নোয়াখালী উচ্চ বিদ্যালয়ে অবৈধ কোচিং বাণিজ্যের বিরোধিতা করায় এক সহকারী শিক্ষিকাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।সরকার নিষিদ্ধ কোচিংয়ের বিরোধিতাকারী ওই শিক্ষিকার নাম তাছলিমা বেগম।

বৃহস্পতিবার (১২ অক্টোবর) ওই শিক্ষিকা বিদ্যালয়ে গেলেও তাকে কোনো ক্লাস নিতে দেয়নি কর্তৃপক্ষ ।

এরআগে বুধবার (১১ অক্টোবর) প্রধান শিক্ষক মাহমুদ রিয়াদ স্বাক্ষর করা চিঠিতে সাময়িক বরখাস্তের আদেশটি দেয়া হয়।

ওই চিঠিতে বলা হয়, বিদ্যালয়ের প্রধান এবং সহকারী প্রধানের সঙ্গে উচ্চস্বরে তর্ক করা, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে গ্রুপিং করা, চার বছরের শিশু সন্তানকে সাথে নিয়ে বিদ্যালয়ে আনা, প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে মিডিয়াসহ বাইরের লোকজনের সাথে কথা বলা এবং শ্রেণিশিক্ষক হিসেবে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওই বিদ্যালয়ের অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের অনিচ্ছা সত্ত্বেও প্রধান শিক্ষক অষ্টম থেকে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের কোচিংয়ে বাধ্য করে আসছেন। এজন্য জনপ্রতি মাসে অতিরিক্ত ৫০০ টাকা করে আদায় করছেন। কেউ টাকা দিতে না চাইলে শ্রেণিকক্ষের হাজিরা খাতায় অনুপস্থিত দেখানোসহ পরীক্ষা হলে দেখে নেয়ার হুমকি দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে ।

কোচিং করানোর জন্য প্রত্যেক শিক্ষককে সকাল ৮টায় বিদ্যালয়ে উপস্থিত এবং বিকেল ৫টার পর বাড়ি যেতে হয়। এমনকি শুক্রবারসহ ছুটির দিনেও সবাইকে বিদ্যালয়ে হাজির থাকতে বাধ্য করেন প্রধান শিক্ষক। তার এ নিয়মের বিরোধিতা করেন ভুক্তভোগী সহকারী শিক্ষক তাছলিমা বেগম। এতে তার ওপর ক্ষিপ্ত হন প্রধান শিক্ষক মাহমুদ রিয়াদ।

প্রধান শিক্ষক ক্ষুব্ধ হওয়ার কথোপকথনের একটি অডিও প্রকাশ হয়েছে । এতে বিদ্যালয়ে এভাবে কোচিংয়ের সরকারি কোনো নিয়ম নেই বলায়, শিক্ষক তাছলিমা বেগমের ওপর ক্ষুব্ধ হতে শোনা যায় প্রধান শিক্ষক মাহমুদ রিয়াদকে। প্রধান শিক্ষককে বলতে শোনা যায়, ‘আমার নির্দেশমতো না চললে এ বিদ্যালয়ে চাকরি করা সম্ভব নয়’।

কথোপকথনের সত্যতা নিশ্চিত করে সহকারী শিক্ষিকা তাছলিমা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমি ষড়যন্ত্রের শিকার।’ এর বেশি কোনো কথা বলতে রাজি হননি তিনি ।

এবিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক মাহমুদ রিয়াদ সাময়িক বরখাস্তের কথা স্বীকার করে বলেন, ‘কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।’

কোচিংয়ের বিষয়ে তিনি বলেন, অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলেই এবং তাদের সম্মতিতে অষ্টম থেকে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের কোচিং করানো হয়। তিনি দাবি করেন, নীতিমালা মেনেই বিদ্যালয়ে কোচিং চালানো হচ্ছে।
এ বিষয়ে নোয়াখালীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) অজিত দেব বলেন, সরকার গেজেট করে বিদ্যালয়ে কোচিং বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে। নোয়াখালী উচ্চ বিদ্যালয়ে সরকার নিষিদ্ধ কোচিং বাণিজ্যের বিষয়টি আমাদের জানা নেই। খোঁজ নিয়ে সত্যতা পেলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।