কোরাল মাছের পোনা উৎপাদনে মৎস্য বিজ্ঞানীদের সাফল্য
২৫ নভেম্বর ২০২৩, ০৪:৩৫ পিএম | আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০২৩, ০৪:৩৫ পিএম
অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ও অনেক
কক্সবাজারে হ্যাচারির ট্যাংকে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে ভেটকি বা কোরাল মাছের পোনা উৎপাদনে সফল হয়েছেন বিএফআরআই’র বিজ্ঞানীরা। গত বৃহস্পতিবার রাতে হ্যাচারিতে কয়েকটি মা মাছ প্রায় ২৫ লাখ ডিম ছাড়ে এবং গতকাল শুক্রবার সকাল ১১টা থেকে সে ডিম ফোটে রেণু হতে শুরু করে। এ প্রক্রিয়া তিনদিন পর্যন্ত চলবে বলে জানান বিএফআরআই কর্মকর্তারা।
কক্সবাজারস্থ বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএফআরআই) সামুদ্রিক মৎস্য ও প্রযুক্তি কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শফিকুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে কোরাল মাছের বৈজ্ঞানিকভাবে চাষ হয় না বললেই চলে। মে–জুন মাসে ঘের মালিকরা প্রাকৃতিক উৎস থেকে ভেটকি মাছের পোনা সংগ্রহ করে বাগদা চিংড়ি ও অন্যান্য মাছের সাথে সনাতন পদ্ধতিতে চাষ করে থাকে। তিনি জানান, এ কেন্দ্রের এক দল গবেষক দীর্গদিন ধরে কৃত্রিম উপায়ে কোরাল মাছের পোনা উৎপাদন নিয়ে নিবিড়ভাবে গবেষণা করছেন। কেন্দ্রের হ্যাচারিতে আবদ্ধ পদ্ধতিতে মা মাছ তৈরি করে গত ২৩ নভেম্বর (বৃহস্পতিবার) ব্রিডিং ট্রায়ালে কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে সন্তোষজনক সাফল্য পাওয়া গেছে। কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. আক্তারুজ্জামান শাকিলের নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রের একদল গবেষক এ সাফল্য পান।
২০১৯ সালে অন–বোট ব্রিডিং পদ্ধতিতে কৃত্রিম প্রজননে সাফল্য পাওয়ার পর ২০২৩ সালে এসে নিবিড়ভাবে আবদ্ধ পদ্ধতিতে কৃত্রিম প্রজননে সফল হয়েছেন কেন্দ্রের গবেষক দল।
বর্তমানে এ হ্যাচারিতে ৪৪টি কোরাল মাছ লালন পালন করা হচ্ছে, যারমধ্যে ২১টি মাছ প্রজননক্ষম। তবে প্রজননক্ষম মাছগুলোর মধ্যে এ পর্যন্ত কয়টি ডিম ছেড়েছে, তা এখনও বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত হতে পারেননি বলে তিনি জানান।
ড. শফিকুর রহমান জানান, কোরালের পোনা প্রজননের জন্য পানির লবণাক্ততার পরিমাণ ৩০ থেকে ৩১ পিপিটি, তাপমাত্রা ৩০ থেকে ৩১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, পানির স্বচ্ছতা ২০ থেকে ২২ সেমি, গভীরতা ১৪ থেকে ২৪ ফুট এবং পানির পিএইচ ৮ থেকে সাড়ে ৮ পর্যন্ত এস্টেন্ডার্ড।
এর আগে গত ৪ নভেম্বর সন্ধায় কক্সবাজার শহরের কলাতলীস্থ গ্রিনহাউজ মেরিকালচার হ্যাচারির গবেষক দল প্রথমবারের মতো বেসরকারি পর্যায়ে কোরাল মাছের কৃত্রিম প্রজননে সক্ষম হন। হ্যাচারির স্পনিং ট্যাংক–এ একটি মা মাছ প্রায় ১০ লাখ ডিম ছাড়ে এবং সেখান থেকে প্রায় প্রায় ৬ লাখ রেণু পোনা জন্ম নেয়। বর্তমানে হ্যাচারিতে রেণু পোনার প্রতিপালন করা হচ্ছে বলে জানান গবেষক দলের প্রধান তরিকুল ইসলাম চৌধুরী ও পলাশ খন্দকার। তারা জানান, রেণুপোনা বড় হলে ক্রমান্বয়ে সেগুলোকে নার্সারি পুকুরে ও চাষাবাদ পুকুরে অথবা খাচায় স্থানান্তর করা হবে। তবে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয় ২০১৬ সালে কোরাল মাছের পোনা উৎপাদন নিয়ে গবেষণার জন্য মালেশিয়ার তেলেঙ্গানা ইউএমটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে একটি সমঝোতা চুক্তি করলেও এখনও তারা সফল হয়নি।
ভেটকি বা কোরাল মাছ বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকার অতি পরিচিত ও জনপ্রিয় এবং সুস্বাদু বৃহৎ আকারের সামুদ্রিক মাছ। এ মাছটি কম কাটাযুক্ত, দ্রুত বর্ধনশীল ও খেতে সুস্বাদু বলে এর বাজারমূল্য বেশি। আন্তর্জাতিক পর্যায়েও এ মাছের ব্যাপক চাহিদা ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব রয়েছে।
থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়াসহ প্রতিবেশী দেশগুলো গত ২/৩ দশক আগেই হ্যাচারিতে কৃত্রিম উপায়ে কোরাল মাছের পোনা উৎপাদনে সক্ষম হলেও বাংলাদেশের বিজ্ঞানিরা এতদিন ছিলেন পিছিয়ে।
কক্সবাজারসহ বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূলীয় এলাকা ভেটকি বা কোরাল মাছ চাষের উপযুক্ত বলে মতামত দিয়েছেন বিভিন্ন দেশের কোরাল মাছ চাষ বিশেষজ্ঞরা। অবশ্য দীর্ঘদিন ধরে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, সাতক্ষীরা, খুলনা ও বাগেরহাটসহ দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে ঘেরের মাঝে চিংড়ির সাথে কোরাল মাছেরও চাষ করা হয়। কোরাল মাছ লবণাক্ত, আধা–লবণাক্ত, এমনকি স্বাদু পানিতেও অধিক ঘনত্বে চাষ করা যায়। এ মাছের রোগ বালাই কম বলে সাম্প্রতিককালে অনেকেই চিংড়ি চাষ বাদ দিয়ে ভেটকি চাষ করে সফল হয়েছেন। তবে পোনা সংকটের কারণে এ মাছের চাষকে সম্প্রসারিত করা যাচ্ছে না। অথচ অর্থনীতিতে এর বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।
বিজ্ঞানীরা জানান, মহেশখালীর সোনাদিয়া চ্যানেল মোহনার ফাড়ার চর নামক স্থানে ২৩ বর্গ কিমি. এলাকাজুড়ে তাইল্যা ও কোরাল মাছের একটি প্রাকৃতিক অভয়ারণ্য রয়েছে। চরটি ভাটার সময় জেগে উঠে ও জোয়ারের সময় নিমজ্জিত থাকে। এ চরের অগভীর এলাকায় আগত জোয়ারের পানিতে সান্ধ্যকালীন সময়ে স্ত্রী ও পুরুষ কোরাল মাছ পরিপক্ক ডিম ও শুক্রাণু ছাড়ে। তীব্র ঢেউ ও ঘূর্ণনের মধ্যে ডিম ও শুক্রাণুর মধ্যে বাহ্যিক নিষিক্তকরণের মাধ্যমে ভেটকি মাছের প্রজনন সম্পন্ন হয়ে থাকে। প্রজনন ক্ষেত্রে নিষিক্ত ডিম্বাণুর প্রায় ৬০ থেকে ৭০ ভাগ তৈল গ্রন্থি বিদ্যমান থাকায় নিষিক্ত ডিম সাগরের পানির উপরিস্তরে ভাসতে থাকে এবং জোয়ারের পানির সাথে ভাসতে ভাসতে একসময় উজানের উপকূলীয় নদী–নালার কম লবণাক্ত পানিতে পৌঁছে। ১২ থেকে ১৫ ঘণ্টার মধ্যে এরা ডিম থেকে লার্ভা আকারে বড় হয়ে সোনাদিয়া, মহেশখালী, বাঁকখালী নদীর উজান দিকের খুরুশকুল, পেশকারপাড়া, এসএমপাড়া, চান্দেরপাড়া ইত্যাদি এলাকায় (জোয়ারের পানি যেখান পর্যন্ত প্রবেশ করে সে সমস্ত এলাকায়) অগভীর জলাশয়ে ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে।
মাছটি ইংরেজিতে Seabass নামে পরিচিত। আর মাছটির প্রাণিতাত্ত্বিক বা বৈজ্ঞানিক নাম হল Lates calcarifer. #
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
স্ত্রী-সন্তানসহ শাহরিয়ার আলমের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
মোজাম্বিকে বাংলাদেশিদের ৩শ' ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান লুটপাট ও ভাঙচুর
অতিসত্বর নির্বাচন হওয়ার দরকার : আমীর খসরু
দুর্নীতিগ্রস্ত লুটেরা মাফিয়াদল যাতে বাংলাদেশে আর ফেরত না আসতে পারে : মেজর হাফিজ
বঞ্চিত ৭৬৪ কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দিচ্ছে সরকার
ক্যাডার বর্হিভূত রাখার সুপারিশ প্রত্যাখ্যান শিক্ষা ক্যাডারের
শেখ হাসিনাসহ ৬৩ জনের নামে মামলা
অভিযানের খবরে পালাল শ্রাবণধারা কারখানার পরিচালক-ম্যানেজার
সর্বজনীন পেনশন স্কিমে নেই আশানুরূপ সাড়া
একতাই পারবে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে
তিতাস গ্যাস টি.এন্ড ডি. পিএলসি’র ৫% নগদ লভ্যাংশ অনুমোদিত
ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল্লামা সাজিদুর নির্বাহী সভাপতি মাওলানা জুনায়েদ
‘আপনারা আমার খালেদকে ফেরত এনে দেন’ : নিখোঁজ সহ-সমন্বয়কের বাবা লুৎফর
২৮ ডিসেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে খেলাফত মজলিসের অধিবেশন প্রেস ব্রিফিংয়ে নেতৃবৃন্দ
ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা
ইনসেপ্টার বিক্রয় প্রতিনিধির ২২টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ
পিকে হালদারের পাঁচ সহযোগীর ব্যাংক হিসাব ফ্রিজের নির্দেশ
ভূমধ্যসাগরে ৮ বাংলাদেশি নিহত
মুক্তি পেলেন ভারতের সমুদ্রসীমায় গ্রেফতার ১২ বাংলাদেশি
আ.লীগকে পুনর্বাসনকারীদের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়বে গণঅধিকার পরিষদ