গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) কর্তৃপক্ষ না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইবিকে গুচ্ছে আনতে বৃহস্পতিবার (০৮ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০টায় কমিশন ভবনের অডিটোরিয়ামে এক মতবিনিময় সভার আয়োজন করেছিল বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)। ইউজিসির পরিচালক (পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ম্যানেজমেন্ট বিভাগ) মোহাম্মদ জামিনুর রহমান সাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানা গেছে। পরবর্তীতে এ মতবিনিময় সভা বাতিল হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় ভিসি প্রফেসর ড. শেখ আব্দুস সালাম। তিনি জানান, আগামীকাল ইউজিসির সাথে একটি মতবিনিময় সভা ছিল। এখানে ব্যক্তিগতভাবে আমাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। পরে জানতে পারলাম সভাটি বাতিল হয়েছে।

গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা যে সিদ্ধান্ত নিবে আমি সেটাকেই গ্রহণ করবো।

বিজ্ঞপ্তি সূত্রে, গুচ্ছ পদ্ধতিতে ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে জিএসটি গুচ্ছে স্নাতক ১ম বর্ষে ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন বিষয়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোনীত প্রতিনিধি দলের সংগে কমিশনের মাননীয় চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীর-এঁর সভাপতিত্বে ০৮ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ১০টায় কমিশন ভবনের অডিটোরিয়ামে (৬ষ্ঠ তলা) এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হবে।

তথ্য সূত্রে, ইবির ৬ শিক্ষক সংগঠনের নেতারা ফিরতি চিঠির মাধ্যমে মতবিনিময় সভায় না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে সভাটি বাতিল হয়ে গিয়েছে বলে জানা গেছে।

গুচ্ছ না যাওয়ার বিষয়ে শিক্ষক নেতারা জানান, গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় আবেদন, মেধাতালিকা প্রকাশের পর প্রাথমিক ভর্তি; পছন্দক্রমে থাকা অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে মাইগ্রেশনের সুযোগ; প্রাথমিক ভর্তি শেষে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবর্তনের সুযোগ ও চূড়ান্ত ভর্তি। দীর্ঘ এ প্রক্রিয়ার প্রতিটি ধাপে শিক্ষার্থীর হার কম-বেশি হতে থাকে। নির্দিষ্ট সময়ের আগে আসন পূরণ সম্ভব হয় না। ফলে আসনগুলো ফাকা থেকে যাচ্ছে, বহু মেধাবী শিক্ষার্থীরা আসন থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে। মিসম্যানেজমেন্টের কারনে যাদের একটু সামর্থ আছে তারা প্রাইভেটে চলে যাচ্ছে। একজায়গায় ভর্তি হলে জোর করে সেখানেই থাকতে হয় কোথাও যাওয়ার সুযোগ থাকে না মানে তাকে ফোর্স করা হচ্ছে। ভর্তিতে স্বাধীনতা থাকছে না। ফলে শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষার আগ্রহ হারাচ্ছে। এছাড়াও গুচ্ছের ফলে আঞ্চলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে ধীরে ধীরে ধাবিত হচ্ছে।

বাতিল হওয়া সভায় আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীর চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন, প্রফেসর ড. হাসিনা খান সদস্য, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন, উপাচার্য ইবি কুষ্টিয়া, উপ-উপাচার্য ইবি কুষ্টিয়া, ট্রেজারার ইবি কুষ্টিয়া, প্রফেসর আনোয়ার হোসেন সভাপতি শিক্ষক সমিতি ইবি কুষ্টিয়া, প্রফেসর এম মামুনুর রহমান সাধারণ সম্পাদক শিক্ষক সমিতি ইবি কুষ্টিয়া, প্রফেসর পরশ চন্দ্র বর্মন সভাপতি শাপলা ফোরাম ইবি কুষ্টিয়া, প্রফেসর এম রবিউল হোসেন সাধারণ সম্পাদক শাপলা ফোরাম ইবি কুষ্টিয়া, প্রফেসর এম জাহাঙ্গীর হোসেন সাবেক সভাপতি শিক্ষক সমিতি ইবি কুষ্টিয়া, প্রফেসর তপন কুমার জোদ্দার, সাবেক সাধারণ সম্পাদক শিক্ষক সমিতি ইবি কুষ্টিয়া ও সচিব সচিবালয় ও প্রশাসন বিভাগ বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন।

শাপলা ফোরামের সভাপতি প্রফেসর পরশ চন্দ্র বর্মন, ইউজিসির নোটিশে এটা স্পষ্ট ছিল যে তারা গুচ্ছ ভর্তি পরিক্ষা আয়োজনের জন্য ডেকেছে। আর যেহুতু পূর্বেই সর্বসম্মতিক্রমে গুচ্ছে না যাওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সেহুতু এখন আমরা ৬জন সেই সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে ইউজিসির সভায় যেতে পারি না।

শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, আমাদের ৬ শিক্ষক সংগঠনকে মতবিনিময় সভার চিঠি দিয়েছিল, পরবর্তীতে আমরা সম্মিলিত চিঠি দিয়ে সভায় না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব)
প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীর হোসেনের সাথে বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন কেটে দিয়েছেন।

উল্লেখ্য, গুচ্ছ থেকে বেরিয়ে সতন্ত্র পদ্ধতিতে ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরিক্ষা নেওয়ার চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। গত ২৯ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২৭তম একাডেমিক কাউন্সিলে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর আগে ২৩ জানুয়ারি সর্বসম্মতভাবে গুচ্ছ প্রক্রিয়া থেকে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেন ইবি শিক্ষক সমিতি। এরপরও যদি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ গুচ্ছে অংশ নেয় তবে শিক্ষকরা ভর্তি কার্যক্রমে অংশ নেবেন না বলে জানান শিক্ষকরা।