ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে রাস্তা বন্ধ করে ২০টি পরিবারকে অবরুদ্ধ রাখার অভিযোগ পাওয়া গেছে পুলিশের এক সাবেক সাব- ইন্সপেক্টর শহিদুল্লাহ ওরফে শাহেদের বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয় প্রায় দেড়শ বছরের পুরনো এই রাস্তায় দেওয়া হয়েছে কাটা জাতীয় ডাল। সেই সাথে কেটে ফেলা হয় রাস্তা। আবার সেই রাস্তাতেই লাগানো হয়েছে সুপারি গাছসহ বিভিন্ন জাত গাছের নতুন চারা। এতে গত ১৫ দিন ধরে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে ২০টি পরিবারের প্রায় দুই'শ মানুষ। ওই ২০টি পরিবারের প্রায় ৩০ জন শিক্ষার্থী স্কুল ও মাদ্রাসায় যেতে পোহাচ্ছেন সীমাহীন দুর্ভোগ। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার আঠারবাড়ি ইউনিয়নের মৃগালী গ্রামে। বিষয়টি নিয়ে ভুক্তভোগীরা লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর।

সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, চলাচলের রাস্তার দুই পাশে বাঁশের বেড়া দেওয়া। বেড়ার পাশেই সুপারি-গাছ সহ বিভিন্ন জাতের চারা গাছ লাগানো। রাস্তাটির মাঝামাঝি কেটে করা হয়েছে বিশাল একটি গভীর গর্ত। এমন সময় দেখা হয় অভিযুক্ত শহিদুল্লাহর সহোদর ছোট ভাই আব্দুল জব্বারের সাথে, তখন তাকে বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা ছোটবেলা থেকেই এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করে আসছি। কিন্তু আমার বড় ভাই বেআইনিভাবে এবং তার ক্ষমতাবলে
জুলুম করে দীর্ঘদিনের পুরোনো রাস্তাটিতে বেড়া দিয়ে ও মাটি কেটে মানুষের চলাচলের পথ বন্ধ করে দিয়েছে। আমি অনেকবার এই অন্যায় কাজটি করতে নিষেধ করেছি, কিন্তু সে কারো কথাই মানে না।

ভুক্তভোগী পরিবারের ইসলাম উদ্দিন (৫৩) বলেন, এটি আমাদের প্রায় দেড়শ বছরের পুরনো রাস্তা। বাপ-দাদারা আমাদের চলাচলের জন্য এই রাস্তা এজমালি করে রেখে গেছেন। রাস্তাটি দিয়ে আমরা প্রতিদিন চলাচল করি। এখন রাস্তায় বেড়া দিয়ে এবং মাটি কেটে বন্ধ করায় আমাদের চলাচলে খুব কষ্ট হচ্ছে।

তাসলিমা আক্তার নাদিরা (৩০) বলেন, 'বাড়ি থেকে বের হতে চাইলে ফসলি জমি, কাঁদা মাটি পেরিয়ে রাস্তার ওপাশে যেতে হয়। কিংবা অনেক দূর দিয়ে ঘুরে সড়কে ওঠতে হয়। তাদের বাড়ির সামনে দিয়ে গেলে মারধর করতে আসে এবং প্রাণে মারার হুমকি দেয়। একজন লোক অসুস্থ হলে দ্রুত সময় হাসপাতালে নিয়ে যাব এই উপায় নাই। আমাদের ছেলে-মেয়েরা স্কুল- মাদ্রাসায় যেতে পারছে না। তাদের পড়ালেখায় ব্যাঘাত ঘটছে। আমরা এর সঠিক বিচার চাই।

মহেশপুর নুরানি মাদ্রাসার ছাত্র নূর মোহাম্মদ (৮) ও মহেশপুর দাখিল মাদ্রাসার ছাত্রী ইসরাত জাহান অনন্যা (১৩) বলেন, আমাদের রাস্তায় বেরিগেড ও কেটে ফেলার দেওয়ার কারণে আমরা মাদ্রাসায় যেতে পারিনা। কয়েকদিন আগে একবার লাফ দিয়ে রাস্তার গর্ত পার হতে গিয়ে পায়ে ব্যথা পেয়েছি। আমরা আমাদের রাস্তা দিয়ে স্কুলে যেতে চাই।

অভিযুক্ত শহিদুল্লাহ বলেন, এটি আমার ব্যক্তিগত সম্পত্তি। আমার রাস্তায় আমি বেড়া দিয়েছি এবং গাছ লাগিয়েছি। তাদের জন্য বিকল্প রাস্তা আছে। তারপরও তারা যদি বসে আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টির সমাধান করতে চাইলে আমি রাজি আছি।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জুবের আলম কবির রূপক বলেন, বিষয়টি জানার পর যারা বেড়া দিয়ে রাস্তা অবরোধ করেছে তাদেরকে কারণ দর্শানোর নোটিশ করেছি। কিন্তু তারা কিছুই জানায়নি। পরে আমি বিষয়টি মৌখিকভাবে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে বলেছি।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরিফুল ইসলাম প্রিন্স বলেন, আমি নতুন যোগদান করেছি। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মৌখিক ভাবে আমাকে জানিয়েছিলো। পরে চেয়ারম্যানকে বিষয়টি সরেজমিনে গিয়ে পরিদর্শন করে বিস্তারিত প্রতিবেদন দেয়ার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।