ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৪ আশ্বিন ১৪৩১
বরিশালে সরকার নির্ধারিত মূল্যে কোন কিছুই মিলছে না

নিত্যপণ্য সহ প্রতিটি সেবার মূল্য বৃদ্ধিতে নি¤œ ও নি¤œ-মধ্যবিত্ত পরিবারে নভিশ^াস উঠছে

Daily Inqilab বরিশাল ব্যুরো

০৭ অক্টোবর ২০২৩, ০৩:৫৯ পিএম | আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০২৩, ০৩:৫৯ পিএম



 সরকার রান্নার গ্যাস, ডিম, পেয়াজ, রসুন, আদা, গোল আলু, ভোজ্যতেল-এর দাম বেধে দিলেও তা বরিশালের সাধারন ভোক্তাদের কোন কাজে আসেনি। সরকার নির্ধারিত মূল্যে কোন কিছুই মিলছে না বরিশাল সহ দক্ষিণাঞ্চলের খোলা বাজারগুলোতে। উপরন্তু গত এক সপ্তাহে এসব পণ্যের দাম আরো এক দফা বৃদ্ধিতে সাধারন মানুষের নভিশ^াস উঠছে। পেয়াঁজ,রসুন আদা ও শুকনা মরিচের সাথে কাঁচা মরিচের দামও আরেক দফা বেড়েছে। অশি^নের প্রবল বর্ষণে সব ধরনের শাক-সবজি ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় দাম আরেক দফা বেড়েছে। এখন সব ধরনের সবজিই প্রায় ৮০ টাকা কেজি। ভোক্তা অধিকার কতৃপক্ষ মাঝে মধ্যে কিছু অভিযান পরিচালনা করলেও তা বাজারে তেমন কোন প্রভাব ফেলছে না। চিনি ও আটা সহ সব ধরনের মাছ-গোসতের অগ্নি মূল্যে নি¤œ ও নি¤œ-মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো তা খাওয়া ভুলে যেতে বসেছে।
প্রায় প্রতিটি নিত্যপণ্যের দাম গত এক বছরে দ্বিগুনেরও বেশী বৃদ্ধি পাওয়ায় সংসার নির্বাহ এখন কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ সাধারন মানুষের। নি¤œ-মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর হাহাকার এখন আর কারো কাছে পৌছছে না বলে অভিযোগ তাদের। এমনকি ব্যায় সংকোচন করেও এখন আর সংসার চলছে না বলেও অভিযোগ সমাজের বৃহত জনগোষ্ঠীর। নিত্যপণ্যের মূল্য নিয়ে দোকান ও বাজারে যেখানেই যার সাথে কথা হয়েছে, সবাই চরম ক্ষোভের সাথেই কথা বলেছেন। মাছ, গোসত ও ডিমের দাম নিয়ে বাড়তি ক্ষোভ সবার মধ্যে। অনেক পরিবারই সন্তান-সন্ততির মুখে মাছ, গোসত ও ডিম তুলে দেয়া বন্ধের কথাও বলেছেন।
ইতোপূর্বে বানিজ্য মন্ত্রনালয় ডিম,পেয়াজ,আদা,রসুন ভোজ্যতেল সহ কয়েকটি নিত্য পণ্যের দাম বেঁধে দিলেও তার তেমন কোন প্রতিফলন নেই বরিশাল অঞ্চলের খোলা বাজারে। হাজার টাকার সাড়ে ১২ কেজির রান্নার গ্যাস সিলিন্ডার মাত্র ৩ মাসের ব্যবধানে এখন দেড় হাজার টাকায়ও মিলছে না। দু মাস আগে দেশী পেয়াঁজ ৪৫ টাকা থেকে এখন ৯০ টাকা অতিক্রম করে সেঞ্চুরী করতে যাচ্ছে। আমাদনীকৃত পেয়াঁজ ৩৫ টাকা থেকে একলাফে ৬৫-৭০ টাকায় উঠেছে। গত বছর এসময়ে যে গোল আলু ২৫ টাকা কেজিতে বিক্রী হয়েছে, এখন তা ৫০ টাকা। শুকনা মরিচ প্রায় ৪শ টাকা কজি।
ভোজ্য তেলের দাম কিছুটা কমার পরেও প্রতি লিটার ১৭৫ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রী হচ্ছে। চিনি সর্বকালের রেকর্ড ছাপিয়ে ১৩৫-১৪০ টাকা কেজি। আটার কেজি যে ৫৫-৬০ টাকায় উঠেছে, তা আর নামার কোন লক্ষন নেই। ময়দার কেজি ৭৫-৮০ টাকা।
চালের বাজার গত দু মাস কিছুটা স্থিতিশীল থাকলেও আগের মূল্য বৃদ্ধির নিচে আর নামেনি। এখনো মাঝারী মানের ‘বিআর-২৮ বা আঠাশ বলাম’ চালের কেজি ৫৫ টাকা। আর মধ্যম-ভাল মানের মিনিকেট চালের কেজি ৬০-৬৫ টাকা কেজি। সর্বনি¤œ মানের চালের কেজি এখনো প্রায় ৪৫ টাকা। বর্তমানে সরকারী ‘খোলা বাজারে চাল বিক্রী-ওএমএস’ সহ ১৫ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রী কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। ফলে আপতত চালের বাজার আর নিচে নামার সম্ভবনা দেখছেন না ব্যাবসায়ীবৃন্দ। উপরন্তু দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান দানাদার খাদ্য ফসল আমনের জন্য আরো অন্তত তিন মাস অপেক্সা করতে হবে। আউশ কর্তন শেষ হলেও এবার আবাদ ও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার অনেক পেছনে। ফলে চালের বাজারে এবার আউশ তেমন কোন প্রভাব ফেলছে না।
এদিকে মাছ, গোসত, ডিম ও দুধে উদ্বৃত্ত বরিশাল অঞ্চলে এখন সর্বকালের রেকর্ড ভঙ্গ করে এক হালি ডিম ৫৫ টাকায়ও বিক্রী হচ্ছে। এমনকি সরকার ১২টাকার বেশী ডিম বিক্রীর নিষেধাজ্ঞা দিলেও তা এখনো কার্যকর হয়নি। গরুর গোসত ৮শ টাকা কেজি। খাশির গোসত প্রায় দেড় হাজার টাকা। দুধের লিটার ১শ টাকা। ব্রয়লার মুরগীর কেজি ১৮০ টাকার ওপরে। স্থানীভাবে চাষকৃত পাঙ্গাস ছাড়া ৭-৮শ টাকা কেজির নিচে বাজারে কোন মাছ নেই। অথচ দেশে আহরনকৃত মোট ইলিশের প্রায় ৭০ ভাগই বরিশাল অঞ্চলে ধরা পড়লেও গত কয়েক মাস ধরে নদী ও সাগর উপক’লে তার বিচরন যথেষ্ঠ সিমিত থাকায় দামও আকাশ ছোয়া। বরিশালের বাজারে প্রতি কেজী ইলিশের সর্বনি¤œ দাম এখনো ১২শ টাকার ওপরে।
বাজারে প্রতিটি নিত্যপণ্যের এ মূল্যবৃদ্ধির সাথে সমাজের সর্বক্ষেত্রেই জীবনযাত্রার ব্যায় বৃদ্ধি নিয়েও চরম দুরবস্থার শিকার বরিশাল অঞ্চলের আম জনতা। রিক্সা ভাড়া থেকে শুরু করে সমাজের প্রতিটি স্তরে সেবার মূল্য গত এক বছরে ৫০Ñ৮০ ভাগ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু সমাজের বৃহত জনগোষ্ঠীর আয় বাড়েনি।
বিষয়টি নিয়ে বরিশালের বাজার সমুহে ক্রেতাদের সাথে আলাপকালে তাদের হতাশার সাথে ক্ষোভও লক্ষ্য করা গেছে। তাদের সবারই দাবী সংসার জীবন এখন অচলবস্থার সম্মুখিন। এমনকি অতিথি পরায়ন হিসেব খ্যাতীর বরিশাল অঞ্চলের কোন বাসা-বাড়ীতে এখন মেহমান আসলে আগের মত কারো মুখেই খুশি লক্ষ্য করা যায়না। বেশীরভাগই মনে মনে যথেষ্ঠ কষ্ট অনুভব করেন। অনেকে লজ্জায় মুখ ঢেকেও কষ্ট দুর করতে পারছেন না।


বিভাগ : বাংলাদেশ


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ইত্তিহাদেই সিটিকে রুখে দিল ইন্টার

ইত্তিহাদেই সিটিকে রুখে দিল ইন্টার

রোনালদোদের নতুন কোচ পিওলি

রোনালদোদের নতুন কোচ পিওলি

দক্ষিণ আফ্রিকাকে গুড়িয়ে আফগানদের ঐতিহাসিক জয়

দক্ষিণ আফ্রিকাকে গুড়িয়ে আফগানদের ঐতিহাসিক জয়

যেই গৌরব কেবল শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের

যেই গৌরব কেবল শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের

রিট করে ‘খেলাপি ঋণ স্থগিত’ বন্ধ চান ব্যাংক-মালিকরা

রিট করে ‘খেলাপি ঋণ স্থগিত’ বন্ধ চান ব্যাংক-মালিকরা

বিদেশি ঋণ ফের ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে

বিদেশি ঋণ ফের ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে

টাকা উদ্ধারের নামে ‘ঘুষ’ চাওয়ার অভিযোগ জিএম শাহজাহান চৌধুরীর’র বিরুদ্ধে

টাকা উদ্ধারের নামে ‘ঘুষ’ চাওয়ার অভিযোগ জিএম শাহজাহান চৌধুরীর’র বিরুদ্ধে

জাতীয় ঐক্য বিনষ্টকারী কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে হবে

জাতীয় ঐক্য বিনষ্টকারী কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে হবে

৬০ হাজার টন ইউরিয়া সার কিনবে সরকার, ব্যয় ২৩৬ কোটি টাকা

৬০ হাজার টন ইউরিয়া সার কিনবে সরকার, ব্যয় ২৩৬ কোটি টাকা

আইকনিক লিডার তারেক রহমান ও বাংলাদেশের রাজনীতি

আইকনিক লিডার তারেক রহমান ও বাংলাদেশের রাজনীতি

পতিত স্বৈরাচার ও ভারতের চক্রান্ত চলছেই

পতিত স্বৈরাচার ও ভারতের চক্রান্ত চলছেই

তারেক রহমানের রাষ্ট্রনায়কোচিত বক্তব্য ও দিকনির্দেশনা

তারেক রহমানের রাষ্ট্রনায়কোচিত বক্তব্য ও দিকনির্দেশনা

ইসরাইলের দখলদারিত্ব বন্ধের প্রস্তাব বিবেচনা জাতিসংঘের

ইসরাইলের দখলদারিত্ব বন্ধের প্রস্তাব বিবেচনা জাতিসংঘের

উত্তপ্ত মণিপুরে অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে নতুন করে গোলাগুলি

উত্তপ্ত মণিপুরে অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে নতুন করে গোলাগুলি

২৭ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার নতুন ভ্যারিয়্যান্ট

২৭ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার নতুন ভ্যারিয়্যান্ট

২০০ হাতি নিধনের সিদ্ধান্ত জিম্বাবুয়ের

২০০ হাতি নিধনের সিদ্ধান্ত জিম্বাবুয়ের

কলেরাসহ মারাত্মক রোগের ঝুঁকিতে সুদানের ৩৪ লাখ শিশু

কলেরাসহ মারাত্মক রোগের ঝুঁকিতে সুদানের ৩৪ লাখ শিশু

১১ হাজার ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীর প্রাণ গেছে

১১ হাজার ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীর প্রাণ গেছে

বেলারুশে হামলা হলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবে : লুকাশেঙ্কো

বেলারুশে হামলা হলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবে : লুকাশেঙ্কো

তাইওয়ান প্রণালীতে চীনের যুদ্ধবিমান

তাইওয়ান প্রণালীতে চীনের যুদ্ধবিমান