ঢাকা   শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৬ আশ্বিন ১৪৩১
নিত্যপণ্যের অস্বভাবিক মূল্য বৃদ্ধি সহ অর্থনৈতিক টানাপোড়েন

হতাশা আর দীর্ঘশ্বাসে ভর করে দক্ষিণাঞ্চলে এবারো ঈদ আসছে

Daily Inqilab নাছিম উল আলম

১৮ এপ্রিল ২০২৩, ০১:৩০ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ১১:০৬ পিএম

নিত্যপণ্যের অস্বভাবিক মূল্য বৃদ্ধি সহ অর্থনৈতিক টানাপোড়েনের মধ্যে আরেকটি ঈদ দরজায় কড়া নাড়লেও এবার সর্ববৃহত এ ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠানে দক্ষিণাঞ্চলে উৎসবের আমেজ এখনো অনেকটাই অনুপস্থিত। ঈদের বাজারে করোনা পূর্বকালীন সময়ের চীরচেনা ভীড় এবারো অনুপস্থিত। এমনকি ঈদকে সামনে রেখে বিগত বছরগুলোতে রাজধানী সহ সারা দেশ থেকে সড়ক, নৌ ও আকাশ পথে দক্ষিণাঞ্চলে যেখানে অন্তত ১০ লাখ মানুষের যাতায়াত ছিল নিশ্চিত, আবার তাও অনেকটাই অনুপস্থিত।
নৌপথে যাত্রী সংকটে কোন বিশেষ সার্ভিস দুরের কথা, স্বাভাবিক সময়ের নৌযানের অর্ধেকও যাত্রী মিলছে না। সড়ক পথেও নামি দামী কোম্পানীগুলোর কোন বিশেষ বাস সার্ভিস নেই। এমনকি নামি কোম্পানীগুলো এবার বাড়তি ভাড়ার পরিবর্তে স্বাভবাবিক সময়ের ভাড়াতেও ১৮ এপ্রিল থেকে ঈদের দিন পর্যন্ত টিকেট বিক্রী করতে পারলেও ঈদ পরবর্তি কয়েকদিন এখনো সিট খালি আছে। আকাশ পথেও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স সপ্তাহে ৩দিনের পরিবর্তে ঈদের আগের ৩দিন বিশেষ ফ্লাইট চালালেও বেসরকারী দুটি উড়ান সংস্থা নিয়মিত ফ্লাইটেই সীমাবদ্ধ থাকছে। আর রাষ্ট্রীয় নৌ-বানিজ্য প্রতিষ্ঠান-বিআইডব্লিউটিসি তার ব্যার্থতা ও উদাশীনতার উদাহরন এবারো অব্যাহত রেখেছে। মাথাভাড়ি প্রশাসনের এ সংস্থাটি করোনা সংকটের আগে থেকেই রাজধানীর সাথে দক্ষিণাঞ্চলে নৌ যোগাযোগ সংকুচিত করেছে। গত ২৭ জুন পদ্মা সেতু খুলে দেয়ার আগেই সংস্থটির যাত্রী সেবা প্রায় সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেয়া হয়। এমনকি গত বছর ঈদ উল আজহার সময়ও সংস্থাটি রাজধানীর সাথে দক্ষিণাঞ্চলে যাত্রী পরিবহনে কোন নৌযান নিয়োগ করেনি। নৌযানের কোন সংকট না থাকলেও এবার ঈদের আগে শুধুমাত্র মঙ্গলবার ও শুক্রবার ঢাকা থেকে বরিশাল হয়ে দক্ষিণাঞ্চলের দুটি স্টিমার সার্ভিস পরিচালনা করছে সংস্থাটি। নিয়মিত সব সার্ভিস আগের মতই বন্ধ।
করেনা মহামারীর বৈশি^ক সংকটের রেশ ধরে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষও গত ৩টি বছরের ঈদ পালনে অনেকটা কঠিন সময় পাড় করার পরে গত এক বছরে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি নি¤œ-মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের কাছে খুশির পরিবর্তে কষ্টের উৎসবে পরিনত হয়েছে। আয়ের উৎস সংকুচিত হবার মধ্যে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি নি¤œ-মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য চরম সংকট সৃষ্টি করলেও তা থেকে উত্তরনের কোন পথ কারো জানা নেই। আর এরই মাঝে প্রধান ধর্মীয় উৎসব এলেও সাধ আর সাধ্যের বিস্তর ব্যাবধানে এবার অভিভাবক মহলে হতাশার সাথে দুঃখকেই চাপা রাখতে হচ্ছে।
রমজানের ইফতারীর প্রতিটি অনুষঙ্গের মূল্য বৃদ্ধি সাধারন মানুষকে যেভাবে কষ্ট দিয়েছে, তা নিকট অতীতেও ছিল অতুলনীয়। কিন্তু এখনো ভোজ্য তেল, চিনি, লবন, পোলাওর চাল, মুরগী এবং গরু ও খাশির গোসত সহ ঈদের খাবারের প্রতিটি সামগ্রীর আকাশ ছোয়া মূল্যবৃদ্ধি সাধারন মানুষকে যথেষ্ঠ দূর্ভোগে রেখেছে। এবার খাবারের যোগাড় করতেই নি¤œ-মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর ঈদ বাজেটের পুরোটাই খরচ হয়ে যাচ্ছে। সেখান পরিবার পরিজনের নতুন পোষাক সহ আনুষাঙ্গিক খরচের প্রশ্ন অনেকের কাছেই অবান্তর হলেও চাপা দুঃখেও পরিনত হয়েছে। বছরের প্রধান ধর্মীয় উৎসবের সময় সন্তান সন্ততির গায়ে নতুন পোষাক না দেখে অনেক বাবা-মাকেও এবার বুক ভরা কষ্ট চেপে রাখতে হবে বলে জানিয়েছেন একাধিক অভিভাবক।
বরিশাল মহানগরীর প্রধান বানিজ্যিক এলাকা চকবাজার, গীর্জা মহল্লা, সদর রোড, ফজলুল হক এভেনিউ ও পুলিশ লাইন্স সড়কের তৈরী পোষাকের দোকানীরা এবারো হতশা আর দীর্ঘশ^াস চেপে রাখতে পারছেন না। চকবাজারের দোকানী সাইফুল জানালেন, গত ৩টি বছর অনেক কষ্টে কাটাবার পরে এবার ভাল বেচাকেনার আশাছিল, কিন্তু জিনিসপত্রের দাম যা বেড়েছে, তাতে সব কিছুই বাদ। খাবার যোগার করতেই সব টাকা শেষ হয়ে যাচ্ছে। ফলে মানুষ খাবে না ছেলে মেয়ের কাপড় কেনবে। ফলে এবারো বেচা বিক্রী গত তিন বছরের খড়া কাটিয়ে উঠতে পারছে না, বলে জানালেন তিনি।
একই চিত্র বরিশাল মহানগরীর সব বিপনি সহ দক্ষিণাঞ্চলের সর্বত্র। ফলে হতশা আর দীর্ঘশ^াসে ভর করেই দক্ষিণাঞ্চলে এবারের ঈদ আসছে। ১৮-৪-২০২৩.

সবচেয়ে বড় ধর্মীয় ও সমিাজিক উৎসব ঈদ উল ফিতর দরজায় কড়া নাড়লেও বরিশালের প্রধান বিপনী বিতান চকবাজারে এখনো ক্রেতাদের লক্ষণীয় ভিড় নেই।


বিভাগ : বাংলাদেশ


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামানগ্লোবাল ইসলামিক ফাইন্যান্স অ্যাওর্য়াডস পেল ইসলামী ব্যংক

কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামানগ্লোবাল ইসলামিক ফাইন্যান্স অ্যাওর্য়াডস পেল ইসলামী ব্যংক

কোন শ্রমিক তার কারখানার ক্ষতি করবে না: শ্রম সচিব

কোন শ্রমিক তার কারখানার ক্ষতি করবে না: শ্রম সচিব

নাঙ্গলকোটে প্রাথমিক শিক্ষা পদকে শ্রেষ্ঠ হয়েছেন যারা

নাঙ্গলকোটে প্রাথমিক শিক্ষা পদকে শ্রেষ্ঠ হয়েছেন যারা

সিলেটে বজ্রপাতে পৃথক স্থানে নিহত ২

সিলেটে বজ্রপাতে পৃথক স্থানে নিহত ২

আ'লীগের চিহ্নিত সুবিধাভোগী সিলেট করিমউল্লাহ মার্কেট মালিকপক্ষের প্রতারণার শিকার এক যুক্তরাজ্য প্রবাসীর আর্তনাদ !

আ'লীগের চিহ্নিত সুবিধাভোগী সিলেট করিমউল্লাহ মার্কেট মালিকপক্ষের প্রতারণার শিকার এক যুক্তরাজ্য প্রবাসীর আর্তনাদ !

জুলাই-আগষ্ট বিপ্লবে শহিদ ছাত্র-জনতা চোখে আঙুল দিয়ে অনেক কিছু দেখিয়ে গেছেন-বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজি

জুলাই-আগষ্ট বিপ্লবে শহিদ ছাত্র-জনতা চোখে আঙুল দিয়ে অনেক কিছু দেখিয়ে গেছেন-বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজি

লৌহজংয়ে বিএনপির বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত

লৌহজংয়ে বিএনপির বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত

শান্তর ফিফটির পর দিনের খেলার ইতি

শান্তর ফিফটির পর দিনের খেলার ইতি

নিউইয়র্কে বৈঠকে বসছেন তৌহিদ-জয়শঙ্কর

নিউইয়র্কে বৈঠকে বসছেন তৌহিদ-জয়শঙ্কর

ছক্কা হাঁকানোর পরের বলেই আউট মুশফিক

ছক্কা হাঁকানোর পরের বলেই আউট মুশফিক

ঝাড়খন্ডে কথিত বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য অমিত শাহের

ঝাড়খন্ডে কথিত বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য অমিত শাহের

মুমিনুলকেও হারিয়ে বিপদে বাংলাদেশ

মুমিনুলকেও হারিয়ে বিপদে বাংলাদেশ

রাবির মাদার বখ্শ হলের পানির ট্যাংক থেকে উদ্ধার হলো দেশীয় অস্ত্র

রাবির মাদার বখ্শ হলের পানির ট্যাংক থেকে উদ্ধার হলো দেশীয় অস্ত্র

জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ড. ইউনূসের ভাষণ ২৭ সেপ্টেম্বর

জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ড. ইউনূসের ভাষণ ২৭ সেপ্টেম্বর

ঢাবির হত্যার ঘটনায় প্রভোস্টকে অব্যাহতি

ঢাবির হত্যার ঘটনায় প্রভোস্টকে অব্যাহতি

আইন-শৃঙ্খলা অবনতির চেষ্টা করলে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না: রাঙামাটিতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

আইন-শৃঙ্খলা অবনতির চেষ্টা করলে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না: রাঙামাটিতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

মেক্সিকোতে মাদক কারবারিদের মধ্যে সংঘর্ষে দুই সপ্তাহে নিহত ৫৩

মেক্সিকোতে মাদক কারবারিদের মধ্যে সংঘর্ষে দুই সপ্তাহে নিহত ৫৩

বিদ্যুৎ সাত-আট ঘণ্টা পর্যন্ত গ্রামে থাকে না

বিদ্যুৎ সাত-আট ঘণ্টা পর্যন্ত গ্রামে থাকে না

দুর্গাপূজায় ভারতে ৩ হাজার টন ইলিশ রপ্তানির সিদ্ধান্ত

দুর্গাপূজায় ভারতে ৩ হাজার টন ইলিশ রপ্তানির সিদ্ধান্ত

জাকিরের পর ফিরলেন সাদমানও

জাকিরের পর ফিরলেন সাদমানও