কক্সবাজারের পেকুয়ায় উপজেলা কৃষি অফিসের যন্ত্রপাতি ও উপকরণ সংরক্ষণাগার গুদাম নির্মাণ কাজে ব্যাপক অনিয়ম-দূর্নীতির অভিযোগ উঠেছে কার্যাদেশ প্রাপ্ত ঠিকাদারের বিরুদ্ধে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ‘সমন্বিত ব্যবস্থাপনায় কৃষি যান্ত্রিকীকরণ’ প্রকল্প (জুলাই-২০২০ থেকে জুন-২০২৫) জিওবি’র আওতাধীন সারাদেশে ৩০০টি উপকরণ সংরক্ষণাগার গুদাম নির্মাণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে পেকুয়া উপজেলায় কৃষি অফিসের সাথে লাগোয়া চলতি বছরের জুন মাসে এক তলা ভবনটির কাজ শুরু হয়। ইতোমধ্যে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করে ঠিকাদারের ইচ্ছেমতো ভবনের প্রায় ৮০ শতাংশ কাজ শেষ করা হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা পরিষদের কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন,চার রুম বিশিষ্ট ভবনটি'র ইতিমধ্যে তিন রুমের কাজ প্রায় সম্পন্ন করে গুদামে মালামাল রাখা হয়েছে। ভবনের নিচে ব্যাচমেন্ট ঢালাইয়ে নিম্নমানের ইট,কাদা- মিশ্রিত বালি, ইটের কংকর ব্যবহার করা হয়েছে। আর তাড়াহুড়ো করে ভবনের ছাদ ঢালাইয়ের সময় অতি নিম্নমানের সিমেন্টের সাথে কাদা মিশ্রিত বালি ও লোহার রড় ব্যবহার করা হয়েছে। ছাদ ঢালাইয়ে সিমেন্টের সাথে পরিমাণে কাঁদা মিশ্রিত বালি ব্যাবহারের অভিযোগও রয়েছে। ভবনের ফ্লোরে সিমেন্টের আস্তর দিয়ে নিম্নমানের ইট ব্যবহার করা হয়েছে।

প্রায় কোটি টাকা বরাদ্দের এ ভবন নির্মাণে ঠিকাদার জসিম উদ্দিন পেকুয়ার পাশ্ববর্তী কুতুবদিয়ার আফাজ উদ্দিন নামের এক রাজমিস্ত্রিকে দিয়ে সাব কন্টাকে মাত্র ৫ লাখ টাকা দিয়ে ভবনটির নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। চলতি বছরের জুন মাস থেকে ভবনের কাজ শুরু হওয়ার পর থেকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট প্রকল্প অফিসের কোন কর্মকর্তা-কর্মচারী কাজটি তদারকি করতে সরেজমিন পরিদর্শন করেননি। এছাড়া তদারকিতে নেই স্থানীয় কৃষি অফিসের কোন কর্মকর্তারাও।
আমাদের পেকুয়া উপজেলা সংবাদদাতা গোলাম রহমান জানান,২৯ নভেম্বর বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে পেকুয়া উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্সের অভ্যন্তরে উপজেলা কৃষি অফিসের পাশে সরেজমিনে পরিদর্শণ করে দেখা যায়, কুতুবদিয়ার আফাজ উদ্দিন নামের এক ব্যক্তি কয়েকজন শ্রমিকের মাধ্যমে ভবনের ফ্লোরে ইট বিছানোর সাথে নিম্নমানের বালি দিয়ে কাজ করছেন। আফাজ উদ্দিনের কাছে এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাঙ্গামাটির জসিম সাহেবের কাছ থেকে তিনি ভবনটি তৈরী করে দেওয়ার জন্য ৫ লাখ টাকা কন্টাকে কাজটি নিয়েছেন। ভবন তৈরীর উপকরণ ঠিকাদার সংরবরাহ করছেন। তিনি শুধু ভবন নির্মাণ কাজের কন্টাক্ট করেছেন। নিম্নমানের ইট, বালি ও সিমেন্ট কেন ব্যবহার করা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঠিকাদার যে রকম উপকরণ সরবরাহ করেছেন তিনি সেটিই ব্যবহার করে কাজ করেছেন।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, পেকুয়া উপজেলা কৃষি অফিসারের সাথে যোগাসাজশে ঠিকাদার জসিম উদ্দিন সাব কন্টাকে কাজটি নিজের ইচ্ছেমতো অত্যন্ত নিম্নমানের উপকরণ দিয়ে করাচ্ছেন। এরপরও অনিয়ম বন্ধে কোন পদক্ষেপ নিচ্ছেনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিপ্তরের সংশ্লিষ্ট প্রকল্প অফিস।
অনিয়ম প্রসঙ্গে ঠিকাদার জসিম উদ্দিনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যে ভাবে ডিজাইন করে দিয়েছে সে মোতাবেক কাজ করা হচ্ছে।
যেভাবে ফ্লোরে নিম্নমানের ইট দিয়ে কাজ করা হচ্ছে এটি তিন মাস পর ফাটল সৃষ্টি হলে তারপর কি হবে জানতে চাইলে? ঠিকাদার জসিম উদ্দিন বলেন, আমার কিছু করার নেই। তবে তিনি এটিও বলেন এখানে কোন ধরনের অনিয়ম হচ্ছেনা।

পেকুয়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা তপন রায় বলেন, ঠিকাদার শিডিউল মোতাবেক কাজ করছে বলে জানি। এর বাইরে আমি কিছু জানিনা। সচেতন মহলের মতে এখানে 'মিলে মিশে করি কাজ হার-জিতে নাহি লাজ' এরকমই হচ্ছে।