গ্রেপ্তার হলো মানব পাচারের প্রধান গডফাদার- মুরাদ
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৬:৪৯ পিএম | আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৬:৪৯ পিএম
মানব পাচারের উপর ইনকিলাবে ২৫ পর্বের সংবাদ প্রকাশের সফলতায় গ্রেপ্তার হলো ফরিদপুর অঞ্চলের মানব পাচারের প্রধান গডফাদার মোঃ মুরাদ বেপারী। তিনি নগরকান্দা থানায় দায়ের করা মানব পাচার মামলার প্রধান আসমি। বিষয়টি গতকাল বুধবার( ১৪ ফেব্রুয়ারী) মামলার বাদী মোসাঃ মাহফুজা বেগমের মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ইনকিলাব কে নিশ্চিত করেন।
উল্লেখ্য,গত (২৬ নভেম্বর) ২০২৩ তারিখ থেকে শুরু করে একটানা ২৫ দিন, মানব পাচারের উপর দেশের গণমানুষের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও জনবান্ধব পত্রিকা "দৈনিক ইনকিলাবে" ২৫ টি পর্ব ছাপা হয়।
সংবাদ প্রকাশের ফসল ও উঠে মানব পাচারের শিকার ভুক্তভোগীদের ঘরে। ইনকিলাবের সংবাদ প্রকাশ নিয়ে ফরিদপুর অঞ্চলের তথা ফরিদপুর, মাদারীপুর, রাজবাড়ী, গোপালগঞ্জ, শরীয়তপুর, সহ ১৫ থেকে ১৬ টি উপজেলার সমস্ত মানব পাচারকারীরা নড়েচড়ে বসে।
১২ পর্ব সংবাদ ছাপা হওয়ার পর ফরিদপুর জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে" মানব পাচার বিরোধী" একটি সভা হয়। ঐ সভায়
ফরিদপুর জেলা ভোক্তা অধিকারের সহকারি পরিচালক মোঃ সোহেল শেখ, মানব পাচারের একটি বিশেষ আলোচনা সভার মধ্যে তিনি জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে ইনকিলাবে প্রকাশিত সংবাদ এবং সংবাদদাতার কথা, জেলা প্রশাসকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
তিনি ইনকিলাবের পরিবেশিত সংবাদের উপর বিশেষ আলোচনাও করেন।, ফরিদপুর ইনকিলাবের জেলা সংবাদাতা আনোয়ার জাহিদের ধারাবাহিক সংবাদের বিষয়বস্তু ও তথা সকল তথ্য উপাও ভোক্তা অধিকারের সহকারী পরিচালক তুলে ধরেন।
তিনি আরো বলেন, মানব পাচারের উপরে যেসব সংবাদকর্মী পত্রিকায় সংবাদ পরিবেশন করেন এবং নির্যাতিত মানুষের কথাসহ তৃণমূল পর্যায় থেকে যেনারা সঠিক তুলে আনেন, তাদেরকে সাথে নিয়ে মানব পাচারের একটি কমিটি গঠন করার প্রস্তাব করেন।
এবং ইনকিলাবের সংবাদদাতাকেও এই কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টিও তুলে ধরেন।
ইনকিলাবে সংবাদ প্রকাশের পর মানব পাচারের সাথে যারা জড়িত সকলেই ভয়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে আত্মগোপনে চলে যায়। পুলিশ ও তৎক্ষনাৎ তৎপর হয়ে উঠেন।
ইনকিলাবের সংবাদ প্রকাশের পর প্রশংসা করছিলেন, ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক,এডিসি জেনারেল এবং অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সার্বিক।
সেই সূত্র ধরে, ফরিদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের সাথে ইনকিলাবের সংবাদদাতার কথা হলে তিনি মানব পাচারের উপরে যে সকল সংবাদ পরিবেশন হয় এবং যাতে করে মানুষকে আরো বেশি সচেতন করা যায় এ বিষয়ে তিনি ইনকিলাব সংবাদদাতা কে সংবাদ প্রকাশে আরো বেশি উৎসাহিত করেন।
উল্লেখ থাকে যে,, ফরিদপুর জেলার সালথা, নগরকান্দা সদরপুর, চরভদ্রাসন, ভাঙ্গা, মধুখালী এবং রাজবাড়ী উপজেলার গোয়ালন্দ, পাংশা এবং রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার উজানচর এলাকার এবং ফরিদপুর উপজেলা সদর থেকে নারী পাচারকারী
ও আদম ব্যবসায়ীরা প্রচন্ড সক্রিয় অবস্থায় শক্তভাবে অবস্থান থাকার বিষয়গুলো উঠে আসে ইনকিলাবের ধারাবাহিক সংবাদ পরিবেশন করায়। ব্যাপক খুশী এই অঞ্চলের হাজার হাজার তৌহিদি জনতা এবং সমাজ সচেতন মহল।
ইনকিলাবের সংবাদ পরিবেশনের ফসল যেমনি ভুক্তভোগী মানুষের ঘরে উঠছে। পাশাপাশি জেলার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে ইনকিলাবের পরিবেশিত সংবাদের উপর ভিত্তি করে তারাও জেলা উপজেলার সবজায়গায় খোঁজখবর নিয়ে সংবাদের সত্যতা পেয়েছেন।
সংবাদ প্রকাশের পর ফরিদপুর মধ্যাঞ্চলে প্রায় ১৭ থেকে ১৮ টি মানব পাচারের মামলা হয়৷ বলে বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য সুত্রে জানাযায় । ফরিদপুর জেলার নগরকান্দা উপজেলাতেই দুইজন নারী বাদী হয়ে মানব পাচারের অভিযোগ এনে থানায় দুটি মামলা করেন। এরা হলেন, লিবিয়া সলিলসমাধি হওয়ায় আলামিনের, মাতা চামেলি বেগম এবং মাফুজের মাতা মাফুজা বেগম।
এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিগত ২৩ সালের জানুয়ারি মাসে, নগরকান্দা তালমা ইউনিয়নের কৃষ্ণনগর গ্রামের মোঃ মুরাদ বেপারী, গিয়াস বেপারী, পলাশ মাতুব্বর দীর্ঘদিন যাবত তার ১৭ থেকে ১৮ জন সহযোগী আদম ব্যাবসায়ীকে নিয়ে, পুরো উপজেলায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। এবং বহু মানুষের কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে সর্ব শান্ত করছেন।
মানব পাচারকারীর শিকার এবং লিবিয়া থেকে ইতালি যাওয়ার পথে রাবার বোর্ডে সাগর পারি দেয়ার সময় সলিলসমাধি হওয়ায় আলামিনের মা মোসাঃ চামেলি বেগম ইনকিলাব কে বলেন,,পাচারকারী মুরাদ,গিয়াস ও মুরাদ সহ
আটজন আদম পাচারের সাথে জড়িত। এদের সবার বাড়ী তালমা ইউনিয়নের কৃষ্ণ নগর গ্রামে।
তারা আমার ছেলে সহ ৪৭ জনের যুবকের প্রত্যেকে কাছ থেকে ১৫ থেকে ১৭ লক্ষ টাকা মাসিক বেতন দেয়ার লোভ দেখিয়ে লিবিয়া হয়ে ইতালি যাওয়ার পরামর্শ দে। সে মতে, প্রত্যেকের কাছ থেকে নগদ ৭ থেকে ৮ লাখ হাতিয়ে নেন। শেষ পরিনতির সাগরে ডুবে ৩০ জনের সলিলসমাধি।
অপরদিকে, লিবিয়া থেকে রাবার বোর্ডে পারি দেয়ার সময় সলিলসমাধি হওয়া অপর যুবক মাফুজের, মা, মাফুজা বেগম ইনকিলাব কে বলেন, মুরাদ, গিয়াশ,পলাশ এবং ওদের আরো ৬/৭ জন সহযোগী মিলে ভুলবাল বুঝিয়ে
কারো কারো কাছ থেকে ১০ থেকে ১১ লক্ষ টাকাও হাতিয়ে নিয়েছেন ঐ পাচারকারীরা।
প্রকাশ থাকে যে, গত ৫ জানুয়ারি ২০২৩ তারিখ, নগরকান্দা উপজেলার তালমা ইউনিয়নের কৃষ্ণনগরের ৪০ জন যুবককে বেশি টাকা রুজি করার উদ্দেশ্যে লিবিয়া হয়ে ইতালির পথে যাত্রা শুরু করার প্রস্তুতি নেন।
সর্বশেষ লিবিয়া হয়ে রাবার বোর্ডের মাধ্যমে সাগর পারি দিয়ে যাওয়ার পথে সাগরে ৪৭ জন যুবক নিয়ে নৌকাডুবি হয়।
এর মধ্যে ৩০ জনেরই সলিল সমাধি হয়। বাকি ১৭ জন যুবক সাগরে ১৭ ঘন্টা কোনরকম ভেসে থাকার পর,, তাদেরকে বিদেশি জাহাজের লোকেরা ১৭ জনকে জীবিত অবস্থায় জাহাজে টেনে তুলে।
পরে তারা ঘটনার ১৭ থেকে ১৮ দিন পর তারা গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসে।
।তাদের কাছ থেকে জানতে পারেন তাদের সাথে থাকা ৪৭ বন্ধু রাবার বোর্ডে পাড়ি দেয়ার সময় ভূমধ্যসাগরে তারা সহ ডুবে মারা যায়।
বাকি ১৭ জন বাঁচতে পারলেও ৩০ বন্ধু সবাই ডুবে মারা যায়।
এই ঘটনায় তালমা ইউনিয়নের আলামিনের মা চামেলি বেগম এবং পার্শ্ববর্তী গ্রামের মাহফুজের মা মাহফুজা বেগম বাদী হয়ে নগরকান্দা থানায় দুটি মামলা করেন। এই দুটি মামলায় গডফাদার মুরাদ সহ সাতজন আসামী।
আলামিনের মা,চামেলি বেগমের মামলাও
মুরাদ,গিয়াস,পলাশ মাুতুব্বরসহ ৭ জন আসামি। নগরকান্দা থানার মামলা নং, ১২/ জিআর নং ৬২/২৩ তারিখ ১৭-৩-২০২৩ইং। এই মামলায় দীর্ঘদিন দিন পালাতক থাকার পর ঢাকা থেকে নগরকান্দার পুলিশ ও ফরিদপুর সিআইডি পুলিশের যৌথ উদ্যোগে মানব পাচারকারীদের গডফাদার মোঃ মুরাদ বেপারি আটক হয়।
এই বিষয় নগরকান্দা তালমা ইউনিয়নের কৃষ্ণনগর গ্রমের বাসিন্দা এবং মাহফুজের চাচা বিশিষ্ট বেকারি ব্যাবসায়ী ও খামারি তিনি ইনকিলাব কে বলেন, মামলা হওয়ার পর বহুদিন পুলিশ চুপচাপ থাকে ইনকিলাবে ধারাবাহিক ২৫ টি পর্ব ছাপা হওয়ার পর পাচারকারীদের দ্বিতীয় গডফাদার পলাশ বেপারী প্রথম আটক হয়।
দীর্ঘদিন জেল খেটে সম্প্রতি জামিনে বের হয়। তিনি হলেন, পাচারকারীদের গ্রাম্য গডফাদার পলাশ মাতুব্বর।
পলাশের আটকের খবর পেয়ে আত্মগোপনে চলে যায় অন্য সব আসামিরা। এরপর পাচারকারীদের প্রধান গডফাদার মোঃ মুরাদ বেপারিও প্রায়, ৮/৯ মাস আত্মগোপনে থাকার পর গ্রেফতার হলো মুরাদ বেপারি।
এখন বাকি রইলো প্রধান গডফাদার মুরাদের বড় ভাই তৃতীয় গডফাদার মোঃ গিয়াস বেপারী।
মানব পাচারকারী মামলার দুই নারী বাদীনি তথা -চামেলি বেগম ও মাহফুজার অভিযোগ পাচারকারীদের নামে মামলা করেও আমাদের জীবন বাঁচানো দায় হয়ে উঠছে।
মামলা তুলে নিতে আসে বহু হুমকি দমকি। এরই ধারাবাহিকতায়,
আলামিনের মা এবং মাহফুজের মা, নগরকান্দা থানায় পর- পর ২ টি জিডি এন্ট্রি করেন।
এর পরও মামলা তুলে নিতে দুটি পরিবারের সদস্যদের বাড়ীতেও আক্রমণ চালায় উল্লেখিতরা মামলার আসামিরা।
মামলা তুলে নিতে এখনও ও জীবন নাশের হুমকি চলছে বলে বিস্তর অভিযোগ ।এই বিষয় মাহফুজার জিডি নং ১৩৬ তাং ২৮-০৪-২০২৩।
উল্লেখ্য, চামেলীর মামলাটি এখনও তদন্তাধীন। মাহফুজ মামলাটি থানা থেকে কোর্টে স্থানান্তর করা হলে বিজ্ঞ আদালাত মামলাটির সুষ্ঠু তদন্ত পূর্বক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে মামলার তদন্তের বার সিআইডির উপর দেন। সিআইডির মামলার তদন্তের আটক হয় মানব পাচারকারী দলের প্রধান মোঃ মুরাদ বেপারী।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
কাউকে ঋণ দিয়ে তার কাছ থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা বেশী নেওয়া প্রসঙ্গে।
যৌনকর্মীদেরও এবার মাতৃত্বকালীন ছুটি, দেয়া হবে পেনশন
আমেরিকান কালার কসমেটিকস হারল্যানে ২৫% ছাড়
প্রথম প্রান্তিকে এনআরবিসি ব্যাংকের আমানত বেড়েছে ১৭ শতাংশ
‘নেভার সেটেল’ শ্লোগানে দেশের প্রযুক্তিপ্রেমিদের উজ্জীবিত করতে প্রস্তুত শীর্ষ ব্র্যান্ডটি
শেয়ারট্রিপের মেগা ক্যাম্পেইন, শেয়ারট্রিপ পে’র এর মাধ্যমে জিতুন আকর্ষণীয় সব পুরস্কার
ইউএস ট্রেড শো- ২০২৪ এ ইসলামী ব্যাংকের স্টল উদ্বোধন
বগুড়ায় শাজাহানপুরে স্ট্রোকে স্ত্রীর মৃত্যু
তানোরে ২য় বার নির্বাচিত চেয়ারম্যান ময়নার অর্ধশতাধিক মাইক্রোবাস নিয়ে শোডাউন
জয়ের ধারা ধরে রাখার লক্ষ্য বাংলাদেশের
এক দশকের উন্নয়ন বাংলাদেশের জাতীয় বিজ্ঞাপনের বড় অস্ত্র; কিন্তু চ্যালেঞ্জ আছে
সার্বিয়ার জাতীয় জাদুঘরে চীনের ফার্স্ট লেডি
যুক্তরাজ্যের রিফিউজিদের মানবিক সহযোগিতা দিচ্ছে এইডমিইউকে
চীন ও হাঙ্গেরির প্রেসিডেন্টদ্বয়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত
মেট্রো স্টেশনের টয়লেট ব্যবহারে দিতে হবে টাকা, যা বলছেন নেটিজেনরা
ডিজিটাল বাংলাদেশের অগ্রগতির সঙ্গে সাইবার অপরাধ বাড়ছে : পলক
ফুলবাড়ীতে ট্রেনে কাটা পড়ে এক বৃদ্ধের মৃত্যু
৩৫তম তেহরান আন্তর্জাতিক বইমেলা শুরু
ইন্দুরকানীতে বসতঘরে আগুন
পারমাণবিক ক্ষেত্রে সউদীকে সহযোগিতায় প্রস্তুত ইরান