রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যুতে আবারো সিদ্ধান্ত ছাড়াই ফিরে গেলেন মিয়ানমার প্রতিনিধি দল
০১ নভেম্বর ২০২৩, ১২:১১ পিএম | আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০২৩, ১২:১১ পিএম
কোন ধরনের ইতিবাচক সিদ্ধান্ত ছাড়াই মঙ্গলবার (৩১-অক্টোবর) বিকেলে ফিরে গেছেন মিয়ানমার থেকে আগত ৩৬ সদস্যের প্রতিনিধি দল। সচেতন মহলমনে করছেন, আবারও ভেঙে গেলো প্রত্যাবাসন ইস্যূ নিয়ে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে মিয়ানমার প্রতিনিধি দলের আলোচনা। নানা শর্তের কারণে তারা স্বদেশে ফেরাতে আস্থা অর্জন করতে পারেনি রোহিঙ্গাদের।
মঙ্গলবার ( ৩১-অক্টোবর) সকাল সাড়ে ৮ টায় টেকনাফ পৌরসভার নাফ নদীর জালিয়াপাড়া জেটিঘাট দিয়ে বাংলাদেশ সীমান্তে পৌঁছায় মিয়ানমারের ইমিগ্রেশন বিভাগের ৩৬ সদস্যবিশিষ্ট প্রতিনিধি দলটি।
এরপর বিকেল ৪টা পর্যন্ত প্রতিনিধি দলের সদস্যরা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে প্রত্যাবাসন নিয়ে মতবিনিময় করেন। প্রতিনিধি দলটি দুইভাগে বিভক্ত হয়ে নদী নিবাস রেস্ট হাউজ এবং গণপূর্ত বিভাগের রেস্ট হাউজে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। আলোচনা শেষে প্রতিনিধি দলটি মিয়ানমার ফিরে গেছেন।
এদিকে আজ বুধবার(১ নভেম্বর’) রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আলোচনা করতে মিয়ানমার প্রতিনিধি দলটি আবারও টেকনাফ আসবেন বলে জানিয়েছেন শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।
ব্রিফিংয়ে শরণার্থী কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ‘প্রতিনিধি দলটি দুদলে বিভক্ত হয়ে ১৮০ জন রোহিঙ্গা পরিবার প্রধানদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। মূলত প্রত্যাবাসনে রোহিঙ্গাদের সম্মতি আদায়ে এই আলোচনা চলছে।’
আলোচনার জন্য আসা কয়েকজন রোহিঙ্গা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, আলোচনার মধ্যদিয়ে নিজ ভিটেমাটি ও নাগরিকত্ব দিলেই স্বদেশে ফিরবেন তারা।
শরণার্থী কমিশনার বলেন, ‘জল ও স্থল পথে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন হবে। যা ২০১৮ সালে দুই দেশের চুক্তিতে উল্লেখ্য রয়েছে’। আমরা জল ও স্থল পথে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য প্রস্তুত রয়েছি। আমরা আশা করি, দুই পক্ষের কথাবার্তার মাধ্যমে তাদের মধ্যে যে আস্থার সংকট রয়েছে, সেটি দূর হবে এবং অচিরেই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হবে, যার জন্য আমরা প্রস্তুত।’
আর দু'পক্ষের আলোচনার মাধ্যমে সংকটের সমাধান হবে বলেও আশা প্রকাশ করছেন তিনি।
রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন অবশ্যই মর্যাদাপূর্ণ, টেকসই এবং স্বেচ্ছায় হবে-এই জন্য বাংলাদেশ সরকার সবসময় কাজ করে যাচ্ছে বলে জানান শরনার্থী, ত্রান ও প্রত্যাবাসন কমিশনার।
অন্যদিকে রোহিঙ্গারা বলছেন, প্রত্যাবাসনের নামে তামাশা করছে মিয়ানমার সরকার। জুড়ে দিচ্ছে নানা ধরনের শর্ত। আর বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায় ও টেকসই প্রত্যাবাসন নিয়ে সরকার কাজ করছে বলে জানিয়েছেন প্রত্যাবাসন সংশ্লিষ্টরা।
মিয়ানমারের ৩৬ সদস্যের প্রতিনিধি দলের দিনব্যাপী আলোচনা শেষে মঙ্গলবার বিকেলে সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মিয়ানমার বিষয়ক সেলের মহাপরিচালক মিয়া মো. মাইনুল কবির বলেন, ‘ প্রত্যাবাসন একটা ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। প্রত্যাবাসন নিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের একটা চুক্তি হয়েছে। চুক্তির আওতায় বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, যাতে রোহিঙ্গারা স্বেচ্ছায় মিয়ানমার ফিরে যায়। বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায় ও টেকসই প্রত্যাবাসন নিয়ে সরকার কাজ করছে। সরকার সবসময় রোহিঙ্গা সমস্যা স্থায়ীভাবে সমাধানের ওপর গুরুত্বারোপ করে আসছে। রোহিঙ্গারা যাতে নিজ দেশে ফিরে গিয়ে নিজেদের জায়গায় স্থায়ীভাবে বসবাস করতে পারে, সেই বিষয়ের গুরুত্ব দিয়ে আসছে'।
তিনি আরো বলেন, ' ইতিপূর্বে, চলতি বছর মিয়ানমারের প্রতিনিধি দল দুইবার রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আলাপ করতে এসেছিলেন। এসময় মিয়ানমার প্রতিনিধি রোহিঙ্গাদের জন্য সেখানে (মিয়ানমার) যে ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, তা নিয়ে আলোচনা করেছিলেন। আজকেও তারা সুনির্দিষ্ট করে বলেছে, কোন গ্রামে কে যাবে; কিভাবে যাবে। এই আলোচনাটা আমাদের সঙ্গে অব্যাহত আছে, অব্যাহত থাকবে।’
তবে রোহিঙ্গারা কখন স্বদেশে ফিরে যাবেন সেটা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে বলে মন্তব্য করেন মাইনুল কবির। তিনি বলেন, রোহিঙ্গারা শুধু বাংলাদেশ থেকে প্রত্যাবাসনই নয়, প্রত্যাবাসন যেন টেকসই হয় এবং প্রত্যাবাসনের পরে যেন তারা সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে পারে সে লক্ষ্যেই মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা চলছে।’
প্রত্যাবাসন নিয়ে রোহিঙ্গাদের সংশয় ও অবিশ্বাস দূর করতে মিয়ানমারের সঙ্গে সবধরনের আলোচনার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এ কর্মকর্তা’।
প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ্য যে, চলতি বছরের ১৫ মার্চ প্রথম দফায় এবং ২৫ মে দ্বিতীয় দফায় মিয়ানমার প্রতিনিধি বাংলাদেশে এসে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে মতবিনিময় করতে এসেছিলেন এবং গত ৫ মে-২০২৩ ইংরেজি তারিখে, বাংলাদেশের ৭ সদস্য এবং রোহিঙ্গাদের ২০ সদস্যসহ মোট ২৭ জনের প্রতিনিধি দলও মিয়ানমারের মংডুর পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু রোহিঙ্গারা সরেজমিনে মিয়ানমার ঘুরে এসে প্রত্যাবাসনের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি না হওয়ায় প্রত্যাবাসনে অসন্তোষ প্রকাশ করেন।
গতকালের মিয়ানমার প্রতিনিধির বাংলাদেশের রোহিঙ্গাদের সাথে আলাপচারিতায়ও কোনপ্রকার উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির লক্ষণ পরিলক্ষিত না হলেও উভয় দেশ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের অনুকুল পরিবেশ পরিস্থিতি সৃষ্টির আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
বান্দরবানে বিজিবির অভিযান: অস্ত্র-গোলাবারুদ, ড্রোন ও সিগন্যাল-জ্যামারসহ প্রযুক্তি সরঞ্জামাদি উদ্ধার
কেরানীগঞ্জে তিন লক্ষ জাল টাকা এবং জাল টাকা তৈরির সরঞ্জামাদিসহ, গ্রেফতার ২
পলাতক আওয়ামী খতিবের বিরুদ্ধে বায়তুল মোকাররমে বিক্ষুব্ধ জনতার মিছিল
মাগুরায় যুবকের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার
বায়তুল মোকাররমে দুই পক্ষের সংঘর্ষ, নামাজ না পড়িয়েই পালিয়ে গেলেন খতিব
ফলোঅনের শঙ্কায় বাংলাদেশ
শিক্ষক ভিন্ন ধর্মালম্বি হলেও তার সাথে ভদ্রতা, সৌজন্যবোধ ও সম্মান করতে হবে -ছারছীনার পীর ছাহেব
আইন নিজের হাতে তুলে নিলে কঠোর ব্যবস্থা: পুলিশ সদরদপ্তর
আখাউড়ায় ১১৫০ কেজি ভারতীয় কফিসহ গ্রেপ্তার ৩
কোটালীপাড়ায় বীর মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের উপর সন্ত্রাসী হামলা, ঘরবাড়ি ভাংচুর লুটপাট করেছে সন্ত্রাসীরা
সাকিব-লিটনের ব্যাটে ধ্বংসস্তূপ থেকে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা
মণিপুর সংঘাত ইস্যুতে নতুন পদক্ষেপ নিচ্ছে ভারত সরকার
বাংলাদেশ বেতারে উর্দু সার্ভিস চালু করতে পর্যালোচনা সভা
তোফাজ্জলের জানাজায় মানুষের ঢল, দাফন হলো বাবা-মা ও ভাইয়ের কবরের পাশে
দ্রুত ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে বাংলাদেশ
গণপিটুনিতে হত্যা: ঢালাওভাবে ছাত্রদের বিজয়কে খাটো করতে আওয়ামী মিডিয়ার আস্ফালন, সমালোচনার ঝড়
সাবেক এমপি ইয়াকুবসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা
সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান কারাগারে
ভারতকে ৩৭৬ রানে গুটিয়ে দিল বাংলাদেশ, হাসানের ৫
লিবিয়া থেকে ফিরলেন আরো ১৫০ অনিয়মিত বাংলাদেশি