মূল প্রজনন মৌসুমের ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞাকালীন সময়ে দেশের ইলিশ পরিবারে ৪১ হাজার কোটি জাটকা যুক্ত হয়েছে
১১ ডিসেম্বর ২০২৩, ০২:০৪ পিএম | আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০২৩, ০২:০৪ পিএম
এবারের মূল প্রজনন মৌসুমের ২২ দিনের আহরণ নিষেধাজ্ঞাকালীন গত ১২ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞাকালীন সময়ে দেশের ইলিশ প্রজন্মে আরো অন্তত ৪১ হাজার কোটি জাটকা যুক্ত হয়েছে বলে মনে করছেন মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট এর বিজ্ঞানীগণ। ফলে আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত চলমান ‘জাটকা নিধন বিরোধী অভিযান’ সুষ্ঠুভাবে কার্যকর হলে চলতি অর্থ বছরে দেশে ইলিশের উৎপাদন ৬ লাখ টনে উন্নীত হতে পারে বলেও মনে করছেন নাম প্রকামে অনিচ্ছুক মৎস্য বিজ্ঞানীগণ। এসময়ে দক্ষিণাঞ্চলের অভ্যন্তরীণ ও উপকূলীয় প্রজনন এলাকায় ৫২.০৪ ভাগ মা ইলিশ ডিম ছেড়েছে। ফলে এবার গত বছরের একই সময়ের তুলনায় দশমিক ৫ ভাগ বেশী ডিম ছাড়ার পাশাপাশি আরো অন্তত ৩৫ ভাগ মা ইলিশ ডিম ছাড়ারত ছিল বলে গবেষণা ইনস্টিটিউট-এর দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে। গত বছর মূল প্রজনন মৌসুমে প্রায় ৮ লাখ ৫ হাজার কেজি ডিম ছাড়ে মা ইলিশ। যার প্রস্ফুটনে দেশে ৪০ হাজার ২৭৬ কোটি জাটকা ইলিশ পরিবারে যুক্ত হয়েছিল।
এবারের ২২ দিনের আহরণ নিষিদ্ধকালীন সময়ে উপকূলের বিশাল জেলে সম্প্রদায়ের সামাজিক নিরাপত্তায় ৩৭টি জেলার ১৫৫টি উপজেলার ৫ লাখ ৫৪ হাজার ৮৮৭টি জেলে পরিবারের মাঝে ২৫ কেজি করে ১৩ হাজার ৮৭২ টন চাল বিতরণ করা হয়েছে । এর মধ্যে শুধুমাত্র বরিশাল বিভাগের ৩ লাখ ৭ হাজার ৮৪১ জেলে পরিবারের মাঝে প্রায় ৭ হাজার ৭শ টন চাল বিতরণ করা হয়েছে বলে মৎস্য অধিপ্তরের বরিশাল বিভাগের উপ-পরিচালক নৃপেন্দ্র নাথ বিশ^াস জানিয়েছেন। তার মতে, দেশে উৎপাদিত ইলিশের প্রায় ৭০%-ই বরিশাল বিভাগের অভ্যন্তরীণ নদ-নদী ও উপকূলীয় এলাকায় উৎপাদন ও আহরণ হচ্ছে।
¯্রােতের বিপরীতে প্রতিদিন ৭১ কিলোমিটার পর্যন্ত ছুটে চলা ‘অভিপ্রয়াণী মাছ ইলিশ’ জীবনচক্রে স্বাদু পানি থেকে সমুদ্রের নোনা পানিতে এবং সেখান থেকে পুনরায় স্বাদু পানিতে অভিপ্রয়াণ করে। মৎস্য বিজ্ঞানীদের মতে, বাংলাদেশের ইকাসিষ্টেমে সারা বছরই ৩০% ইলিশ ডিম বহন করে। বাকি ৭০% আশি^নের বড় পূর্ণিমা ও অমাবশ্যার আগে পরে ডিম ছাড়ছে।
আশ্বিনের ভরা মৌসুমে ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলার উত্তর তজুমদ্দিন থেকে পশ্চিম সৈয়দ আউলিয়া পয়েন্ট, কলাপাড়ার লতাচাপলি পয়েন্ট এবং লাতাচাপলী ইউনিয়নের লেবুর বাগান পয়েন্ট, মঠাবাড়ীয়ার সাপলেজা সংলগ্ন ভাইজোড়া পয়েন্ট, শরনখোলার পক্ষীর চর ও বগী এলাকা, শাহেরখালী থেকে হাতিকন্দি ও উত্তর কুতবদিয়া থেকে গন্ডামারা পয়েন্টে মা ইলিশের অত্যাধীক প্রচুর্য চিহ্নিত করে এ ৭ হাজার ৩৪২ বর্গ কিলোমিটারে ২২ দিন সব ধরণের মৎস্য আহরণ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ছিল ।
‘হিলসা ফিসারিজ ম্যানেজমেন্ট অ্যাকশন প্লান’-এর আওতায় ২০০৫ সালেই সর্বপ্রথম প্রধান প্রজনন মৌসুমে ১০ দিন ইলিশের আহরণ বন্ধ রাখা হয়। মৎস্য বিজ্ঞানীদের সুপারিশে ২০১১ সালে তা ১১ দিন এবং ২০১৫ সালে ১৫ দিন ও ২০১৬ সালে থেকে ২২ দিনে উন্নীত করা হয়েছে। ইলিশ নিয়ে নানামুখী বৈজ্ঞানিক পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে দেশে ইলিশের উৎপাদন এক সময়ের ১.৯৮ লাখ টন থেকে ২০২১-২২ সালে ৫.৬৬ লাখ টনে উন্নীত হয়েছে। যা গত অর্থ বছরে পৌনে ৬ লাখ টনে উন্নীত হয়েছে বলে মৎস্য অধিদপ্তর আশা করছে। এর মধ্যে বরিশাল বিভাগে গত অর্থ বছরে আগের বছরে চেয়ে প্রায় ১৪ হাজার টন বেশী, ৩.৮৪ লাখ টন ইলিশ উৎপাদান ও আহরণ হয়েছে।
আমাদের অর্থনীতিতে জাতীয় মাছ ইলিশের একক অবদান এখন ১%-এর বেশী। আর মৎস্য খাতে অবদান প্রায় ১২.৫০%। সারা বিশে^র ৬০%-এরও বেশী ইলিশ এখন বাংলাদেশেই উৎপাদন হচ্ছে।
মৎস্য অধিদপ্তরের মতে এবারের ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞাকালীন সময়ে সারা দেশে ২ হাজারের বেশী মোবাইল কোর্টে আড়াই হাজারের মত মামলা রুজু হয়। এসময়ে প্রায় ৫০ লাখ টাকা জরিমানা আদায় ছাড়াও ২ সহ¯্রাধিক জেলেকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ডাদেশ প্রদান করে ভ্রাম্যমান আদালত। এসময় মৎস্য আহরণে ব্যবহৃত বিভিন্ন সামগ্রী নিলামে বিক্রি করে সরকারের আয় হয়েছে প্রায় ১৭ লাখ টাকা। অবৈধভাবে আহরণকৃত ৫০ টনেরও বেশী ইলিশ বাজেয়াপ্ত করে বিভিন্ন এতিমখানা ও লিল্লাহ বোর্ডিং-এ বিতরণ করা হয়েছে। নিষেধাজ্ঞাকালীন সময়ে মৎস্য অধিদপ্তর দেশের বিভিন্ন মৎস্য আড়ত ও বাজারে প্রায় ৮ হাজার অভিযান পরিচালনা করে। এমনকি এ সময়ে বিভিন্ন অভিযান ও ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনাকালে প্রায় ১৫ কোটি টাকা মূল্যের ৮ কোটি মিটার অবৈধ জাল আটক করে পুড়িয়ে ফেলেছে প্রশাসন ও মৎস্য অধিদপ্তর। আহরণ নিষিদ্ধকালীন সময়ে বরিশাল সহ দেশের বিভিন্ন এলাকার ১ হাজারেরও বেশী মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে ও প্রায় ১০ হাজার মাছ ঘাট পরিদর্শন করে অবৈধভাবে ইলিশ আহরণ বন্ধে নজরদারী করে প্রশাসন সহ মৎস্য অধিদপ্তর।
এদিকে ২২ দিনের প্রজননকালীন সময়ে নিষিক্ত ডিম থেকে ইলিশের সুষ্ঠু উৎপাদন নিশ্চিত করতে গত ১ নভেম্বর রাতের প্রথম প্রহর থেকে সারাদেশে ইলিশ পোনা-জাটকা আহরণে ৮ মাসের নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়েছে। ৩০ জুন পর্যন্ত জাটকা আহরণে নিষিদ্ধকালীন এ সময়ে বরিশাল সহ দক্ষিণ উপকূলের ৬টি অভয়াশ্রমে ২-৩ মাস করে সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকছে।
মূল প্রজনন ক্ষেত্রে মুক্ত ভাসমান অবস্থায় ডিম ছাড়ার পরে তা থেকে ফুটে বের হয়ে ইলিশের লার্ভা স্বাদু পানি ও নোনা পানির নার্সারী ক্ষেত্রসমুহে বিচরণ করে খাবার খেয়ে নার্সারী ক্ষেত্রে ৭-১০ সপ্তাহ ভেসে বেড়ায়। এরা জাটকা হিসেব কিছুটা বড় হয়ে ১২-১৮ মাস বঙ্গোপসাগরের বিভিন্ন এলাকায় বসবাসের পরে প্রজননক্ষম হয়ে আবার স্বাদু পানির নার্সারী ক্ষেত্রে ফিরে এসে ডিম ছাড়ে।
এদিকে ইলিশের প্রজনন ক্ষেত্র ও মাইগ্রেশন পথ নির্বিঘœ রাখা সহ সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদের মজুত ও জীব বৈচিত্র্যকে সমৃদ্ধ করতে নিঝুম দ্বীপ সংলগ্ন ৩ হাজার ১৮৮ বর্গ কিলোমিটার এলাকাকে দেশের প্রথম ‘সামুদ্রিক সংরক্ষিত এলাকা বা মেরিন রিজর্ভ এরিয়া’ হিসেবেও ঘোষণা করা হয়েছে।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
মাদারীপুরে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ৩ জন নিহতের ঘটনায় ৩ মামলা
আবু সাঈদ হত্যা বিশ্ববিদ্যালয়ে জড়িতদের চিহ্নিত করতে বেরোবিতে তদন্ত কমিটি গঠিত
কুতুবদিয়ায় কোস্টগার্ডের অভিযানে বিপুল দেশীয় অস্ত্রসহ আটক ২
বিরলে অজ্ঞাত পরিচয়ের এক ব্যাক্তির মরদেহ উদ্ধার
জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণ অন্তর্বর্তী সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ : স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা
কলাপাড়ায় যাত্রীবাহী বাস-অটোরিক্সার মুখোমুখি সংঘর্ষ, শিশু সহ আহত-৫
গাজীপুরে কলোনিতে আগুন, নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিসের ৪ ইউনিট
মেরিনারের দায়িত্ব নিলেন সামির কাদের চৌধুরী
বাফুফের সভাপতি পদে এবার দৃশ্যপটে তাবিথ
সেনাবাহিনীর নারী সদস্যরা হিজাব পরতে পারবেন
ঢাবিতে মতবিনিময় সভায় যৌন নিপীড়ক শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ
‘অধ্যাপক’ হিসেবে পদোন্নতি পেলেন শিক্ষা ক্যাডারের ৯২২ জন
মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি রিক্রুটিং এজেন্সি মালিক গ্রেফতার
স্বৈরাচারের পতন হলেও দোসররা এখনো রয়ে গেছে : তারেক রহমান
সাবেক পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামিম কারাগারে
নদী দখলকারীদের উচ্ছেদে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে - পানি সম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান
এবার ফাঁস হলো রাবি শিবির সভাপতির পরিচয়
ফুটবলের মাঠে চমক দেখাতে চান তাবিথ আউয়াল
শ্রীলঙ্কার চীনপন্থি প্রেসিডেন্ট দিশানায়েকে কি ভারতের জন্য চ্যালেঞ্জ?
ডাটা সেন্টারের সক্ষমতা বৃদ্ধির তাগিদ তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টার