ঢাবিতে মতবিনিময় সভায় যৌন নিপীড়ক শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ
২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:৪৪ পিএম | আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:৪৪ পিএম
যৌন-নিপীড়নের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষক প্রফেসর নুরুল ইসলামকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ধরনের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হলেও ইনস্টিটিউটের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের এক মতবিনিময় সভায় তাকে বক্তব্য দিতে দেখা যায়। এই নিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) ইনস্টিটিউটের পরিচালক প্রফেসর গোলাম আজমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দিতে দেখা যায় এই প্রফেসরকে। এসময় উপস্থিত ছিলেন ইনস্টিটিউটের প্রায় শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী।
তথ্যমতে, ইনস্টিটিউটের এক নারী শিক্ষার্থীর অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের করা এক তদন্ত কমিটি তার বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের প্রাথমিক সত্যতা পায়। তবে তা এখনো সিন্ডিকেটে যায়নি। তদন্ত চলমান থাকায় ওই শিক্ষককে চলতি বছরের ২ জানুয়ারি থেকে সকল ধরনের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন সিদ্ধান্তকে উপেক্ষা করে প্রফেসর নুরুল ইসলামের শিক্ষক শিক্ষার্থীদের মতবিনিময় সভায় উপস্থিত হওয়াকে নেতিবাচকভাবে দেখেন শিক্ষার্থীরা। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেক শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থীরা বলছেন, একজন যৌন নিপীড়কের সাথে আমাদেরকে মতবিনিময় সভায় বসানো হয়েছে। যা আমরা কোনভাবেই মেনে নিতে পারছি না। তবে প্রফেসর নুরুল ইসলামের দাবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে আদালতে করা এক রিটের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্তকে অবৈধ ঘোষণা করে আদালতের একটি রায় নিয়ে এসেছেন তিনি। তিনি বলেন, আমি নির্দোষ, তোমরা আমার কিছু করতে পারবা না।
তবে প্রফেসর নুরুলের এমন দাবির প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সিন্ডিকেট সদস্য বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন শিক্ষকের বিরুদ্ধে যখন যৌন নিপীড়নের অভিযোগ আসে তখন সেটার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে তিনটি ধাপ পেরুতে হয়। এর মধ্যে প্রথম ধাপে অভিযোগের সত্যতা জানতে গঠিত হয় ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি। ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটির রিপোর্টের পরে সেটা হাইকোর্ট নির্দেশিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় যৌন নিপীড়ন বিরোধী সেলে পাঠানো হয়। সেখান থেকে একটা রিপোর্ট আসার পর সেই রিপোর্ট সিন্ডিকেটে আসে। এরপর সিন্ডিকেট যদি মনে করে তাকে শাস্তি দিতে হবে তাহলে তখন সেটা ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়।
কিন্তু প্রফেসর নুরুলের বিরুদ্ধে গত বছরের ৩০ নভেম্বর যে ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি গঠিত হয় সেখানে তার বিরুদ্ধে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর করা অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পায় তদন্ত কমিটি। পরবর্তীতে সেই রিপোর্ট পাঠানো হয় যৌন নিপীড়ন সেলে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যৌন নিপীড়ন সেলে প্রফেসর নুরুলের বিরুদ্ধে তদন্ত এখনো চলমান। তার বিষয়ে সিন্ডিকেটে এখনো কোন তদন্ত রিপোর্ট আসেনি। আর হাইকোর্ট থেকে আসা রায়ও এখনো সিন্ডিকেটে পৌঁছায়নি। এছাড়া, নতুন ভিসি প্রফেসর ড. নিয়াজ আহমেদ খান দায়িত্ব পাওয়ার পর সিন্ডিকেট সভা হয়েছে দুইটি যেগুলো ছিলো জরুরি সভা। এসব সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস কার্যক্রম চালু করা ও ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতির বিষয়ে আলোচনা-সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, যেখানে প্রফেসর নুরুলের বিষয়ে কোন আলোচনা হয়নি।
এই অবস্থায় প্রফেসর নুরুল একাডেমিক ও প্রশাসনিক কাজে কিংবা ইনস্টিটিউটে আসতে পারেন কি না এমন প্রশ্নের উত্তরে ওই সিন্ডিকেট সদস্য বলেন, তদন্ত চলাকালে তিনি কোনভাবেই কোন একাডেমিক, প্রশাসনিক কিংবা এই সংশ্লিষ্ট কাজে থাকার সুযোগ নেই। কারণ যৌন নিপীড়ন সেল থেকে যখন তদন্ত রিপোর্ট সিন্ডিকেটে আসবে তখন সিন্ডিকেট তার বিষয়ে যে সিদ্ধান্ত জানাবে তখন সেটাই কার্যকর হবে। এক্ষেত্রে ভিসিও এককভাবে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না। কারণ সিন্ডিকেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম যা ভিসিরও উপরে।
প্রফেসর নুরুলের মতবিনিময় সভায় থাকায় ক্ষুব্ধ এক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তার বিরুদ্ধে তদন্ত চলমান থাকা অবস্থায় কেন তিনি এই মতবিনিময় সভায় উপস্থিত হলেন। আর এই সভায় ইনস্টিটিউটের পরিচালক থেকে সকল শিক্ষক ছিলেন তারাও কেন কিছু বললেন না। এইটা কোন নিয়ম হতে পারে না। তিনি আজকে যদি এভাবে ছাড়া পেয়ে যায় তাহলে ভবিষ্যতে কোন শিক্ষার্থী যৌন নিপীড়নের শিকার হলে আর মুখ খোলার সাহস করবে না।
আরেক নারী শিক্ষার্থী বলেন, এর অভ্যাস তো এখনো খারাপ। সে এখনো আমাকে দিন-রাত কল ও মেসেজ দিয়ে বিরক্ত করে। তার স্বভাব কোনদিন ভালো হবে না। তাকে আমরা এই ইনস্টিটিউটে দেখতে চাই না।
প্রফেসর নূরুলের এমন উপস্থিতিতে ক্ষোভ প্রকাশ করেন ভুক্তভোগী ওই নারী শিক্ষার্থীও। তিনি বলেন, ‘তদন্ত চলাকালীন সময়ে বহিষ্কৃত একজন যৌননিপীড়ক নির্দ্বিধায় ক্যাম্পাসে চলাচল করছে, ইনস্টিটিউটে বিভিন্ন সেমিনার, সভা করতেছে , শিক্ষক ছাত্রদের মিটিংয়ে অংশগ্রহণ করছে। আজকেও শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন, বক্তব্যও দিয়েছে। একজন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী হিসেবে এই বিষয়গুলো স্বচক্ষে বার বার দেখা কতটা পীড়াদায়ক তা মনে হয় আমার থেকে বেশি কেউ বুঝবে না। অথচ উনি যে নিপীড়ক, সেই বিষয়ে আমার শিক্ষক, সিনিয়রসহ ইনস্টিটিউটের সবাই খুব ভালো ভাবেই জানেন। তাদেরও কি অপরাধ বোধ কাজ করে না?’
উল্লেখ্য, গত ২০২৩ সালের ২৮ নভেম্বর প্রফেসর নুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ভিসি ড. এ এস এম মাকসুদ কামালের বরাবর বিচার চেয়ে আবেদন করেন ইনস্টিটিউটের এক ছাত্রী। এর আগেও দুই ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ উঠেছিল এই প্রফেসরের বিরুদ্ধে। তবে ওই দুইবারই রহস্যজনকভাবে পার পেয়ে যান তিনি৷
বিভাগ : মহানগর
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
মাগুরায় প্রাইভেট মোটর সাইকেল মুখোমুখি সংঘর্ষে ও রিকসা উল্টে ৩ জন নিহত আহত এক
শেখ হাসিনা ছিলেন দেশের স্বঘোষিত প্রধানমন্ত্রী: মাদারীপুরের রাজৈরে চরমোনাই পীর
মব জাস্টিস : নিষ্ঠুরতার এক নৃশংস চিত্র, প্রতিরোধে প্রযুক্তির ব্যবহার
পরাজিত শক্তি পাহাড়ে অরাজকতা করতে চায়: জাগপা
বিএনপি নেতা মাহাবুব উদ্দিন খোকনকে শোকজ
মাদারীপুরে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ৩ জন নিহতের ঘটনায় ৩ মামলা
আবু সাঈদ হত্যা বিশ্ববিদ্যালয়ে জড়িতদের চিহ্নিত করতে বেরোবিতে তদন্ত কমিটি গঠিত
কুতুবদিয়ায় কোস্টগার্ডের অভিযানে বিপুল দেশীয় অস্ত্রসহ আটক ২
বিরলে অজ্ঞাত পরিচয়ের এক ব্যাক্তির মরদেহ উদ্ধার
জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণ অন্তর্বর্তী সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ : স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা
কলাপাড়ায় যাত্রীবাহী বাস-অটোরিক্সার মুখোমুখি সংঘর্ষ, শিশু সহ আহত-৫
গাজীপুরে কলোনিতে আগুন, নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিসের ৪ ইউনিট
মেরিনারের দায়িত্ব নিলেন সামির কাদের চৌধুরী
বাফুফের সভাপতি পদে এবার দৃশ্যপটে তাবিথ
সেনাবাহিনীর নারী সদস্যরা হিজাব পরতে পারবেন
‘অধ্যাপক’ হিসেবে পদোন্নতি পেলেন শিক্ষা ক্যাডারের ৯২২ জন
মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি রিক্রুটিং এজেন্সি মালিক গ্রেফতার
স্বৈরাচারের পতন হলেও দোসররা এখনো রয়ে গেছে : তারেক রহমান
সাবেক পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামিম কারাগারে
নদী দখলকারীদের উচ্ছেদে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে - পানি সম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান