ঢাকার পরে কক্সবাজারে ডেঙ্গুর থাবা, রোহিঙ্গা ক্যাম্প হয়ে উঠেছে ডেঙ্গুর 'হটস্পট'
১৯ জুলাই ২০২৩, ০৫:৫৪ পিএম | আপডেট: ১৯ জুলাই ২০২৩, ০৫:৫৪ পিএম
ঢাকার পরে পর্যটন নগরী কক্সবাজারে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে আক্রান্তের পাশাপাশি বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। দেড় মাসে মৃত্যু হয়েছে ৪ জন রোহিঙ্গার। স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, প্রজনন মৌসুমের পাশাপাশি কক্সবাজারে প্রতিদিন দেশের নানা এলাকার মানুষের আনাগোনা থাকায় ডেঙ্গু সংক্রমণ বেড়েছে।
ঢাকার পর দেশে সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু রোগী কক্সবাজারে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েই চলেছে। চলতি বছরেও ২ হাজারের বেশি ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে।
কক্সবাজারে ২৩ লাখ স্থানীয় বাসিন্দাদের পাশাপাশি উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি ক্যাম্পে বসবাস করছে ১২ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী। ঘন বসতিপূর্ণ রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে অসংখ্য নালা-নর্দমা এবং যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনার কারণে বর্ষায় প্রজনন মৌসুমে ডেঙ্গুর সংক্রমণ বেড়েই চলছে। এতে রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি আক্রান্ত হচ্ছেন স্থানীয়রাও। উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্প হয়ে উঠেছে ডেঙ্গুর হটস্পট।
কক্সবাজার সিভিল সার্জন কার্যালয়ের পরিসংখ্যানবিদ পংকজ পালের ১৮-জুলাই-২৩ তারিখে দেওয়া তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় নতুন করে ৬৬৮ ডেঙ্গুরোগী শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে রোহিঙ্গা ৬১৯ জন। বাকি ৪৯ জন স্থানীয় বাঙালি। এ নিয়ে চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১৭ জুলাই পর্যন্ত কক্সবাজার জেলায় মোট ২ হাজার ৮৪১ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে। তিনি আরো যোগ করেন, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে গত সোমবার পর্যন্ত উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পকেন্দ্রিক ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ২ হাজার ৬৭৬ জন। যেখানে ২ হাজার ৫২১ জন রোহিঙ্গা ও ১৫৫ জন স্থানীয় বাঙালি। গত রবিবার পর্যন্ত মোট আক্রান্ত ছিল ২ হাজার ২৩ জন। যেখানে রোহিঙ্গা ছিল ১ হাজার ৯০৫ জন এবং ১১৮ জন ছিল স্থানীয় বাঙালি।
পরিসংখ্যানবিদ আরো জানান, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পাঁচটি এলাকা ডেঙ্গুর জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এর মধ্যে এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৩ নম্বর ক্যাম্পে ৬২০ জন, ১৭ নম্বর ক্যাম্পে ১৭১ জন, ৪ নম্বর ক্যাম্পে ১৬৭ জন, ১ নম্বর ডব্লিউ ক্যাম্পে ১১৫ জন এবং ২৪ নম্বর ক্যাম্পে ২৪ জন ডেঙ্গুরোগী পাওয়া গেছে। এছাড়া কক্সবাজার পৌরসভায় ৩২ জন, চকরিয়ায় ২৭ জন, উখিয়ায় ২৬ জন, টেকনাফে ২৩ জন, সদরে ২০ জন এবং মহেশখালীতে ১৩ জন রোগী পাওয়া গেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ১৫ জনকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সোমবার পর্যন্ত ভর্তি ছিল মোট ২৫ জন। এর বাইরে উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ৫ জন ভর্তি রয়েছে। সর্বশেষ ২৩ জুন একজনের মৃত্যুসহ গত ৬ মাসে মোট ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। তারা সবাই রোহিঙ্গা।
অন্যদিকে কক্সবাজারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসনের কমিশনারের কার্যালয়ের স্বাস্থ্য কোঅর্ডিনেটর ডা. আবু তোহা বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অধিকসংখ্যক ডেঙ্গু আক্রান্ত হলেও এটা উদ্বেগজনক বলা যাবে না। সচেতনতার কারণে আক্রান্তদের দ্রুত শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে। এখানে চিকিৎসা নিয়ে ঘরে ফিরেছে ৯৯ শতাংশ। মাত্র ৪ জন রোগী নানা কারণে মারা গেছে। তিনি বলেন, ক্যাম্পে এখন অধিক সচেতনতা কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। ক্যাম্পে অবস্থিত বিভিন্ন ড্রেনেজ সিস্টেমে নিয়মিত ব্লিচিং পাউডার ছিটানো এবং এ বিষয়ে তদারকির জন্য ওয়াশ সেক্টরের সঙ্গে সমন্বয় করা হয়েছে। ক্যাম্পে হেলথ সেক্টরের সঙ্গে নিয়মিত সভা হচ্ছে। প্রতিটি ক্যাম্পের ব্লকের নেতা (মাঝি) এবং উপনেতাদের (সাব-মাঝি) সঙ্গে সভা করে জমানো পানি অপসারণ করা হচ্ছে। ডেঙ্গু নির্ণয়ের জন্য পর্যাপ্ত কিট সরবরাহসহ নানা উদ্যোগ বাস্তবায়ন হচ্ছে। ফলে ডেঙ্গু কমানো সম্ভব বলে আশা করা যাচ্ছে।
কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা. বিপাশ খীসা বলেন, সম্ভাব্য ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবিলায় কক্সবাজারে সব প্রকার প্রস্তুতি রয়েছে। ইতোমধ্যে চিকিৎসার জন্য ১০ জন চিকিৎসক নিয়ে টেলিমেডিসিন সেবা চালু হয়েছে। প্রস্তুত রয়েছে সদর হাসপাতালসহ স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো। উল্লেখ্য, ২০২২ সালে কক্সবাজারে মোট ১৯ হাজার ২৩১ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছিলো। এর মধ্যে ১৫ হাজার ৬৩৬ জন রোহিঙ্গা ও ৩ হাজার ৫৮৫ জন স্থানীয় ছিল। ওই বছরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা যায় ৩৯ জন। যার মধ্যে রোহিঙ্গা ২৬ জন ও বাঙালি ১৩ জন।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারী থেকে এ পর্যন্ত জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে ২ হাজার ১১৭ জন। এদের মধ্যে ১ হাজার ৯৬৮ জন রোহিঙ্গা এবং ১৪৯ জন বাংলাদেশী নাগরিক।
কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. মোমিনুর রহমান বলেন, হাসপাতালে অস্থায়ী কর্ণারসহ চালু করা হয়েছে টেলিমেডিসিন সেবা।
২০২২ সালে কক্সবাজারে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছিলেন ১৯ হাজার ২৩১ জন। স্থানীয় জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি রোহিঙ্গার কারণে জনসংখ্যার চাপ বাড়ছে অনেক, তাই ডেঙ্গু প্রতিরোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীদের মধ্যে সচেতনতার যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। তাদের বেশ, ভুষা বা কালচার আলাদা হওয়ায় সচেতনতামুলক কাজ করাও মুশকিল।
ডেঙ্গু পরিস্থিতি ঢাকার সাথে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের তুলনা করলে দেখা যায়, ঢাকায় ওয়াসার পানি সঠিক ব্যবস্থাপনায় ধরে রাখা গেলেও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর পানি সরবরাহের ব্যবস্থা খুব কম। ফলে তারা বিভিন্ন গর্ত থেকে পানি সংগ্রহ করে, অনেক সময় পানি খোলা পাত্রে রেখে দেয়। এ ছাড়া তাদের সচেতনতার বিষয়টি আরও কম। ঢাকায় জনগোষ্ঠী বেশি হলেও বিস্তর জায়গা রয়েছে। কিন্তু রোহিঙ্গা ক্যাম্পে জায়গায় কম মানুষ বেশি। ফলে সেখানে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা অন্যান্য এলাকার চেয়ে বেশি।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ডেঙ্গু পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। স্থানীয় দের মাঝেও ডেঙ্গু ফোবিয়া সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে ডেঙ্গুর ভ্যারিয়েন্ট এর মৌলিক পরিবর্তন হবায় অর্থাৎ আগে ডেঙ্গুবাহী মশা বদ্ধ পানিতে জন্মাতো, দিনের বেলায় কামড়াতো কিন্ত এখন রাতে যেমন কামড়াচ্ছে, যেকোন পরিবেশে ডেঙ্গুবাহিত মশা লাভা ছাড়ছে, ডিম পাড়ছে। তাই সাধারণ মানুষকে সচেতনতা সৃষ্টি করার সাথে সাথে ডেঙ্গু মশা জন্মাবার অনুকুল পরিবেশকে অংকুরে বিনষ্ট করে দেবার উপর জোর দেবারকথা উচ্চারিত হচ্ছে।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
হল্যান্ডের পেনাল্টি মিস,বিবর্ণ সিটি ফের হারাল পয়েন্ট
শরীফ থেকে শরীফার গল্প বাতিল করতে হবে: ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ
বিসিএ নির্বাচন সম্পন্ন: মিজান সভাপতি, মতিন সম্পাদক
ডেঙ্গুতে আরও ৪ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১৫৩
বিএনপি মুক্ত সাংবাদিকতায় বিশ্বাসী: শাহজাহান চৌধুরী
সচিবালয়ে আগুন: গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ব্যর্থতাকে দায়ী করলো এবি পার্টি
পরকীয়া প্রেমের ঘটনায় গৌরনদীতে উপ-সহকারী ২ কৃষি কর্মকর্তা এলাকাবাসীর হাতে আটক
‘প্রতিবন্ধীদের সংগঠন ও সম্পদ দখল করে পতিত সরকারের শিল্পমন্ত্রীর কন্যা’
আশিয়ান সিটির স্টলে বুকিং দিলেই মিলছে ল্যাপটপ
সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি পরিকল্পিত নাশকতা: ইসলামী আইনজীবী পরিষদ
গাজীপুরে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতাকে ছাড়িয়ে আনতে থানায় বিএনপি নেতাদের ভিড়
মাদ্রাসার ছাদ থেকে পাইপ বেয়ে নামার সময় পড়ে গিয়ে শিশুর মৃত্যু
জকিগঞ্জে প্রাক্সিসের ৭ দিনব্যাপী ইংলিশ স্পিকিং চ্যালেঞ্জ কম্পিটিশনের পুরস্কার বিতরণী
লামায় ১৭টি ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের বসতঘর পুড়ে ছাই হওয়ার ঘটনায় ৪জন গ্রেপ্তার
বিজয় দিবস টেনিস শুক্রবার শুরু
আশুলিয়ায় ভাড়াটিয়া তাড়িয়ে জোরপূর্বক জমি দখলের অভিযোগ
আজানের জবাব দেওয়া প্রসঙ্গে।
লক্ষ্মীপুরে চুরির অপবাদে নাকে খত দেওয়ার ঘটনায় মামলা
শরীয়তপুরে শ্রমিক দলের বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ
হেঁটে টেকনাফ গেলেন নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাসেদুল