ঢাকা   মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৯ আশ্বিন ১৪৩১

রাজবাড়ীতে অরক্ষিত রেল ক্রসিংয়ে এক বছরে ট্রেনে কাটা পড়ে ১২ জনের মৃত্যু

Daily Inqilab রাজবাড়ী জেলা সংবাদদাতা

০৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৪:২১ পিএম | আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৪:২১ পিএম


নজরুল ইসলাম, ॥
রাজবাড়ীকে বলা হয় রেলের শহর। বিট্রিশ আমলে স্থাপিত রেলপথ রয়েছে জেলার ৫টি উপজেলার ওপর দিয়ে। প্রতিটি লাইন দিয়ে ঢাকা, খুলনা, রাজশাহী, বেনাপোল, টুঙ্গিপাড়াসহ নিয়মিত চলাচল করছে বেশ কিছু ট্রেন। এদিকে জেলার এসব রেলপথের ওপর দিয়ে রয়েছে ৫৭টি বৈধ ও অবৈধ রেলক্রসিং (সড়ক পথ)। যার বেশির ভাগ রেলক্রসিং অরক্ষিত হওয়ায় সামান্য অসাবধানতাসহ নানা কারণে ঘটছে ছোট বড় দূর্ঘটনা। চলতি বছর রাজবাড়ীর বিভিন্নস্থানে ট্রেনে কাটা পড়ে নিহত হয়েছে ১২জন নারী-পুরুষ। সর্বশেষ ৪ ডিসেম্বর কালুখালীর সূর্য্যদিয়ায় ট্রেন ও ব্যাটারি চালিত ভ্যানের সংর্ঘষে ট্রেনে কাটা পড়ে দুইজনের মৃত্যু হয়। দূর্ঘটনারোধে প্রতিটি রেলক্রসিংয়ে বেড়িয়ার অথবা গেইটম্যানের দাবি স্থানীয়দের।
রাজবাড়ী একটি ব্যাস্ততম রেলরুট এলাকা। রাজবাড়ীর ওপর দিয়ে পদ্মা সেতু হয়ে খুলনা টু ঢাকা ও বেনাপোল টু ঢাকা টেন চলাচল করে। এছারা রাজবাড়ী হতে ট্রেনে কুষ্টিয়া, পোরাদাহ, রাজশাহী, খুলনা, টুঙ্গীপাড়া, ভাটিয়াপাড়া, ফরিদপুর, ভাঙ্গা, গোয়ালন্দ ঘাটসহ বিভিন্নস্থানে যাতায়াত করা যায়। ট্রেনে যাতায়াত সহজ ও নিরাপদ হওয়ায় দিন দিন বাড়ছে এসব রুটে যাত্রীদের সংখ্যা। কিন্তু সে তুলনায় এখনও রেলরুটে রয়ে গেছে অরক্ষিত রেলক্রসিং। যার কারণে মাঝে মধ্যেই ঘটছে দূর্ঘটনা।
রাজবাড়ী রেলওয়ের সহকারী প্রকৌশলী ও রেলওয়ে থানা সুত্রে জানাগেছে, রাজবাড়ী জেলা অংশের রেলপথে বিভিন্নস্থানে বৈধ ও অবৈধ মিলে মোট ৫৭টি রেলক্রসিং রয়েছে। যার মধ্যে বৈধ ৪৩টি। এরমধ্যে গুরত্বপূর্ণ ২১টিতে বেড়িয়ার ও গেইটম্যান রয়েছে এবং একটু কম গুরুত্বপূর্ণ ২২টিতে কোন বেড়িয়ার বা গেইটম্যান নাই। এছাড়া অবৈধ ১৪টি রেলক্রসিং সম্পূর্ণ অরক্ষিত। যে গুলো স্থানীয়রা তাদের সুবিধার্থে জোরপূর্বক তৈরি করেছে।
চলিত বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত রাজবাড়ীর বিভিন্নস্থানে ট্রেনে কাটা পড়ে নিহত হয়েছে মোট ১২ জন। এরমধ্যে নারী ৪ জন ও পুরুষ ৮ জন।
পাংশা কুড়াপাড়ার আরিফুল ইসলাম, সামছুল আলম, শহিদুল ইসলাম ও মেহেদী হাসান বলেন, গত প্রায় এক বছরের মধ্যে পাংশার কুড়াপাড়া রেলক্রসিং এলাকায় ৩টি দূর্ঘটনা ঘটেছে। এতে দ্ইুজন ভ্যান ও একজন মোটর সাইকেল চালক নিহত হয়েছে। এই স্থানে কোন গেইটম্যান বা বেড়িয়ার নাই, সম্পূর্ণই অরক্ষিত। পাংশা থেকে রাজবাড়ী পর্যন্ত এরকম অনেক অরক্ষিত রেলক্রসিং রয়েছে। ফলে এসবস্থানে বেড়িয়ার বা গেইটম্যান জরুরী।
তারা আরও বলেন, এখনও বেশির ভাগ মানুষ ট্রেনের সময়সুচি জানে না, যার কারণেও দূর্ঘটনা ঘটে। আর এখন ট্রেন গুলোতো খুব দ্রুত যায়, অনেক সময় বোঝা যায় না। তারপর আবার কারণ রাস্তার দুই পাশে থাকে গাছগাছলি। যে কারণে ট্রেন আসলে বোঝা যায় না। দূর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেতে প্রতিটি অরক্ষিত রেলক্রসিং বেড়িয়ার বা গেইটম্যান নিয়োগ করা খুবই জরুরী। পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দা, পথচারী, যানবাহনের চালকসহ সবাইকে সচেতন হতে হবে।
কালুখালীর মকিম মন্ডল ও বারেক মৃধা বলেন, কালুখালী জংশন স্টেশনের আগে রতনদিয়া বাজার, ইউনিয়ন পরিষদ হাসপাতাল, স্কুলসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রয়েছে। কিন্তু এই হাসপাতাল গেইটে রেলক্রসিংয়ে কোন গেইটম্যান বা বেড়িয়ার নাই। যারা এখান দিয়ে পারাপার হয়, তারা নিজ দ্বায়িত্বে পারাপার হন এবং তারা সতর্ক করে দেন। এই গুরুত্বপূর্ণ স্থানে গেইটসহ লোক নিয়োগ প্রয়োজন।
ভ্যান চালক তালেব ও সুকুমার বিশ্বাস বলেন, তাদের খুব সমস্যা হয়। নিজ দ্বায়িত্বে তাদের রেলক্রসিং পারাপার হতে হয়। একপাশ থেকে ট্রেন আসলে বোঝার উপায় থাকে না। আর ট্রেন দ্রুত গতিতে থাকে, তাতে একবার রেললাইনে উঠলে আর কিছু করার থাকে না। যদি এসব ক্রসিংয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়, তাহলে তারা দূর্ঘটনা থেকে রক্ষা পাবে।
রাজবাড়ী রেলওয়ে (জিআরপি) থানার ওসি সোমনাথ বসু বলেন, রাজবাড়ী একটি ব্যাস্ততম রেলরুট। এখান থেকে ঢাকা, রাজশাহী, খুলনা, গোপালগঞ্জসহ বিভিন্ন রুটে ট্রেন চলাচল করে এবং মাঝে মধ্যেই ট্রেনে কাটা পড়ে অনেকেই মারা যাচ্ছে। ট্রেনে কাটা পড়ে কেউ যেন মারা না যায়, সে জন্য সচেতনতামূলক কার্যক্রম করে থাকেন।
বাংলাদেশ রেলওয়ে পাকশীর সহকারী পরিবহন কর্মকর্তা মোঃ হারুন অর রশিদ বলেন, দীর্ঘ দিন ধরে তারা অবৈধ রেলক্রসিং বন্ধ করে আসছেন এবং ধাপে ধাপে অনেক গুলোও বন্ধও করেছেন। অন্যান্য অবৈধ রেলক্রসিং বন্ধের চেষ্টা অব্যাহত আছে।


বিভাগ : বাংলাদেশ


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

চোটে পড়ে মৌসুম থেকে ছিটকেই গেলেন টের স্টেগেন

চোটে পড়ে মৌসুম থেকে ছিটকেই গেলেন টের স্টেগেন

ইন্টার মায়ামি ছাড়ছেন মেসি?

ইন্টার মায়ামি ছাড়ছেন মেসি?

ডেভিস কাপ দিয়ে কোর্টে ফিরছেন নাদাল

ডেভিস কাপ দিয়ে কোর্টে ফিরছেন নাদাল

দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারে অনুমতি পাচ্ছে না ইউক্রেন

দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারে অনুমতি পাচ্ছে না ইউক্রেন

গাজা-লেবাননে নিহত আরো ২২২

গাজা-লেবাননে নিহত আরো ২২২

আসাদের সঙ্গে বৈঠকের জন্য প্রস্তুত এরদোগান

আসাদের সঙ্গে বৈঠকের জন্য প্রস্তুত এরদোগান

জাবির সাবেক ছাত্রলীগ নেতাকে পিটিয়ে হত্যা মামলায় রায়হানের দোষ স্বীকার

জাবির সাবেক ছাত্রলীগ নেতাকে পিটিয়ে হত্যা মামলায় রায়হানের দোষ স্বীকার

গণহত্যাকারী কোন রাজনৈতিক দলের রাজনীতি করার অধিকার থাকে না: আসাদুজ্জামান রিপন

গণহত্যাকারী কোন রাজনৈতিক দলের রাজনীতি করার অধিকার থাকে না: আসাদুজ্জামান রিপন

ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনা জন্য আমাদের লড়াই চলছে : গয়েশ্বর চন্দ্র রায়

ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনা জন্য আমাদের লড়াই চলছে : গয়েশ্বর চন্দ্র রায়

ইনসি ইকো প্লাস সিমেন্ট নিয়ে এলো বাংলাদেশের সমূদ্র তীরবর্তী অঞ্চলের উপযোগী করে দীর্ঘস্থায়ী স্থাপনা নির্মাণের সমাধান

ইনসি ইকো প্লাস সিমেন্ট নিয়ে এলো বাংলাদেশের সমূদ্র তীরবর্তী অঞ্চলের উপযোগী করে দীর্ঘস্থায়ী স্থাপনা নির্মাণের সমাধান

হাত-পা ও চোখ বেঁধে ঝুলিয়ে পেটানো হয় --- আবু বাকের

হাত-পা ও চোখ বেঁধে ঝুলিয়ে পেটানো হয় --- আবু বাকের

দৈনিক রাজবাড়ী কন্ঠে" প্রকাশকের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে ফরিদপুর সাংবাদিক জোটের প্রতিবাদ সভা

দৈনিক রাজবাড়ী কন্ঠে" প্রকাশকের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে ফরিদপুর সাংবাদিক জোটের প্রতিবাদ সভা

ডাটা সেন্টারের সক্ষমতা বৃদ্ধির তাগিদ তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টার

ডাটা সেন্টারের সক্ষমতা বৃদ্ধির তাগিদ তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টার

শ্রীলঙ্কার চীনপন্থি প্রেসিডেন্ট দিশানায়েকে কি ভারতের জন্য চ্যালেঞ্জ?

শ্রীলঙ্কার চীনপন্থি প্রেসিডেন্ট দিশানায়েকে কি ভারতের জন্য চ্যালেঞ্জ?

ফুটবলের মাঠে চমক দেখাতে চান তাবিথ আউয়াল

ফুটবলের মাঠে চমক দেখাতে চান তাবিথ আউয়াল

এবার ফাঁস হলো রাবি শিবির সভাপতির পরিচয়

এবার ফাঁস হলো রাবি শিবির সভাপতির পরিচয়

নদী দখলকারীদের উচ্ছেদে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে - পানি সম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান

নদী দখলকারীদের উচ্ছেদে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে - পানি সম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান

সাবেক পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামিম কারাগারে

সাবেক পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামিম কারাগারে

স্বৈরাচারের পতন হলেও দোসররা এখনো রয়ে গেছে : তারেক রহমান

স্বৈরাচারের পতন হলেও দোসররা এখনো রয়ে গেছে : তারেক রহমান

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি রিক্রুটিং এজেন্সি মালিক গ্রেফতার

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি রিক্রুটিং এজেন্সি মালিক গ্রেফতার