বরিশালের বঙ্গবন্ধু উদ্যানটি কার

কিশোর গ্যাং ও আড্ডাবাজদের সাথে পথ খাবারের দোকানের ভীড়ে নগরীর শ্রান্তি বিনোদনের ভরসাটুকুও বিপন্ন

Daily Inqilab বরিশাল ব্যুরো

০৪ অক্টোবর ২০২৩, ০৩:০৮ পিএম | আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০২৩, ০৩:০৮ পিএম

 

 

কিশোর গ্যাং, নিয়ন্ত্রনহীন পথ খাবারের দোকান আর হায়াহীন কিশোর-কিশোরীদের আড্ডাবাজী সহ নুন্যতম নিয়ম-শৃংখলার অভাবে বরিশাল মহানগরীর শ্রান্তি বিনোদনের বঙ্গবন্ধু উদ্যানটির সামাজিক পরিবেশ সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত। জেলা প্রশাসন, গনপূর্ত অধিদপ্তর ও সিটি করপোরেশনের যৌথ তত্বাবধান ও দেখভালের মধ্যে দিয়ে বিগত দীর্ঘদিন এ উদ্যানটি নগর জীবনের প্রধান শ্রান্তি বিনোদনের স্থান হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসলেও সেখানের সামাজিক পরিবেশ এখন বিপন্ন। ফলে নগরবাসীর মনে এমন প্রশ্ন উঠতেও শুরু করেছে ‘বঙ্গবন্ধু উদ্যানটি কার ?
প্রাত ও বৈকালিক ভ্রমনকারী সহ নগরবাসী একটু শ্রান্তি খুজতে ঐতিহ্যবাহী বঙ্গবন্ধু উদ্যানে গিয়ে এখন চরম অস্বস্তির শিকার হচ্ছেন। অসংখ্য পথ খাবারের দোকান উদ্যানটিকে ঘিরে ধরার সাথে সাম্প্রতিককালে মাঠের অভ্যন্তরেও দখল নিতে শুরু করেছে। এসব দোকানের নানা বর্জ্য মাঠের অভ্যন্তর সহ পাশের ডিসি লেকে ফোলায় প্রায়ই লেকটির পানি দুষিত হয়ে দূর্গন্ধ ছড়ায়। নুন্যতম রক্ষনাবেক্ষনের অভাবে পুরো উদ্যানের অনেক মূল্যবান অবকাঠামো বিনষ্ট হচ্ছে। এ উদ্যানটির দেখভালের কেউ আছে বলেও দৃশ্যমান নয়। ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ময়দানে বিশাল জনসভায় ভাষন দেয়ার পরে গনপূর্ত অধিদপ্তর আর কোন রক্ষনাবেক্ষন কাজে হাত লাগায়নি।
শেষ বৃটিস যুগে বর্তমান বরিশাল বিভাগ ও তৎকালীন বাকেরগঞ্জ জেলার জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মিঃ বেল প্রায় পৌনে ৯ একর সরকারী খাশ জমির ওপর এ উদ্যানেটি গড়ে তুলেছিলেন। তখন তার নাম অনুসারেই উদ্যানটির নামকরন করা হয় ‘বেল পার্ক’। গনপূর্ত বিভাগ এ পার্কটির মালিকানা সহ তার তত্বাবধানের দায়িত্ব লাভ করলেও বছর কয়েক আগে উদ্যানটির দুই দিকে জেলা প্রশাসন থেকে জমির নকশা খচিত বিশাল প্রস্তর খন্ডে ভূমির মালিক ‘বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে জেলা প্রশাসক’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধিন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রথম এবং শেষবারের মত বরিশাল সফরকালে একটি সুন্দর নান্দনিক উদ্যান গড়ে তোলার লক্ষে ‘বঙ্গবন্ধু উদ্যান’র ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেছিলেন।
২০০৪ সালে তৎকালীন সিটি মেয়র মুজিবুর রহমান সারোয়ারের উদ্যোগে সরকারী প্রায় ৩ কোটি টাকা সংগ্রহ করে উদ্যানটির চারধারে ওয়াকওয়ে, বসার জন্য বেঞ্চি, ছাতা এবং ভ্রমনকারীদের জন্য শৌচাগার ও বিশ্রমাগার নির্মান ছাড়াও পুরো উদ্যানটি যুড়ে দৃষ্টি নন্দন লাইটিং-এর ব্যবস্থা করেছিলেন। পাশাপাশি এখানে শোভা বর্ধনের মত কিছু গাছও লাগান হয়। সে থেকে উদ্যানটির পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা ও চলতি রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্ব গ্রহন করে সিটি করপোরেশন। প্রতিদিনই এ উদ্যানে সকাল-বিকেল প্রচুর নারী-পুরুষ ও শিশু শ্রান্তি বিনোদনে উ উদ্যানে আসতেন।
২০১১ সালে তৎকালীন সিটি মেয়র শওকত হোসেন হিরন গনপূর্ত মন্ত্রনালয় থেকে তহবিল সংগ্রহ করে দ্বিতীয় ওয়াকওয়ে এবং বঙ্গবন্ধুর মুড়াল স্থাপন করেন। পাশাপাশি উদ্যানটির পূর্বপাশের নালাটি সংস্কার করে সেখানে শাপলার আবাদ ছাড়াও সংলগ্ন বাঁধ রোডে পাকা ফুটপাথ নির্মান সহ সোনালু গাছ লাগান হয়। যা এখনো নগরবাসীর চোখ যুড়ায়। দ্বিতীয় দফায় সংস্কারের পরে উদ্যানে প্রাত ও বৈকালিক ভ্রমনকারীর সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পেলেও গত কয়েক বছর ধরে আড্ডাবাজদের ভীড় আশংকাজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় এখান সকাল সন্ধা ভ্রমনে বেশীরভাগ মানুষই আর সাচ্ছন্দ বোধ করেন না। সাথে উদ্যানটির পুরো উত্তর পাশ যুড়ে নানা ধরনের পথ খাবারের দোকান আড্ডাবাজদের জন্য বাড়তি সুবিধা সৃষ্টি করছে। এমনকি উদ্যানটির উত্তর পাশের দুটি ওয়াকওয়েই এখন বিকেল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত আড্ডাবাজদের দখলে থাকছে। আর ওয়াকওয়ের সীমানা পিলারের বাইরের রাস্তাটি আটকে রাখছে শতাধিক মোটর বাইক। ফলে উদ্যানের প্রবেশের ঐ মূল অংশ দিয়ে এখন আর ভ্রমনকারীরা মাঠে প্রবেস করতে পারছেন না।
অপরদিকে পুরো বঙ্গবন্ধু উদ্যানের মেরামত ও রক্ষনাবেক্ষনে গত কয়েক বছর ধরে গনপূর্ত বিভাগ ও নগর ভবনের নুন্যতম কোন উদ্যোগ নেই। বছর চারেক আগে উদ্যানটির পূর্ব পাশের দেয়ালের ওপর থেকে একটি বিশাল এসএস পাইপের একাংশ মাটিতে পড়ে আছে। দক্ষিণ ও পশ্চিম পাড়ের গ্রীলের বেশীরভাগই দেয়াল থেকে খশে পড়ে আছে। গত কয়েক বছর ধরে উদ্যানটির উত্তর প্রান্তে বৃক্ষমেলা আয়োজন করতে গিয়ে অপরিকল্পিতভাবে বালু ফেলায় মাঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে সামান্য বৃষ্টিতেই ওয়াকওয়ে ডুবে যাচ্ছে। কিন্তু এসব বিষয় দেখার কেউ নেই। শুধুমাত্র সিটি করপোরেশনের কয়েকজন দৈনিক মজুরী ভিত্তিক শ্রমিক অনিয়মিতভাবে ওয়াকওয়ে ঝাড়ু দেয়া ছাড়া কাউকে এখানে দেখা যায়না। এমনকি গনপূর্ত বিভাগ ও জেলা প্রশাসনের কোন কর্মকর্তা কবে এ উদ্যানটি পরিদর্শন করেছেন তাও কেউ জানে না।
পুরো উদ্যানটির অভ্যন্তরভাগেও এখন সুস্থ সামাজিক পরিবেশ সম্পূর্ণ বিপন্ন। ওয়াকওয়েতে নারী-পুরষ ও শিশুরা এখন আর নির্বিঘেœ, নির্ভরতার সাথে হাটতে আস্থা রাখতে পারছেন না। প্রতিদিনই বিপুল সংখ্যক বখাটে ও স্কুল-কলেজ পড়ুয়া (?) ছেলে মেয়েদের অনৈতিক বিচরনে গোটা উদ্যানটির পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে। অনেক হায়াহীন ছেলে মেয়েদের প্রেমের লীলাভূমিতে পরিনত হয়েছে এ উদ্যান। পড়ার টেবিল ছেড়ে গভীর রাত পর্যন্ত কতিপয় ছাত্র-ছাত্রীর বেপরোয়া আড্ডাবাজিতে উদ্যানের সামাজিক পরিবেশ বিপন্ন হলেও তা দেখার কেউ নেই। এর সাথে সম্প্রতি যুক্ত হয়েছে কিশোর গ্যাং-এর অপ তৎপড়তাও।
এ বঙ্গবন্ধু উদ্যানেই প্রতিবছর ‘বৃক্ষ মেলা’য় বিভাগ ও জেলার শীর্ষ কর্মকর্তা সহ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দও পরিবেশের জন্য বৃক্ষ রোপনের অপরিহার্যতা নিয়ে অনেক ভাল কথা বলেন। কিন্তু গত কয়েক বছরে বঙ্গবন্ধু উদ্যান ও সংলগ্ন সড়ক থেকে অনেক গাছ বিলুপ্ত হলেও কেউ নতুন করে একটি বৃক্ষও রোপন করেন নি। এমনকি বঙ্গবন্ধু উদ্যানের অভ্যন্তরের অনেক দৃষ্টি নন্দন গাছ ইতোমধ্যে বিলুপ্ত হলেও নতুন করে একটি গাছও লাগান হয়নি।
এ ব্যাপরে গনপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী ও উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলীর সাথে কথা বলতে তাদের সেল ফোনে গত কয়েক দিন ধরে যোগাযোগের বহু চেষ্টা করে তা সম্ভব হয়নি।


বিভাগ : বাংলাদেশ


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে দুর্ঘটনা: চালকসহ গ্রেপ্তার ২
গোপালগঞ্জ আড়াই শ’ বেডের আরএমও জেল -হাজতে
সাংবাদিক আনিসুর রহমানের মৃত্যু
মানুষ সুন্দর ও কল্যাণের অপেক্ষায় আছে : হাজী ইয়াছিন
সাবেক এমপি কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসাইন কায়কোবাদ দেশে ফিরেছেন
আরও

আরও পড়ুন

ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে দুর্ঘটনা: চালকসহ গ্রেপ্তার ২

ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে দুর্ঘটনা: চালকসহ গ্রেপ্তার ২

গোপালগঞ্জ আড়াই শ’ বেডের আরএমও জেল -হাজতে

গোপালগঞ্জ আড়াই শ’ বেডের আরএমও জেল -হাজতে

বিপ্লবকে ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না, প্রয়োজনে আবারও মাঠে নামতে হবে: ধর্ম উপদেষ্টা

বিপ্লবকে ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না, প্রয়োজনে আবারও মাঠে নামতে হবে: ধর্ম উপদেষ্টা

সাংবাদিক আনিসুর রহমানের মৃত্যু

সাংবাদিক আনিসুর রহমানের মৃত্যু

নিউজিল্যান্ডের কাছে শ্রীলঙ্কার অবিশ্বাস্য পরাজয়

নিউজিল্যান্ডের কাছে শ্রীলঙ্কার অবিশ্বাস্য পরাজয়

রাশিয়ার উপর আজারবাইজানের বিমান ভূপাতিতের অভিযোগ : যুক্তরাষ্ট্রের ইঙ্গিত

রাশিয়ার উপর আজারবাইজানের বিমান ভূপাতিতের অভিযোগ : যুক্তরাষ্ট্রের ইঙ্গিত

ফিরে দেখা ২০২৪: সংস্কারের বছরে মাঠের ক্রিকেটে হতাশা

ফিরে দেখা ২০২৪: সংস্কারের বছরে মাঠের ক্রিকেটে হতাশা

মানুষ সুন্দর ও কল্যাণের অপেক্ষায় আছে : হাজী ইয়াছিন

মানুষ সুন্দর ও কল্যাণের অপেক্ষায় আছে : হাজী ইয়াছিন

সিএনজি স্টেশন খোলা রাখার সময় বাড়ছে

সিএনজি স্টেশন খোলা রাখার সময় বাড়ছে

সাবেক এমপি কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসাইন কায়কোবাদ দেশে ফিরেছেন

সাবেক এমপি কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসাইন কায়কোবাদ দেশে ফিরেছেন

ঘাটাইলে ইসলামী ব্যাংকের ৪০০তম শাখার উদ্বোধন করলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর

ঘাটাইলে ইসলামী ব্যাংকের ৪০০তম শাখার উদ্বোধন করলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর

আগস্ট বিপ্লবের অর্জন যেকোন মূল্যে ধরে রেখে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে: নিয়ামত উল্যা ভূঁইয়া

আগস্ট বিপ্লবের অর্জন যেকোন মূল্যে ধরে রেখে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে: নিয়ামত উল্যা ভূঁইয়া

ঐতিহ্যবাহী শ্রীপুর হাইস্কুলের প্লাটিনাম জয়ন্তী ও পুনর্মিলনী অনুষ্ঠিত

ঐতিহ্যবাহী শ্রীপুর হাইস্কুলের প্লাটিনাম জয়ন্তী ও পুনর্মিলনী অনুষ্ঠিত

বিশ্বে প্রতি ৬ জন শিশুর মধ্যে ১ জন সংঘাতপূর্ণ এলাকায় বাস করে : ইউনিসেফ

বিশ্বে প্রতি ৬ জন শিশুর মধ্যে ১ জন সংঘাতপূর্ণ এলাকায় বাস করে : ইউনিসেফ

বাউফলে বিএনপির ৫ নেতাকর্মী আহত

বাউফলে বিএনপির ৫ নেতাকর্মী আহত

২০২৫ সালে আসছে কোক স্টুডিওর নতুন গান

২০২৫ সালে আসছে কোক স্টুডিওর নতুন গান

মার্কিন ক্রীড়া ধারাভাষ্যকার কিংবদন্তি গ্রেগ গাম্বেলের বিদায়

মার্কিন ক্রীড়া ধারাভাষ্যকার কিংবদন্তি গ্রেগ গাম্বেলের বিদায়

সচিবালয় ছিল দালালদের হাটবাজার: ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি

সচিবালয় ছিল দালালদের হাটবাজার: ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি

সচিবালয়ে নিহত ফায়ার ফাইটার নয়নের পরিবারের পাশে তারেক রহমান

সচিবালয়ে নিহত ফায়ার ফাইটার নয়নের পরিবারের পাশে তারেক রহমান

দৌলতপুরে বিএনপি’র কর্মীসভায় কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা

দৌলতপুরে বিএনপি’র কর্মীসভায় কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা