বিস্মৃত ব্যক্তিত্ব সৈয়দ আসাদউদ্দৌলা শিরাজী কামরুল হাসান আকাশ

Daily Inqilab ইনকিলাব

২৫ মার্চ ২০২৩, ০৩:১৬ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ১১:২৮ পিএম

সৈয়দ আসাদউদ্দৌলা শিরাজী ছিলেন সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী’র (১৮৮০-১৯৩১) সাত সন্তানের মধ্যে দ্বিতীয় এবং পুত্রদের মধ্যে জ্যেষ্ঠ। ১৯০৮ সালের ১৯ মে সিরাজগঞ্জের বাণীকুঞ্জে তিনি জন্মগ্রহন করেন। বর্ণাঢ্য ও বিচিত্র এক জীবন ছিলো তার। তিনি সবসময় একজন সুবক্তা ও বিদ্রোহী নেতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তিনি একাধারে ছিলেন বৃটিশ বিরোধী কর্মী এবং তৎকালীন অখন্ড ভারতের “নিখিল ভারত মুসলিম লীগ” নেতা, কবি, অনলবর্ষী বক্তা, সুফি সাধক, গজল রচয়িতা।

১৯১৯ সালের “জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকান্ডে”র ৮ম বর্ষপূর্তী’র স্মরণ সভায় জ্বালাময়ী বক্তব্য রাখার অপরাধে ১৯২৭ সালে প্রথমবার তিনি গ্রেফতার হন। এরপর ১৯৪৭ সালের দেশবিভাগের পূর্ব পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে রাজদ্রোহিতার অপরাধে বৃটিশ আমলে ২০ বছরে ১২ বছর কারাভোগ করেন। বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে তিনি যেমন অংশ নিয়েছেন। তেমনি বৃটিশ শাসনাবসানের পর তৎকালীন নবরাষ্ট্র পাকিস্তানের শাসন- শোষনের বিরুদ্ধেও সোচ্চার থেকেছেন।দেশভাগের পর পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীর গোঁয়ার্তুমির বিরুদ্ধে তিনি বলিষ্ঠ ভূমিকা গ্রহণ করেন। তিনি ভাষা আন্দোলনের পক্ষেও জোরালো বক্তব্য রাখেন। সেই সময়ের জনপ্রিয় নেতা হোসেন শহীদ সোহরওয়ার্দী’র (১৮৯২-১৯৬৩) অনুরোধে নবগঠিত রাজনৈতিক দল “আওয়ামী মুসলিম লীগে” যোগদান করেন। যুক্তফ্রন্ট (১৯৫৪-১৯৫৬) সরকার ভেঙে যাওয়ার পর তিনি আপোষহীন নীতির কারনে দলের অনেকেরই বিরাগভাজন হন। ফলে সেই দলও ত্যাগ করেন। এরপর পূনরায় তিনি ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগে যোগ দেন। তবে কখনই তিনি মুসলিম লীগ নেতৃবৃন্দের একচোখানীতি মেনে নিতে পারেন নি। তাই সর্বদা মুসলিম লীগের সাথে তিনি দুরত্ব বজায় রেখে চলতেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে পরিবারের সুরক্ষার কথা ভেবে সকলকে নিয়ে তিনি গ্রামে চলে যান। কিন্তু পাকিস্তানী সেনাবাহিনী সেইসময় তার সাথে যোগাযোগ করে শহরে আসতে বলে। তার অনুপস্থিতিতে এলাকায় বা তার পরিবারের কোন ক্ষতি হবে না বলে প্রতিশ্রুতি দেয়। যদিও সেই প্রতিশ্রুতি কখনই পাকিস্তানী আর্মি রক্ষা করেনি। এরই মধ্যে স্থানীয় কিছু মানুষ ও আত্মীয়-স্বজনের ষড়যন্ত্রের স্বীকার হন তিনি। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পূর্বে ১৩ ডিসেম্বর কিছু মানুষ তার বাড়িতে হামলা চালায়, লুটপাট করে এবং তাকে ধরে নিয়ে যায়। এর ১০ দিন পর ২৪ ডিসেম্বর জানা যায়, তাকে যমুনা’র চরে ১৪ ডিসেম্বর গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।

তার অনেক লিখা মুক্তিযুদ্ধের সময় হারিয়ে গেছে। তবে তার যে গ্রন্থগুলোর সন্ধান পাওয়া গেছে। সেগুলো হলো- গদ্যগ্রন্থ- আমাদের তপস্যা (১৯৫৬), খোৎবা (১৯৬৭), প্রবন্ধমালা (১৯৭১)। গজলগ্রন্থ- সেতার (১৯৪৬), নজরানা (১৯৫০), কিশতী (১৯৫৬), ঝড়ের বাঁশি (১৯৬৮)। কাব্যগ্রন্থ- তূর্যনাদ (১৯৬৮)। এছাড়াও বিপ্লবী তরুন এবং আসাম ডাকিতেছে (বৃটিশ আমলে বাজেয়াপ্ত), দু’টি গদ্যগ্রন্থ পরে আর মুদ্রিত হয়নি। সন্ধানও পাওয়া যায়নি।

তার লিখা অসংখ্য গানের মধ্যে জনপ্রিয় ইসলামিক গান “ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে/ রইবো না আর বেশিদিন তোদের মাঝারে”। যা তিনি সুর সংযোজনও করেন। তবে তা পরবর্তীকালে গীতিকার হিসেবে মনিরুজ্জামান মনিরের নাম এবং সুরকার হিসেবে আলম খানের নামে পরিচিতি লাভ করেছিল। ১৯৭৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত 'প্রাণ সজনী' চলচ্চিত্রের সঙ্গীত হিসেবেও গানটি ব্যবহৃত হয়েছিল। কিন্তু, এ গানের আসল গীতিকার হচ্ছেন সৈয়দ আসাদউদ্দৌলা শিরাজী। যা তার মেয়ে সৈয়দা গুলরুখ মহল শিরাজী তথ্যপ্রমাণ দিয়ে জানিয়েছিলেন, গানটি আসাদউদ্দৌলা শিরাজীর মাজারে দীর্ঘদিন থেকে পরিবেশিত হয়ে আসছে। প্রমাণ হিসেবে এর একটি ভিডিও চিত্র কপিরাইট অফিসে দাখিল করেছিলেন তিনি। সৈয়দ আসাদউদ্দৌলা শিরাজী'র একটি গ্রন্থেও গানটি রয়েছে বলে জানিয়েছিলেন তিনি। তার আবেদনের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ কপিরাইট অফিস “ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে” গানের গীতিকার হিসেবে সৈয়দ আসাদউদ্দৌলা শিরাজীকে কপিরাইট স্বীকৃতি সনদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কপিরাইট অফিসের মতে, "আমাদের সবকিছু ঠিকঠাক হয়ে আছে। তার মেয়ে বিদেশে থাকায় নিতে আসেননি। এলেই দিয়ে দেব"। ''এ বিষয়ে মনিরুজ্জামান মনিরের কাছে কপিরাইট অফিস থেকে ব্যাখ্যা চাইলে তিনি জানিয়েছিলেন যে, তিনি নিজেকে গানটির গীতিকার হিসেবে দাবি করেন না। সুরকার আলম খানও (১৯৪৪-২০২২) মনিরুজ্জামানের পক্ষে কোনো বক্তব্য দেননি।'' সুরকার হিসেবে আলম খানের নাম এখনও রয়েছে। তিনি সুরকারের স্বত্ব দাবি করেছিলেন। কেননা, তিনি সিনেমার পরিচালকের কাছ থেকে গানের কথা পেয়ে সুরারোপ করেছিলেন। সৈয়দ আসাদউদ্দৌলা শিরাজী রচনাবলী গ্রন্থটিতে "ঝড়ের বাঁশি" গ্রন্থ ও গানটির উল্লেখ রয়েছ। যা সম্পাদনা করেছিলেন, হোসেন মাহমুদ এবং সৈয়দ শামীম শিরাজী।


বিভাগ : বাংলাদেশ


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

পিরোজপুর প্রেসক্লাব নির্বাচন শামীম সভাপতি ও তানভীর সম্পাদক
পাবনার আমিনপুরে মুক্তিযোদ্ধার বাড়িতে আগুন, শঙ্কিত পরিবার
বিএনপির দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজে লিপ্ত হলে কাউকে ছাড় নয়: শাহ সুলতান খোকন
কিশোরগঞ্জে দুই নারীর রহস্যজনক মৃত্যু, গ্রেফতার-১
কোরআন শিক্ষার মাধ্যমেই সমাজ ব্যবস্থার পরিবর্তন করা সম্ভব- মামুনুল হক
আরও

আরও পড়ুন

বোলারদের নৈপুণ্যে অল্প টার্গেটেও স্বপ্ন দেখছে পাকিস্তান

বোলারদের নৈপুণ্যে অল্প টার্গেটেও স্বপ্ন দেখছে পাকিস্তান

৩১ দফা রাষ্ট্র কাঠামোর বার্তা মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে: আমিনুল হক

৩১ দফা রাষ্ট্র কাঠামোর বার্তা মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে: আমিনুল হক

পিরোজপুর প্রেসক্লাব নির্বাচন শামীম সভাপতি ও তানভীর সম্পাদক

পিরোজপুর প্রেসক্লাব নির্বাচন শামীম সভাপতি ও তানভীর সম্পাদক

বিরক্তিকর সময়কে গুডবাই বলুন! এন্টি ডোট হিসেবে সেরা অ্যাপ (পর্ব-১)

বিরক্তিকর সময়কে গুডবাই বলুন! এন্টি ডোট হিসেবে সেরা অ্যাপ (পর্ব-১)

দেশের বিরাজমান সংকট উত্তরণে জাতির আস্থা তারেক রহমান : মীর হেলাল

দেশের বিরাজমান সংকট উত্তরণে জাতির আস্থা তারেক রহমান : মীর হেলাল

টোল প্লাজায় দুর্ঘটনা: বাসের ব্রেকে সমস্যা ছিল, চালক নেশা করতেন

টোল প্লাজায় দুর্ঘটনা: বাসের ব্রেকে সমস্যা ছিল, চালক নেশা করতেন

পাবনার আমিনপুরে মুক্তিযোদ্ধার বাড়িতে আগুন, শঙ্কিত পরিবার

পাবনার আমিনপুরে মুক্তিযোদ্ধার বাড়িতে আগুন, শঙ্কিত পরিবার

দেশে এলো ভিভোর নতুন ফ্ল্যাগশিপ এক্স২০০

দেশে এলো ভিভোর নতুন ফ্ল্যাগশিপ এক্স২০০

বিএনপির দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজে লিপ্ত হলে কাউকে ছাড় নয়: শাহ সুলতান খোকন

বিএনপির দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজে লিপ্ত হলে কাউকে ছাড় নয়: শাহ সুলতান খোকন

সচিবালয়ে অস্থায়ী প্রবেশ পাসের জন্য বিশেষ সেল গঠন

সচিবালয়ে অস্থায়ী প্রবেশ পাসের জন্য বিশেষ সেল গঠন

যুদ্ধের দামামা, তালেবানের পাল্টা হামলায় ১৯ পাকিস্তানি সেনা নিহত

যুদ্ধের দামামা, তালেবানের পাল্টা হামলায় ১৯ পাকিস্তানি সেনা নিহত

ফিরে দেখা ২০২৪: ফুটবলে ঘটনাবহুল বছর

ফিরে দেখা ২০২৪: ফুটবলে ঘটনাবহুল বছর

বড় চমক অ্যাপলের, জ্বর ও হার্ট অ্যাটাকের আগেই সতর্ক করবে ইয়ারবাডস

বড় চমক অ্যাপলের, জ্বর ও হার্ট অ্যাটাকের আগেই সতর্ক করবে ইয়ারবাডস

রাস্তাটি সংস্কার করুন

রাস্তাটি সংস্কার করুন

থার্টি ফাস্ট নাইট এবং প্রাসঙ্গিক কথা

থার্টি ফাস্ট নাইট এবং প্রাসঙ্গিক কথা

ইসলামী শক্তির সম্ভাবনা কতটা

ইসলামী শক্তির সম্ভাবনা কতটা

কিশোরগঞ্জে দুই নারীর রহস্যজনক মৃত্যু, গ্রেফতার-১

কিশোরগঞ্জে দুই নারীর রহস্যজনক মৃত্যু, গ্রেফতার-১

সাধারণ মানুষের স্বস্তি নিশ্চিত করা জরুরি

সাধারণ মানুষের স্বস্তি নিশ্চিত করা জরুরি

দেশের পরিস্থিতি ঠিক না হলে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

দেশের পরিস্থিতি ঠিক না হলে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

অনুপ্রবেশকারীদের টার্গেট নরসিংপুর সীমান্ত!

অনুপ্রবেশকারীদের টার্গেট নরসিংপুর সীমান্ত!