শিবচর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির সীমাহীন অভিযোগ
০৩ মে ২০২৪, ০৫:৩০ পিএম | আপডেট: ০৩ মে ২০২৪, ০৫:৩০ পিএম
হাইকোর্টের রায় জালিয়াতির অভিযোগে দায়েরকৃত মামলায় গ্রেফতার হওয়া (১৬ এপ্রিল) মাদারীপুরের শিবচর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মুন্সী রুহুল আসলামের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
একাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সূত্রে জানা যায়, ছাত্র -ছাত্রীদের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র(আন্তঃ-প্রাথমিক) কম-মূল্যে ছেপে তাদের কাছ থেকে কয়েকগুণ বাড়তি টাকা আদায়, শিক্ষকদের শোকজের নামে টাকা আদায়, মাতৃত্বকালীন ছুটি পাশের জন্য মোটা অংকের টাকা নেয়া, তাদের ব্যাংকলোনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রে স্বাক্ষর করতে টাকা আদায়, নৈশ প্রহরী কাম দপ্তরীদের বেতন ভাতা সংশোধনের নামে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নেয়া, শিক্ষকদের ডেপুটেশনের জন্য টাকা আদায়, উন্নয়নমূলক কাজের জন্য বরাদ্দকৃত টাকার কাজ না করিয়েই উত্তোলনসহ অসংখ্য অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ভুক্তভোগী (শিক্ষক) এ অভিযোগুলো করেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র মেরামতের নামে মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার ৪৮ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোটকক্ষ মেরামতের জন্য এক থেকে দুই লাখ টাকা করে সরকারিভাবে বরাদ্দ দেয়া হয়। এসকল বিদ্যালয়গুলোর অধিকাংশ বিদ্যালয়ে কোন প্রকার মেরামতের কাজ না করেই অর্থ আত্মসাৎ করার অভিযোগ রয়েছে ওই শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
এছাড়াও বিভিন্ন বিদ্যালয়ের আসবাবপত্রসহ মেরামত কাজের জন্য 'রুটিন মেরামত' বাবদ সরকারিভাবে সাধারণত বাৎসরিক ৪০ হাজার টাকা অর্থ বরাদ্দ হয়। নামেমাত্র মেরামত করে প্রধান শিক্ষক থেকে শুরু করে উপজেলা কর্মকর্তা পর্যন্ত সবার যোগসাজশে প্রতিটি বিদ্যালয় থেকেই মোটা অংকের অর্থ আত্মসাৎ করেছেন বলেও একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, প্রতিটি বিদ্যালয়ে বছরে শিক্ষার্থী অনুপাতে 'স্লিপ' বাবদ গড়ে ৭০ হাজার টাকা করে বরাদ্দ হয়। বরাদ্দকৃত টাকা বিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণে ব্যয় হয়ে থাকে। তবে অযাচিত ভাউ-চার দেখিয়ে শিক্ষা কর্মকর্তা প্রতিটি বিদ্যালয় থেকেই মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে জানা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক জানান, 'স্লিপ বাবদ বরাদ্দ হওয়া টাকার ভ্যাট কর্তনের পর ৩০% থেকে ৪০% টাকা শিক্ষা কর্মকর্তা কেটে রাখেন। বাকী টাকা বিদ্যালয়ে দেয়া হয়। এক্ষেত্রে প্রতিবাদ করার কোন সুযোগ পাওয়া যায়নি।'
এদিকে প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য বছরে ১০ হাজার টাকা সরকারি বরাদ্দ দেওয়া হয়। ওই টাকার বড় একটি অংশ তিনি নিজে রেখে বাকী টাকা স্কুলের জন্য দেয়া হতো। এছাড়া বিদ্যালয়ের ওয়াশব্লক মেরামত ও নির্মাণ ব্যয় থেকে অর্থ আদায় করে নিতেন। উপজেলার দশটি বিদ্যালয়ে খেলাধুলার জন্য 'নিড বেসড প্লেইং' নির্মাণ বাবদ বরাদ্দকৃত (দেড় লক্ষ টাকা) অর্থ বিদ্যালয়ে না দিয়ে নিজেই উত্তোলন করে তার পছন্দের যায়গা থেকে নিন্মমানের উপকরণ দিয়ে তৈরি করিয়ে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন। একাধিক বিদ্যালয় থেকে এমনি অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিদ্যালয়ে প্রদান-কৃত প্রতিটি খেলনার বাজার মূল্য সর্বোচ্চ ৫০/৫৫ হাজার টাকা বলেও অভিযোগ রয়েছে।
এছাড়াও বিদ্যালয়ের কতিপয় শিক্ষকদের ঠিকাদারি, দোকান, ব্যবসাসহ নানা সুবিধা দিয়ে মাসে মাসে উৎকোচ আদায়েরও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
উপজেলা শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) উত্তম কুমার পাল মুঠোফোনে বলেন, 'আমি নতুন দায়িত্ব পেয়েছি। এবিষয়ে আমি অবগত নই। তবে এরকম দুর্নীতি করার কোন সুযোগ নেই। আশাকরি, সামনে এমন কোন ঘটনা ঘটবে না।'
শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, 'বিষয়টি তদন্ত করে দেখব। সত্যতা পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও