ঢাকা   মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৯ আশ্বিন ১৪৩১
অবৈধ পথে ইউরোপে মরন যাত্রা -১০

মালেশিয়া থেকে অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার পথে মাফিয়া দের অবর্ননীয় নির্যাতনে ১০ লাখ মুক্তি পন।

Daily Inqilab ফরিদপুর জেলা সংবাদদাতা

০৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৪:২৯ পিএম | আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৪:২৯ পিএম

 

 

 

ফরিদপুর সদর থানার শরীয়তুল্লাহ ও হেলিপোর্ট বাজারে ব্যবসা করেন মোঃ ইসমাইল ইনকিলাব কে বলেন,আমার আপন ভাগিনা মোঃ সেজান(২৫) কে গত ৫/৭ মাস আগে সুদে করে টাকা এনে এবং বাড়ীর বহু সম্পদ বিক্রি করে তার আপন ভায়রার মাধ্যমে মালয়শিয়ায়তে পাঠান ৫ লাখ টাকা খরচ করে। তিনি আরো জানান, মালয়েশিয়া পাঠানোর পর কিছুদিন স্বাভাবিক ভাবে জীবন যাপন করে সেজান। এরপর বেশী টাকা কামাই করার আশায় মালায়শিয়ান দালাল মোঃ তবিবরের মাধ্যমে ওখান থেকে অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার জন্য আর ১৯ লাখ টাকা জমা দেই। এরপর শুরু হয় বিশাল বাড়ী গাড়ি করার আশায় আটঘাট বেঁধে নেমে পড়া। সেজান জঙ্গলে দীর্ঘদিন দিন চোরাই পথে হাঁটতে হাঁটতে পায় ফোসকা পড়ে যায় তার।
তারপর ও খুঁজে পায়নি সোনার হরিন কেনা স্বপ্ন তথা অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার পথ। জঙ্গলে পাড়ি দেওয়ার পড় নদী পথে অস্ট্রেলিয়া যায়ার পথে, পরে যায় মাফিয়াদের চক্ররে হাতে।দীর্ঘদিন যাবৎ মাফিয়াদের ঢেরায় অর্ধাহারে অনাহরে থাকতে হয় সেজানকে। পানি তৃষ্ণায় কলিজা ফেটে বের হতে চাইতো। তার পরও একটু পানি দিতো না তারা। পানি চাইলে মাফিয়াদের সহযোগীরা প্রসাব করে মুখের কাছে ধরে আনতো। খেতে না চাইলে মাথায় ঢেলে দিতো। কখন কখনও মুখের উপর থুঃথুঃ ছিটাতো আবার কখনও শরীরে প্রসাব ছিটিয়ে দিতো। প্রায় ২০/২৫ দিন পর্যন্ত চোখ বেধে রাখছিল। সারাদিনে একটি মাত্র আটার রুটি খেতে দিতো। মশার কামড়ে মরে গেলেও ছিল না গ্লোব বা ঔষধ ছিঁটানোর ব্যবস্হা।
অন্ধকার একটি ঘুটঘুটে ঘরে থাকতে দিতে। যেখানে স্বাভাবিক ভাবে ১০/১২ জন লোক থাকতে পারে সেখানে থাকতো প্রায় ৪০ জনের মত। কেউ বসে কাটাতো। কেউ একজন আরেরক জনের পায়ের উপর অথবা কেউ কারোর হাঁটুতে ভর করে থাকতো। প্রচন্ড ঘরমে কাক ভেজা হতে হতো সবাইকে।
প্রতিদিন তিন বেলা চালতো বিভিন্ন কায়দায় প্রত্যেকের উপর অবর্ননীয় শারীরিক নির্যাতন। সেই নির্যাতনের চিত্র ভিডিও বার্তায় পাঠাতো ওর মা- বাবার কাছে। কারো স্ত্রী সন্তান সহ আপন স্বজনদের নিকট পাঠিয়ে সবার কাছ থেকেই মোটা অংকের মুক্তিপন আদায় করতো। সেজানের মামা ইসমাইল মামা ইনকিলাব আরো কে বলেন, ভাগিনাকে মোট ৪ লাখ টাকা খরচ করে মালয়েশিয়া পাঠাই। অস্ট্রেলিয়ার জন্য ৫ লাখ টাকা দিতে হয়। এর পর ভাগিনার জীবন বাঁচানোর জন্য মুক্তিপন দিতে হয় আরো ১২ লাখ টাকা। মোট খরচ হয় ২১ লাখ টাকা। কি আজব দুনিয়া। কি নিষ্টুর পরিনতি। চাহিদা মত টাকা না দিলে চলে অমানবিক নির্যাতন।
এখানে ই শেষ নয়, মুক্তি পনের টাকা পরিশোধ করার পর- পরই ওদের গরুর গোস্তো এবং মুরগির গোস্ত দিয়ে বিড়ানি পোলাও খেতে দিল। এই চিত্র ও আমাদের ভিডিও বার্তায় দেখায়। তখনই একটু শান্তি পাই সবাই। শুধু আমার ভাগি নয় এরকম যতোজন ওর সাথে গেছে এবং ও সাথে যারা মাফিয়াদের হাতে ধরা পড়ছে তাদের সকলেরই চাহিদা মত টাকা দিয়ে ফরতে হয়েছে। উল্লেখিত কথাগুলো সেজানের মুখ থেকে শুনে এবং জেনে ইনকিলাব কে বললেন। দৈনিক ইনকিলাবের সাথে কথা হয় শরীয়তপুরের চেয়ারম্যান বাজারের মোঃ দিন ইসলামের সাথে তিনি জানান, আমা ছোট ছেলে আলামিন(২৩) কে জায়গা জমি বিক্রি করে নড়িয়ার আদম দালাল মোঃ কামালের মাধ্যমে লিবিয়া হয়ে ইটালি যাওয়ার জন্য ১৯ লাখ টাকা দেই। দীর্ঘদিন হয়ে গেল এখন সন্তানের সাথেও কথা বলতে পারি না। দালালেও ফোন ধরে না। কথায় মাদারীপুর শিবচর উপজেলার কুদুবপুর গ্রামের মোঃ ছালাম মাতুব্বরের সাথে তিনি ইনকিলাব কে বলেন, ভাইজানরা কি আর বলবো, লিবিয়া হয়ে ইতালি যাওয়ার উদ্দেশ্য স্হানীয় দালাল আমীর হোসেনকে ৯ লাখ টাকা দেই। যতোদিন টাকা পরিশোধ হয়নি ততোদিন খুব ভাল আচার ব্যাবহার করছে এখন বিদেশেও নেয় না টাকা ও ফেরত দেয় না এমন অবস্হায় ৪/৫ মাস কেটে যাওয়া পর ইতালিতে নেওয়ার কথা বলে আমাকে ভারতে নিয়ে যায়। ওখানে চুরি করে ২/৩ মাস থাকার পর দালালের সামনেই সন্ত্রাসীরা আমাকে ধরে নিয়ে যায়। দীর্ঘদিন আমাকে বহু কষ্টের কাজ করায় এরপর আমি বাড়ী ফিরতে চাইলে আটক করে রাখে। সেখান থেকে পালাতে গেলে আরও খারাপ লোকের হাতে ধরা পড়ি। তাদের হাত থেকে জীবন বাঁচানোর জন্য মুক্তিপন দিতে হয় আরো ২ লাখ। এখন বাদাম বিক্রি করে সংসার চালাই। দালালদের নামে মামলাও করতে পারি না বিচারও দিতে পারি না। ভুল করছি আমি মাশুল দেই আমি। মাঝখান থেকে লাখ লাখ টাকা শেষ। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া যে জীবনটা নিয়ে ফেরত আসছি। ইনকিলাবের সাথে কথা হয়, ফরিদপুর কানাইপুর ইউনিয়নের রেবেকা(২০) বেগমের সাথে তিনি ইনকিলাব কে বলেন, কি বলবো ভাই বিদেশে পাঠানোর নামে দালাল যতো খারাপ কাজ করে এর কোন শেষ নাই। পাসপোর্ট করতে গেলে তার সাথে শারীরিক সম্পর্ক করতে হয়। ঢাকা হোটেলে থাকলেও----। আবার লেবান,সৌদি আরব ওখানে গেলেও বাসা বাড়িতে বাবা - ছেলেরা মিলে কি না নির্যাতন করে তা মুখে বলতে পারব না। আবার সব দালাল বা জায়গাই খারাপ না। তবে একটা বিষয় পরিস্কার জানতে পেরেছি। যে সব দালালরা খারাপ জায়গায় পাঠায় তারা বেশী টাকা পায় এবং কম মুনফা হলে তারাও বেপরোয়া হয়ে যায়।
ইনকিলাবের সাথে কথা হয়, চরভদ্রাসন উপজেলার নারিকেল বারিয়া চরের কৈতুরী বেগম( ২৩) পিতাঃ রহমান বেপারির সাথে তিনি ইনকিলাব কে বলেন, ভাই সাহেবরা আমরা সারাদিন রাস্তা ঘাটে কাজ করি একটু সুখে থাকার জন্য জর্টান যাওয়ার জন্য দালালের কথা মত ৬ টা ছাগল বিক্রি করে প্রায় ৫৪০০ টাকা দেই। দালাল বিদেশে পাঠানোর নাম করে আমারে ভারতে একটা খারাপ জায়গায় পাঠাইয়া দেয়। ওখানে যাওয়ার পর জানলাম এটা ভারত। কি যে অত্যাচার হইছে। ২ মাস পর একজনের হাতে ধরে পালাইয়া আসি। জেলও খাটি ১০/২১ দিন। ফিরে আসার পর নানান অসুখে ভুগছি।
আগামীকাল ও চোখ রাখুন ১১তম পর্বে। ইনকিলাবের পাতায়।হকারকে বলে রাখুন আপনার কপি রাখতে। জানবেন, দালাল ছাড়াই বিদেশে যাবেন কিভাবে। আপনি কেন দালালের হাতে পড়ে সব খুয়াবেন।( চলবে)


বিভাগ : বাংলাদেশ


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারে অনুমতি পাচ্ছে না ইউক্রেন

দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারে অনুমতি পাচ্ছে না ইউক্রেন

গাজা-লেবাননে নিহত আরো ২২২

গাজা-লেবাননে নিহত আরো ২২২

আসাদের সঙ্গে বৈঠকের জন্য প্রস্তুত এরদোগান

আসাদের সঙ্গে বৈঠকের জন্য প্রস্তুত এরদোগান

জাবির সাবেক ছাত্রলীগ নেতাকে পিটিয়ে হত্যা মামলায় রায়হানের দোষ স্বীকার

জাবির সাবেক ছাত্রলীগ নেতাকে পিটিয়ে হত্যা মামলায় রায়হানের দোষ স্বীকার

গণহত্যাকারী কোন রাজনৈতিক দলের রাজনীতি করার অধিকার থাকে না: আসাদুজ্জামান রিপন

গণহত্যাকারী কোন রাজনৈতিক দলের রাজনীতি করার অধিকার থাকে না: আসাদুজ্জামান রিপন

ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনা জন্য আমাদের লড়াই চলছে : গয়েশ্বর চন্দ্র রায়

ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনা জন্য আমাদের লড়াই চলছে : গয়েশ্বর চন্দ্র রায়

ইনসি ইকো প্লাস সিমেন্ট নিয়ে এলো বাংলাদেশের সমূদ্র তীরবর্তী অঞ্চলের উপযোগী করে দীর্ঘস্থায়ী স্থাপনা নির্মাণের সমাধান

ইনসি ইকো প্লাস সিমেন্ট নিয়ে এলো বাংলাদেশের সমূদ্র তীরবর্তী অঞ্চলের উপযোগী করে দীর্ঘস্থায়ী স্থাপনা নির্মাণের সমাধান

হাত-পা ও চোখ বেঁধে ঝুলিয়ে পেটানো হয় --- আবু বাকের

হাত-পা ও চোখ বেঁধে ঝুলিয়ে পেটানো হয় --- আবু বাকের

দৈনিক রাজবাড়ী কন্ঠে" প্রকাশকের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে ফরিদপুর সাংবাদিক জোটের প্রতিবাদ সভা

দৈনিক রাজবাড়ী কন্ঠে" প্রকাশকের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে ফরিদপুর সাংবাদিক জোটের প্রতিবাদ সভা

ডাটা সেন্টারের সক্ষমতা বৃদ্ধির তাগিদ তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টার

ডাটা সেন্টারের সক্ষমতা বৃদ্ধির তাগিদ তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টার

শ্রীলঙ্কার চীনপন্থি প্রেসিডেন্ট দিশানায়েকে কি ভারতের জন্য চ্যালেঞ্জ?

শ্রীলঙ্কার চীনপন্থি প্রেসিডেন্ট দিশানায়েকে কি ভারতের জন্য চ্যালেঞ্জ?

ফুটবলের মাঠে চমক দেখাতে চান তাবিথ আউয়াল

ফুটবলের মাঠে চমক দেখাতে চান তাবিথ আউয়াল

এবার ফাঁস হলো রাবি শিবির সভাপতির পরিচয়

এবার ফাঁস হলো রাবি শিবির সভাপতির পরিচয়

নদী দখলকারীদের উচ্ছেদে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে - পানি সম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান

নদী দখলকারীদের উচ্ছেদে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে - পানি সম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান

সাবেক পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামিম কারাগারে

সাবেক পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামিম কারাগারে

স্বৈরাচারের পতন হলেও দোসররা এখনো রয়ে গেছে : তারেক রহমান

স্বৈরাচারের পতন হলেও দোসররা এখনো রয়ে গেছে : তারেক রহমান

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি রিক্রুটিং এজেন্সি মালিক গ্রেফতার

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি রিক্রুটিং এজেন্সি মালিক গ্রেফতার

‘অধ্যাপক’ হিসেবে পদোন্নতি পেলেন শিক্ষা ক্যাডারের ৯২২ জন

‘অধ্যাপক’ হিসেবে পদোন্নতি পেলেন শিক্ষা ক্যাডারের ৯২২ জন

ঢাবিতে মতবিনিময় সভায় যৌন নিপীড়ক শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ

ঢাবিতে মতবিনিময় সভায় যৌন নিপীড়ক শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ

সেনাবাহিনীর নারী সদস্যরা হিজাব পরতে পারবেন

সেনাবাহিনীর নারী সদস্যরা হিজাব পরতে পারবেন