মেজর জিয়াকে দিয়ে ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণাদানকারী ফটিকছড়ি’র প্রথম এমপি মির্জা মনসুরের দাফন সম্পন্ন
২৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০১ এএম | আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০১ এএম
মুক্তিযুদ্ধের বীরসেনানী মেজর জিয়াউর রহমানের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণাদানকারী বীর মুক্তিযোদ্ধা, ফটিকছড়ি’র প্রথম এমপি, ১নং সেক্টরের সাব-সেক্টর কমান্ডার ও চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক সভাপতি, বিশিষ্ট শিল্পপতি মির্জা আবু মনসুর আর নেই। তিনি ২১ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার বিকেল তিনটায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় চট্টগ্রাম এভারকেয়ার হাসপাতালে ইন্তিকাল করেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর। তিনি স্ত্রী, দুই ছেলে, এক মেয়ে, তিন ভাই, পাঁচ বোনসহ বহু গুণগ্রাহী রেখে যান। ইতোপূর্বে তার বড়ভাই মির্জা আবু মহসীন, ছোটভাই মির্জা বাবর মারা যান। মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য ভূমিকাপালনকারী (মেজর) মির্জা মনসুর দীর্ঘদিন ধরে দুরারোগ্য ক্যান্সারে ভূগছিলেন। এই বীর মুক্তিযোদ্ধা, শিল্পপতি ও সমাজ সেবকের মৃত্যুতে চট্টগ্রামে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। শুক্রবার সকাল নয়টায় নগরীর জমিয়তুল ফালাহ জাতীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে তাঁর প্রথম নামাজে জানাজা, বাদ জুমা তাঁর পিতার প্রতিষ্ঠিত ফটিকছড়ি ডিগ্রি কলেজ মাঠে দ্বিতীয় এবং বাদ আসর নানুপুর আবু সোবহান উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে রাষ্ট্রীয় গার্ড অব অনার প্রদান ও সেখানে তৃতীয় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়। তিন দফা জানাজায় চট্টগ্রাম এবং ফটিকছড়ি’র বিভিন্ন শ্রেণী পেশার বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গসহ সর্বস্তরের লাখো জনতা অংশগ্রহণ করে।
এক নজরে মির্জা মনসুরের বীরত্ব এবং বৃত্তান্ত:
বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী বীর মুক্তিযোদ্ধা মির্জা মনসুরের জন্ম ১৯৪৬ সালে ফটিকছড়ি উপজেলার নানুপুর গ্রামের ঐতিহ্যবাহী মির্জা পরিবারে। তিনি বিশিষ্ট শিল্পপতি মরহুম মির্জা আবু আহমদ ও মরহুমা তৈয়বা বেগমের দ্বিতীয় পুত্র। তিনি ১৯৭০ সালের নির্বাচনে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে এমপি নির্বাচিত হন।
মির্জা আবু মনসুর ছিলেন যুদ্ধকালীন এক নম্বর সেক্টরের ফটিকছড়ি, হাটহাজারী, রাউজান ও রাঙ্গুনিয়া নিয়ে গঠিত আঞ্চলিক কমান্ডের সাব-সেক্টর কমান্ডার। মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক এমএজি ওসমানীর নির্দেশে দেশের যে ১৪ জন এমপি ও এমএনএকে তখন পূর্ণাঙ্গ সামরিক প্রশিক্ষণের জন্য বিহারের চাকুলিয়া সেনা প্রশিক্ষণ কলেজে পাঠানো হয়; মির্জা মনসুর ছিলেন তাঁদের একজন। প্রশিক্ষণ শেষে তাঁকে মেজর হিসেবে নবগঠিত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নিয়মিত কমিশন দেয়া হয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় এই বীর যোদ্ধাকে ধরিয়ে দিতে পাকবাহিনী এক লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করে।
স্বাধীনতার ঘোষণার জন্য কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র হানাদারমুক্ত করা, সেখান থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা প্রচার, স্বাধীনতার ঘোষণাটি ইংরেজিতে অনুবাদ, আগরতলা থেকে অস্ত্রশস্ত্র সংগ্রহসহ মুক্তিযুদ্ধকালীন ইতিহাস সৃষ্টিকারী অনেক ঘটনায় জড়িত ছিলেন তিনি। তাঁর নির্দেশনা ও নেতৃত্বে পরিচালিত হয় বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অপারেশন। যুদ্ধের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত রয়েছে তাঁর বিশেষ অবদান। চট্টগ্রামে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে বিশাল অংশ হয়ে আছেন তিনি।
এই কিংবদন্তি চট্টগ্রাম মিউনিপ্যাল হাই স্কুলে পড়ার সময় ১৯৫৯ সালে স্কুল ছাত্র সংসদের জিএস নির্বাচিত হন। এ সময় ফেরদৌস আহমদ কোরেশির হাত ধরে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন। তখন তাঁর সহকর্মী ছিলেন এম এ মান্নান, শায়েস্তা খান, কফিল উদ্দিন ও আশরাফ খান। তিনি ১৯৬০ সালে মেট্রিকুলেশন, ১৯৬২ সালে চট্টগ্রাম কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট ও ১৯৬৫ সালে একই কলেজ থেকে বিএসসি (অনার্স) পাস করেন। ১৯৬৪-৬৫ সালে চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ছাত্র ইউনিয়নকে হারিয়ে ভিপি নির্বাচিত হন। ছাত্রলীগ দীর্ঘ ২১ বছর পর সংসদে জয় পায়।
মির্জা মনসুর চট্টগ্রাম কলেজে ছাত্রলীগের সংগঠন যাত্রিকের সভাপতিও ছিলেন। ১৯৬৫ সালে হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে বন্ধু আশরাফ খানসহ পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন। সেই কারণে ফজলুল কাদের চৌধুরী তার পাসপোর্ট ইস্যু করতে দেননি। ফলে তিনি উচ্চ শিক্ষার্থে ইংল্যান্ড যেতে পারেননি। অথচ ওই সময় তাঁর বাবা মির্জা আবু আহমদ ছিলেন এমপিএ। ৬৬’র ছয় দফা আন্দোলনেও তিনি সক্রিয় ভূমিকা রাখেন।
১৯৬৭ সালে চট্টগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এবং ৬৯ সালে ফটিকছড়ি থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি হন তিনি। ৭০ সালের নির্বাচনে মাত্র ২৬ বছর বয়সে এমপিএ নির্বাচিত হন। এই নির্বাচনে তিনি অ্যাডভোকেট এম এ ফয়েজকে বিপুল ভোটে পরাজিত করেন। তিনি চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি ও এফবিসিসিআই’র পরিচালক ছিলেন।
জীবনের শেষ দিকে রাজনীতিতে নিস্ক্রিয় থাকলেও তিনি বিভিন্ন সেবামূলক কাজে জড়িত ছিলেন।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
ফের বিবর্ণ ইউনাইটেড হারাল পয়েন্ট
দিয়াজের জোড়া গোলে চূড়ায় অলরেডসরা
এবার বুন্দেসলীগায়ও বায়ার্নের গোল উৎসব
দিয়াজের জোড়া গোলে চূড়ায় অলরেডসরা
দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও অজিদের অনায়স জয়
প্লটবঞ্চিত পূর্বাচলের আদিবাসিন্দাদের ৩শ’ ফুট সড়কে অবস্থান : বিক্ষোভ অব্যাহত
দেশে সংস্কার ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠার আহ্বান
ছাত্রলীগের হামলার শিকার শিক্ষার্থীদের মামলা করতে বললেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ
উম্মাহর কল্যাণে মুসলমানদের ঐক্যের বিকল্প নেই
বৈরুতে ইসরাইলি হামলায় হিজবুল্লাহর শীর্ষ কমান্ডারসহ নিহত ১৪
পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্র অপরাধে ব্যবহারের আশঙ্কা
মস্কোয় হামলার উপযুক্ত ক্ষেপণাস্ত্র কিয়েভে পাঠাবে না জার্মানি
জিয়ার ভূমিকাকে অবহেলা করায় পাহাড়ে সমস্যা হচ্ছে : জামায়াত নেতা শাহজাহান চৌধুরী
মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে ঐক্যবদ্ধ থাকার কোনো বিকল্প নেই: তারেক রহমান
বিচার বিভাগে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা প্রধান বিচারপতির
একদিনে ৮৪৩ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত, মৃত্যু ১
কুষ্টিয়ায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে সুগার মিলের নিরাপত্তা প্রহরীর মৃত্যু
সাজেক ভ্রমণে আটকা পড়েছেন ৮০০ পর্যটক
‘শুধু সংস্কারে থেমে থাকলেই চলবে না, অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন করতে হবে’ : তারেক রহমান
যে কোনো ষড়যন্ত্রের দাঁতভাঙা জবাব দিতে প্রস্তুত: বিএনপির স্থানীয় কমিটির সদস্য ডা. জাহিদ