নানান অজুহাতে ৫ বছর ধরে বরগুনার ৬টি মডেল মসজিদের নির্মাণ কাজ বন্ধ
০৩ অক্টোবর ২০২৩, ০৩:১১ পিএম | আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০২৩, ০৩:১১ পিএম
পুরানো স্থাপনা অপসারণ, জমি সংক্রান্ত মামলা, অর্থ সংকট, ঠিকাদারদের কাজের মন্থরগতি এবং নির্মাণ সামগ্রীমূল্যের উর্ধ্বগতির অযুহাতে ৫ বছরেও নির্মাণ সম্পন্ন হয়নি বরগুনা জেলার ৬টি মডেল মসজিদ। পুরানো মসজিদ ভেঙ্গে দেওয়ায় স্থান সংকটে নামাজ আদায় করতে পারছেন না মুসুল্লিরা।
মুসুল্লিরা বলছেন, মডেল মসজিদ নির্মাণ করার কথা বলে, পুরানো মসজিদ ভেঙ্গে দেওয়ায় স্থান সংকটে নামাজ আদায় করতে পারছেন না তারা। দ্রুত মসজিদ নির্মাণের দাবি মুসুল্লিদের। বরগুনা জেলা প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট গণপূর্ত বিভাগ বলছে, সমস্যা কাটিয়ে নতুন করে নির্মাণ সম্পন্নের কাজ চলছে।
গণপূর্ত বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের শুরুর দিকে ৯০ কোটি ২১ লাখ টাকা ব্যয়ে বরগুনা জেলায় ৭টি মডেল মসজিদ নির্মাণের লক্ষ্যে দরপত্র আহবান শেষে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে। যার কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল ২০২০ সালের শেষের দিকে। এরপর একাধিকবার কাজের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হলেও এখনো সম্পন্ন হয়নি ৬টি মসজিদের কাজ। কোথাও আংশিক আবার কোথাও এখন পর্যন্ত শুরুই হয়নি ভবন নির্মাণের কাজ।
সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, বরগুনা সদর উপজেলা পরিষদের সামনে স্থানীয় মুসুল্লিদের নিজস্ব অর্থায়নে একতলা একটি পাকা মসজিদ নির্মাণ করে দীর্ঘদিন ইবাদত করে আসছিলেন মুসুল্লিরা। পরে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির মডেল মসজিদ নির্মাণের জন্য মসজিদটি ভেঙ্গে ফেলা হয় এবং নতুন ভবনের কাজ শুরু করে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ডালি এন্ড গাজী কনস্ট্রাকশন জয়েন্ট ভেঞ্চার। কিন্তু ভবনের পাইলিংয়ের কাজ সম্পন্ন হলেও নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধির কারনে কাজটি বন্ধ রাখে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। আর এতে চরম ভোগান্তিতে পরে মুসুল্লিরা।
স্থানীয় ওই মসজিদের নিয়মিত একাধিক মুসুল্লি বলেন, আমাদের এখানে একটি ভালো ভবন ছিল কিন্তু মডেল মসজিদ হওয়ার জন্য সেটি ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। তাও এখন কাজ বন্ধ। বর্তমানে একটি অস্থায়ী টিনসেট ঘর তুলে সেখানে নামাজ আদায় করা হচ্ছে। কিন্তু জায়গা স্বল্পতার কারনে মসজিদের বাইরে নামাজ আদায় করতে হয়। মুসুল্লিগণ যাতে দ্রুত মডেল মসজিদ নির্মাণ করা হয় সে ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর কাছে জোর দাবি জানান। একই দাবি জানান জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সংলগ্ন মসজিদের ইমাম, মুসুল্লি এবং আমতলী ও বামনা উপজেলা মডেল মসজিদ সংশ্লিষ্ট মুসুল্লিগণ।
এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের তদারকির দায়িত্বে থাকা মনিরুজ্জামান জামাল বলেন, ২০১৯ সালের ২৪ মার্চ গণপূর্ত বিভাগ আমাদেরকে কার্যাদেশ দেয়। এরপর আমরা পাইলের কাজ শুরু করি। কিন্তু সেখানে একটি পুরানো মসজিদ, প্লাষ্টিক শেড ও গাছ থাকায় তা অপসারণের জন্য সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে একাধিকবার অবহিত করলেও তা অপসারণ করতে সময় লাগে ২০২২ সালের এপ্রিল পর্যন্ত। অন্যদিকে ২০২০ সালে সংশ্লিষ্ট জমির মালিকানা দাবি করে একটি মামলা হওয়ায় কাজ বন্ধ রাখতে হয়েছে। সময়ের দীর্ঘসূত্রিতায় নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় কাজ করা অসম্ভব হয়ে যায়।
বরগুনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সংলগ্ন মডেল মসজিদটির কাজ কিছুটা অগ্রসর হয়ে বন্ধ রয়েছে। চলতি বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারী ওই মসজিদের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ডালি এন্ড গাজী কনস্ট্রাকশন জয়েন্ট ভেঞ্চারের সাথে চুক্তি বাতিল করে গণপূর্ত বিভাগ। এ ব্যাপারে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের তদারকির দায়িত্বে নিযুক্ত নাসরিন সুলতানা পলি জানান, ২০১৯ সালের মার্চ মাসে কার্যাদেশ পেয়ে ভবনের কাজ শুরু করি। কিন্তু সেখানে একটি পুরানো মসজিদ ছিল। যা কর্তৃপক্ষ ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে অপসারন করে আমাদেরকে পুরোপুরি সাইট বুঝিয়ে দেয়। কিন্তু ততক্ষণে কার্যাদেশের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। পরে আমাদেরকে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত কাজের মেয়াদ বাড়ালেও মহামারি করোনা ও নির্মাণ সামগ্রীর অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির ফলে কাজ বাস্তবায়ন অসম্ভব হয়ে পরে। অন্যদিকে জেলার পাথরঘাটা ও তালতলী উপজেলার ২টি মসজিদের কাজ মন্থরগতিতে চলতে থাকলেও জমি সংক্রান্ত জটিলতার কারনে
এখনো শুরু হয়নি বামনা ও আমতলী উপজেলার ২টি মসজিদের কাজ।
বরগুনা জেলা পাবলিক পলিসি ফোরামের সভাপতি মো: হাসানুর রহমান ঝন্টু বলেন, মডেল মসজিদের মতো একটি কাজ দ্রুত সম্পন্ন করতে বড় ঠিকাদারকে দায়িত্ব দেওয়া প্রয়োজন। কিন্তু বরগুনার মসজিদগুলো যেসব ঠিকাদাররা পেয়েছেন তাদের আর্থিক স্বচ্ছলতা এইভাবে না থাকায় ভবনের কাজ এখনো সম্পন্ন হয়নি।
এ বিষয়ে বরগুনা গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুব্রত বিশ্বাস জানান, জমি সংক্রান্ত মামলা, অর্থ সংকট, পুরানো স্থাপনা অপসারণ, নির্মাণ সামগ্রীর দাম বৃদ্ধি এবং ঠিকাদারের অপরাগতার কারনে নির্ধারিত সময়ে কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি। তবে ৩টি মসজিদের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি বাতিল করে নতুন দরপত্র আহবান করা হয়েছে এবং আমতলী উপজেলার মসজিদের জমি সংক্রান্ত জটিলতা এখনো নিরসন করা যায়নি।
বরগুনা জেলা প্রশাসক মোহা: রফিকুল ইসলাম বলেন, জমি সংক্রান্ত কিছু জটিলতার কারনে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মসজিদগুলোর কাজ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি । তবে জমি সংক্রান্ত জটিলতা ইতিমধ্যেই সমাধান হয়েছে, তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে বলেন আশা করছি।
আধুনিক এসব মডেল মসজিদে নারী ও পুরুষদের আলাদা অজু এবং নামাজ আদায়ের পাশাপাশি লাইব্রেরি, গবেষণা কেন্দ্র, ইসলামিক বই বিক্রয় কেন্দ্র, পবিত্র কুরআন হেফজ বিভাগ, শিশু শিক্ষা, অতিথিশালা, বিদেশি পর্যটকদের আবাসন, মৃতদেহ গোসলের ব্যবস্থাসহ ১৬ টি সুবিধা থাকবে ।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
ট্রাম্পের তথ্য চুরি করে বাইডেন শিবিরে পাঠিয়েছিল ইরান! দাবি গোয়েন্দা সংস্থার
সুনামগঞ্জে সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম.এ মান্নান গ্রেফতার
ইয়ামালের মাইলফলকের রাতে হারের তেতো স্বাদ বার্সার
আর্সেনালের স্বস্তির ড্র,অ্যাটলেটিকোর দারুণ জয়
হেডের বিধংসী শতকে লন্ডভন্ড ইংল্যান্ড
পয়েন্ট হারিয়েও শীর্ষে আর্জেন্টিনা,অবনতি বাংলাদেশের
বিদেশে সাবেক ভুমিমন্ত্রীর আট হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি
ইউনূস গুড উইলের প্রতিফলন দেখতে চায় জনগণ: রিজভী
সময় থাকতে হাসিনাকে ফেরত পাঠান : ভারতকে দুদু
রুশ সেনা কুরস্কের দুটি শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে
বিমানবন্দর এলাকা হবে শব্দদূষণ মুক্ত
যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান ৭ দিনের রিমান্ডে
বিচার শুরু হলে হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হবে : আইন উপদেষ্টা
লোহাগড়ায় দিনে-দুপুরে বসতবাড়ি পুড়ে ছাই
রাষ্ট্রীয় কল্যাণে অবদান রাখার সুযোগ দিন আলেমদেরকে
দুই মেডিকেল টেকনোলজিস্টের ওপর হামলার ঘটনায় বিএমটিএর নিন্দা
জিএম কাদের ও মজিবুল হক চুন্নুকে অবিলম্বে আটক করতে হবে : আবু হানিফ
উপদেষ্টাদের আয় ও সম্পদ বিবরণী প্রকাশের নীতিমালা অনুমোদন
সাবেক মন্ত্রী শ ম রেজাউল-এমপি হেনরিসহ ৩ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতিকে একবছর ,সাধারন সম্পাদককে দুই বছর একাডেমীক কার্যক্রম থেকে বহিস্কারসহ উভয়কে হোস্টেল থেকে আজীবন বহিস্কার।