ঢাকা   রোববার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৭ আশ্বিন ১৪৩১

গোদাগাড়ীতে তীব্র ঠান্ডাতে জনজীবন বিপর্যস্ত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষনা।

Daily Inqilab গোদাগাড়ী ( রাজশাহী) থেকে

২২ জানুয়ারি ২০২৪, ০৪:২৮ পিএম | আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০২৪, ০৪:২৮ পিএম

 

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় অনেক বেলা পর্যন্ত কুয়াশার চাদরে ঢাকা থাকছে। সূর্য উঁকি দিলেও কুয়াশা কাটাতে পারেনি সেভাবে। ফলে শীত জেঁকে ধরেছে। রাজশাহী তাপমাত্র গত কয়েকদিন থেকে ১০ ডিগ্রির নীচে অবস্থান করায় সরকারী নির্দেশমত রাজশাহী জেলার সকল উপজেলার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শ্রেনী কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে কোচিং প্রাইভেট বানিজ্য চলছে দেদারসে। সব চেয়ে বেকায়দায় পড়েছেন যারা দিন আনে দিন খাওয়া মানুষগুলি, তারা বাড়ী থেকে বের হতে পারছেনা পারলেও কাজ না পেয়ে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসছেন।
দিনমজুরদের দৈনিক চুক্তিভিত্তিক রাজমিস্ত্রীর কাজে নিয়ে যান অনেকে। তবে বেশ কয়েকদিন থেকে তীব্র শীতের মাঝে তারাও আর কাজ পাচ্ছেন না।

হেড মিস্ত্রী মোঃ মজিবুর রহমান জানান, তীব্র শীতের কারণে মানুষ কাজ করাতে চাচ্ছে না। ফলে রাজ মিস্ত্রীর লেবারগণ পড়েছে মহা সংকটে। তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিদিন ভোরবেলায় কাজের আশায় এখানে আসছি। ফজরের আগে বের হচ্ছে কিন্তু এখানে এসে কাজ পাচ্ছে না।

গোদাগাড়ী পৌরসভার মহিলালবাড়ী মেলপাড়া মহল্লার ডিপজল হোসেন বলেন, রাজশাহী বাসে গিয়ে ৭০ টাকা ভাড়া খরচ করে ৬ টায় পৌছাচ্ছি। দুপুর পর্যন্ত বসে থেকেও কেউ কাজে নিচ্ছে না। ফলে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসছি। ওদিকে বাড়িতে আমার আশায় সবাই বসে থাকে। একটা কাজ পেলে হয়তো বাড়িতে চুলা জ্বলবে, নাহলে জ্বলবে না।’ শুধু ডিপজলের নয়। তার মতো শতাধিক দিনমজুর এই শীতে কাজ পাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন। দিনমজুররা প্রতিদিন রাজশাহী নগরীর বিভিন্ন এলাকায় কাজের জন্য গিয়ে বসে থেকে কাজ না পেয়ে খালি হাতে বাড়ি ফিরছেন। তারা বলছেন, ‘শীতের কারণে কাজ পাওয়া যাচ্ছে না। আবার এসময় জমিতেও কাজ নেই।’

এবার রাজশাহীতে শীত নেমেছে দেরি করে। এই জানুয়ারি মাসের আগেও তেমন শীতের দাপট ছিল না। আগে জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহ জুড়েই মাঝারি থেকে তীব্র শৈত্যপ্রবাহের কবলে থাকতো রাজশাহী। কিন্তু গেল প্রায় ৩-৪ বছর থেকে সেই অর্থে শীত পড়েনি। চলতি বছর তাও ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে তাপমাত্রা নামল এই দু-দিন (১৩ ও ২০ জানুয়ারি)। তবে এই শীতেই বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে রাজশাহীর গোদাগাড়ীর স্বাভাবিক জীবনযাত্রা।

‘সর্বনিম্ন’ তাপমাত্রা খুব নিচে না নামলেও রোদ না ওঠায় কম থাকছে ‘সর্বোচ্চ’ তাপমাত্রা। আর সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার ব্যবধান কমে আসায় হাড় কাঁপানো শীত অনুভূত হচ্ছে। প্রায় তিন সপ্তাহ থেকে বিকেলের আগে সূর্যের মুখ দেখা যাচ্ছে না। আর রোদ ওঠার কিছুক্ষণ পরই মেঘ বা কুয়াশায় তা ঢেকে যাচ্ছে। মেঘ এবং ঘন কুয়াশার মধ্যেই বইছে উত্তরের হিমেল হাওয়া।

একদিকে শীতের কষ্ট; আরেক দিকে ক্ষুধার। কনকনে শীতের এই একেকটি দিন তাদের কাছে পাহাড়ের মতো হয়ে উঠেছে। শীতের হাত থেকে বাঁচতে পথের ধরে চারা, খড়কুটো, প্লাস্টিক, টায়ার ইত্যাদি জ্বালিয়ে তারা শীতের কামড় থেকে বাঁচার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

অন্যদিকে শীত বাড়ায় গোদাগাড়ী উপজেলায় ঠাণ্ডাজনিত নানা রোগের প্রাদুর্ভাবও বেড়েছে। আর আক্রান্তদের মধ্যে শিশু ও বৃদ্ধদের সংখ্যাই বেশি। প্রেমতলী হাসপাতাল ও গোদাগাড়ী ৩১ শষ্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে বর্তমানে নিউমোনিয়া, অ্যাজমা, শ্বাসকষ্ট ও ডায়রিয়াসহ শ্বাসতন্ত্রের বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বছরের স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় দুই-তিনগুণ বেড়েছে। প্রতিদিন সকাল থেকেই এসব হাসপাতাল, উপজেলার বেসরকারি ক্লিনিকে রোগীরা চিকিৎসার জন্য ভিড় করছেন।

শীত বাড়ায় শিশু ও বয়স্কদের প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের না করার পরামর্শ দিয়েছে

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার (প্রেমতলী) ডা. রাশেদল হাসান শাওন বলেন, ‘এ সময়ে যে কেউ ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। এসব রোগ থেকে রেহাই পেতে গরম কাপড় ব্যবহার, যতটা সম্ভব ঠাণ্ডা পরিবেশ এড়িয়ে চলা জরুরি। শিশুদের ঠাণ্ডা বাতাস থেকে দূরে রাখা, সেইসঙ্গে ধুলোবালি থেকে যতটা সম্ভব দূরে রাখতে হবে। শৈত্যপ্রবাহ চলাকালে শিশুদের ঘর থেকে কম বের করতে হবে। ঘরের মধ্যে ঠাণ্ডা বাতাস যেন না ঢোকে, সেদিকেও লক্ষ রাখতে হবে অভিভাবকদের।’

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা জুড়ে তীব্র শীতের কারণে বোরো ধান লাগানোর কাজটি ব্যাহাত হচ্ছে। কৃষি শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। কিছু পাওয়া গেলেও কাঁদা পানিতে বেশিক্ষণ অবস্থান করতে পাছেন না। গত ১৫ জানুয়ারীর হতে এই ধান লাগানোর কাজ শুরু হয়েছে। ঘনকুয়াশা ও প্রচন্ড ঠান্ডার জন্য বোরো ধান লাগানোর কাজে কিছুটা বিঘ্ন হওয়ায় ধান লাগানো সেভাবে এগুচ্ছে না।

বীজ তলায় কোল্ড ইনজুরির কারণে বেশ সমস্যা দেখা দিচ্ছে। কৃষকগণ বস্তা ও মোটা ফলিথিন দিয়ে বীজতলা ঢেকে রাখছেন কিন্তু খুব একটা কাজ হচ্ছে না।


এসময় গোদাগাড়ী উপজেলার গোটা বরেন্দ্রর মাঠ জুড়ে যেদিকে তাকানো যায় সেদিকেই চোখে মিলতো কৃষক-কৃষাণীরা ধান লাগার দৃশ্য কিন্ত কনকনে শীতের কারণে দেখা যাচ্ছে না।

ইরি বোরা ধান চাষি ও কৃষিবিদদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে রাজশাহীর গোদাগাড়ীর চাষিরা গত কয়েক বছর যাবত সেচ বেশী লাগে এবারও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না।

গোদাগাড়ী উপজেলার কৃষক, সাংবাদিক আব্দুল্লাহ আল মামুন আবুল জানান, এবার ৮ বিঘা জমিতে ধান লাগানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছেন । শীতের কারনে ধান লাগানো কাজটি কঠিন হচ্ছে। কৃষি শ্রমিকগণ কাঁদা পানিতে নেমে বেশীক্ষুন অবস্থান করতে পারছেন না। ফলে ধান লাগাতে শ্রমিক খরচ বেশী হচ্ছে। তিনি আরও জানান ৫ বিঘা জমিতে শীত কমলে ধান লাগাবেন বলে তিনি জানান। একই মত প্রেষন করেন

গোদাগাড়ী পৌর এলাকার কৃষক আব্দুল মাতিন।

বিদ্যুতের ভেলকিবাজিতে ও এবার শ্রমিকদের পারিশ্রমিক বেশি, সেই সঙ্গে সার ও জ্বালানির মূল্য বাড়ায় গত বছরের তুলনায় এবার বোরো চাষাবাদে উৎপাদন খরচ বেশি পড়বে। তারপরও এ অঞ্চলের কৃষকেরা বোরো চাষ করছেন । এখন কৃষি উপকরণের সহজলভ্যতা প্রাপ্তি নিশ্চিত হলে এবং চাষাবাদের পরিবেশ ও আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে এবারও ইরি বোরোতে ভাল ফলন হবে বলে আশা প্রকাশ করছেন কৃষকগণ।


বিভাগ : বাংলাদেশ


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও অজিদের অনায়স জয়

দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও অজিদের অনায়স জয়

প্লটবঞ্চিত পূর্বাচলের আদিবাসিন্দাদের ৩শ’ ফুট সড়কে অবস্থান : বিক্ষোভ অব্যাহত

প্লটবঞ্চিত পূর্বাচলের আদিবাসিন্দাদের ৩শ’ ফুট সড়কে অবস্থান : বিক্ষোভ অব্যাহত

দেশে সংস্কার  ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠার আহ্বান

দেশে সংস্কার ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠার আহ্বান

ছাত্রলীগের হামলার শিকার শিক্ষার্থীদের মামলা করতে বললেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ

ছাত্রলীগের হামলার শিকার শিক্ষার্থীদের মামলা করতে বললেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ

উম্মাহর কল্যাণে মুসলমানদের ঐক্যের বিকল্প নেই

উম্মাহর কল্যাণে মুসলমানদের ঐক্যের বিকল্প নেই

বৈরুতে ইসরাইলি হামলায় হিজবুল্লাহর শীর্ষ কমান্ডারসহ নিহত ১৪

বৈরুতে ইসরাইলি হামলায় হিজবুল্লাহর শীর্ষ কমান্ডারসহ নিহত ১৪

পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্র অপরাধে ব্যবহারের আশঙ্কা

পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্র অপরাধে ব্যবহারের আশঙ্কা

মস্কোয় হামলার উপযুক্ত ক্ষেপণাস্ত্র কিয়েভে পাঠাবে না জার্মানি

মস্কোয় হামলার উপযুক্ত ক্ষেপণাস্ত্র কিয়েভে পাঠাবে না জার্মানি

জিয়ার ভূমিকাকে অবহেলা করায় পাহাড়ে সমস্যা হচ্ছে : জামায়াত নেতা শাহজাহান চৌধুরী

জিয়ার ভূমিকাকে অবহেলা করায় পাহাড়ে সমস্যা হচ্ছে : জামায়াত নেতা শাহজাহান চৌধুরী

মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে ঐক্যবদ্ধ থাকার কোনো বিকল্প নেই: তারেক রহমান

মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে ঐক্যবদ্ধ থাকার কোনো বিকল্প নেই: তারেক রহমান

বিচার বিভাগে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা প্রধান বিচারপতির

বিচার বিভাগে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা প্রধান বিচারপতির

একদিনে ৮৪৩ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত, মৃত্যু ১

একদিনে ৮৪৩ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত, মৃত্যু ১

কুষ্টিয়ায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে সুগার মিলের নিরাপত্তা প্রহরীর মৃত্যু

কুষ্টিয়ায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে সুগার মিলের নিরাপত্তা প্রহরীর মৃত্যু

সাজেক ভ্রমণে আটকা পড়েছেন ৮০০ পর্যটক

সাজেক ভ্রমণে আটকা পড়েছেন ৮০০ পর্যটক

‘শুধু সংস্কারে থেমে থাকলেই চলবে না, অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন করতে হবে’ : তারেক রহমান

‘শুধু সংস্কারে থেমে থাকলেই চলবে না, অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন করতে হবে’ : তারেক রহমান

যে কোনো ষড়যন্ত্রের দাঁতভাঙা জবাব দিতে প্রস্তুত: বিএনপির স্থানীয় কমিটির সদস্য ডা. জাহিদ

যে কোনো ষড়যন্ত্রের দাঁতভাঙা জবাব দিতে প্রস্তুত: বিএনপির স্থানীয় কমিটির সদস্য ডা. জাহিদ

ভোলায় ঝড়ের কবলে পড়ে ১০ ট্রলারডুবি, নিখোঁজ ১

ভোলায় ঝড়ের কবলে পড়ে ১০ ট্রলারডুবি, নিখোঁজ ১

ছাত্ররাজনীতিতে গুণগত সংস্কার প্রয়োজন : শিবির সেক্রেটারী

ছাত্ররাজনীতিতে গুণগত সংস্কার প্রয়োজন : শিবির সেক্রেটারী

মতলবে ছেলের ইটের আঘাতে মায়ের মৃত্যু : আটক ছেলে

মতলবে ছেলের ইটের আঘাতে মায়ের মৃত্যু : আটক ছেলে

মব জাস্টিসের প্রতিবাদে চবিতে মানববন্ধন

মব জাস্টিসের প্রতিবাদে চবিতে মানববন্ধন