেজিং করে টেকেরহাটের মূল কুমার নদের সঙ্গে সংযোগ করে দেওয়া হয়েছে। আবার এই নদে শুরু হয় জোয়ার-ভাটা। ছয় দশক পর বর্তমানে সেখান দিয়ে নৌকা-ট্রলার চলাচল করছে। তবে লঞ্চ বা বড় ধরনের কোন নৌযান চলাচল করতে পারে না। নদ-নদী শুকিয়ে যাওয়ার মত প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে প্রতি বছর সামান্য বন্যায় ডুবে যায় এ জনপদ। ব্যাপক ফসল হানি ঘটে। ধ্বংস হয়ে যায় কোটি-কোটি টাকার সম্পদ। সৃষ্টি হয় স্থায়ী জলাবদ্ধতা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মাদারীপুর শহরের রাস্তি গ্রামের কুমার নদের জমি দখল করে বাদল মোল্লা নামের এক দখলদার পাকা স্থাপনা নির্মাণ করেছেন। বাদল মোল্লার দাবি- তিনি এই জমি কিনে স্থাপনা নির্মাণ করেছেন। তবে সে জমি কেনার কোন দলিল বা কাগজপত্র দেখাতে পারেনি।
দু'জন প্রভাবশালীর থেকে তিনি দখল নিয়েছেন বলে স্থানীয় এক ব্যবসায়ী জানান। যেহেতু যারা বিক্রি করেছে তাদের কোন কাগজ বা দলিল নেই তাই তারা মৌখিক ভাবে পজিশন জমি বিক্রি করেছেন বলে জানান বাদল মোল্লা।
সরকারি জমিতে পাকা স্থাপনা নির্মাণের ব্যাপারে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কারো অনুমতি নিয়েছেন কি না?- এমন প্রশ্নের কোন জবাব দেননি নির্মাতা।
তবে এ ব্যাপারে দখলদার বাদল মোল্লা বলেন, আমাদের কেনা সম্পত্তি এখানে আছে। তারপরও যদি সরকারি জমিতে ঘর করে থাকি, তাহলে সরকার চাইলে ভেঙে দেব।
অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, বাদল মোল্লা ছাড়াও বাদশা বেপারী, রুপাই, সুফিয়া বেগম, বাচ্চু বেপারী, আনোয়ারসহ অনেকে দখলকৃত জমিতে স্থাপনা নির্মাণ করে বসবাস ও ব্যবসা বাণিজ্য করছেস। পূর্ব রাস্তি মৌজার ২৯৪ নম্বর খতিয়ানের এসএ ৯৯০ নম্বর দাগের ৩ একর জমির মধ্যে ২ একর ২০ শতাংশ জমি বিভিন্ন মালিকের নামে রেকর্ড রয়েছে এবং তারা ভোগ দখলে রয়েছেন। ওই ৩ একরের মধ্যে ৮০ শতাংশ ও অন্যান্য দাগের প্রায় ৪ একরসহ প্রায় ৫ একর জমি নদী সিকস্তী হিসাবে ১/১ খতিয়ানে সরকারের নামে বিআরএস এর মাঠ জরিপে রেকর্ডভুক্ত করা হয়।
অভিযোগ রযেছে, স্থানীয় প্রভাবশালী ১৬ জনের একটি গ্রুপ নদী সিকস্তী জমি ভরাট করে বিভিন্ন লোকের কাছে দলিলবিহীন দখল দিয়ে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
মাদারীপুর বিসিক শিল্প নগরীর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিল্প মালিক ও ব্যবসায়ীরা জানান, রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় কুমার পাঁচ শতাধিক দখলদার কুমার নদের ভরাটকৃত অংশে প্রায় পাঁচ একর জমি দখল করে বাড়িঘর, দোকানপাট, করাতকল ও বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বসবাস করছে। ক্রমাগত দখলদারের সংখ্যা বাড়লেও প্রশাসন এ ব্যাপারে নজর দিচ্ছে না।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন বলেন, শুধু বিসিকের পাশে নয় কুমার নদের দুই পাড়েই কিছু দখলদার বিভিন্ন সময় ধরেই এ স্থাপনাগুলো নির্মাণ করে আসছে। দখলকৃত জমিতে বেশ কিছু স’মিল, বাড়িঘর, আড়তঘরসহ বিভিন্ন স্থাপনা রয়েছে। জেলার যেসব নদীর পাড় দখলের মাধ্যমে অবৈধ স্থাপনা করে নদীর স্বাভাবিক গতিপথ বাধাগ্রস্ত করছে। আমরা অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদে যা করার সবই করবো।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
কিশোরগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার কামালসহ তিনজন গ্রেফতার
প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ
বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত
উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ
গাজায় যুদ্ধবিরতি ছাড়া বন্দী বিনিময় হবে না : হামাস
শান্তিরক্ষা মিশন মোতায়েন করতে চায় জাতিসংঘ হাইতিতে
চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক
পুতিন পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে দ্বিধা করবেন না : সার্বিয়া
ক্লাইমেট অর্থায়ন ইস্যুতে দেশগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব
লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু
ট্রাম্পের অ্যাটর্নির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন আটকে গেল
‘ফিলিস্তিনের পর ইরান, সউদী ও তুরস্ক হবে পরবর্তী টার্গেট’
প্রতি বছর ৩ লাখ নথিবিহীন অভিবাসীকে বৈধতা দানের ঘোষণা স্পেনের
প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে সবচেয়ে অসুখী দেশ জাপান-কোরিয়া
মুসলিম চিকিৎসক
শীর্ষে দিল্লি
সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা
ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা
বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান
মানসিক সুস্থতায় কর্মবিরতি